কোভিড-১৯ মোকাবেলায় ‘বিনা’ উদ্ভাবিত তেল ফসল



ড. মো. আব্দুল মালেক
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

কৃষি প্রধান বাংলাদেশে মোট দেশজ উৎপাদনে তথা জিডিপিতে কৃষি খাতের অবদান ১৩.৬ শতাংশ। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার লক্ষ্যে বর্তমান সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা কৃষি খাতকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব প্রদান করে কৃষির উন্নয়ন ও কৃষকের কল্যাণকে সর্বোচ্চ বিবেচনায় নিয়ে রূপকল্প ২০২১ ও ২০৪১ সহ অন্যান্য পরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন। কৃষি ক্ষেত্রে সময়োপযোগী পদক্ষেপের কারণে অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রায় এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশের কৃষি। কৃষির উন্নয়নে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সৃষ্ট প্রাকৃতিক দুর্যোগ বারবার বাধা হয়ে আসলেও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সঠিক ও সময়োপযোগী নির্দেশনা এবং কৃষিমন্ত্রীর আন্তরিক প্রচেষ্টায় তা সাফল্যের সাথে অতিক্রম করা সম্ভব হয়েছে।

বর্তমানে কোভিড-১৯ সারা বিশ্বের মতো আমাদের দেশের জন্যও নতুন এক অভিজ্ঞতা। এতে পৃথিবী জুড়ে নেমে এসেছে মানবিক দুর্যোগ। করোনার প্রভাবে কোটি মানুষের আক্রান্ত ও লক্ষ মানুষের মৃত্যুর পাশাপাশি বিশ্বের বিভিন্ন দেশ—জনগণকে সাশ্রয়ী মূল্যে খাবার সরবরাহের তাগিদে খাদ্যপণ্য রপ্তানি বন্ধ করে দিতে পারে। ফলে বিশ্বজুড়ে খাদ্যের সংকট তৈরি হতে পারে মর্মে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) আশঙ্কা করেছে।

এমতাবস্থায় বিশ্বের অনেক দেশ প্রতিষেধক উদ্ভাবনের চেষ্টা চালিয়ে গেলেও এখনো সফল হয়নি। গবেষণায় দেখা গেছে যাদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি তারা আক্রান্ত হলেও কোভিড-১৯-এর কারণে সৃষ্ট ক্রিটিকাল অবস্থা মোকাবেলায় সক্ষম। তাই শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য প্রয়োজন বেশি পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট তথা পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ খাবার, যদিও দেশের বিশাল জনগোষ্ঠীর মানুষ খাবার বলতে ভাতকেই বোঝেন।

অথচ মানবদেহের প্রয়োজনীয় পুষ্টি সরবরাহের জন্য ভাত ছাড়াও সবজি, ফল, ডাল ও তেল ফসলের গুরুত্ব অপরিসীম। শরীরের পুষ্টির জন্য প্রয়োজনীয় সমস্ত উপাদান ভোজ্যতেলে বিদ্যমান। তেল ছাড়াও শর্করা, আমিষ, চর্বি, খণিজ পদার্থ যেমন লৌহ ও জিংক এবং বিভিন্ন ভিটামিন যথা ভিটামিন-এ, ভিটামিন-ই, থায়ামিন ও রাইবোফ্লোভিনের গুরুত্বপূর্ণ উৎস হলো তেল ফসল। তেল ফসলে সিদ্ধ চাল অর্থাৎ ভাতের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণেরও বেশি আমিষ, অর্ধেক শর্করা, চার গুণের বেশি লৌহ ও জিংক বিদ্যমান। এছাড়া তেল ফসল চর্বির অন্যতম প্রধান উৎস।

দেশের একমাত্র বিশেষায়িত গবেষণা প্রতিষ্ঠান ময়মনসিংহস্থ বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিনা) নিরাপদ ও পুষ্টি সমৃদ্ধ খাদ্য নিশ্চিত করার লক্ষ্যে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। ফসলের উৎপাদন বাড়ানোসহ পুষ্টিগুণের বিষয়টিও গুরুত্বের সাথে বিবেচনায় রেখে বিনা উদ্ভাবন করেছে উচ্চ ফলনশীল ও পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ দানাদার, তেল, ডাল, সবজি এবং মশলা ফসলসহ লেবুর মোট ১১২টি জাত। বিনা ইতোমধ্যে তেল ফসলের মোট ৩০টি জাত উদ্ভাবন করেছে তন্মধ্যে সরিষার ১০টি, চিনাবাদামের ১০টি, সয়াবিনের ৬টি এবং তিলের ৪টি জাত। অধিকাংশ জাতই কৃষকের মাঝে সমাদৃত হয়ে ব্যাপকভাবে চাষ হচ্ছে।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান বুরোর তথ্যে দেখা যায় গত ২০১৮ সালে দেশে ৪৬.২১ লক্ষ টন ভোজ্যতেল আমদানিতে ২৭.৭৫ হাজার কোটি টাকা ব্যয় করা হয়েছে, যদিও আমদানিকৃত তেলের বড় একটি অংশ শিল্প কারখানায় ব্যবহৃত হয়ে থাকে। দেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে সরিষাসহ অন্যান্য তেল ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধির মাধ্যমে দেশে ভোজ্যতেলের আমদানি নির্ভরতা কমিয়ে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় করা সম্ভব।

দেশের ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা (১.৩৭% হারে জনসংখ্যা বৃদ্ধিতে বছরে জনসংখ্যা বৃদ্ধি প্রায় ২২.০ লক্ষ) এবং খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তনের ফলে ভোজ্যতেলের চাহিদা ক্রমাগত বৃদ্ধি পাওয়ায় বিগত তিন বছরে এই আমদানি হার পূর্ববর্তী বছরগুলোর তুলনায় অনেকাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে। আগামী ২০২১ সালে মাথাপিছু দৈনিক ৪০ গ্রাম হারে দেশে ভোজ্যতেলের মোট চাহিদা দাঁড়াবে প্রায় ২৫.০ লক্ষ টনে।

চাহিদার তুলনায় ভোজ্যতেলের মোট দেশজ উৎপাদন অনেক কম বিধায় প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় করে ঘাটতি মোকাবেলার জন্য বিদেশ হতে ভোজ্যতেল আমদানি করতে হয়। দেশে ভোজ্যতেলের মূল উৎস হলো সরিষা এবং সামান্য পরিমাণে সূর্যমুখী, সয়াবিন ও তিল এবং রাইস ব্রান যা থেকে মোট ৫.০ লক্ষ টনের কাছাকাছি ভোজ্যতেল পাওয়া যায়। দেখা যাচ্ছে ঘাটতি থাকে শতকরা প্রায় ৮০ ভাগ এবং করোনার নেতিবাচক প্রভাবে তা আরো বাড়তে পারে।

এ বাস্তবতা বিবেচনায় এখনই প্রয়োজন তেল ফসলের চাষাবাদ বৃদ্ধির মাধ্যমে উৎপাদন বৃদ্ধিতে গুরুত্ব দেওয়া। উল্লেখ্য বর্তমানে দেশে আবাদি জমির মাত্র ৪ শতাংশ তেল ফসলের আবাদের জন্য ব্যবহৃত হয়। প্রচলিত জাতের সরিষায় শতকরা ৩৩-৩৫ ভাগ এবং সয়াবিনে ১৮ ভাগ তেল থাকে। অন্যদিকে বিনা উদ্ভাবিত বিনাসরিষা-৪ ও বিনাসরিষা-৯ এ শতকরা ৪৪ ভাগ পর্যন্ত তেল থাকে। বিনা উদ্ভাবিত বিনাসয়াবিন-৩, বিনাসয়াবিন-৫ ও বিনাসয়াবিন-৬ জাতে শতকরা ২০ ভাগ তেল আহরণ করা সম্ভব।

মানব শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে ভিটামিন-ই’র প্রয়োজনীয়তা অনেক, যা সবরকম রোগ বা দুর্বলতা উপশম করতে পারে। তেল ফসলের মধ্যে চিনাবাদামে সবচেয়ে বেশি ভিটামিন-ই থাকে। তাছাড়া বিনা উদ্ভাবিত চিনাবাদাম জাতগুলো হতে ২৮.১% আমিষ ও ৫০.৬% তেল পাওয়া যায়। প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষদের প্রতিদিন ৮.০ মিলিগ্রাম ও মহিলাদের ১৮.০ মিলিগ্রাম আয়রনের প্রয়োজন হয়। তেল ফসলের মধ্যে ক্যালসিয়াম ও আয়রনের সবচেয়ে বড় যোগানদাতা হচ্ছে তিল। তিলে সাধারণভাবে ৪৩ ভাগ তেল থাকলেও বিনা উদ্ভাবিত বিনাতিল-১ এ তেলের পরিমাণ শতকরা ৫২ ভাগ।

