দুর্নীতি: একালের ডক্টর জেকিল অ্যান্ড মিস্টার হাইড সমাচার

  • ড. মাহফুজ পারভেজ
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

দেশে দুর্নীতি বন্ধে 'বিশেষ কমিশন' গঠন এবং ব্যাংকের অর্থ আত্মসাৎকারীদের বিচারে 'ট্রাইব্যুনাল গঠন' করার দাবি জানিয়েছেন ক্ষমতাসীন জোটের শরিক ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন। তার মতে, 'দুর্নীতির এই মচ্ছব বন্ধ করতে এখনই বিশেষ কমিশন গঠন করুন, দুর্নীতিবাজদের অর্থ সম্পদ বাজেয়াপ্ত, বিচার করে কঠিনতম শাস্তি দিন। ঋণখেলাপী অর্থ আত্মসাৎকারীদের জন্য ট্রাইব্যুনাল গঠন করুন।'

বিষয়টি নিয়ে কথা বললে সরকারের আরেক অন্যতম শরিক ১৪ দল জোটভুক্ত গণতন্ত্রী পার্টির সাধারণ সম্পাদক ভূপেন্দ্র ভৌমিক দোলন বলেন, 'দুর্নীতির বিরুদ্ধে আমাদের নীতিগত অবস্থান সব সময়ই সোচ্চার ও সুস্পষ্ট।' বাংলাদেশের বাস্তবতায় বিরোধী দল বা সরকার-সমর্থক থেকে শুরু করে আমজনতার দরবার পর্যন্ত 'দুর্নীতি' সর্বাধিক আলোচিত ও ধিকৃত বিষয়। এ কথা এখন আর কারো পক্ষেই অস্বীকার করার উপায় নাই যে, সাবেক পুলিশ প্রধান ও সেনা প্রধানের দুর্নীতির চিত্র হিমশৈলের ক্ষুদ্র চূড়া মাত্র, যার সূত্রে বহু ঊর্ধ্বতন সরকারি পদাধিকারীর হাজার কোটি টাকার সম্পদের গোপন জগৎ উন্মোচিত হচ্ছে। এমনকি, সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিদায়ী বিচারপতি মুহাম্মদ আবদুল হাফিজ পেশাজীবনের শেষপ্রান্তে এসে সবিস্ময়ে প্রশ্ন তুলেছেন, সরকারের বেতনভুক্ত কর্মকর্তা-কর্মচারী কীভাবে কোটি কোটি, এমনকি শতকোটি টাকার মালিক হন?

বিজ্ঞাপন

সন্দেহ নেই, লাগামহীন দুর্নীতির ঘটনাগুলো দেশবাসীকে হতবাক করেছে। যে কারণে প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে আট সদস্যের আপিল বেঞ্চের বিদায়ী বক্তব্যে বিচারপতি হাফিজ বলেন, দুর্নীতি আমাদের সব অর্জনকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। দুর্নীতির ব্যাপকতা অনেক। দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের হাত থেকে অফিস-আদালতকে মুক্ত রাখতে হবে। রাষ্ট্রকেই এ দায়িত্ব নিতে হবে। তাহলে দেশ উপকৃত হবে। মানুষ অযাচিত বিপদ থেকে রক্ষা পাবে।

