করোনাকালে যে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী উপস্থিতির হার ৯৯ শতাংশ
প্রতি ক্লাসে ছাত্র-ছাত্রী বসার আয়োজন ৩০ জনের। স্বাভাবিক সময়ে যখন ক্লাস চলত তখন প্রতিদিন উপস্থিতির গড় হার ছিল ২৪- ২৫ জন। এখন করোনার সময় প্রতিদিন গড়ে ক্লাস করছেন ২৯ থেকে ৩০ জন। যার গড় হলো ৯৯ শতাংশ। ক্লাসগুলো চলছে অনলাইনে। ঘরে বসেই শিক্ষা কার্যক্রম চালু রাখার ব্যতিক্রমী এই সুযোগ পাচ্ছেন দেশের অন্যতম নামকরা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ইস্ট ডেল্টা ইউনিভার্সিটির (ইডিইউ) শিক্ষার্থীরা।
গুগলের জিসুইট, কোর্সএরা, টার্নইটইন সাবস্ক্রিপশন মাধ্যমে নিয়মিত ক্লাস করছেন চট্টগ্রামের নাসিরাবাদ এলাকায় অবস্থিত বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীরা। টার্নইটইন-এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা তাদের প্রেসেন্টেশন জমা দিতে পারবেন। তবে সে প্রেসেন্টেশন একজন যদি আরেকজনেরটা হুবুহ লিখে পাঠায় তাহলে টার্নইটইন এটি শনাক্ত করে দিবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে।
দৃষ্টিনন্দন এ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান গেট থেকে শুরু করে সকল ক্লাস-অফিসরুম এখন বন্ধ রয়েছে। কিন্তু দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে এই বিশ্ববিদ্যালয়টি একমাত্র তাদের ক্লাস ও প্রশাসনিক কার্যক্রম চালু রাখছে নিয়মিত। কোভিড-১৯ এর কারণে কোনোভাবেই ব্যাহত হচ্ছে না এর স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রম।
বিশ্ববিদ্যালয়টির ১০০ এর বেশি শিক্ষক এবং ২৫০ এর বেশি কর্মকর্তা-কর্মচারী তাদের মাসিক বেতন নিয়মিত পেয়ে যাচ্ছেন। একইসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের ২২শ ছাত্র-ছাত্রীর ঘরে বসেই তাদের টিউশন ফিসহ বিভিন্ন ধরনের ফি অনলাইনে জমা দিচ্ছেন। এর জন্য দেশের বেসরকারি ৩৫ টি ব্যাংক, বিকাশ, রকেটের মাধ্যমে লাখ লাখ টাকার লেনদেন হচ্ছে।
বিশ্ববিদ্যালয়টির অন্যতম উদ্যোক্তা ড. সাঈদ আল নোমান তূর্য বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘করোনার জন্য এ রকম আগাম প্রস্তুতি নেওয়া হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয়ের আধুনিক প্রযুক্তি চালুর ধারণা থেকে বিভিন্ন সুবিধার ব্যবস্থা আগে করে রাখা হয়েছিল। বিশেষ করে ২০১৪ সালের হরতাল-অবরোধের সময় যখন, শিক্ষার্থীদের অসুবিধা হচ্ছিল, তখন ভিডিওর মাধ্যমে সীমিত আকারে বাসায় বসে পাঠদান করা হত। এই প্রক্রিয়া ধীরে ধীরে আরও উন্নত করা হয় যা এখন দারুণভাবে কাজে আসছে’।
এত বিপুল সংখ্যক ছাত্র-ছাত্রী করোনার সময় কেন ক্লাস করছে এ রকম এক প্রশ্নের জবাবে বিশ্ববিখ্যাত অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রিধারী তূর্য বলেন, শিক্ষার্থীদের এখন ক্যাম্পাসের আসার জন্য যানজটের মতো ঝামেলায় পড়তে হচ্ছে না। সহপাঠীদের অনুপস্থিতিতে ক্লাসে যেকোনো বিষয়ে শিক্ষককে প্রশ্ন করতে পারছেন অনায়সে। আগে সাধারণত সহপাঠীদের লজ্জায় অনেক বিষয় না বুঝে এড়িয়ে গেছেন শিক্ষার্থীরা। অনলাইন ক্লাসের কারণে তারা সে লজ্জা বা বিব্রত হওয়ার মতো পরিস্থিতিতে নেই। কারণ শিক্ষার্থীরা এখন জানার ও বুঝে নেওয়ার বিষয়টি তার শিক্ষকের কাছ থেকে সরাসরি জানতে পারছেন।
এ ধরনের অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের নতুন ধারণা ও অভিজ্ঞতার সঙ্গে যুক্ত করছে।
করোনার সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ঘরে বসে বৈশাখী উৎসবও পালন করেছে। নাচ-গানসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠান ইউটিউবের মাধ্যমে নিজেরা একে অপরের কাছে অনায়সে যুক্ত হতে পেরেছে। যা তাদের একঘেয়েমী দূর করে দিয়েছে।
২০০৮ সালের মাত্র ৫ জন শিক্ষার্থী নিয়ে যাত্রা শুরু করে এ বিশ্ববিদল্যায়টি। বর্তমানের এ ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা ২ হাজার ২০০ জন। তাদের প্রথম কনভোকেশন অনুষ্ঠিত হয় গত বছর। যাতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ডা. দীপু মনি।
বিশ্ববিদ্যালয় কৃর্তপক্ষ জানিয়েছে, প্রজেক্ট, প্রেসেন্টেশন ও অ্যাসাইনমেন্টের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের বার্ষিক মূল্যায়ণ করা হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এখন থেকে ঘরে তাদের আগামী সেশনের সাবজেক্ট পছন্দ করতে পারবেন। আগে সাধারণত এই কাজটি করা হত ম্যানুয়ালি ও শিক্ষকের পরামর্শে। অর্থাৎ এমন এক নতুন পদ্ধতি উদ্ভাবন করল ইডিইউ-যাতে কোভিড-১৯ এর সময় ঝুঁকি নিয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের আর ক্যাম্পাসমুখী হচ্ছে না। ঘরে বসে নিরাপদে থেকেই শিক্ষা কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে পারছেন শিক্ষার্থীরা।