দেশে করোনা পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী ৩১ দফায় ‘খাদ্য উৎপাদন ব্যবস্থা চালু রাখা, অধিক ফসল উৎপাদন করা, খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, জমি যেন পতিত না রাখার’ নির্দেশনা আছে। এ লক্ষ্যে ‘বিনা’ একনিষ্ঠভাবে কাজ করে যাচ্ছে। করোনা পরবর্তী ভোজ্যতেলের সংকট মোকাবেলায় আগামী রবি মৌসুম খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আসন্ন রবি মৌসুমে বিনা উদ্ভাবিত উচ্চ ফলনশীল ও প্রতিকূলতা সহনশীল সরিষা, সয়াবিন ও চিনাবাদামের আবাদ বৃদ্ধিতে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করা হবে। সে লক্ষ্যে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের (ডিএই) সক্রিয় সহযোগিতায় বিনা-র প্রধান কার্যালয়সহ এর ১৩টি উপকেন্দ্রের মাধ্যমে কৃষকদেরকে বিনা উদ্ভাবিত তেল ফসল উৎপাদনে হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ এবং বীজ বিতরণ কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। তাছাড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সহযোগিতায় কৃষকের মাঠে বিনা-র উচ্চ ফলনশীল ও প্রতিকূলতা সহনশীল তেল ফসলের (সরিষা, তিল, সয়াবিন ও চিনাবাদাম) প্রদর্শনী স্থাপন ও মাঠ দিবস আয়োজনের মাধ্যমে কৃষকেদেরকে উচ্চ ফলনশীল তেল ফসলের জাত চাষাবাদে উৎসাহিত করতে বিনা ব্যাপক পরিকল্পনা গ্রহণ করবে।

স্বাধীনতার পর সবুজ বিপ্লবের ডাক দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত সোনার বাংলার যে স্বপ্ন দেখেছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তা বাস্তবায়নের পুরো দায়িত্ব নিয়েছেন বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা। জননেত্রী শেখ হাসিনার এ দায়িত্ব পূরণে বিনা উল্ল্যেখযোগ্য অবদান রাখতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।


ড. মো. আব্দুল মালেক
মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও বিভাগীয় প্রধান
উদ্ভিদ প্রজনন বিভাগ, বিনা, ময়মনসিংহ

   

ইতিহাস-পুরুষ ডা. মাজহারুল হক স্মরণের আলোয় অম্লান



শাহ ইসকান্দার আলী, কন্ট্রিবিউটিং এডিটর, বার্তা২৪.কম
ইতিহাস-পুরুষ ডা. মাজহারুল হক স্মরণের আলোয় অম্লান

ইতিহাস-পুরুষ ডা. মাজহারুল হক স্মরণের আলোয় অম্লান

  • Font increase
  • Font Decrease

শতবর্ষস্পর্শী জীবনেই তিনি পরিণত হয়েছিলেন জীবন্ত কিংবদন্তিতে। তিনি ছিলেন ইতিহাস-পুরুষ। শুক্রবার (২২ সেপ্টেম্বর) বাদ জুৃমা চিরনিদ্রায় শায়িত হলেও শোক, শ্রদ্ধা ও স্মরণের আলোয় অম্লান হয়ে আছেন ব্রিটিশবিরোধী সংগ্রামী, ভাষাসৈনিক ও মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক কিশোরগঞ্জের বরিষ্ঠ চিকিৎসক ডা. এ.এ. মাজহারুল হক।

বৃহস্পতিবার (২১ সেপ্টেম্বর) বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে রাজধানীর ক্যান্টনমেন্ট আবাসিক এলাকার নিজ বাসভবনে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। তাঁর মৃত্যুতে বাংলাদেশের চিকিৎসা জগত হারিয়েছে প্রবীণতম ব্যক্তিত্বকে আর কিশোরগঞ্জে ইতিহাসে অবসান ঘটেছে একটি গৌরবময় যুগের।

ব্রিটিশবিরোধী সংগ্রামী, ভাষাসৈনিক ও মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক কিশোরগঞ্জের বরিষ্ঠ চিকিৎসক ডা. এ.এ. মাজহারুল হক মৃত্যুতে শোক ও সমবেদনা জানিয়েছেন বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য, বরেণ্য শিক্ষাবিদ প্রফেসর আবদুল মান্নান, প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী মশিউর রহমান হুমায়ুন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি, কলা অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. মাহবুবুল হক, লেখক-শিক্ষাবিদ প্রফেসর ড. মহীবুল আজিজ, নজরুল গবেষণা কেন্দ্রের পরিচালক প্রফেসর ড. আনোয়ার সাঈদ এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগের সভাপতি প্রফেসর ড. মুস্তাফিজুর রহমান সিদ্দিকী ও শিক্ষকমণ্ডলী।

কিশোরগঞ্জ জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা এডভোকেট জিল্লুর রহমান শোক জানিয়ে বলেন, ব্রিটিশবিরোধী সংগ্রামী, ভাষাসৈনিক ও মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক কিশোরগঞ্জের বরিষ্ঠ চিকিৎসক ডা. এ.এ. মাজহারুল হক ছিলেন আমার অভিভাবক ও সিনিয়র নেতা।

গণতন্ত্রী পার্টির কেন্দ্রীয় সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা এডভোকেট ভূপেন্দ্র ভৌমিক দোলন শোকবার্তায় বলেন, পিতৃতুল্য স্বনামখ্যাত চিকিৎসক, ভাষা সৈনিক, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত, সমাজ ও সংস্কৃতির বিকাশে দীর্ঘ সময় অবদান রাখা ডা: এ. এ. মাজহারুল হক এর মৃত্যুতে আমরা গভীর শোকাহত। আমরা গণতন্ত্রী পার্টির পক্ষ থেকে তাঁর বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করছি এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের সকল সদস্য আত্মীয় স্বজন ও গুণ গ্রাহী দের প্রতি জানাই সহমর্মিতা।

কিশোরগঞ্জের প্রবীন এমবিবিএস ডাক্তার, বিশিষ্ট ভাষা সৈনিক, নিবিড় রাজনীতিক, সমাজ সেবক, কিশোরগঞ্জের মুক্তিযুদ্ধের সক্রিয় ভূমিকা পালনকারী আলহাজ্জ্ব ডা. এ এ মাজহারুল হকের ইন্তেকালে কিশোরগঞ্জ সাহিত্য সংস্কৃতি পরিষদের সভাপতি ইতিহাসবিদ মোহাম্মদ আশরাফুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক বঙ্গবন্ধু পদক প্রাপ্ত শিল্পী সৈয়দ নূরুল আউয়াল তারামিঞা গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। তাঁরা ডাক্তারী সেবা ছাড়াও একজন সচেতন নাগরিকে হিসেবে দেশের মানুষের মুক্তির সংগ্রামে তাঁর নিরলস ভূমিকার জন্য তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা নিবেদন করেন এবং তাঁর শোক সন্তপ্ত পরিবারে পরিজনের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করেন। পরিষদ সভাপতি মোহাম্মদ আশরাফুল ইসলাম তাঁর বিষয়ে স্সৃতিচারণ করে বলেন- “তিনি কিশোরগঞ্জ টেক্সটাইল মিলের মেডিক্যাল অফিসার হিসেবে আমাদের স্যার ছিলেন। ছাত্র অবস্থা থেকেই আমি চিকিৎসা ক্ষেত্রে তাঁর রোগী হতাম। প্রথম দিন রোগী হওয়ার কথা আমার জীবনে স্মরনীয় হয়ে আছে। তিনি নিজ বাসায় তখন চেম্বার করতেন। ১৯৭৫ সালের কথা। তখন ফিস ছিলো ২০ টাকা।তিনি প্রেসক্রিপশন লেখার পর যখন পকেটে হাত দিলাম টাকা দেয়ার জন্য তখন তিনি জিজ্ঞেস করলেন কোথায় পড়ি। আমি গুরুদয়াল কলেজে পড়ি বলায় তিনি বল্লেন ফিস লাগবেনা। তিনি ছাত্রদের কাছ থেকে ফিস নেন না। তাঁর সে ঘটনা আমার জীবন স্মৃতি হয়ে আছে। তিনি অনেক বড় মনের মানুষ ছিলেন। তিনি ঢাকা মেডিকেলের ছাত্র হিসেবে সরাসরি ভাষা আন্দোলনে জড়িত ছিলেন যে ইতিহাস আমিই প্রথম ১৯৯১ সালে জাতীয় পত্রিকায় তুলে ধরি। বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষনার ইতিহাস, মুক্তিযুদ্ধ সবকিছুর তিনি ছিলেন নীরব সাক্ষী। তাঁর সুযোগ্য পুত্র ড.মাহফুজ পারভেজ সহ পরিবারের সবার প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করছি। আল্লাহপাক এ পরহেজগার লোকটিকে জান্নাতের মেহমান হিসেবে কবুল করুন।আমিন।”