বাংলাদেশের 'দুর্নীতি' দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশেও আলোচিত বিষয়। মালয়েশিয়ায় 'সেকেন্ড হোম', কানাডায় 'বেগমপাড়া', দুবাই-আবুধাবিতে 'মল-মার্কেট' নিয়ে কথা হলেই বাংলাদেশের দুর্নীতির সূত্র সামনে চলে আসে। দুর্নীতির মাত্রা কোন দেশে কেমন, সে সম্পর্কে ধারণা দিতে প্রতিবছর যে প্রতিবেদন প্রকাশ করে জার্মানির বার্লিনভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল (টিআই), তাতেও বাংলাদেশের সরব উপস্থিতি বিদ্যমান। বিগত ২০২৩ সালের জন্য দুর্নীতির ধারণাসূচক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে তারা। সেই প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, দুর্নীতির মাত্রা বিশ্বের যেসব দেশে সবচেয়ে বেশি, তার মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান দশম। এর আগে ২০২২ সালে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১২তম। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের (টিআই) প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, যেসব দেশে গণতন্ত্র নেই এবং যেসব দেশে কর্তৃত্ববাদী শাসন রয়েছে, সেসব দেশের চেয়েও বাংলাদেশে দুর্নীতির মাত্রা বেশি।

বিজ্ঞাপন

ফলে দুর্নীতি যে হচ্ছে, তা আড়াল করা অসম্ভব। বরং এখনই বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করে দুর্নীতির এই বিস্তার রোধ করা না গেলে হিমশৈলের ধাক্কায় দেশের উন্নয়ন অগ্রগতির সলিল সমাধি হবে। দুর্নীতিবাজরা সাধুর ছদ্মাবরণে দেশের সম্পদ লুটে নিতে থাকবে। এমনকি, তাদের সন্তানরা লাখ লাখ টাকার গরু-ছাগলের ঘটনা ঘটাবে। কন্যারা কোটি টাকার গাড়ির ফুটানি মারবে। স্ত্রীগণ ডুপ্লেক্স বাড়ি ও রিসোর্টের মালিক বনে যাবে।

কিন্তু দুর্ভাগ্য আমরা এখানে দেখলাম পুলিশ অ্যাসোসিয়েশন থেকে দুর্নীতির খবর প্রকাশ করার জন্য সাংবাদিকদের ধমক দেওয়া হয়েছে। অনেক মন্ত্রী এ তথ্যকে অনুমান ভিত্তিক বলে অভিহিত করছেন। এগুলো করে সত্য গোপনের চেষ্টা চালালেও প্রকৃত চিত্র ধামাচাপা দেওয়া যাবে না। মার্কিন ফিনানশিয়াল ইনটিগ্রেটি ইনস্টিটিউশন দেখিয়েছে যে, বছরে ৭ বিলিয়ন ডলার বাংলাদেশ থেকে পাচার হয়ে যাচ্ছে। এই অর্থ বিনিয়োগ হচ্ছে কানাডার বেগম পাড়ায়, মালয়েশিয়ার সেকেন্ড হোমে, সিঙ্গাপুর, দুবাইয়ের আধুনিক শপিংমল, রিয়েল এস্টেট ও হুন্ডি ব্যবসায়। এই টাকার লভ্যাংশও দেশে আসছে না। পাচারকৃত টাকা ফিরিয়ে আনার কোনো উদ্যোগ নাই। অথচ প্রবাসীরা বিদেশে হাড়ভাঙা খাটুনীর যে আয় দেশে পাঠায় তার ওপর কর বসানো হচ্ছে। তাদের বিদেশ যাত্রা নিয়ে হাজার হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে।

পরিস্থিতি কতটুকু মারাত্মক হলে স্বয়ং সরকার সমর্থক হয়েও মেনন পর্যন্ত বলতে বাধ্য হন, 'এই অর্থ সম্পদ উপার্জনের অন্যতম মাধ্যম হচ্ছে ব্যাংক থেকে টাকা নিয়ে তা ফেরত না দেওয়া, ব্যাংক লুট ও দুর্নীতি। ২০০৯ সালে ২২ হাজার ৪৮১ কোটি টাকার এমন ঋণ এখন ১ লাখ ৮২ হাজার কোটি টাকা। পুণঃতফসিলীকরণ ও অবলোপন ধরলে এর পরিমাণ ৪ থেকে ৫ লাখ কোটি টাকা দাঁড়াবে। তিনি বলেন, 'ব্যাংকিং ক্ষেত্রে সুশাসন ফিরিয়ে আনতে "ব্যাংক কমিশন" গঠন করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন সাবেক অর্থমন্ত্রী আবদুল মুহিত। পরের অর্থমন্ত্রী তাকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিয়েছেন। আর এখন ব্যাংক নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক তুঘলকি কাণ্ড করছে।'

