জাবিতে ‘ক্যাফে কর্নারে’ অযৌক্তিক ভাড়া বৃদ্ধির অভিযোগ
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) কেন্দ্রীয় ক্যাফেটেরিয়া সংলগ্ন ‘ক্যাফে কর্নারে’র ভাড়া অযৌক্তিকভাবে বৃদ্ধির অভিযোগ করেছেন স্বত্ত্বাধিকারী নির্মলা রায়। প্রায় ৩০ বছর ধরে চলে আসা দোকান থেকে তাকে অপসারণের জন্য একটি স্বার্থান্বেষী মহল এ ষড়যন্ত্র করছে বলে দাবি করেন তিনি।
সরেজমিনে দেখা যায়, কেন্দ্রীয় ক্যাফেটেরিয়ার দক্ষিণ পাশের এক কোণে একটি কফিশপ পরিচালনা করেন নির্মলা রায়। তার কফিশপে বিস্কুট, চিপস, চানাচুর, কোমল পানীয় ও চা-কফি পাওয়া যায়। ক্যাফেটেরিয়ার সিড়ি সংলগ্ন সে দোকানে সন্ধ্যা হলেই শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা ভিড় জমান। সন্ধ্যায় ক্যাফে কর্নারের সাউন্ড সিস্টেমে সেই পুরোনো স্মৃতিজড়ানো গান শুনতেও ভিড় জমান শিক্ষার্থীরা৷
নির্মলা রায় জানান, আমি দীর্ঘ ৩০ বছর যাবৎ এ দোকান করে আসছি। দোকানের নির্ধারিত ভাড়া প্রতি মাসে ১৪৫০ টাকা। প্রতি বছরের জানুয়ারি মাসে এর সাথে ৫০ টাকা করে বৃদ্ধির কথা রয়েছে। তবে হঠাৎ করেই এ বছরের মার্চে আমার নামে চিঠি আসে। দোকানের ভাড়া এক লাফে ২০ হাজার টাকা করার কথা জানানো হয়। পরে ধাপে ধাপে আমার অনুরোধের প্রেক্ষিতে জুন মাসে মিটিং ডেকে দোকান ভাড়া ১৫ হাজার করা হয়। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবারের (১০ অক্টোবর) সভায় ১২ হাজার টাকা প্রদান করতে বলা হয়।
নির্মলা রায় আরও বলেন, ক্যাম্পাসের কোনো দোকানের ভাড়াই হাজার-পনেরশ’র বেশি নয়। শুধুমাত্র ক্যাফেটেরিয়া সংলগ্ন ‘ক্যাফে অপরাহ্ণ’ সর্বোচ্চ ৫ হাজার টাকা দিয়ে থাকে। আমি অনুরোধ করে বলেছি, যদি বাড়াতেই হয়, আমার দোকানকেও ভাড়া বৃদ্ধি করে ৫ হাজার করা হোক। কিন্তু টিএসসির প্রশাসন তা করতে নারাজ। সর্বশেষ তারা বলেছেন, ১০ হাজার টাকা হলে দোকান করার জন্য, নইলে ছেড়ে দেয়ার জন্য।
টিএসসি-ক্যাফেটেরিয়া সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক আহমদ রেজা টিএসসির দায়িত্বে আসার পর থেকে কর্মকর্তাদের একটি অংশ তাকে এ সিদ্ধান্ত নিতে প্ররোচিত করেছে। বিভিন্ন খাতে অর্থসংকটে ধুঁকতে থাকা টিএসসির আয়ের খাত বাড়াতে পরিচালক এ উদ্যোগ নিয়েছেন বলে জানা গেছে। পাশাপাশি কয়েকটি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান আরো অধিক ভাড়ায় এ স্থানটি নেয়ার প্রস্তাবনা দিয়েছে। ফলে টিএসসি কর্তৃপক্ষ ক্যাফে কর্নারকে এখানে দোকান পরিচালনা করতে দিতে আগ্রহী নয়।
ক্যাফে কর্নারে নিয়মিত আসা শিক্ষার্থী হৃদয় আহমেদ অপূর্ব বলেন, প্রতিদিন বিকেলে আমরা বন্ধুরা এখানে এসে বসি। সন্ধ্যায় গানের সুরে বসে থাকতে ভালোই লাগে। ক্যাম্পাস জীবনের একটা বড় অংশ কেটেছে এখানে বসে গল্প-আড্ডায়। পরিবেশ নষ্ট হয় বলে এ দোকানে সিগারেটও বিক্রি হয় না। অথচ সেখানে হঠাৎ করে এত টাকা ভাড়া বৃদ্ধি মানা যায় না। কর্তৃপক্ষের এ বিষয়টি আরো ভালভাবে বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়া দরকার ছিলো।
