‘শিক্ষা বাণিজ্য’র ফাঁদে শাহ্ মখদুম মেডিকেলের ২০০ শিক্ষার্থী
চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে রাজশাহীর বেসরকারি শাহ্ মখদুম মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস করেছেন মামুনুর রশিদ। নিয়ম অনুযায়ী তাকে এখন ইন্টার্নশিপ করতে হবে। কিন্তু কোথাও ইন্টার্নশিপ করার সুযোগ মিলছে না তার। প্রাকটিস করতে না পারায় হতে পারছেন না পূর্ণাঙ্গ চিকিৎসকও। ফলে সরকারি ও অন্য মেডিকেলের সহপাঠী বা বড় ভাইয়েরা তাকে মজা করে ডাকছেন ‘হাফ ডাক্তার’!
কারণ যে প্রতিষ্ঠান থেকে মামুনুর এমবিবিএস পাস করেছেন, সেই শাহ মখদুম মেডিকেল কলেজের বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের (বিএমডিসি) কোনো অনুমোদন নেই। অধিভুক্তি বাতিল করে দিয়েছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ও (রাবি)।
মামুনুর রশিদ বার্তা২৪.কম-কে বলেন, আমি কলেজের প্রথম ব্যাচের শিক্ষার্থী। নানা সীমাবদ্ধতা ও ঝামেলা-ঝক্কি পেরিয়ে এমবিবিএস শেষ করেছি। ২০১৯ সালের ১২ মার্চ ফল প্রকাশ করা হয়েছে। কিন্তু আমি বিভিন্ন জায়গায় ঘুরেও ইন্টার্নশিপ করতে পারছি না। বিষয়টি শাহ মখদুম মেডিকেল কলেজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও অধ্যক্ষকে জানিয়েছি। তারা আমাকে কোনো সদুত্তর দিতে পারেনি। উল্টো বিষয়টি নিয়ে বাড়াবাড়ি না করতে হুমকি দিয়েছেন।
মামুনুর রশিদের সঙ্গে শাহ্ মখদুম মেডিকেল থেকে পাস করেছেন আরও তিন শিক্ষার্থী। তারা হলেন- রুমা খাতুন, মো. জিন্নাহ ও মৌ খাতুন। তারাও ঘুরছেন ইন্টার্নশিপের জন্য। পূর্ণাঙ্গ চিকিৎসক হিসেবে চেম্বার খুলতে ইন্টার্নশিপ খুবই প্রয়োজন। কিন্তু দ্বারে দ্বারে ঘুরেও তারা তা পারছেন না।
সমস্যা নিয়ে ওই চার শিক্ষার্থীর দৌড়ঝাঁপের বিষয়টি জানাজানি হলে সামনে আসে মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষের ভয়াবহ ‘প্রতারণা ফাঁদ’। বর্তমান শিক্ষার্থীরাও বিষয়টি নিয়ে স্পষ্ট হতে মেডিকেল কর্তৃপক্ষের কাছে যান। তখনি তারা জানতে পারেন অনুমোদনহীন মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী তারা। একাডেমিকভাবে এমবিবিএস পাস করলেও অনুমোদন না থাকায় সনদ পাওয়া এবং ইন্টার্নশিপ করতে পারবে না তারা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ পর্যন্ত কলেজে ৭টি ব্যাচে প্রায় ২০০ শিক্ষার্থী ভর্তি করেছে শাহ্ মখদুম মেডিকেল কলেজ। তাদের কাছ থেকে নেয়া হয়েছে মোটা অংকের টাকা। সেমিস্টারে সেমিস্টারে আদায় করা হয়েছে ফি। অথচ বিএমডিসি’র কোনো অনুমোদন নিতে পারেনি প্রতিষ্ঠানটি।
২০১৪ সালে কলেজটির বিরুদ্ধে অবৈধভাবে শিক্ষার্থী ভর্তির অভিযোগ উঠে। মেডিকেল কলেজের অনুমতি না থাকার পরও ৫০ জন শিক্ষার্থী ভর্তি করে কর্তৃপক্ষ। এরপর ২০১৫-১৬ সেশনে অনুমতি ছাড়াই ৫০ জন শিক্ষার্থী ভর্তি করায় অধিভুক্তি স্থগিত করে দেয় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।
জানতে চাইলে শাহ্ মখদুম মেডিকেল কলেজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মনিরুল ইসলাম স্বাধীন বলেন, আমরা বিএমডিসির অনুমোদনের জন্য আবেদন করেছি। তাদের প্রতিনিধি দল এসে প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করে কিছু শর্ত দিয়ে গেছেন। সেগুলো পূরণের চেষ্টা চলছে। পূরণ করতে পারলেই দ্রুত আমরা অনুমতি পেয়ে যাবো।
তবে, বিষয়টি নিয়ে ষড়যন্ত্র করে কিছু শিক্ষার্থীকে আন্দোলনে নামানো হচ্ছে বলে দাবি করেন তিনি।
আন্দোলনে শিক্ষার্থীরা: এদিকে, কলেজ কর্তৃপক্ষের প্রতারণার বিষয়টি সামনে আসার পর আন্দোলনে নেমেছেন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। রোববার (৯ ফেব্রুয়ারি) সকাল ৯টা থেকে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে কলেজের মাঠে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন তারা।
এর আগে শনিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্তও মানববন্ধন, বিক্ষোভ সমাবেশ করেন শিক্ষার্থীরা। তাদের দাবি- দ্রুত বিএমডিসি’র শর্ত পূরণ করে অনুমোদন নিশ্চিত করা হোক।