একই কথা বলা যায় কালো টাকা সাদা করার বিষয়ে। দেখা যাচ্ছে, ঘুষ, দুর্নীতি ও লুটের টাকাকে যখন সাদা করার জন্য সৎ উপায়ে অর্জিত অর্থের চেয়ে অর্ধেক কর দিয়ে সাদা করার প্রস্তাব করা হয় তখন সেটা সততার জন্য তিরস্কার ও অসততার জন্য পুরস্কারের শামিল হয়ে দাঁড়ায়। এ সম্পর্কে যেসব যুক্তি দেওয়া হচ্ছে তা কেবল অসাড়ই নয়, সরকারের অতীত অবস্থানের বিপরীত।

দুর্নীতি ও অবক্ষয়ের ছাপ আজিজ, বেনজির, ছাগলকাণ্ড ছাড়াও সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম খুনের ঘটনায় দৃশ্যমান, যাতে এই দুঃখজনক ঘটনাকে কেন্দ্র করে দেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের স্বর্ণ—মাদক চোরাচালানি ও অপরাধ জগতের চিত্র বেরিয়ে আসছে। আগেই রাজনীতি ও সংসদে ব্যবসায়ীদের দাপট বেড়েছিল। এবার অপরাধের প্রসঙ্গও যুক্ত হওয়ায় রাজনীতি আরো কোণঠাসা হয়েছে ও দুর্বৃত্তায়নের মাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে সংসদের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে। এসব বিষয় গভীরভাবে খতিয়ে দেখা ও আত্মসমালোচনা হওয়া দরকার।

অনেকেই বিশ্বাস করেন, নিষ্ঠুর অলিগার্করা দেশের অর্থনীতি নিয়ন্ত্রণ করছে। সেই অলিগার্কির স্বার্থ রক্ষার্থে মূল্যস্ফিতি কমিয়ে আনা যায়নি। দ্রব্যমূল্যের ক্রমবর্ধমান ঊর্ধ্বগতি, দুর্নীতি, অর্থপাচার, ব্যাংকিং খাতে লুট ও নৈরাজ্য, খেলাপি ঋণের বিশাল পাহাড় দেশের অর্থনীতিকে ভঙ্গুর অবস্থায় উপনীত করেছে। এর থেকে অর্থনীতিকে পুনরুদ্ধার, জন ও রাষ্ট্রীয় জীবনে স্বস্তি ফিরিয়ে আনাই ছিল বর্তমান সময়ের জরুরি কর্তব্য। বাজার সিন্ডিকেট আগের মতো খেলা করছে। মানুষকে তার শিকারে পরিণত করছে। সরকার স্বীকার করছে সিন্ডিকেট রয়েছে। কিন্তু সিন্ডিকেট ভাঙার কোনো উদ্যোগ নেই।

অতীতেও বাংলাদেশ দুর্নীতিতে পাঁচ পাঁচবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। তার বিরুদ্ধে তীব্র সমালোচনা ও প্রতিবাদ হয়েছে। অর্থনীতিবিদগণ সব সময়ই বলছেন, দুর্নীতি বন্ধ করতে পারলেই আমাদের প্রবৃদ্ধি আড়াই ভাগ বৃদ্ধি পেত। অতীত আমলের দুর্নীতির বিশ্ব সূচকে আমাদের সেই কলঙ্ক কিছুটা দূর হলেও ওই সূচকে বাংলাদেশ এখনও শীর্ষ দশের মধ্যে রয়েছে। বরং সরকারি পদ-পদবী ও ক্ষমতার অপব্যবহার করে দুর্নীতির যে চিত্র সম্প্রতি বেরিয়ে আসছে তা দেশের ভাবমূর্তি কেবল নয়, সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে হতাশা এবং সার্বিকভাবে জনমনে অনাস্থার সৃষ্টি হচ্ছে।

