পুলিশি রাষ্ট্রের ভয়াবহতা তুলে ধরে ‘লেট মি আউট’
ঘটনাটি প্রায় শতবছর পূর্বে লস অ্যাঞ্জেলেসে ঘটে যাওয়া সত্য ঘটনা। যেখানে একটি নয় বছরের ছেলের হারিয়ে যাওয়া এবং ছেলেকে খুঁজে পেতে তার মায়ের সংগ্রামের কথা তুলে ধরা হয়েছে। সন্তানহারা মায়ের সন্তানকে ফিরে পাওয়ার আকুতি নিয়ে পুলিশের দ্বারস্থ হওয়ার পর তার উপর নেমে আসা অমানসিক অত্যাচারের ঘটনাও তুলে ধরা হয়েছে নাটকটিতে। এছাড়া একটা রাষ্ট্র যখন ‘পুলিশি রাষ্ট্র’ হয়ে যায় তখন রাষ্ট্রের চিত্র কতটা ভয়াবহ হতে পারে তা তুলে ধরা হয়েছে ‘লেট মি আউট’ নাটকে।
রোববার (১ মার্চ) সন্ধ্যায় জাহাঙ্গীরনগর থিয়েটারের ছয় দিনব্যাপী নাট্যপার্বণের শুরুর দিন বিশ্ববিদ্যালয়ের সেলিম আল দীন মুক্তমঞ্চে নাট্যদল তাড়ুয়ার পরিবেশনায় এবং বাকার বকুলের নির্দেশনায় মঞ্চায়িত হয় নাটক ‘লেট মি আউট’।
নাটকের দৃশ্য সংলাপে দেখা যায়, ১৯২৮ সালের লস অ্যাঞ্জেলেস পুলিশ ডিপার্টমেন্ট, যাদের রয়েছে স্পেশাল ফোর্স ‘গান স্কোয়াড’। এমন এক পুলিশ ডিপার্টমেন্টের বিরুদ্ধে ক্রিস্টিন কলিন্স নামে এক মায়ের অভিযোগের উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে নাটকের গল্প। নয় বছরের ছেলে ওয়াল্টার কলিন্সকে হারিয়ে ক্রিস্টিন পুলিশ ডিপার্টমেন্টের দ্বারস্থ হয়। ক্রিস্টিন কলিন্স ফিরে পেতে চায় তার সন্তানকে। কিন্তু প্রশাসনিক সিস্টেমের জটিলতায় অসহায় হয়ে পড়ে ক্রিস্টিন। সন্তান হারানো মা তার সন্তানকে ফিরে পেতে মরিয়া হয়ে পড়ে তবে পুলিশ ডিপার্টমেন্টের স্বেচ্ছাচারী ক্যাপ্টেনদের ব্যবহারে বিচলতি হয়ে পড়ে মা। একসময় সন্তান হারা মাকে পাগলা গারদে পাঠানো হয়। পুলিশ ডিপার্টমেন্টে অন্যায্য আচরণ আর ব্যর্থতার দায়ভার চাপিয়ে দিয়ে অসহায় মায়ের জীবনকে আরো দুর্বিষহ করে তোলা হয়।
অন্যদিকে পুলিশের স্পেশার ফোর্স ‘গান স্কোয়াড’র সন্ত্রাস নির্মূল, দুর্নীতি দমন এবং সমাজ সংস্কারের নামে বিচার বহির্ভূত শাস্তি ও হত্যাকাণ্ডে পুরো সমাজে অরাজকতা বিরাজ করতে থাকে। এদিকে বিচার বহির্ভূত হত্যার ভয়াবহতায় মানসিক ট্রমার মধ্য দিয়ে যেতে থাকা এক পুলিশ অফিসার আত্মদ্বন্দ্বে ভোগে। লস অ্যাঞ্জেলেস-এর নাগরিক জীবন ক্রমেই ভয়াবহ হয়ে ওঠে। শহরের শান্তি ফিরিয়ে আনতে প্রটেস্টান্ট গির্জার ফাদার মিসেস ক্রিস্টিন কলিন্স’র পাশে দাঁড়ায় আর এভাবে এগিয়ে যায় নাটকের দৃশ্য।
প্রায় শত বছর পূর্বের ঘটনা নিয়ে এমন ব্যতিক্রমী নাটক নির্দেশনার কারণ জানতে চাইলে নাটকটির নির্দেশক বাকার বকুল বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘প্রায় শত বছর পূর্বে লস অ্যাঞ্জেলেসে একটা ঘটনা ঘটে এবং সেখানে পুলিশের স্বেচ্ছাচারের ফলে একটা রাষ্ট্রের কি অবস্থা হতে পারে তা আমরা দেখেছি। এ অবস্থায় নির্বিচারে অন্যায় ঘটতে থাকা এবং তার বিপরীতে কথা না বলার সংস্কৃতি রাষ্ট্রকে শেষ করে দিতে পারে। আমরা নাটকের মধ্যে দিয়ে শত বছর আগের ঘটনা তুলে ধরতে চাইলেও এখন এই সময়ে এই দেশে আমরা দেখতে পাই লস অ্যাঞ্জেলেসের ঘটনার মত অহরহ ঘটনা ঘটে চলছে। লস অ্যাঞ্জেলেসের ঘটনাটিতে শেষ পর্যন্ত বিচার হলেও আমাদের দেশে স্বাধীনতার ৫০ বছরেও কি কোন অন্যায়, অবিচার, গুপ্ত হত্যার বিচার হচ্ছে? আমরা সেই প্রশ্নগুলো নাটকটির মধ্যে দিয়ে উপস্থাপন করতে চেয়েছি।’
প্রসঙ্গত, ‘কালের করাঘাতে জেগে উঠুক দ্রোহের লাল’ স্লোগানে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে শুরু হয়েছে নাট্যপার্বণ ২০২০। ছয় দিনব্যাপী নাট্যপার্বণের প্রথম দিন মঞ্চায়িত হয় নাটক ‘লেট মি আউট’। এছাড়া সোমবার সন্ধ্যায় জাহাঙ্গীরনগর থিয়েটারের পরিবেশনায় নাটক ‘দ্যা বেট’, মঙ্গলবার প্রাচ্যনাটের পরিবেশনায় নাটক ‘পুলসিরাত’, বুধবার আপস্টেজের পরিবেশনায় ‘রাত ভ'রে বৃষ্টি’, বৃহস্পতিবার নাট্যদল প্রাঙ্গনেমোরের পরিবেশনায় ‘ঈর্ষা’ মঞ্চস্থ হবে।
এছাড়া আগামী শুক্রবার জাহাঙ্গীরনগর থিয়েটারের প্রাক্তন ও বর্তমান নাট্যকর্মীদের পুনর্মিলনীর মাধ্যমে নাট্যপার্বণ শেষ হবে। এদিন গীতিকার ও মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ রফিকুজজামানকে ‘গুণীজন’ সম্মাননা এবং আহম্মেদ কবিকে নাট্যজন সম্মাননা প্রদান করা হবে।