ব্রিটিশবিরোধী সংগ্রামী, ভাষাসৈনিক ও মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক কিশোরগঞ্জের বরিষ্ঠ চিকিৎসক ডা. এ.এ. মাজহারুল হক মৃত্যুতে শোক ও সমবেদনা জানিয়েছেন সেন্টার ফর এশিয়ান স্টাডিজ এর নির্বাহী পরিচালক, রাষ্ট্রবিজ্ঞানি ভূঁইয়া মনোয়ার কবির। চট্টগ্রাম সেন্টার ফর রিজিওনাল স্টাডিজ, বাংলাদেশ (সিসিআরএসবিডি), শাহ মাহতাব আলী ফাউন্ডেশন, রাষ্ট্রবিজ্ঞানি প্রফেসর শেখ জহির আহমেদ, প্রফেসর ড. জিনাত আরা নাজনীন, আনন্দমোহন বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর আমানুল্লাহ বুবুল, সাংবাদিক ও চিন্তক মারুফ কামাল খান, সাংবাদিক ও অনুবাদক আনোয়ার হোসেইন মঞ্জু, সাংবাদিকতা নিয়ামত মিয়া, কবি শাকিল রিয়াজ, নারীনেত্রী ফাতেমা জোহরা, কিশোরগঞ্জের রাজনীতিবিদ জাহাঙ্গীর মোল্লা, সাহিত্যিক সৈয়দ আজিম, সাংবাদিক আহমদ ফরিদ, কিশোরগঞ্জনিউজ সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম, সাংস্কৃতিকজন মু, আ, লতিফ, লুৎফুন্নেছা চিনু, সৈয়দ শাকিল, সোহেল রানা, ফেসবুক গ্রুপ জন্মভূমি কিশোরগঞ্জ, উজানভাটি কিশোরগঞ্জসহ অসংখ্য ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান। যাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন ডা. এ.এ. মাজহারুল হক এর বড় ছেলে বার্তা২৪.কম'র অ্যাসোসিয়েট এডিটর, চট্টগ্রাম সেন্টার ফর রিজিওনাল স্টাডিজ, বাংলাদেশ (সিসিআরএসবিডি)'র নির্বাহী পরিচালক, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ড. মাহফুজ পারভেজ ও মেয়ে কিশোরগঞ্জ জেলা যুব মহিলা লীগের সভাপতি শায়লা পারভীন সাথী।

ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের আদিপর্বের ছাত্র ডা. এ.এ. মাজহারুল হক মাতৃভাষা আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়ে বিভিন্ন কর্মসূচির সঙ্গে সঙ্গে শহীদদের স্মরণে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের ছাত্রদের নির্মিত প্রথম ইটের শহীদ মিনার তৈরিতে যোগ দেন।

তিনি মাতৃভূমির প্রায় প্রতিটি বিজয়-সংগ্রামেই, বিশেষ করে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন, ভাষা আন্দোলন এবং একাত্তরের মহান মুক্তিসংগ্রামে প্রত্যক্ষভাবে সক্রিয় অবদান রাখেন।

১৯৪৬-৪৭ সালে ছাত্রাবস্থায় ব্রিটিশ হটাও আন্দোলনে প্রবলভাবে যুক্ত থেকে তিনি সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা প্রতিরোধে কাজ করেন। ভাষা আন্দোলনে সংক্ষিপ্ত কারাবাসসহ সরাসরি অংশগ্রহণ করেন।

১৯৭১ সালে তিনিই প্রথম মুক্তিকামী কিশোরগঞ্জবাসীকে স্বাধীনতার ঘোষণা অবহিত ও প্রচার করেন এবং তাঁর নেতৃত্বে নিজ বাসভবনেই আত্মসমর্পনের অনুষ্ঠান সম্পন্ন করেন রক্তপাতহীনভাবে কিশোরগঞ্জের পতন ঘটিয়ে সেখানে সর্বপ্রথম স্বাধীনতার পতাকা উড্ডীন করেন।

কিশোরগঞ্জ জেলা শহরের গৌরাঙ্গবাজারের বাসিন্দা ডা. এ.এ. মাজহারুল হক প্রায় ৬৯ বছর কিশোরগঞ্জে নিরবিচ্ছিন্নভাবে চিকিৎসা-সমাজসেবা-রাজনীতির মহানব্রত পালনের মাধ্যমে মানুষের কল্যাণে নিরন্তর ভূমিকা রেখেছেন। ডা. এ.এ. মাজহারুল হক ও সমাজসেবী নূরজাহান বেগম প্রতিষ্ঠিত কিশোরগঞ্জের সমাজ-সংস্কৃতি-সাহিত্য বিষয়ক সমীক্ষাধর্মী মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে মরহুম বিভিন্ন জনহিতকর ও সমাজসেবামূলক কাজ করে গেছেন।

এছাড়া বিভিন্ন মসজিদ-মাদ্রাসাসহ দ্বীনি প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠার সঙ্গে তিনি সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন।

ডা. এ.এ. মাজহারুল হক এর মৃত্যুতে কিশোরগঞ্জের সামাজিক, রাজনৈতিক ইতিহাসের একটি উজ্জ্বল অধ্যায়ের পরিসমাপ্তি ঘটলেও তিনি স্মরণীয় হয়ে থাকবেন ইতিহাসের সত্যনিষ্ঠ ভাষ্যে, বস্তুনিষ্ঠ বিবরণে আর মানুষের বিনম্র শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায়।

আরও শোক জানিয়েছেন আইন অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. আবদুল্লাহ ফারুক, ইতিহাসবিদ প্রফেসর আনোয়ারুল ইসলাম, লায়ন হারুন অর রশীদ, কৃষক লীগ নেতা আনোয়ার হোসেন বাচ্চু, আওয়ামী লীগ নেতা লুৎফুল আরেফিন গোলাপ, ছাত্রনেতা আমিনুল ইসলাম তৌহিদ, সাংবাদিক ফারুকুজ্জামান, নিসর্গী প্রফেসর মোহাম্মাদ আলম চৌধুরী, লেখক মুহাম্মদ ইসহাক, ইসলামী ব্যাংকের পরিচালক প্রফেসর ড. সালেহ জহুর, উন্নয়ন সংগঠক রেজাউল ইসলাম পিন্টু, সাংবাদিক সমরেশ বৈদ্য, সাংবাদিক মোহাম্মাদ শাহনেওয়াজ, মিডিয়া গবেষক ড. কামরুল হক, সামসাদ রানা প্রমুখ।

;

দেশে প্রবীণ জনগোষ্ঠীর ওপর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের প্রভাব



ড. মতিউর রহমান
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

সোশ্যাল মিডিয়ার আবির্ভাব আমাদের যোগাযোগ, সংযোগ এবং তথ্য ভাগ করার উপায়কে পরিবর্তন করেছে। যদিও তরুণ প্রজন্ম এটিকে ব্যাপকভাবে গ্রহণ করেছে, বয়স্ক ব্যক্তিদের ওপর এর প্রভাব ক্রমবর্ধমান আগ্রহের বিষয় হয়ে উঠেছে। বাংলাদেশের মতো একটি দেশে, যেখানে ঐতিহ্যগত মূল্যবোধ এবং ঘনিষ্ঠ সম্প্রদায়গুলি দীর্ঘকাল ধরে আদর্শ ছিল, বয়স্ক ব্যক্তিদের জীবনে সোশ্যাল মিডিয়ার একীকরণ একটি উল্লেখযোগ্য সাংস্কৃতিক পরিবর্তনের প্রতিনিধিত্ব করে।

ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ এবং ইউটিউবের মতো সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলি বাংলাদেশের আধুনিক জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে। স্মার্টফোনের বিস্তার এবং সাশ্রয়ী মূল্যের ইন্টারনেট অ্যাক্সেস সমস্ত বয়সের মানুষকে এই প্ল্যাটফর্মগুলির সাথে যুক্ত হতে সক্ষম করেছে। যদিও শহুরে এলাকার যুবকরা দ্রুত সোশ্যাল মিডিয়া গ্রহণ করেছে, এর প্রভাব ক্রমশ গ্রামীণ এবং বয়স্ক জনসংখ্যায় ছড়িয়ে পড়ছে। বাংলাদেশের বয়স্ক ব্যক্তিরা কীভাবে অন্যদের সাথে সংযোগ স্থাপন করে এবং তথ্য অ্যাক্সেস করে তার জন্য এই পরিবর্তনের সুদূরপ্রসারী ফলাফল রয়েছে।

