ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নই ইআরও'র লক্ষ্য
বিখ্যাত দার্শনিক হেলেন কিলারের একটি কথা আছে। কথাটি হলো ‘পৃথিবীর সুন্দরতম জিনিসগুলো হাতে ছোঁয়া যায় না, চোখে দেখা যায় না, সেগুলো একমাত্র হৃদয় দিয়ে অনুভব করতে হয়- ভালবাসা, জীবে দয়া আর আন্তরিকতা।’ কথাটির দ্বারা তিনি মানুষে মানুষ ভালবাসা, পরস্পরের প্রতি ভ্রাতৃত্ব আর সৌহার্দের প্রতি ইঙ্গিত দিয়েছেন।
সমাজে অনেক মানুষ আছেন যারা অন্যের জন্য কাজ করেন। অনেক সংগঠন রয়েছে যেগুলো মানব কল্যাণে কাজ করছে। তেমনই একটি সংগঠন ইকুয়্যাল রাইটস্ অর্গানাইজেশন (ইআরও)। অনেকদিন ধরে দেশের সংখ্যালঘু ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে কাজ করছে সংগঠনটি।
প্রতিষ্ঠার মাত্র দুই বছরের মধ্যেই প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় হতে সমতলের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে গৃহীত ‘বিশেষ এলাকার জন্য উন্নয়ন সহায়তা’ (পার্বত্য চট্টগ্রাম ব্যতীত) শীর্ষ কর্মসূচির আওতায় ১০ লাখ ২৫ হাজার টাকার বরাদ্দ পায় সংগঠনটি।
গত ফেব্রুয়ারিতে বরাদ্দ পাওয়া টাকায় ২০ জনকে তিনমাসের সেলাই মেশিন প্রশিক্ষণ ও মাসিক ১ হাজার টাকা ভাতা বাবদ মোট ২ লাখ ৬৫ হাজার টাকা প্রদান করা হয়। এরপর প্রাথমিক থেকে শুরু করে উচ্চমাধ্যমিক ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের ১৩০ জন শিক্ষার্থীকে ৩ থেকে ৬ হাজার টাকা পর্যন্ত মোট ৪ লাখ টাকার শিক্ষাবৃত্তি দেওয়া হয়। শিক্ষাবৃত্তি ছাড়াও ৪শ জনকে ৩ লাখ ২০ হাজার টাকার শিক্ষা ও স্বাস্থ্য উপকরণ প্রদান করা হয়। ২০১৮ সালের মাঝামাঝিতে সংগঠনটি অসহায়দের মাঝে বস্ত্র বিতরণ এবং ওই বছরই বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা উপকরণ বিতরণের একটি প্রকল্পের আওতায় সংগঠনটি ১৬০ জন শিক্ষার্থীকে শিক্ষা উপকরণ বিতরণ করে।
সংগঠনটি প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে প্রতিষ্ঠাতা রাজ কিরণ দাস বলেন, '২০১৫-১৬ সালে ২০ জন ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর শিক্ষার্থীকে প্রধানমন্ত্রী নিজ হাতে শিক্ষাবৃত্তি প্রদান করেন। অনুষ্ঠানে দেশের পাহাড়ি ও সমতলের জনগোষ্ঠীদের নিয়ে একটি প্রামাণ্য চিত্র প্রদর্শন করা হয়। প্রামাণ্য চিত্রটি দেখার পর তাদের নিয়ে কাজ করার আগ্রহ তৈরি হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হওয়ায় বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলে কাজ শুরু করি। অনুপ সুত্রধর, অনামিকা সাহা, সুকমল চাকমাসহ বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করে। তাদেরকে সঙ্গে নিয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে কার্যক্রম শুরু করি'।
মান্দা উপজেলার ঘাটকৈর গ্রামের দুলালি সরদার সংগঠনটির সেলাই মেশিন প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। তিনি বলেন ইন্টারমিডিয়েট পাশ করে বেকার ছিলাম। পরে ইআরও’র সেলাই মেশিন প্রশিক্ষণ করি। সংগঠনটি আমাকে সেলাই মেশিন দিয়েছে। প্রথম দিকে টুকটাক কাজ করতাম। এখন ভালই কাজ পাচ্ছি। নিজে স্বাবলম্বী হয়েছি। পরিবারকেও আর্থিকভাবে কিছুটা সহযোগিতা করতে পারছি।
সংগঠনটির পক্ষ থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সোনালী রাণীকে শিক্ষাবৃত্তি দেওয়া হয়। সোনালী রাণী বলেন, পরিবারে বাবা ছাড়া উপার্জনক্ষম আর কেউ নেই। সংসারের খরচ জুগিয়ে পড়ালেখার খরচ চালানো বাবার জন্য বেশ কষ্টসাধ্য। তবে সংগঠনটির পক্ষ থেকে শিক্ষাবৃত্তি পেয়ে বেশ উপকার হয়েছে।
সংগঠনের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ও কার্যক্রম সম্পর্কে রাজ কিরণ দাস বলেন, 'সংখ্যালঘু ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীরা বর্তমানে কিছুটা অধিকার বঞ্চিত। আমরা এসব জনগোষ্ঠীর কণ্ঠস্বর হতে চাই। সংগঠনটির মাধ্যমে এসব জনগোষ্ঠীর অধিকার আদায়ে সচেতন করা ও রাষ্ট্রীয় পরিমণ্ডলে অংশগ্রহণের সুযোগ তৈরি করে দেওয়াই আমাদের মূল লক্ষ্য। যতদিন সামর্থ্য থাকবে ততদিন এই জনগোষ্ঠীদের সেবা করার ব্রত নিয়েই কাজ করতে চাই'।