এ বিষয়ে টিএসসির উপ-পরিচালক নাসরিন সুলতানা বলেন, টিএসসির আয়ের পরিমাণ বাড়াতেই ভাড়া বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে৷ এছাড়া 'টেস্টি ট্রিট' প্রতিষ্ঠানের সাথে আহমেদ রেজা স্যার ও আমার কথা হয়েছিল তারা লক্ষাধিক টাকা জামানত রেখে মাসিক ২০ হাজার টাকা হারে ভাড়া দিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে৷ আবার আমাদের অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও এ পরিমাণ ভাড়া দিয়ে এখানে দোকান পরিচালনা করার ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন৷ এ নিয়ে আমাদের দফায় দফায় মিটিং শেষে আমরা এ সিদ্ধান্ত নিয়েছি৷ সবশেষে দোকান ভাড়া বাবদ ২০ হাজার টাকা বেশি হয়ে যায় এ চিন্তা থেকে আমরা ১০ হাজার টাকা করার সিদ্ধান্তে আসি৷ এতে করে আমাদের টিএসসির আয়ের পরিমাণ একটু বৃদ্ধি পাবে৷
এ ব্যাপারে টিএসসির অতিরিক্ত পরিচালক মোহাম্মদ আশরাফুল হাবিব বলেন, পরিমল সাহেবের স্ত্রীর পরিচালিত দোকানটির ভাড়া বর্তমানে ১৪৫০ টাকা যা খুবই নগন্য৷ যেখানে আমরা এর চাইতে বেশি টাকায় দোকানটি অন্য কারো কাছে ভাড়ায় দিতে পারি৷ আমরা টিএসসির বিভিন্ন অনুষ্ঠান পরিচালনায় যথেষ্ট অর্থের প্রয়োজন হয়৷ আর সে অর্থের যোগান আসে মুক্তমঞ্চ, ক্যাফেটেরিয়া, গেস্ট রুম, সেমিনার রুম, অডিটোরিয়াম, এটিএম বুথ ও দোকান থেকে৷ যা যথেষ্ট নয়৷ এখন যদি এই দোকান ভাড়া থেকে ১০ হাজার টাকা আসে সেটা আমাদের আয়ের পরিমাণ বাড়াবে৷
'ক্যাফে কর্নারের' স্বত্ত্বাধিকারী নির্মলা রায়কে সরানোর একটা গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এখানে বিষয়টা এমন না৷ পরিমল সাহেব উনার স্ত্রীর নামে দোকান নিয়ে সেখানে নিজে ব্যবসা পরিচালনা করছেন৷ উনি যদি এ পরিমাণ টাকা দিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করতে চান তাহলে তো আমাদের সমস্যা নেই৷ আমরা চাই টিএসসির আয় বাড়ুক তার জন্যই ভাড়া বৃদ্ধির কথা চলছে৷
পরিচালক অধ্যাপক আহমেদ রেজা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি হলে 'টেস্টি ট্রিট' নামক প্রতিষ্ঠানের দোকান আছে তারাও কিন্তু ২০ হাজার টাকা হারে দোকান ভাড়া দিচ্ছে৷ পরিমল সাহেব এখানে উনার স্ত্রীর নামে যে দোকান পরিচালনা করছেন সেটার চুক্তি ২-৩ বছর আগেই শেষ হয়ে গিয়েছে৷ এখন আমরা নতুন ভাবে নতুন প্রেক্ষিতে চুক্তি করে দোকান ভাড়া দিতে চাই৷ এমনিতে পরিমল সাহেবের নামে প্রশাসনিক কর্মকর্তা হয়ে কাজে ফাঁকি দেয়ার নানা অভিযোগ নানা সময়ে আমাদের কাছে এসেছে৷ এছাড়া তিনি কর্মকর্তা হয়ে অন্যদের চেয়ে বেশি সুবিধা পাচ্ছেন-ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনা করছেন এমন অভিযোগও করেছেন কেউ কেউ৷ টিএসসি কর্তৃপক্ষ এসব অভিযোগ থেকে খানিকটা হলেও যেন পরিত্রাণ পায় সেজন্য আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি ভাড়া বৃদ্ধি করার এবং নতুন চুক্তির মাধ্যমে দোকান ভাড়া দেয়ার৷