এহেন মাত্রাছাড়া দুর্নীতির আর্থ-সামাজিক, প্রাতিষ্ঠানিক ও রাজনৈতিক কারণ থাকলেও এর মনস্তাত্ত্বিক কারণটি মোটেও অবজ্ঞা করার মতো নয়। মন ও মানসিকতার দিক থেকে চরম অসৎ, অসুস্থ ও বিকৃত হলেই কেবল একজন মানুষ মাতাল মহিষের মতো অর্থ ও সম্পদের পিছনে ছুটতে পারে। তার প্রয়োজনের চেয়ে হাজার গুণ বেশি সম্পদ কামানোর জন্য অবৈধ পথে পাগলের মতো আচরণ করতে পারে। অতএব, তাদের অপরাধবৃত্তি ও দুর্নীতিপরায়নতার প্রকৃত স্বরূপ উন্মোচনের স্বার্থে মনস্তাত্ত্বিক গবেষণা হওয়া দরকার। এতে সাদা ও সাধু সেজে লুটপাট ও দুর্নীতি চালিয়ে যাওয়া কালো বিড়ালদের শনাক্তকরণ সহজ হবে এবং আইনের আওতায় আনাও সম্ভব হবে।

এক্ষেত্র একটি উপন্যাস স্মরণযোগ্য, যার শিরোনাম 'স্ট্রেঞ্জ কেস অব ডক্টর জেকিল অ্যান্ড মিস্টার হাইড'। উপন্যাসটি হল স্কটিশ লেখক রবার্ট লুইস স্টিভেনসন রচিত রহস্য আখ্যান। এটি ১৮৮৬ সালে প্রথম প্রকাশিত হয়। লন্ডনের আইনজীবী গ্যাব্রিয়েল জন আটারসন তার পুরনো বন্ধু ডক্টর হেনরি জেকিল ও তার অশুভ সত্তা এডওয়ার্ড হাইডের মধ্যকার অদ্ভুত ঘটনাবলির তদন্ত এই উপন্যাসিকার উপজীব্য বিষয়। উপন্যাসিকাটির প্রভাব এতটাই যে এটি ইংরেজি ভাষার অংশ হয়ে ওঠে, এবং "জেকিল অ্যান্ড হাইড" শব্দগুচ্ছ দিয়ে এমন কোন ব্যক্তিকে বোঝানো হয় যার দ্বৈত সত্তা রয়েছে, সাধারণত খুব ভালো কিন্তু মাঝে মাঝে অপ্রত্যাশিত রকমের মন্দ।

কাহিনীতে রয়েছে, ডাক্তার জেকিল নিজের ব্যবহারের জন্য একটি ঔষধ আবিষ্কার করতে সক্ষম হন যেটি ব্যবহার করলে তিনি বিপরীত চরিত্রের একজন মানুষে পরিণত হয়ে যাবেন অর্থাৎ তার মনের যেসব খারাপ দোষ রয়েছে সেগুলো মুখ্য হয়ে উঠবে এবং তিনি সেভাবেই ইচ্ছা অনুযায়ী কাজ করবেন। আবার আর একটি ঔষধ প্রয়োগ করে তিনি স্বাভাবিক অবস্থায় ফেরত আসতে পারবেন। এভাবেই ডাক্তার তার মধ্যকার ভালো এবং মন্দ এই দুটো স্বভাবকে নিয়ে একই দেহের ভিতর দুটি মানুষকে লালন পালন করতে শুরু করলেন। তিনি খারাপ মানুষটির নাম দিলেন মিস্টার হাইড। এই রকম ভাবে তিনি দিনের বেলায় ডক্টর জেকিল এবং রাতে মিস্টার হাইড হয়ে জীবন যাপন করতে থাকেন।