বয়স্ক ব্যক্তিদের জন্য সোশ্যাল মিডিয়ার অন্যতম উল্লেখযোগ্য সুবিধা হল সামাজিক সংযোগের সুযোগ। একটি সমাজে যেখানে ঐতিহ্যগত সামাজিক সমাবেশগুলি প্রায়শই পরিবার এবং ঘনিষ্ঠ সম্প্রদায়ের চারপাশে আবর্তিত হয়, সোশ্যাল মিডিয়া ভৌগলিক সীমানার বাইরে একজনের সামাজিক নেটওয়ার্ককে প্রসারিত করতে পারে। বয়স্ক ব্যক্তিরা দীর্ঘদিনের হারিয়ে যাওয়া বন্ধুদের সাথে পুনরায় সংযোগ স্থাপন করতে পারে, বিদেশে আত্মীয়দের সাথে যোগাযোগ রাখতে পারে এবং তাদের আগ্রহগুলি ভাগ করে এমন অনলাইন সম্প্রদায়গুলিতে জড়িত হতে পারে।

বাংলাদেশের বয়স্ক ব্যক্তিদের জন্য সোশ্যাল মিডিয়া একটি মূল্যবান তথ্যের উৎস। বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে সংবাদ আপডেট, স্বাস্থ্য টিপস এবং শিক্ষামূলক বিষয় পাওয়া যায়। এটি বয়স্ক ব্যক্তিদের বর্তমান ঘটনা, স্বাস্থ্য সমস্যা এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় বিষয় সম্পর্কে অবগত থাকতে সক্ষম করে, তাদের সামগ্রিক জ্ঞান এবং সুস্থতা বাড়ায়।

একাকীত্ব এবং সামাজিক বিচ্ছিন্নতার মুখোমুখি হওয়া বয়স্ক ব্যক্তিদের জন্য সাধারণ চ্যালেঞ্জ। সোশ্যাল মিডিয়া পারস্পরিক মিথস্ক্রিয়ার জন্য একটি ভার্চুয়াল স্থান প্রদান করে এই অনুভূতিগুলি উপশম করতে সাহায্য করতে পারে। মেসেজিং অ্যাপ বা ভিডিও কলের মাধ্যমেই হোক না কেন, বয়স্ক লোকেরা সংযোগের অনুভূতি বজায় রাখতে পারে এমনকি যখন শারীরিক দূরত্ব তাদের প্রিয়জনদের থেকে আলাদা করে। বাংলাদেশের একটি সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য রয়েছে, এবং সোশ্যাল মিডিয়া বয়স্ক ব্যক্তিদের সাংস্কৃতিক সংরক্ষণ এবং অংশগ্রহণের অনুমতি দেয়। তারা তরুণ প্রজন্মের সাথে ঐতিহ্যবাহী রেসিপি, গল্প এবং রীতিনীতি শেয়ার করতে পারে, দেশের স্থায়ী সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকার নিশ্চিত করে ।

সোশ্যাল মিডিয়ার অনেক সুবিধা সত্ত্বেও বয়স্ক ব্যক্তিরা প্রায়ই ডিজিটাল সাক্ষরতার সাথে সম্পর্কিত চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হন। অনেক প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ এই প্ল্যাটফর্মগুলি ব্যবহার জটিলতার মুখোমুখি হন, যা তাদেরকে হতাশা এবং বর্জনের দিকে পরিচালিত করে। এই ডিজিটাল যুগে প্রবীণদের আরও ক্ষমতায়নের জন্য শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ কর্মসূচির মাধ্যমে ডিজিটাল বিভাজন দূর করা অপরিহার্য।

সোশ্যাল মিডিয়াতে বয়স্ক ব্যক্তিদের জন্য গোপনীয়তা একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্বেগ। অনেকেই জানেন না কিভাবে তাদের ব্যক্তিগত তথ্য রক্ষা করা যায় বা সম্ভাব্য ঝুঁকি যেমন অনলাইন স্ক্যাম এবং পরিচয় চুরি ঠেকানো যায়। এই উদ্বেগগুলি মোকাবিলা করার জন্য অনলাইন নিরাপত্তা বিষয়ে শিক্ষা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সোশ্যাল মিডিয়ার অত্যধিক ব্যবহার কিছু বয়স্ক ব্যক্তির জন্য সামাজিক বিচ্ছিন্নতার দিকে নিয়ে যেতে পারে। অনলাইনে অত্যধিক সময় ব্যয় করা সামনাসামনি মিথস্ক্রিয়া থেকে বিরত থাকতে পারে, সম্ভাব্য একাকীত্বকে হ্রাস করার পরিবর্তে আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে।

সোশ্যাল মিডিয়া বোঝার এবং ব্যবহার করার ক্ষেত্রে প্রজন্মগত ব্যবধান থাকতে পারে। এই ব্যবধানটি বিভিন্ন অনলাইন যোগাযোগ এবং গোপনীয়তার প্রত্যাশার সাথে পরিবারের বয়স্ক এবং অল্পবয়সী সদস্যদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি বা দ্বন্দ্বের কারণও হতে পারে।

অন্য কারো মতো, বয়স্ক ব্যক্তিরা অনলাইন হয়রানি বা সাইবার বুলিং এর লক্ষ্য হতে পারে। এই ধরনের পরিস্থিতি থেকে নিজেদের রক্ষা করার জন্য তাদের পর্যাপ্ত জ্ঞান ও দক্ষতা রয়েছে তা নিশ্চিত করা অত্যাবশ্যক।

বাংলাদেশের বয়স্ক ব্যক্তিদের মধ্যে সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারের প্রজন্মগত ব্যবধান পূরণের প্রচেষ্টা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সরকারি সংস্থা, এনজিও এবং সম্প্রদায় সংস্থাগুলি বিশেষভাবে বয়স্কদের জন্য ডিজাইন করা ডিজিটাল সাক্ষরতা প্রোগ্রামগুলি অফার করতে সহযোগিতা করতে পারে। এই প্রোগ্রামগুলির মৌলিক কম্পিউটার দক্ষতা, ইন্টারনেট নিরাপত্তা, এবং সামাজিক মিডিয়া ব্যবহার কভার করা উচিত। আন্তঃপ্রজন্মীয় শিক্ষার অভিজ্ঞতাকে উৎসাহিত করা অত্যন্ত উপকারী হতে পারে। পরিবারের অল্পবয়সী সদস্যরা তাদের প্রবীণদের সোশ্যাল মিডিয়া এবং ডিজিটাল টুলস সম্পর্কে শিক্ষা দিতে পারে, একতা এবং পারস্পরিক সমর্থনের অনুভূতি জাগিয়ে তুলতে পারে।

অনলাইন নিরাপত্তা এবং গোপনীয়তা কর্মশালার আয়োজন করার মাধ্যমে বয়স্ক ব্যক্তিদের সম্ভাব্য ঝুঁকি থেকে নিজেদের রক্ষা করার ক্ষমতা দিতে পারে। এই কর্মশালাগুলিতে ফিশিং প্রচেষ্টাকে স্বীকৃতি দেওয়া, শক্তিশালী পাসওয়ার্ড সেট করা এবং গোপনীয়তা সেটিংস কার্যকরভাবে ব্যবহার করার মতো বিষয়গুলিকে কভার করা উচিত ।

বয়স্ক ব্যক্তিদের জন্য তৈরি অনলাইন সম্প্রদায়গুলি তাদের সমবয়সীদের সাথে জড়িত থাকার জন্য একটি নিরাপদ স্পেস এবং স্বাগত জানাতে পারে। এই সম্প্রদায়গুলি ভাগ করা আগ্রহের উপর ফোকাস করতে পারে, যেমন শখ, স্বাস্থ্য উদ্বেগ, বা সাংস্কৃতিক কার্যকলাপ। সরকার বয়স্ক বয়স্কদের জন্য ব্যবহারকারী-বান্ধব ইন্টারফেস তৈরি করতে প্রযুক্তি কোম্পানিগুলিকে উৎসাহিত করে এবং কম আয়ের বয়স্কদের জন্য ইন্টারনেট অ্যাক্সেসে ভর্তুকি দিয়ে ডিজিটাল অন্তর্ভুক্তির প্রচার করতে পারে।

পরিবারগুলি সক্রিয়ভাবে বয়স্ক সদস্যদের তাদের অনলাইন কার্যকলাপে জড়িত করতে পারে, তাদের পারিবারিক চ্যাটে অংশগ্রহণ করতে এবং ভার্চুয়াল উদযাপন এবং সমাবেশের আনন্দ ভাগ করে নিতে উৎসাহিত করতে পারে।

সামাজিক যোগাযোগ, তথ্য অ্যাক্সেস এবং সাংস্কৃতিক সংরক্ষণের সুযোগ প্রদানের মাধ্যমে বাংলাদেশের বয়স্ক ব্যক্তিদের জীবনে প্রজন্মগত বিভেদ ঘটানো এবং তাদের জীবনকে উন্নত করার ক্ষমতা সোশ্যাল মিডিয়ার রয়েছে।

