অনিন্দ্য চবি ক্যাম্পাসে রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের লাল-সবুজ তরঙ্গ
বৃহস্পতিবার (৫ মার্চ) চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) শুরু হয় অন্য রকম একটি দিন। সকাল থেকেই সবুজ ক্যাম্পাসে রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের প্রাণোচ্ছল তরঙ্গ বয়ে যায়। স্বাধীনতার অগ্নি ও রক্ত স্মৃতিস্পর্শী মার্চ মাসের আবহে লাল আর সবুজের সুসমন্বিত পোষাকে কয়েক হাজার নবীন ও প্রবীণ শিক্ষার্থীর পদভারে মুখরিত হয় বাংলাদেশের দূরপ্রান্তের পাহাড় ও অরণ্যের এই অনিন্দ্য লোকালয়।
রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগের গৌরবময় ৫০ বছর পেরিয়ে সুবর্ণ জয়ন্তীর আনুষ্ঠানিকতায় অংশ নিতে বিভাগের কয়েক হাজার শিক্ষার্থী আসেন দেশ-বিদেশ থেকে। চবি ক্যাম্পাসের পুরো দিনটিই পরিণত হয় রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের স্মৃতি ও অর্জন মাখানো একটি লাল-সবুজের নিজস্ব দিনে, যে দিনের আয়োজনের মিডিয়া পার্টনার বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় জনপ্রিয় অনলাইন মাল্টিমিডিয়া নিউজপোর্টাল, 'বাংলার, বাঙালির সংবাদ সারথি', বার্তা২৪.কম।
অনন্য অনুষ্ঠানমালায় অনেকে আসেন পরিবার-পরিজন নিয়ে। কারও হাত ধরে ছোট্ট শিশুও চলে আসে পিতা বা মাতার বিভাগ দেখতে। আনন্দে মেতে উঠে সবাই। কেউ কেউ এসেছেন বিদেশ থেকে। বহু বছর পর সতীর্থদের দেখা পেয়ে আবেগ, আনন্দ আর উচ্ছ্বাসে মাতেন সবাই।
সকালে এক ঐতিহাসিক আনন্দ মিছিলে শিক্ষার্থীরা প্রদক্ষিণ করেন প্রাণের ক্যাম্পাস। সম্মিলিত পায়ে হাঁটেন একদার প্রিয় প্রাঙ্গণে। নিসর্গ ও প্রকৃতিতে মিশে খুঁজে পেতে চান হারিয়ে যাওয়া দিনগুলোকে।
সেলফি আর গ্রুপ ছবি তোলার উৎসব শুরু হয় তারপরেই। 'কতদিন পর দেখা, আয়, ছবি তুলে রাখি' বলে একক, যৌথ ও সম্মিলিত ক্লিক ক্লিক শব্দে মুখরিত হয় শত শত মোবাইলের অত্যাধুনিক ক্যামেরা। আবার কবে দেখা হবে, একসাথে মিলনের সুযোগ আসবে, কেউ জানেনা। তাই সবাই প্রাণভরে ধারণ করেন বন্ধু-বান্ধবী-সহপাঠীদের ছবি।
দুপুরে বিশাল প্যান্ডেলে শুরু হয় মূল আয়োজন। পাঠ করা হয় সুবর্ণ জয়ন্তী উপলক্ষে প্রদত্ত মহামান্য রাষ্ট্রপতি ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বাণী। সংবর্ধনা স্মারক জ্ঞাপন করা হয় বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা প্রফেসর ড. আর. আই. চৌধুরীসহ প্রাক্তন শিক্ষক, কৃতবিদ গবেষক ও সফল শিক্ষার্থীদের। আলোচনায় স্মরণ করা হয় মহান মুক্তিযুদ্ধে বিভাগের শিক্ষার্থীদের আত্মদান, অবদান ও বীরত্ব।
মধ্যাহ্নভোজের পর বিভিন্ন বর্ষের শিক্ষার্থীদের অনবদ্য স্মৃতিচারণায় ঘুরে-ফিরে আসে অম্ল-মধুর ইতিবৃত্ত। স্মৃতির সেতুতে রচিত হয় পুরনো আর নতুনের মেলবন্ধন। গ্রন্থিত হয় আগামীর স্বপ্ন ও পথচলার প্রত্যয়।
বসন্তের বিকেলে মনোরম ক্যাম্পাসের প্রাকৃতিক পরিবেশের আদি ও অকৃত্রিম ধ্বনিপুঞ্জের সমান্তরালে ঢেউ জাগায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের সুর ও ছন্দ। প্রাণের সবটুকু আকুতি নিয়ে শিক্ষার্থীরা গানে, কবিতায়, আবৃত্তিতে ভেসে যান নান্দনিক সুষমায়।
এরই মাঝে, ফাঁকে ফাঁকে চলতে থাকে আড্ডা, আলাপ, হাসি, খুনসুটি। পুরনো কথা আর স্মৃতিরা ভিড় করে চারপাশে। বহু বহু বছরের অদেখার পর ফিরে পাওয়া প্রিয় ক্যাম্পাসে প্রিয় সতীর্থের চোখে চোখ আর হাতে হাত রেখে বিমূর্ততায় পেরিয়ে যায় খানিকটা সময়। মনের গহীন থেকে উচ্চরিত হয়, 'হয়ত আবার আসবো কোনো একদিন। হয়ত আসবো না কোনোদিনও।'
কেউ জানেনা, এ দেখাই শেষ দেখা হয়ত কিংবা হয়ত না। ৫০ বছরের মাহেন্দ্রক্ষণের পর হীরক জয়ন্তীতে আবার জমবে সমাবেশ ৭৫ বছরের সময়সীমার প্রান্তে। তখন, কে থাকবে, কে থাকবেনা, কে আসবে, কে আসবেনা, কেউ জানেনা।
বিরহকে ছুঁয়ে যাওয়া মিলনের দীর্ঘ সমাবেশে সুদীর্ঘ ছায়া ফেলে ফাগুনের সূর্য বিদায় নেয় পাহাড়ে ওপারে পশ্চিমের সমুদ্রগামী দিগন্তে। সারাটা আকাশ আবিরের লালে লালে মিশিয়ে দেয় ভালোবাসার রঙ, বাতাস মন্দ্রিত লয়ে বুলিয়ে দেয় উষ্ণতা। রাতের অন্ধ-অন্ধকার নেমে আসার আগে কেউ একজন অন্তঃস্থিত কণ্ঠের একান্ত উচ্চারণে গুণ গুণ করেন, 'যখন পড়বেনা মোর পায়ের চিহ্ন এই বাটে...।'