এক সময় এমন পরিস্থিতি হলো যে তিনি না চাইলেও মিস্টার হাইডে রূপান্তরিত হতে লাগলেন। দেখা গেলো যে তার দ্বিতীয় ঔষধ যা প্রয়োগ করে তিনি মিস্টার হাইড থেকে ডক্টর জেকিল হতেন তা আর কাজ করছে না। ফলে তার মনুষ্যত্বের বদলে পশুত্ব স্থায়ী হতে লাগল। এরই মধ্যে মিস্টার হাইড খুন করে বসলেন এক লোককে। তার মধ্যেকার আত্মগ্লানি থেকে রক্ষা পেতে আত্মহত্যা করলেন আসল ব্যক্তি ডক্টর জেকিল।

আমাদের দুর্নীতিবাজগণ প্রকাশ্যে ভালো মানুষ ডক্টর জেকিল আর গোপনে বা তলে তলে মিস্টার হাইড। সবাই তাকে ভালো মানুষ ও উচ্চ মর্যাদার লোক মনে করলেও নীতি, নৈতিকতা ও আচরণের দিক থেকে তার বা তাদের মধ্যে বাস করে এক বর্বর পশু। গৃহস্থের একদিন যখন সত্যি সত্যিই আসে, তখন চোর ব্যাটা ধরা পড়ে। বাংলাদেশে ধৃতর চেয়ে অধরা দুর্নীতিবাজ অনেক বেশি। যারা অবলীলায় উপরের পদে বসে বড় বড় কথা বলে দেশের পকেট কাটছে। জনগণের ভাগ্য ও সম্পদ নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে।

মন বিশারদগণ বলেছেন, মানুষের রিপুগুলো আসলেই খুব বিচিত্র, শক্তিশালী ও সক্রিয়, যার একদিকে লোভ, লাভ ও লালসা আর অন্য দিকে আছে সংযম ও শুভবুদ্ধি জাগিয়ে তোলা মন। এই দুই বিপরীত স্বভাবের মধ্যে চলে অবিরাম যুদ্ধ। অশুভ শক্তিকে দমিয়ে রাখাটাই সভ্যতার মাপকাঠি। যে নেতা, ব্যক্তি, সমাজ, শাসক, প্রতিষ্ঠান যত বেশি সংযমের পরিচয় বহন করে, সে বা তারা তত সভ্য।

কিন্তু দুর্নীতি ও স্তাবকতা সভ্য জগৎকে অন্ধকারে ঢেকে রাখতে সদা-উদ্ধত। এরা নিজের স্বার্থে ও ধান্ধায় শাসকের আনুগত্য দেখায়, মানুষকে মূল্যবোধের কথা বলে। বাস্তবে এর কিছুই তারা বিশ্বাস করে না ও প্রতিপালনও করে না। এরা একটি সমাজের রাজনৈতিক ব্যবস্থা, আর্থিক কাঠামো, নৈতিক মানদণ্ড, সুরুচি ও সভ্যতাকেই ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছে, এটাই সবচেয়ে বড় বিপদের বার্তা।

অতএব, সমাজ, প্রশাসন ও পেশার রন্ধ্রে রন্ধ্রে ভেক ধরে দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ান হওয়া ও নীতি-নৈতিকতার লালবাতি জ্বালানো একালের 'ডক্টর জেকিল অ্যান্ড মিস্টার হাইড'দের থেকে সাবধান!

ড. মাহফুজ পারভেজ: অ্যাসোসিয়েট এডিটর, বার্তা২৪.কম; চেয়ারম্যান ও প্রফেসর, রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও নির্বাহী পরিচালক, চট্টগ্রাম সেন্টার ফর রিজিওনাল স্টাডিজ, বাংলাদেশ (সিসিআরএসবিডি)।