বন্য খেজুর থেকে ভিনেগার উৎপাদন করল বাকৃবির গবেষকরা

  • বাকৃবি করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

বন্য খেজুর থেকে ভিনেগার উৎপাদন করল বাকৃবির গবেষকরা

বন্য খেজুর থেকে ভিনেগার উৎপাদন করল বাকৃবির গবেষকরা

স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত বন্য খেজুর থেকে ভিনেগার উৎপাদন করেছে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) ফুড টেকনোলোজি ও গ্রামীণ শিল্প বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আনিছুর রহমান মজুমদার ও তার গবেষক দল। এর মাধ্যমে বাংলাদেশে খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্পের জন্য একটি নতুন দিগন্ত খুলবে বলে দাবি করেছেন তারা।

অধ্যাপক আনিছুর রহমানের নেতৃত্বে বাকৃবি, সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (সিকৃবি) ও ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (ডুয়েট) আরও ছয় জন গবেষক এই প্রকল্পে যুক্ত ছিলেন।

বিজ্ঞাপন

বাকৃবি থেকে গবেষক দলে রয়েছেন- ফুড টেকনোলজি ও গ্রামীণ শিল্প বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. মো. আব্দুল আলিম ও একই বিভাগের অধ্যাপক ড. পলি কর্মকার এবং ওই বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর সম্পন্নকারী শিক্ষার্থী উম্মে হাবিবা ও আ ন ম ইফতেখার আলম। এছাড়া সিকৃবির খাদ্য প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিভাগের সহকারি অধ্যাপক মো. ফাহাদ জুবায়ের এবং ডুয়েটের ফুড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহকারি অধ্যাপক লোপা আনসারী গবেষক দলে যুক্ত ছিলেন।

গবেষণাটি করার উদ্দেশ্য সম্পর্কে অধ্যাপক ড. মো. আনিছুর রহমান মজুমদার বলেন, বিগত কয়েক বছরে বাংলাদেশে খাদ্য নিরাপত্তা এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য স্থানীয় কৃষি সম্পদের টেকসই ব্যবহারের ওপর বাড়তি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। তেমনই দেশের একটি অব্যবহৃত সম্পদ হলো বন্য খেজুর ফল। ওই খেজুর গাছটি সাধারণত গ্রামীণ এলাকায় ও রাস্তার পাশের জমিতে পাওয়া যায় যা বিভিন্ন পুষ্টি উপাদানে সমৃদ্ধ। এই অবহেলিত ফল থেকে ভ্যালু অ্যাডেড প্রডাক্ট তৈরি করার উদ্দেশ্যেই আমাদের এ গবেষণা।

বিজ্ঞাপন

গবেষণার পদ্ধতি নিয়ে অধ্যাপক ড. মো. আনিছুর রহমান মজুমদার বলেন, বন্য খেজুরের রসকে গাঁজন (ফারমেন্টেশন) প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ভিনেগারে পরিণত করা হয়েছে। এ গবেষণায় একধরনের ইস্ট ব্যবহার করে রসে অ্যালকোহল তৈরি করা হয়। পরবর্তীতে অ্যাসিটোব্যাক্টর প্রজাতির ব্যাকটেরিয়ার সাহায্যে অ্যালকোহলকে অ্যাসিটিক অ্যাসিডে (ভিনেগার) রূপান্তরিত করা হয়।

তিনি আরও বলেন, খেজুরের রসের ঘনত্ব যত বেশি হয় তত বেশি অ্যালকোহল এবং অ্যাসিডিটি বৃদ্ধি পায়। বেশী ঘনত্বের রস সবচেয়ে বেশি পুষ্টিগুণ, অ্যাসিডিটি এবং ম্যাক্রো মিনারেলস (পটাসিয়াম, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, ম্যাগনেসিয়াম, সোডিয়াম) সমৃদ্ধ হয়ে থাকে।

গবেষণাটির ভবিষ্যত সম্ভাবনা নিয়ে অধ্যাপক ড. মো. আনিছুর রহমান মজুমদার বলেন, ইদানিং বাংলাদেশে বন্য খেজুর ফলটি ব্যাপকভাবে পাওয়া যাচ্ছে। ফলটি বেশ সস্তা এবং স্থানীয়ভাবে সহজলভ্য। আমাদের গবেষণাটি স্থানীয় কৃষকদের জন্য আয়ের নতুন সুযোগ সৃষ্টি করতে পারে। খেজুর থেকে উৎপাদিত ভিনেগারের উচ্চ মান ও পুষ্টিগুণ একদিকে বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের কৃষিপণ্যের চাহিদা বাড়াতে সহায়ক হবে, অন্যদিকে এটি পরিবেশবান্ধব এবং টেকসই উৎপাদন প্রক্রিয়া সহজ করবে।

অধ্যাপক আরও বলেন, বাংলাদেশের খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্পে এই গবেষণার ইতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। ভিনেগার উৎপাদন কেবল খাদ্য ও পানীয় হিসেবে ব্যবহারের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয় বরং এটি প্যাকেজিং, কসমেটিকস এবং ফার্মাসিউটিক্যাল শিল্পেও ব্যবহৃত হতে পারে। বিশেষ করে স্বাস্থ্য সচেতন মানুষের মধ্যে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ ভিনেগারের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে, যা বাজারে এর জনপ্রিয়তা আরো বৃদ্ধি করবে। আমাদের গবেষণাটি বাংলাদেশের বৃহত্তর টেকসই উন্নয়ন এবং খাদ্য নিরাপত্তার লক্ষ্যগুলোর সাথে সঙ্গতিপূর্ণ। বন্য খেজুর থেকে ভিনেগার উৎপাদনে ব্যবহৃত গাঁজন প্রক্রিয়াটি পরিবেশবান্ধব। স্থানীয় কৃষি সম্পদ কাজে লাগিয়ে এবং অপচয় কমিয়ে এই পদ্ধতি খাদ্য উৎপাদনের কার্বন ফুটপ্রিন্ট কমাতেও সহায়ক হতে পারে। এছাড়াও ভিনেগারের স্বাস্থ্য উপকারিতার দিকে খেয়াল করলে দেখা যায় যে, এটি স্বাস্থ্য সচেতন ভোক্তাদের জন্য একটি আকর্ষণীয় পণ্যও বটে।