জ্বালানি খাতে প্রাতিষ্ঠানিক পারফরমেন্স খুবই দুর্বল
জ্বালানি খাতে প্রাতিষ্ঠানিক উন্নয়ন জরুরি, সরকারের কাছে সুযোগ থাকলেও প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করা হচ্ছে না। প্রাতিষ্ঠানিক পারফরমেন্স খুবই দুর্বল, বঙ্গবন্ধু যেভাবে দক্ষ ও উচ্চতায় নিতে যেতে পেরেছিলেন আমরা সেখানে নিতে পারিনি।
বৃহস্পতিবার (১৩ আগস্ট) এফইআরবি আয়োজিত বঙ্গবন্ধু, এনার্জি সিকিউরিটি এবং আজকের বাংলাদেশ শীর্ষক সেমিনারে মূল প্রবন্ধে এমন বিষয় তুলে আনা হয়। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন এনার্জি এন্ড পাওয়ারের এডিটর মোল্লাহ আমজাদ হোসেন। ভার্চুয়াল এ আয়োজনের সহযোগি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ইন্ডিপেনডেন্ট পাওয়ার প্রোডিউসার অ্যাসোসিয়েশন (বিপপা)
মোল্লাহ আমজাদ হোসেন বলেন, বঙ্গবন্ধু চেয়েছিল নিজস্ব সম্পদকে ব্যবহার করে গ্যাস উৎপাদন করার। তবে আমাদের নিজস্ব সম্পদ এতো বেশি নেই। আপত্তি নেই আমদানিতে। বঙ্গবন্ধুর দর্শনকে গুরুত্ব দিতে হবে। বাপেক্স ভোলায় তেল-গ্যাস আবিষ্কার, কেনো সেখানে রাশান কোম্পানি গ্যাজপ্রমকে দিতে হবে। এটি বাপেক্স এককভাবে দেওয়া উচিত। হিলে গ্যাজপ্রমক দিতে পারি। এখন বলা হচ্ছে, কয়লা থেকে সরিয়ে এলএনজিতে যেতে হবে। এটি করার আগে বিশেষজ্ঞদের দিয়ে মূল্যায়ন করা দরকার। বিদ্যুতের সিস্টেমলস কমানো দরকার। এশিয়ার দেশ সিঙ্গাপুরে ২ শতাংশ সিস্টেমলস। বিদ্যুৎ খাতের সঙ্গে ম্যাচ করতে পারছে না জ্বালানি খাত। প্রয়োজনে জ্বালানি আমদানি করবো। কিন্তু নিজস্ব সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করা হবে।
১৯৭২ সালের ১০ নভেম্বর দেশে ফিরে বঙ্গবন্ধু প্রথম গুরুত্ব দিলেন সোনার বাংলা গড়ার। এজন্য তিনি নিজস্ব সম্পদের ব্যবহারকে প্রথম সামনে আনলেন। তেল-গ্যাস ও খনিজ সম্পদের অনুসন্ধানের প্রতিষ্ঠান তৈরি করলেন। ১৯৭৩ সালে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের কাজ শুরু করলেন। অনুসন্ধানকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন। তখন তিনি দেখলেন কিছু আইনের পরিবর্তন প্রয়োজন। তাই ১৯৩৯ সালের পেট্রোলিয়াম আইনের পরিবর্তন আনলেন। যার ফলেই শেলের কাছ থেকে গ্যাস ফিল্ডগুলো কিনতে সক্ষম হয়েছেন। এসব ফিল্ড থেকে এখন পর্যন্ত ৩১ শতাংশ গ্যাস সরবরাহ আসছে। এনার্জি সেক্টরে শুধু থেমে থাকেনি, মিনারেল সেক্টরেও কাজ শুরু করেন। জামালগঞ্জে কোল-মাইনিং করা যায় কিনা তা দেখতে ব্রিটিশ পরামর্শক নিয়োগ করেন।
প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের উপর জোর দিয়েছিলেন তিনি। তিনি বিদ্যুতের সংস্কার করার জন্য ইস্ট পাকিস্তান পানি উন্নয়ন বোর্ডকে ভেঙে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড ও পানি উন্নয়ন বোর্ড করেন। নতুন কোনো গ্যাস আবিষ্কার না হলে ২০৩১ সালে গ্যাস শেষ হয়ে যাবে। স্থলভাবে বাপেক্সকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। যদিও অনেকে মনে করেন বাপেক্সের একার পক্ষে সম্ভব না। বিদেশি কোম্পানির সঙ্গে টেবিলে আলোচনার মাধ্যমে চূড়ান্ত হতে পারে।
