নতুনগ্যাস ক্ষেত্রের সম্ভাবনা, মত-দ্বিমত

  • স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

অনশোরে, ফুটো করতে করতে ঝাঁঝরা হয়ে গেছে, এখন গ্যাস পাওয়ার সম্ভাবনাময় ক্ষেত্র খুবই কম বলে মন্তব্য করেন আরপিজিসিএল’র সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী কামরুজ্জামান। তবে তার বক্তব্যের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেন ড. ম. তামিম, অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন ভূঁইয়া, সাংবাদিক অরুণ কর্মকার ও মোল্লাহ আমজাদ হোসেন।

রোববার (৯ আগস্ট) জাতীয় জ্বালানি নিরাপত্তা দিবস উপলক্ষে ভার্চুয়াল সেমিনারের মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করছেন আরপিজিসিএল’র সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী কামরুজ্জামান।

বিজ্ঞাপন

প্রবন্ধকার বলেন, কিছু এলাকায় অল্প সম্ভাবনা রয়েছে। সে সব এলাকায় কাজ করছে বাপেক্স। ২০২৩ সালের মধ্যে বাপেক্স ৭টি কূপ খননের উদ্যোগ নিয়েছে। ২০১৮ সাল পর্যন্ত গ্যাসের উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব হচ্ছে। এরপর থেকে ধীরে ধীর কমে যাচ্ছে। এখন যদি পদক্ষেপ নেওয়া না হয় তাহলে বিশাল গ্যাপের সৃষ্টি হবে।

এই মুহূর্তে এলএনজির দাম কম, এইটাকে কাজে লাগাতে হবে। দেশীয় গ্যাসের উৎপাদন কমিয়ে আমদানির দিকে এগুতে হবে। যে কোনো সময় প্রাইস বাড়তে পারে। তাই স্টোরেজ ক্যাপাসিটি বাড়নোর পরামর্শ দেন প্রবন্ধকার।

বিজ্ঞাপন

ল্যান্ডে গ্যাস ক্ষেত্র আবিষ্কারের সম্ভাবনা কম বক্তব্যের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেন প্যানেল আলোচক এফইআরবির চেয়ারম্যান অরুণ কর্মকার। তিনি বলেন এখানেই আমি দ্বিমত পোষণ করি। আমরা পুরো ল্যান্ড রিসোর্স অ্যাসেসমেন্ট করা হয় নি তাহলে কিভাবে বলবো। এখন পর্যন্ত ‍সুরমা বেসিন থেকে গ্যাস উত্তোলন হচ্ছে। বেঙ্গল বেসিন ভোলা ছাড়া আনটার্চ রয়ে গেছে। প্রকৌশলীরা মনে করে বেঙ্গল বেসিনও অনেক সম্ভাবনাময়। সুরমা বেসিনেরও কিছু এলাকা এখন রয়ে গেছে।

তিনি বলেন, রিসোর্স অ্যাসেসমেন্ট, এরপর রিসোর্স ম্যাপিং তারপর উন্নয়ন করতে হবে। আমদানি করতে হবে তবে তার সঙ্গে যেনো নিজস্ব সম্পদের একটি সামঞ্জস্য থাকে। না হলে বিপদের সম্ভাবনা থাকে। নিজেদের জ্বালানি অনুসন্ধান ও আহরণ ছাড়া জ্বালানি সংকট নিরসন সম্ভব নয়। আমরা বিগত ১০ বছর ৯ টিসিএফ গ্যাস উত্তোলন করেছি। কিন্তু এই সময়ে আবিষ্কার করেছি মাত্র ১ টিসিএফ। রূপগঞ্জ, সুন্দলপুরে অল্প গ্যাস রয়েছে, এগুলোকে গাস ফিল্ডের মর্যাদা দেওয়াই ঠিক হয় নি। এলপিজি, এলএনজি ফরমেটে আমদানি করছি। কিন্তু এই বিপুল পরিমাণ আমদানি কতটা বাস্তব সম্মত হবে। এইটা একটা ভেবে দেখার বিষয়।

২০০৯-১০ সালে জাতীয় সংসদ সরকারি প্রতিষ্ঠান সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। একটি রিপোর্ট করেছিলেন, রিপোর্টে বলেছিলেন এখন যে পরিকল্পনা নিয়ে এগুচ্ছেন তাতে জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব না। আমিও মনে করি এখনও সঠিক ট্রাকে নেই।

এনার্জি অ্যান্ড পাওয়ারের সম্পাদক মোল্লাহ আমজাদ হোসেন বলেন, নিজস্ব জ্বালানিকে অলস রেখে শুধু আমদানির দিকে ঝুঁকলে জিও পলিটিক্সের কারণে সংকট তৈরি হতে পারে।

অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন ভূঁইয়া বলেন, সারাদেশে যে কূপ খনন করা হয়েছে। কোথাও কোথাও একটি গ্যাস ক্ষেত্রেই এরচেয়ে বিশে কূপ খনন করার নজির রয়েছে। কানাডাসহ অনেক দেশ কনভেনশনাল ক্ষেত্রগুলো যখন ফুরিয়ে যাচ্ছিল। তখন তারা আনকনভেনশনাল ক্ষেত্রে কাজ করে সম্ভাবনা দেখিয়েছেন। অনেক ক্ষেত্রে কনভেনশনাল ক্ষেত্রের চেয়েও বেশি গ্যাস আবিষ্কার হয়েছে।

জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ড. ম. তামিম বলেন, সম্ভাবনা খুব একটা নেই, সে ব্যাপারে আমারও দ্বিমত রয়েছে। অনেক জায়গা রয়েছে যেখানে সম্ভাবনা রয়েছে।

বঙ্গবন্ধুর পলিসি ছিল সেক্টরাল রিফর্ম ও জ্বালানি স্বনির্ভরতা। এখনও এটিতে জোর দেওয়া প্রয়োজন। বেসরকারি টেকনোলজি এবং বেসরকারি বিনিয়োগে সাই ফিল করার কোনো সুযোগ নেই।

সাংবাদিক আরিফুজ্জামান তুহিন বলেন, আজকে যদি দেখি বঙ্গবন্ধুর জ্বালানি দর্শন এবং নীতির ঠিক উল্টো পথে হাঁটছে। যুদ্ধ বিগ্রহ দেশে যখন হাতে টাকা নেই, তখন যদি রাষ্ট্রীয়করণ করছি। এখন বিরাষ্ট্রীয়করণ করা হচ্ছে। যা রাষ্ট্রকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দিচ্ছে। সবচেয়ে গুরুত্বপুর্ণ ভোলা আইল্যান্ড সেটি গ্যাজপ্রমের হাতে তুলে দিচ্ছি।

সাংবাদিক মাহফুজ মিশু বলেন, কয়লা উত্তোলনের কথা বলি, বাপেক্স জোরদার করার কথা বলি। এই বিষয়গুলি এখন প্রেস কনফারেন্স ও সভা সেমিনারের বিষয় হয়ে যাচ্ছে। সমুদ্র সীমা নিয়ে সরকারের এতো সফলতা, খুব একটা কাজে আসছে না।

শাহনাজ বেগম বলেন, এলএনজি আমদানি করা। এটি একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। বাংলাদেশকে আমদানিতে যেতেই হবে। টুডে অর টুমরো। এলপি ফরমেটে হলে অনেকের সমস্যা নেই। এলএনজি ফরমেটে হলে কারো কারো সমস্যা। নিরবিচ্ছিন্ন টেকসই মানসম্মত বিদ্যুৎ নিশ্চিত করতে হবে। এনার্জিং অডিটিং জরুরি।