ডিজিটাল সাক্ষরতা, গোপনীয়তার উদ্বেগ এবং সামাজিক বিচ্ছিন্নতার ঝুঁকির মতো এই সুবিধাগুলি সম্পূর্ণরূপে উপলব্ধি করার জন্য তাদের চ্যালেঞ্জগুলিকে মোকাবিলা করা অপরিহার্য । লক্ষ্যযুক্ত উদ্যোগ বাস্তবায়ন করে এবং আন্তঃপ্রজন্ম সমর্থনের সংস্কৃতি গড়ে তোলার মাধ্যমে, বাংলাদেশ বয়স নির্বিশেষে তার সকল নাগরিকের জীবনকে সমৃদ্ধ করতে সোশ্যাল মিডিয়ার শক্তিকে কাজে লাগাতে পারে।

ড. মতিউর রহমান: গবেষক ও উন্নয়নকর্মী।

;

অশ্লীলতা কোন শিল্প নয়



প্রফেসর ড. মো: ফখরুল ইসলাম
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

অশ্লীলতা হলো একটি পরিভাষা, ‘যা এমন সব শব্দ, চিত্র ও কার্যক্রমকে বোঝাতে ব্যবহৃত হয় যেগুলো সমসাময়িক অধিকাংশ মানুষের যৌন নৈতিকতার দৃষ্টিতে অপরাধ বা দোষ হিসেবে বিবেচিত। এর মূল ইংরেজি শব্দ অবসিনিটি এসেছে ল্যাটিন শব্দ অবসেনাস থেকে, যার অর্থ ‘দুষ্ট, ঘৃণিত, রুচিহীন’। অশ্লীলতা শব্দটি দীর্ঘ সময় ব্যাপী যৌনতা-বিষয়ক সংজ্ঞা হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে এসেছে, তবু বর্তমান সময়ে ‘উস্কানিমূলক ঘৃণ্য কাজ’ অর্থেও শব্দটির ব্যবহার দেখা যায়। সাধারণভাবে এটি অভিশাপ অর্থে ব্যবহৃত হতে পারে, অথবা এমন যে কোন কিছুকে বোঝাতে ব্যবহৃত হতে পারে যা নিষিদ্ধ, অশালীন, ঘৃণিত বা বিরক্তিকর।

অশ্লীলতাকে বলা হয়- জঘন্যতা, কদর্যতা, নির্লজ্জতা, অভদ্রতা ও যৌন বিষয়ক কুৎসিত আচরণ। অশ্লীলতার দ্বারা নির্লজ্জ ও কুরুচিপূর্ণ কথা ও কাজকে বোঝানো হয়। এছাড়া যেসব কুকর্ম ধৃষ্টতাসহকারে প্রকাশ্যে করা হয় সেগুলোকেও অশ্লীল বলা হয়।

দীর্ঘদিন যাবৎ অশ্লীলতাকে নানা উপমায় অভিহিত করে এবং নানা বক্তব্যের রং মেখে শিল্পের নামে চালিয়ে দেয়া হচ্ছে। কিন্তু অশ্লীলতা ও শিল্পের ধারণা ও সংজ্ঞা সম্পূর্ণ আলাদা। অশ্লীলতাকে যতই পরিশীলিত করে বলা বা প্রকাশ করার চেষ্টা হোক না কেন সেটা সেটা আরও কদর্যভাবে ধরা দেয়।

বহু সংস্কৃতিতে অশ্লীল বিষয়কে সংজ্ঞায়িত করে আইন প্রস্তুত করা হয়েছে। অষ্টাদশ শতাব্দীর বই ফ্যানি হিল বিভিন্ন সময়ে অশ্লীল বিচারের মুখোমুখি হয়েছে (যেমন, চিত্র: প্লেট একাদশ: স্নানের পার্টি; লা ব্রেকিয়েট)।

ব্যক্তি ও পারিবারিক সুস্থতার সাথে অশ্লীলতা মেলে না। কোন ব্যক্তি শারিরীক ও মানসিকভাবে অসুস্থ হলে তার মাধ্যমে অশ্লীলতা প্রকাশ পেতে পারে।

সামাজিক সুস্থতার সাথেও অশ্লীলতা মেলে না। যে কোন সমাজে অস্থায়ী বিষয় হিসেবে ঢুকে কালক্রমে স্থায়ী রূপ লাভ করে থাকে। এর স্থায়ী হবার কারণ বহুমুখী। প্রথমত: সমাজস্থ মানুষের নৈতিকতায় শীথিলতার উপস্থিতি থাকলে অশ্লীল বিষয় পাত্তা পেয়ে যায়। সমাজে কোনরূ নৈতিকতার বালাই না থাকলে এটা আস্কারা পেয়ে পেয়ে বেড়ে চলে। যদি কোন দেশে সরকারি মিডিয়াতে অশ্লীল বিষয় প্রকাশিত হবার সুযোগ পায় তাহলে সেটা উদাহরণ হিসেবে সহজেই সেই দেশের জনমনে জায়গা করে নিতে পারে।

অশ্লীলতা একটি বড় অপরাধ। এটা সমাজের শান্তি-শৃঙ্খলা নষ্ট করে। সমাজকে কলুষিত করে। নিষ্পাপ ও কোমলমতি ছাত্র-ছাত্রীদের চরিত্র হনন করে যুবক-যুবতীদের কুকর্মের প্রতি প্রলুব্ধ করে।

আল্লাহ তায়ালা অশ্লীলতাকে হারাম ঘোষণা করেছেন। আল্লাহ বলেন, ‘বলুন, আমার প্রতিপালক নিষিদ্ধ করেছেন প্রকাশ্য ও গোপন অশ্লীলতা।’(সূরা আল—আ’রাফ, আয়াত ৩৩)। আল্লাহ তায়ালা আরও বলেন, ‘প্রকাশ্য কিংবা গোপন অশ্লীল আচরণের নিকটেও যাবে না।’ (সূরা আল—আনআম, আয়াত ১৫১)।

অশ্লীল আচরণকারী সকলের নিকট ঘৃণিত। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, ‘যার মধ্যে অশ্লীলতা আছে, তা তাকে ত্রুটিযুক্ত করে। আর যার মধ্যে লজ্জাশীলতা আছে, তা তাকে সৌন্দর্যমণ্ডিত করে।’ (তিরমিযি)।

‘আল কোরআনের আলোকে অশ্লীলতা হচ্ছে, অন্যের মন্দ কথা প্রকাশ করা, অনর্থক বিষয়ে কথা বলা, এমন অপবাদ ছড়ানো যে বিষয়ে নিজেদের জ্ঞান নেই, চারজন লোকের চাক্ষুষ সাক্ষী ব্যাতিত জেনার অপবাদ দেয়া, মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়া ইত্যাদি।

আল্লাহ বলেন, ‘হে মুহাম্মদ (স.) বলুন— আমার রব হারাম করেছেন যাবতীয় প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য অশ্লীলতা, পাপ কাজ, অসংগত বিরোধিতা, আল্লাহর সাথে এমন কিছু শরীক করা যার কোন প্রমাণ তিনি নাযিল করেননি এবং আল্লাহর প্রতি এমন কথা আরোপ করা যা তোমরা জান না। এই আয়াতের ব্যাখ্যায় রয়েছে আরো ২৩ টি আয়াত। শয়তান মানুষকে অশ্লীল কাজের প্ররোচণা দেয়- আল্লাহ তা’আলা বলেন, হে মানুষ! পৃথিবীতে যা কিছু হালাল ও পবিত্র বস্তু আছে তা থেকে তোমরা আহার কর আর শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ কর না।’ ব্যভিচার নিঃসন্দেহে অশ্লীলতা। আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা ব্যভিচারের কাছেও যেও না। অবশ্যই এটা অশ্লীল কাজ ও নিকৃষ্ট পন্থা।’

অশ্লীলতা মুখের ভাষায় নয়, আজকাল মুখের খাবারের অংশ হয়ে গেছে। মাদকের নিয়ন্ত্রণহীনতা, ব্যাপক ছড়াছড়ি এবং মাদকাসক্তি অশ্লীলতার প্রধান বাহন। একটা অভিজ্ঞতা শেয়ার করা যাক ।

ঢাকা থেকে বহুদূরে নওগাঁর নজিপুরে রাস্তার ধারে দাঁড়ালাম একটু চা খেতে। রাত হয়ে যাওয়ায় চায়ের দোকানের কর্মীরা বাড়ি চলে গেছে। আইসক্রীম ও ঠান্ডা পানীয় খোঁজ করতেই পাওয়া গেল। ওদের ফ্রিজে সবই আছে। কোকাকোলা, স্পাইট, লেমন ড্রিঙ্কস যার যেটা পছন্দ নিতে বলা হলো। হঠাৎ সেখানে এক কম বয়সী ভবঘুরে এসে হাজির। সে তোতলা করে কথা বলে তার জন্য এক বোতল স্পি..ট কিনে দিতে আরজি করলো। ভাবলাম সে হয়তো স্প্রাইট খেতে চাচ্ছে। তাই তাকে আমার হাতের স্প্রাইটের বোলটি এগিয়ে দিতে সে না করলো। বললো এটা নয়— স্পি..ট দে।

দোকানদার বুঝেছে তার মুখের ভাষা। সে ওতে দ্রুত সেখান থেকে তাড়ানোর জন্য দেরি না করে একটি অজানা বোতল এনে তাকে দিতেই সে খুব খুশি হয়ে নাচতে লাগলো। এজন বাস ড্রাইভার হঠাৎ এসে সেও একটি নিষিদ্ধ বোতল নিয়ে একটু আড়ালে গিয়ে ঢক্ঢক্ করে গিলে নিল। মনে হলো দিন বদলের পালায় চালক ও ভবঘুরেদের মধ্যেও নিষিদ্ধ বোতল আমাদের খাদ্য ও পানীয়ের মধ্যে পরিবর্তন এনে দিয়েছে। কিন্তু যদি মদ এভাবে তাদের পানীয় গ্রহণের চিন্তায় জায়গা করে নেয় তাহলে কি হবে?

