জাবির সমন্বয়ক পর্ষদের ১৭ জনের পদত্যাগ

  • জাবি করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কতিপয় সমন্বয়কের বিতর্কিত কার্যক্রম ও ব্যক্তিগত প্রভাব খাটিয়ে নিজ স্বার্থ উদ্ধার এবং সরকারি দলের মত আচরণের অভিযোগ এনে পদত্যাগ করেছেন জাবির ১৭ জন সমন্বয়ক ও সহ-সমন্বয়ক৷

বৃহস্পতিবার (৩ অক্টোবর) বিকেল পৌনে ৫টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের কনফারেন্স কক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করে তারা একযোগে পদত্যাগ করেন।

বিজ্ঞাপন

পদত্যাগকৃত সমন্বয়ক ও সহ-সমন্বয়করা হলেন- আব্দুর রশিদ জিতু, রুদ্র মুহাম্মদ সফিউল্লাহ, হাসিব জামান, জাহিদুল ইসলাম ইমন, জাহিদুল ইসলাম,ফাহমিদা ফাইজা, রোকাইয়া জান্নাত ঝলক, মিশু খাতুন, রাফিদ হাসান রাজন, হাসানুর রহমান সুমন, আব্দুল হাই স্বপন, নাসিম আল তারিক, ঐন্দ্রিলা মজুমদার, জিয়া উদ্দিন আয়ান, তানজিম আহমেদ, জাহিদুল ইসলাম বাপ্পি ও সাইদুল ইসলাম৷

লিখিত বক্তব্যে সমন্বয়ক ও সহ-সমন্বয়ক পদত্যাগের ২টি কারণ উল্লেখ করেন। কারণগুলো হলো- বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, জাবি-র কতিপয় সমন্বয়কের বিতর্কিত কার্যক্রম ও ব্যক্তিগত প্রভাব খাটিয়ে নিজ স্বার্থ উদ্ধারের প্রচেষ্টা এবং কিছু সমন্বয়কের সরকারি দলের নেতাকর্মীদের মতো আচরণ ও গণঅভ্যুত্থানের স্পিরিট বিরুদ্ধ কাজ করা।

বিজ্ঞাপন

এসময় সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক পদে থাকা জাবির আব্দুর রশিদ জিতু।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, গত ১৩-ই জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, জাবি-এর সমন্বয়ক কমিটি গঠন করা হয়। গত ৫-ই আগস্ট আমাদের কাঙ্খিত সফলতা অর্জন করি। এ পুরো সময়টিতে আমরা সকলে একই লক্ষ্যে কাজ করেছি। ৯ দফার উপর ভিত্তি করে কোটা সংস্কার আন্দোলন ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলনের রূপ নেয়৷

গণঅভ্যুত্থানের পর একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়। কিন্তু পরবর্তীতে দেখা যায়, যে ৯ দফার উপর ভিত্তি করে সাধারণ মানুষ জীবন বাজি রেখে আন্দোলন করেছে সে ৯ দফার অন্তর্ভূক্ত দলীয় লেজুড়বৃত্তিক ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ, জুলাই হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িতদের বিচার, এবং আহত ও ক্ষতিগ্রস্থদের ক্ষতিপূরণের দাবিগুলোতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এক প্রকার নিশ্চুপ রয়েছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন বর্তমানে একটি সরকার দলীয় ছাত্র সংগঠনের মত ভূমিকা পালন করছে। তদুপরি, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশের সর্বস্তরের আন্দোলনকারীদের একই ব্যানারে অন্তর্ভূক্ত করতে ব্যর্থ হয়েছে, এবং বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হয়েছে। একই সাথে, এই ব্যানার এখনো বজায় থাকা আন্দোলনে সর্বপেশার, সর্বস্তরের, এবং সর্বদলের মানুষের অংশগ্রহণের ইতিহাসকে ম্লান করে দিচ্ছে বলে জানান সমন্বয়ক পর্ষদের পদত্যাগকৃতরা৷

এসময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারকে দ্রুত বিলুপ্ত করা আহ্বানও জানান তারা৷

তারা বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন জাবি-র কতিপয় সমন্বয়কের সহযোদ্ধাদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ, গত ১৮ সেপ্টেম্বর সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ও সন্ত্রাসী শামীম মোল্লার গণধোলাই ও পরবর্তীতে পুলিশী হেফাজতে মৃত্যুর ঘটনায় ভিডিও ফুটেজের ভিত্তিতে সমন্বয়ক কমিটির একাধিক সমন্বয়কের নাম উঠে আসলেও সে ব্যাপারে ব্যানার কোনো ঐক্যবদ্ধ অবস্থানে আসতে না পারায় আমরা সমন্বয়ক পর্ষদের ১৭ জন পদত্যাগ করছি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সমন্বয়ক জানান, মূলত ছাত্র শক্তির নেতা হওয়ায় জাবি থেকে সমন্বয়ক আরিফ সোহেল বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কমিটিতে রয়েছেন। তবে আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া আর কেউই প্ল্যাটফর্মের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে যেতে পারছেন না। এমনকি প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করার সময়ও অপর কাউকে সুযোগ দেওয়া হয়নি। ছাত্র শক্তি প্রভাবিত হওয়ায় অন্যান্য সংগঠকদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ রয়েছে। ফলে জাবিতে এই কমিটির মধ্যেই বৈষম্য প্রকট৷


সমন্বয়ক পর্ষদ থেকে পদত্যাগ করলেও সবসময় সাধারণ ছাত্রদের পাশে থাকার কথা জানিয়ে তুলনামূলক সাহিত্য ও সংস্কৃতি ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী আব্দুর রশিদ জিতু বলেন, শিক্ষার্থীদের যেকোনো যৌক্তিক আন্দোলনে আমরা সবসময় পাশে থাকবো। যেকোনো নৈতিক অধিকার আদায়ে আমাদের চেষ্টা সব সময় চলমান থাকবে৷

একযোগে ১৭ সমন্বয়ক ও সহ-সমন্বয়কের পদত্যাগের বিষয়টি নিয়ে জিজ্ঞাসা করলে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের জাবি কমিটির আহ্বায়ক ও কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক আরিফ সোহেল বলেন, তারা আমাদের সাথে বসা ছাড়াই এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কোনো তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে তারা আমাদের ওপর অভিযোগ এনেছে সেটা তারাই ভালো বলতে পারবে।