এখন ৭১ হাজার গিগাওয়ার্ট ঘণ্টা বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে। শতভাগ বিদ্যুতায়নের দিকে যাচ্ছি। যেটা বঙ্গবন্ধুর বড় স্বপ্ন ছিল। ৭৬ টিসিএফ গ্যাসের সমপরিমাণ কয়লার মজুদ রয়েছে। কিন্তু আমরা কয়লার দিকে যেতে পারিনি। স্থানীয় লোকজনের আন্দোলন ও নানান কারণে। আমদানির পরিবর্তে নিজস্ব কয়লা দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করলে ৩০ শতাংশ বিদ্যুৎ উৎপাদন খরচ কমে যাবে।
প্যানেল আলোচক বাপেক্স’র সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মর্তুজা আহমেদ ফারুক চিশতী বলেন, গত দশ বছরে, অনেক কাজ হয়েছে। তবে জ্বালানি খাতে কিছু দুর্বলতা রয়ে গেছে। এই দুর্বলতা কাটিয়ে উঠতে পারলে আরও অনেক বেশি সফল হওয়া সম্ভব।
তিনি বলেন, বাপেক্সে ২০১৩ সাল থেকে ২০২০ সালে পর্যন্ত ৮ জন এমডি পরিবর্তন হয়েছে। তাহলে কিভাবে কাজ করবে সংস্থাটি। বাপেক্সের বোর্ডে কারা আছেন। যারা অবদান রাখতে পারবে, যাদের টেকনিক্যাল ও ম্যানেজমেন্ট ক্যাপাবিলিটি রয়েছে, যারা সৎ ও দক্ষ তাদেরকে দেওয়া উচিত। অনেক সক্ষমতা থাকার পরও ম্যানেজমেন্ট ও বোর্ডের দুর্বলতার জন্য সফল হওয়া যায় নি। অনেক দক্ষ জনশক্তি বাপেক্স ছেড়ে চলে গেছে, অনেকে অবসরে গেছেন। এখন দক্ষ জনবল তৈরি করতে অনেক সময় লাগবে। যারা অবসরে গেছেন তাদেরকে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া যেতে পারে।
এখন বিডিং করে তেমন সাড়া পাওয়া যাবে না। এখন তেলের দাম কমে গেছে। অতীতে বিডিং হয় নি। অতীতে যারা কাজ করেছেন তাদের সঙ্গে আলোচনা সমঝোতার মাধ্যমে কাজ করা উচিত। ওয়ান-টু ওয়ান আলোচনার মাধ্যমে এগিয়ে নেওয়া উচিত। ডিপ ড্রিলিংয়ের সীমাবদ্ধতা রয়েছে, ফাইন্যান্সিয়াল সীমাবদ্ধতা দূর করতে হবে। ওয়েস্টে অনেক ড্রিলিং করার পর গ্যাস পাওয়া যেতে পারে। সেই বিষয়গুলি দেখা উচিত। উন্মুক্ত পদ্ধতিতে জেভি করে কার্যক্রম পরিচালনা করা যেতে পারে।
জামালগঞ্জের সাড়ে ৫ বিলিয়ন টনের মতো কয়লা পাওয়া যেতে পারে। বড়কথা হচ্ছে নিজস্ব সম্পদের ব্যবহার। তাহলে সাশ্রয়ী মূলে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারবো। ফুলবাড়ি ফিজিবিলি স্টাডি করেছে। হয়তো বাতিল করে নতুন কোম্পানি দিন না হলে তাকেই দেওয়া হোক। নতুন যায়গায় গিয়ে কাজ করতে গেলে ঝুঁকি রয়েছে। হোয়াই নট প্রুভেন্ট ক্ষেত্র ফুলবাড়ি? মায়ানমারের নিজের ২/৩টি ফিল্ড আবিষ্কার করেছে। তাদের নিজেদের কাছাকাছি কোনো মার্কেট নেই। নিকটস্থ মার্কেট বাংলাদেশ। ১শ কিলোমিটার পাইপলাইন করলেই বাংলাদেশে গ্যাস আনা সম্ভব।
সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. ফরাসউদ্দিন, জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ও বিদ্যুৎ জ্বালানি খাতের সাংবাদিকরা।