শিল্পকে বলা হয়েছে- মনের খোরাক। কিন্তু ইউরাপে সেই শিল্পকে কিছু মানুষ কদর্য পর্যায়ে নামিয়ে দিয়েছে। নিজ দেশের গালি পরদেশের বুলি বলে একটা প্রবাদবাক্য খুবই প্রচলিত। পাবলিক ন্যুইসেন্স তৈরি করে এমন অশ্লীলতাকে আজকাল আমাদের দেশ অবাধে প্রমোট করা হচ্ছে। বডি পেইন্টের নামে উলঙ্গ হয়ে ঘুড়ে বেড়ানো ইউরোপের অনেক দেশের সংস্কৃতির অংশ। কেউ বিষভাবে কেউভাবে কিস। বিভাজন সেখান থেকেই উদ্ভব।

অতীতে প্রাচীন গ্রীসে, যৌনতা এবং শরীরের সৌন্দর্যের ওপর উল্লেখযোগ্য জনকর্ম একটি মুখ্য অংশ ছিল। সক্রেটিস এবং প্লেটো প্রমিত বিচারধারা উন্নত করে এবং যে ভাবনা দেয় যে দেহের শুচি এবং শারীরিক সৌন্দর্য মানব আত্মার উন্নতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

মানুষের অশ্লীল কাজে আগ্রহ বা আকর্ষণের পিছনে কিছু কারণ রয়েছে। দুর্বল সামাজিক পরিবেশে মানুষের মনোবিকার তৈরি হয়। এত ব্যক্তিগত মূল্যবোধ পরিবর্তন হতে পারে এবং এটি অশ্লীল কাজে আগ্রহ এবং আকর্ষণের কারণ হতে পারে।

মিডিয়া, সিনেমা, টেলিভিশন, ইন্টারনেট ইত্যাদির মাধ্যমে মানুষের মতামত, আদর্শ এবং মনোবৃত্তি আকার নেয়। অসুস্থ মতামত বা স্থায়িত্ব বৃদ্ধির কারণে, মানুষের অশ্লীল কাজে আগ্রহ তৈরি হতে পারে। মানসিক স্বাস্থ্যের সমস্যা, দিনের কাজে স্ট্রেস এবং মোহ পরিস্থিতিতে অশ্লীল কাজে আগ্রহের কারণ হতে পারে।

অশ্লীলতা দূর করার জন্য সমাজ, শিক্ষা, পরিবার, সরকার এবং ব্যক্তিগত স্তরে প্রয়াস প্রয়োজন। শিক্ষার্থীদেরকে সঠিক জ্ঞান এবং উচ্চ মরাল মূল্যবোধ দেওয়া উচিত। শিক্ষা ব্যক্তিগত এবং সামাজিক মরাল তৈরি করে এবং অশ্লীল আচরণ থেকে দূরে থাকার মাধ্যম তৈরি করে। মিডিয়াতে শৃংখলা এবং সঠিক তথ্যের মধ্যমে অশ্লীলতা সংবাদ থেকে দূরে থাকার উপায় প্রদান করতে হবে।

সরকার বা নীতি নির্ধারণকারী প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে অশ্লীলতা প্রতিরোধে দক্ষ আইনগত ব্যবস্থা প্রয়োজন। সরকারীভাবে যৌন উপাদান ব্যবস্থাপনা এবং যৌন শিক্ষার মধ্যে সহযোগিতা দেয়া উচিত, যাতে অশ্লীলতা দূর করার প্রয়াসে সাহায্য করা যায়।

প্রতিটি মানুষের জন্য ব্যক্তিগত সতর্কতা, নৈতিক শক্তি অর্জন এবং স্বাস্থ্যগত জীবনে সেই নৈতিক অবস্থান ধারণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নিজের যৌন আদর্শ এবং মূল্যবোধ পরিবর্তনে প্রভাব বিস্তারকারী খারাপ উপাদানগুলোকে প্রতিরোধে সক্ষমতা থাকতে হবে। অশ্লীলতা দূর করতে সমাজের সচেতনতা, বিশিষ্ট ব্যক্তিদের মাধ্যমে কোন সম্প্রদায়ের মানুষদের আন্তরিক সমর্থন আদায় করা প্রয়োজন। এই সমস্যার সমাধানে সবার ইতিবাচক সমর্থন থাকা গুরুত্বপূর্ণ।

অশ্লীলতা যে কোন সমাজের জন্যই শিল্প নয় কারণ, এটি সামাজিক সুস্থতার সঙ্গে মিলে না। উদাহরণস্বরূপ, শিল্পের মাধ্যমে সামাজিক সমস্যাগুলি সমাধান করার চেষ্টা করা যায়, মানবাদিক মূল্যের উন্নতি সাধন করা যায় এবং মানবিক সংবাদ প্রয়োগ করে একটি সুস্থ সমাজ গড়ে তোলা যায়। কিন্তু অশ্লীলতার মাধ্যমে মানুষ আদিম, বর্বর ও বেপরোয়া হয়ে উঠে। ফলে সমাজের প্রচলিত উন্নত শিল্প খুব দ্রুত ধ্বংস হতে পারে।

অশ্লীলতা একটি বৈশ্বিক সমস্যা যা কোনো কারণেই যে কোন সমাজে প্রবেশ করতে পারে। মৌলিকভাবে এটি একটি নির্দিষ্ট শিল্প নয়, বরং এদিয়ে চরম উন্নাসিকতার ও একধরণের হঠকারীতা শুরু হয়ে অনৈতিক ফসল উৎপাদিত হতে থাকে। তাই সামাজিক স্তরে অস্থায়ী বা স্থায়ী ক্ষতি আসবার উপায় হিসেবে এর ক্ষতিকর প্রভাব আপামর জনগোষ্ঠীকে কষ্ট দেয় ও হতাশ করে। ফলত: দ্রুত সামাজিক ভাঙ্গন শুরু হয়ে সামাজিক অসততা তৈরি হয়। মানুষ অন্যায় কাজকে ঘৃণা করতে ভুলে যায় এবং অন্যায় ও গর্হিত কাজকে উপরে উঠার সিঁড়ি হিসেবে ব্যবহার করতে পছন্দ করে। তাই অশ্লীলতা এবং অসৎ শিল্পের প্রতি আমাদের সমাজে সম্পূর্ণ প্রতিবাদ থাকা উচিত, যাতে আমরা একটি সুস্থ এবং উন্নত সমাজ গড়ে তুলতে সক্ষম হতে পারি।

*লেখক রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকর্ম বিভাগের প্রফেসর ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের সাবেক ডীন। E-mail: [email protected]

 

;

মিয়ানমার পরিস্থিতি ও প্রতিবেশী দেশগুলোর ভূমিকা



ব্রিঃ জেঃ (অবঃ) হাসান মোঃ শামসুদ্দীন
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

গত ৫ সেপ্টেম্বর, ইন্দোনেশিয়ার জাকার্তায় অনুষ্ঠিত ৪৩তম আসিয়ান শীর্ষ সম্মেলনে মিয়ানমার বিষয়ক পাঁচ দফা ঐকমত্য বাস্তবায়নের বিষয়ে আসিয়ান নেতারা পর্যালোচনা করে কিছু সুপারিশ প্রণয়ন করে। তাঁরা মিয়ানমারে ক্রমাগত সহিংসতার তীব্র নিন্দা জানায় এবং এই সংকট জনগণের মধ্যে দীর্ঘস্থায়ী দুর্ভোগ, মানবিক সংকট এবং আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার উপর বিরূপ প্রভাব ফেলছে বলে তাদের মত ব্যক্ত করে। তারা একটি শান্তিপূর্ণ সমাধানের বিষয়ে মিয়ানমারকে সহায়তা করার ব্যাপারে আসিয়ানের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করে। মিয়ানমারের জনগণের প্রয়োজনে মানবিক সহায়তা প্রদান সহজতর করতে এবং সহিংসতা বন্ধে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক জাতীয় সংলাপ প্রতিষ্ঠার জন্য বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারদের মধ্যে আস্থা এবং পার্থক্য দূর করা জরুরি। আসিয়ান সদস্যারা একমত হয়ে সিদ্ধান্ত নেয় যে, মিয়ানমারের রাজনৈতিক সংকট মোকাবিলায় পাঁচ দফা ঐকমত্য বজায় রেখে তা সম্পূর্ণরূপে বাস্তবায়ন করতে হবে।

