নিজ জেলায় অবহেলিত বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিন!
বীরশ্রেষ্ঠ! বীরত্বের জন্য প্রদত্ত বাংলাদেশের সর্বোচ্চ সামরিক পদক। ১৯৭১ সালের মহান স্বাধীনতাযুদ্ধে যুদ্ধক্ষেত্রে অতুলনীয় সাহস ও আত্মত্যাগের নিদর্শন স্থাপনকারী বীর মুক্তিযোদ্ধাদের স্বীকৃতিস্বরূপ এই পদক দেয়া হয়। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে শহীদ সাতজন মুক্তিযোদ্ধাকে এই পদক দেয়া হয়েছে।
আর এ সাতজনের একজন ইঞ্জিনরুম আর্টিফিশার মোহাম্মদ রুহুল আমিন। ১৯৭১ সালের ১০ ডিসেম্বর মহান মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশ নৌ বাহিনীর গানবোট 'পলাশ'কে বাঁচানোর চেষ্টায় যিনি শহীদ হয়েছিলেন।
১৯৩৫ সালে নোয়াখালী জেলার সোনাইমুড়ি উপজেলার বাঘপাঁচড়া গ্রামে খুব সাধারণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। তার বাবা আজহার পাটোয়ারী এবং মায়ের নাম জোলেখা খাতুন। নিজ এলাকায় পড়াশোনা শেষ করে জুনিয়র মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে যোগদান করেন তৎকালীন পাকিস্তান নৌবাহিনীতে। ১৯৭১ সালে রুহুল আমিন চট্টগ্রামে কর্মরত ছিলেন। দেশের টানে, দেশকে শত্রুমুক্ত করতে একদিন নৌঘাঁটি থেকে বের হয়ে পড়েন তিনি৷ যোগ দেন মুক্তিযুদ্ধে। স্থল যুদ্ধের বিভিন্ন অভিযানেও যোগ দেন৷ পরবর্তীতে বিভিন্ন সেক্টর ও সাব-সেক্টর থেকে নৌবাহিনীর সদস্যদের একত্রিত করে গঠন করা হয় বাংলাদেশ নৌবাহিনী। আর গানবোট পলাশের প্রধান ইঞ্জিনরুমে আর্টিফিশার হিসেবে দায়িত্ব পান মোহাম্মদ রুহুল আমিন।
কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের বিষয় হলেও সত্য নিজ জেলায় অবহেলিত থেকে গেলেন জাতীয় এই বীর সন্তান। দেশের অন্যতম সেরা বিদ্যাপীঠ উপকূলীয় অক্সফোর্ড খ্যাত নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (নোবিপ্রবি)। সমগ্র জেলায় যেমন বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিন অবহেলিত ঠিক একইভাবে অবহেলিত নিজ জেলার সর্বোচ্চ এই বিদ্যাপীঠেও।
প্রতিষ্ঠার ১৫ বছর পেরতে যাওয়া এ বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিবছর সহস্রাধিক শিক্ষার্থী ভর্তি হয়। যার অধিকাংশ শিক্ষার্থীই জানেনা নোয়াখালীতে একজন বীরশ্রেষ্ঠ আছেন! এটি অত্যন্ত লজ্জা এবং পরিতাপের বিষয়।
শিক্ষার্থীদের এই না জানার পেছনের অন্যতম কারণ হলো বিশ্ববিদ্যালয়টিতে বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিনের নামে নেই কোনো স্মৃতিস্তম্ভ। কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো হল, ভবন বা ভাস্কর্য, কোথাও খুঁজে পাওয়া যায় না জাতির এই বীর সন্তানের নাম।
বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্মাণাধীন কয়েকটি ভবন, একাডেমিক বিল্ডিং, লাইব্রেরিসহ পাঁচটি আবাসিক হল থাকলেও কোনোটির নামকরণেই ঠাঁই পায়নি এই বীরশ্রেষ্ঠের নাম। বিশ্ববিদ্যালয়ের একমাত্র অডিটোরিয়ামটির নামকরণও করা হয়েছে স্থানীয় এমপির বাবার নামে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন বক্তৃতায় মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে অনেক গুণগান করলেও অন্তর থেকে কতটুকু স্মরণ করা হয় সে প্রশ্ন থেকেই যায়।’
বাংলাদেশ ও মুক্তিযুদ্ধ স্টাডিজ বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী সাবরিনা ইয়াছমিন বলেন, ‘আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার একটি ডিপার্টমেন্ট খোলা হয়েছে। কিন্তু নতুন প্রজন্মের অনেকেই বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিন সম্পর্কে জানেন না। বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিনের নামে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো ভবন কিংবা ভাস্কর্য বা যাদুঘর থাকা উচিৎ বলে আমি মনে করি। যেখানে শিক্ষার্থীরা তার সম্পর্কে জানবে, তার ত্যাগে দেশপ্রেম বাড়াবে।’
বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিনের নাতি সোহেল চৌধুরী বলেন, ‘নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়টির নাম বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিনের নামে হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তখনকার রাজনৈতিক ফ্যাসাদে তা আর হলো না।’
এ বিষয়ে সদ্য নিযুক্ত (পাঁচ মাস) নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. দিদার-উল-আলম বলেন, ‘বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিনের নামে কিছু করার চেষ্টা করব। ইনশাআল্লাহ।’