মিয়ানমারের সশস্ত্র বাহিনীকে এবং সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষকে সহিংসতা কমাতে এবং বেসামরিক, ঘরবাড়ি এবং জনসাধারণের উপর লক্ষ্যবস্তু হামলা বন্ধ করতে অনুরোধ জানাতে হবে। আসিয়ান চেয়ারের বিশেষ দূতের প্রতি আস্থা তৈরি করতে হবে। মানবিক সহায়তার নিরাপদ এবং কার্যকর বিতরণ চালিয়ে যেতে হবে এবং মিয়ানমারের সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডারদের সহায়তায় নিশ্চিত করতে হবে যাতে মানবিক সহায়তা সশস্ত্র সংঘাতের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত আইডিপিদের কাছে পৌঁছে। এজন্য প্রয়োজনে বহিরাগত অংশীদার এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছ থেকে আরও সমর্থন জোগাড় করার কাজ চালিয়ে যেতে হবে। মিয়ানমারের সংকট ও এর প্রভাব মোকাবিলায়, মাদক ও মানব পাচারের মতো আন্তর্জাতিক অপরাধ বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে আসিয়ান সদস্য দেশগুলির মধ্যে এবং মিয়ানমারের প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সহযোগিতা বৃদ্ধি করতে হবে। সদস্য দেশ হওয়া সত্ত্বেও মিয়ানমার, সেপ্টেম্বর মাসে অনুষ্ঠিত এই আসিয়ান শীর্ষ সম্মেলনে অংশ নেয়নি।

মিয়ানমারের সরকারবিরোধী দলগুলো জান্তাকে ক্ষমতাচ্যুত করার লক্ষ্য পুনর্ব্যক্ত করেছে। মিয়ানমারের সরকারবিরোধী আন্দোলনকে বিভক্ত করার জান্তার সাম্প্রতিক প্রচেষ্টার পর সামরিক একনায়কতন্ত্র নির্মূল এবং একটি ফেডারেল ডেমোক্রেটিক ইউনিয়ন প্রতিষ্ঠার রাজনৈতিক লক্ষ্যের ব্যাপারে কোনো ধরনের সমঝোতা প্রত্যাখ্যান করেছে দেশটির দুটি প্রধান সরকারবিরোধী সংগঠন। দেশটির জাতীয় ঐক্য সরকার (এনইউজি) এবং এর উপদেষ্টা সংস্থা

ন্যাশনাল ইউনিটি কনসালটেটিভ কাউন্সিল (এনইউসিসি) জানিয়েছে যে জান্তার বিরুদ্ধে তাদের লড়াইয়ের চূড়ান্ত লক্ষ্য একটি ফেডারেল ইউনিয়ন প্রতিষ্ঠা। ফেডারেল ইউনিয়ন গঠন করার জন্য সামরিক একনায়কত্বকে নির্মূল করার পাশাপাশি দেশের রাজনীতিতে সামরিক বাহিনীর সম্পৃক্ততা এবং অভ্যুত্থানের প্রবণতাও মুছে ফেলতে হবে। ২০২১ সালে মিয়ানমারে সামরিক সরকার উৎখাত করে একটি ফেডারেল ডেমোক্রেটিক ইউনিয়ন গড়ে তোলার লক্ষ্য নিয়ে ক্ষমতাচ্যুত ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসি (এনএলডি) সরকারের নির্বাচিত আইন প্রণেতারা এবং তাদের জাতিগত মিত্রদের নিয়ে এনইউজি গঠন করেছিল। এর সশস্ত্র শাখা পিপলস ডিফেন্স ফোর্স গ্রুপের (পিডিএফ) নেটওয়ার্ক শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে কিছু জাতিগত সশস্ত্র সংগঠনের (ইএও) পাশাপাশি যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে। মিয়ানমারের অনেক মানুষ এনইউজিকে তাদের বৈধ সরকার এবং পিডিএফ গ্রুপগুলিকে তাদের সেনাবাহিনী হিসাবে বিবেচনা করে। সরকার ও বিরোধী শক্তির মধ্যে রাজনৈতিক সংলাপের পথ প্রশস্ত করতে কিছু প্রাক্তন সামরিক জেনারেলের নেতৃত্বে একটি সামরিক-পরিচালিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করা হবে জানা যায়। এনইউজি তাদের বিবৃতিতে বলেছে যে একটি ফেডারেল ইউনিয়ন প্রতিষ্ঠার জন্য তারা যে দৃষ্টিভঙ্গি এবং মূল্যবোধ নির্ধারণ করেছে তা থেকে বিচ্যুত করে এমন যে কোনও রাজনৈতিক পদক্ষেপকে স্পষ্টভাবে প্রত্যাখ্যান করে। তারা কেবল বর্তমান সরকারই নয়, পূর্ববর্তী সরকারগুলোর দ্বারা সংঘটিত মানবাধিকার লঙ্ঘন ও যুদ্ধাপরাধ এবং জাতিগত জাতীয়তার বিরুদ্ধে তাদের নৃশংসতা মোকাবিলায় অন্তর্বর্তীকালীন ন্যায়বিচার প্রক্রিয়াকে বাধ্যতামূলক ও বাস্তবায়ন করবে।

মিয়ানমারের অন্যতম প্রাচীন ও শক্তিশালী জাতিগত সশস্ত্র গোষ্ঠী কারেন ন্যাশনাল ইউনিয়নের (কেএনইউ) পররাষ্ট্র বিষয়ক প্রধান পাদোহ সাও তাও নি জানায় যে, একনায়কতন্ত্রের পতনের ক্ষেত্রে এনইউজির অবস্থান কেএনইউর মতোই। কেএনইউ’র সশস্ত্র শাখা, কারেন ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি এবং কারেন ন্যাশনাল ডিফেন্স অর্গানাইজেশন এনইউজির পিডিএফের পাশাপাশি মিয়ানমারে সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করছে। দীর্ঘদিন ধরেই মিয়ানমারের জান্তা দেশটির জনগণকে দমন করার জন্য ক্রমবর্ধমান সহিংস বিমান হামলা চালাচ্ছে। সাম্প্রতিক হামলায় অনেক বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছে। সামরিক জান্তা অভ্যুত্থানের পর থেকে ৩ হাজার ৯০০ জনেরও বেশি বেসামরিক নাগরিককে হত্যা করেছে। জান্তা ক্ষমতা দখলের পর থেকে মিয়ানমার বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির মধ্যে নিমজ্জিত হয়েছে, পশ্চিমা দেশগুলো বেশ কয়েক ধাপে নিষেধাজ্ঞা আরোপের পরও বিরোধীদের বিরুদ্ধে রক্তক্ষয়ী দমন-পীড়ন চলছে, একই সঙ্গে বিভিন্ন ফ্রন্টে সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে ও প্রতিরোধ আন্দোলন জোরদার হচ্ছে।

জান্তা সরকার এই নৃশংসতার কথা অস্বীকার করে বলেছে যে, তারা সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে বৈধ অভিযান চালাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র জান্তা সরকারকে দুর্বল করতে মিয়ানমারের উপর নিষেধাজ্ঞার পরিধি আরও বাড়িয়েছে। মিয়ানমারের জেট ফুয়েল সেক্টরের সঙ্গে জড়িত বা সহায়তাকারী বিদেশি কোম্পানি ও ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্ত করে এই নিষেধাজ্ঞা অনুমোদন করা হয়েছে এবং এটি বাস্তবায়ন হলে এই সেক্টরের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান নিষেধাজ্ঞার আওতায় আসবে। মার্কিন সন্ত্রাসবাদ ও আর্থিক গোয়েন্দা বিভাগের আন্ডার সেক্রেটারি ব্রায়ান নেলসন জানায় যে, নাগরিকদের নিপীড়ন করতে সক্ষম এমন সম্পদ থেকে জান্তা সরকারকে বঞ্চিত করার জন্য নতুন এই নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে।

অভ্যুত্থানের পর থেকে যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য পশ্চিমা দেশগুলো মিয়ানমারের সামরিক নেতাদের ওপর কয়েক দফা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। জুন মাসে মুদ্রা বিনিময়ের জন্য মিয়ানমার অয়েল অ্যান্ড গ্যাস এন্টারপ্রাইজসহ রাজস্ব উৎপাদনকারী রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন দুটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংককে নিষেধাজ্ঞা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। জান্তা নিয়ন্ত্রিত অর্থলগ্নিকারী প্রতিষ্ঠান মিয়ানমা ফরেন ট্রেড ব্যাংক (এমএফটিবি) ও মিয়ানমা ইনভেস্টমেন্ট অ্যান্ড কমার্শিয়াল ব্যাংকের (এমআইসিবি) ১০০ কোটি ডলারের বেশি সম্পত্তি সোনালী ব্যাংকে ছিল যা গত জুনে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার আওতায় জব্দের তালিকায় পড়ে। ডলারের বিপরীতে মিয়ানমারের মুদ্রা চ্যাটের মান কমে যাওয়ায় বর্তমানে মিয়ানমার চীনের এক্সপোর্ট ইমপোর্ট ব্যাংক থেকে নেয়া ঋণ পরিশোধ করতে অসুবিধার সম্মুখীন হচ্ছে। এই ব্যাংক থেকে মিয়ানমার ইতিপূর্বে ৪০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণ নিয়েছিল, চায়না এক্সিম ব্যাংক মিয়ানমারকে ৫% সুদে এই ঋণ দেয়।

এসব কারণে মিয়ানমার কিছুটা অর্থনৈতিক চাপে রয়েছে। এই দুটি প্রতিষ্ঠানের অ্যাকাউন্ট বাংলাদেশের পক্ষ থেকে জব্দ করার প্রতিক্রিয়ায় মিয়ানমার রাখাইন রাজ্যের মংদু সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে চাল ও পেঁয়াজসহ অন্যান্য পণ্য রপ্তানি বন্ধ করে দিয়েছে বলে জানা যায়। মিয়ানমার বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জানায় যে, চাল, সয়াবিন, বাদাম ও পেঁয়াজসহ খাদ্যপণ্য শুধুমাত্র সিতওয়ের বাণিজ্যিক জোন দিয়েই রপ্তানি করা হবে। অনেক ইউরোপীয় কোম্পানি পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার কারনে মিয়ানমার থেকে ব্যবসা গুটিয়ে নিয়েছে ও নিচ্ছে। অবকাঠামোগত উন্নয়ন থেকে শুরু করে ভোক্তাপণ্য খাতে সৃষ্ট সে শূন্যতা পূরণ করছে এশীয় প্রতিষ্ঠানগুলো, তারা সেখানে তাদের ব্যবসা সম্প্রসারণ করছে। মিয়ানমারের সঙ্গে চীন, থাইল্যান্ড ও জাপানের মতো দেশগুলোর সম্পর্ক স্থিতিশীল থাকার কারণে এসব দেশের বাণিজ্যিক তৎপরতা বাড়ছে। বেসরকারি থিংক ট্যাংক ইনস্টিটিউট ফর স্ট্র্যাটেজি অ্যান্ড পলিসি-মিয়ানমারের তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে চলতি বছরের মার্চের মধ্যে মিয়ানমার সরাসরি ৫.৪ বিলিয়ন ডলার বিদেশি বিনিয়োগ অনুমোদন করেছে যার মধ্যে হংকংসহ চীনের সম্পদের পরিমাণ ৫৫ শতাংশ বা ৩ বিলিয়ন ডলার। চলমান পরিস্থিতিতেও চীন ও মিয়ানমারের মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্ক বাড়ছে।

চীনের ইউনিয়ন রিসোর্সেস অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং এবং ইউনান এনার্জি ইনভেস্টমেন্ট দক্ষিণ মিয়ানমারে আইয়ারওয়াদি অঞ্চলে ২.৫ বিলিয়ন ডলারের একটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করছে। ২০২৭ সাল থেকে উচ্চক্ষমতার বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি বাণিজ্যিকভাবে চালু হবে। এটি তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসে চলবে এবং প্রায় ১.৪ গিগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপন্ন করবে। মিয়ানমারের মধ্য দিয়ে চীনের মূল ভূখণ্ডকে ভারত মহাসাগরের সঙ্গে সংযুক্ত করার বিষয়ে চীন-মিয়ানমার অর্থনৈতিক করিডোর নির্মাণ প্রকল্প এবং চীনা কোম্পানিগুলোর নেতৃত্বে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে রেল ও বন্দর নির্মাণের কাজ এগিয়ে চলছে। মিয়ানমারের তৈরি পোশাক শিল্পে চীনের উপস্থিতি উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। মিয়ানমারে বর্তমানে তিন শতাধিক চীনা পোশাক শিল্প-কারখানা রয়েছে। মিয়ানমারে উৎপাদিত মোট পোশাকের প্রায় অর্ধেকই চীনা প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে উৎপাদন হয় । পশ্চিমা প্রতিষ্ঠানগুলো মিয়ানমারে থেকে চলে যাওয়ার থাই কোম্পানিগুলোও এই শূন্যতা পূরণে এগিয়ে আসছে, তারা মিয়ানমারের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগের মাধ্যমে বিনিয়োগ করছে। থাই জ্বালানি কোম্পানিগুলো মিয়ানমারে তাদের কার্যক্রম সম্প্রসারণ করছে। থাইল্যান্ডের রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন তেল ও গ্যাস গ্রুপ পিটিটি এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড প্রোডাকশন, ফরাসি জ্বালানি সংস্থা মিয়ানমার থেকে চলে যাওয়ার তাদের দায়িত্ব গ্রহন করে। মিয়ানমার এই অঞ্চলে জ্বালানি নিরাপত্তায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। থাইল্যান্ডের মোট প্রাকৃতিক গ্যাসের প্রায় ১৫ শতাংশ সরবরাহ করে মিয়ানমার। থাই পানীয় উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোও সেখানে ব্যবসা বাড়াচ্ছে। স্থানীয় কোম্পানির সঙ্গে যৌথভাবে তারা কারখানা স্থাপন করছে। থাই কোম্পানিগুলো নিজেদের দেশে মজুরি বাড়ার কারনে তারা স্বল্প মজুরির মিয়ানমারে বিনিয়োগের দিকে মনোযোগ দিচ্ছে। জাপান ও মিয়ানমার ঐতিহাসিকভাবেই মিত্রতার সম্পর্কে আবদ্ধ। জাপানের কিছু কোম্পানি মিয়ানমার থেকে তাদের কার্যক্রম গুটিয়ে নিলেও এখনো অন্তত ৪০০ জাপানি প্রতিষ্ঠান মিয়ানমারে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। মিৎসুবিশি করপোরেশন ও মিৎসুবিশি এস্টেট তাদের কার্যক্রম বাড়িয়েছে।

গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে মিয়ানমারে টয়োটা মোটর তাদের কার্যক্রম শুরু করেছে। পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা থাকা স্বত্বেও এশীয় কোম্পানিগুলোর বিনিয়োগ বৃদ্ধি মিয়ানমারের ভবিষ্যৎ অর্থনৈতিক কার্যক্রম চলমান রাখতে সহায়তা করবে বলে বিশ্লেষকরা মনে করে। বাংলাদেশের মত থাইল্যান্ড ও চীন মিয়ানমারের প্রতিবেশী দেশ। থাইল্যান্ডের সঙ্গে মিয়ানমারের উদ্বাস্তু সমস্যা, মাদক, মানবপাচার ইত্যাদি নানা ধরনের সমস্যা রয়েছে। থাইল্যান্ড নিজেদের এইসব সমস্যা সমাধানে মিয়ানমারের সঙ্গে প্রতিনিয়ত যোগাযোগ ও আলোচনা চালায়। চীনের সঙ্গেও মিয়ানমারের বিভিন্ন ধরনের সমস্যা রয়েছে। এসব সমস্যার সমাধানের পাশাপাশি দেশগুলো মিয়ানমারের চলমান পরিস্থিতিতেও তাদের বিনিয়োগ ও ব্যবসা সম্প্রসারণ করে লাভবান হচ্ছে। চলমান রোহিঙ্গা সংকট ছাড়া বাংলাদেশের সঙ্গে মিয়ানমারের সম্পর্ক ভাল। প্রতিবেশী দেশ হিসেবে বাংলাদেশ মিয়ানমারের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়াতে পারে। মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশ চাল, ডাল সহ বিভিন্ন খাদ্যপণ্য আমদানি করতে পারে, এর পাশাপাশি বাংলাদেশের ঔষধের একটা বড় বাজার হতে পারে মিয়ানমার। বাংলাদেশের আটটি শিল্প গ্রুপ এখন বিলিয়ন ডলার ক্লাবে যোগ দিয়েছে। বাংলাদেশের বিনিয়োগকারীরা তাদের অভিজ্ঞতা ও সক্ষমতা কাজে লাগিয়ে মিয়ানমারে বিনিয়োগ করতে পারে। বর্তমান পরিস্থিতিতে মিয়ানমারে বিনিয়োগ ঝুঁকিপূর্ণ হলে ও অন্যান্য প্রতিবেশী দেশ তা থেকে যেভাবে লাভবান হচ্ছে বাংলাদেশ তাদের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে উপকৃত হতে পারে।

;