দেশের অন্যতম বেসরকারি এয়ারলাইন্স ইউএস-বাংলা আগামীতে ঢাকা-জেদ্দা হজ ফ্লাইট পরিচালনার পরিকল্পনা করছে। এতে হজ যাত্রীদের সময় ও ভোগান্তি কমে আসবে বলে আশা করছে এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষ।
সোমবার (২৫ নভেম্বর) রাতে কক্সবাজারে হোটেল বেস্ট ওয়েস্টার্ন হেরিটেজে সাংবাদিক সম্মেলনে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) মো. কামরুল ইসলাম এ তথ্য জানান।
ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের মহাব্যবস্থাপক বলেন, প্রতিবছরই হজের সময় এয়ারলাইন্সগুলোর সিডিউল নিয়ে একটি সমস্যার সৃষ্টি হয়। এতে দেখা যায় হজ যাত্রীরা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে জেদ্দায় পৌঁছাতে পারেন না। তাদের সুবিধার্থে এই ফ্লাইট চালুর জন্য আমরা ইতোমধ্যে কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদনও দিয়েছি। আশা করছি আমরা অদূর ভবিষতে এই রুটে ফ্লাইট চালু করার অনুমতি পেয়ে যাবো।
তিনি বলেন, আমাদের প্রবাসী ভাই-বোনদের জন্য বর্তমানে মধ্যপ্রাচ্যে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স মাসকট, দোহা, শারজা, আবুধাবিতে ফ্লাইট পরিচালনা করছে। সবশেষ ইউএস বাংলা সৌদি আরবের জেদ্দায় ফ্লাইট পরিচালনা করছে। জেদ্দায় আমরা শুধু ভাই-বোনদের সেবা দিচ্ছি না, উমরা হজ যাত্রীদেরও সেবা দেওয়ার চেষ্টা করছি। এর মাধ্যমে সৌদি প্রবাসীদের পাশাপাশি যারা উমরা হজ করতে যাবেন তাদেরকেও সেবা দেওয়ার উদ্দেশে এ ফ্লাইট চালু করে এয়ারলাইন্সটি।
কামরুল ইসলাম বলেন, প্রতিটি এয়ারলাইন্সেরই চীনের একটি রাজ্যে ফ্লাইট পরিচালনার স্বপ্ন থাকে। সেই স্বপ্ন বাস্তবে রূপান্তর করেছে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স। ২০১৮ সালের ২৬ এপ্রিল থেকে এই এয়ারলাইন্সটি ঢাকা-গুয়াংঝু ফ্লাইট সফলভাবে পরিচালনা করে আসছে। কোভিডের সময় শুধু ঢাকা-গুয়াংঝু রুট ছাড়া বিশ্বের সব দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের ফ্লাইট বন্ধ ছিলো। সেই রুটে ফ্লাইট পরিচালনা করেছে ইউএস বাংলা। সেখান থেকেই আমরা মাস্ক, পিপিইসহ কোভিডের জন্য প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সরঞ্জামাদি এনে বিভিন্ন হাসপাতালে সরবরাহ করেছি। আমরা শুধু বিজনেস করছি তা কিন্তু নয় আমাদের জায়গা থেকে আমরা দেশ তথা মানুষের সেবা দেওয়ারও চেষ্টা করেছি।
আরেকটি রুট হচ্ছে ঢাকা-চেন্নাই। এই রুটে অনেক যাত্রী ছিলো কিন্তু সরাসরি কোনো ফ্লাইট ছিলো না। আমরা শুধু ছোট একটি সিদ্ধান্তে সেই রুটেও ফ্লাইট পরিচালনা করতে সক্ষম হয়েছি। আমাদের চট্টগ্রাম-কলকাতায় ৬টি ফ্লাইট পরিচালিত হতো। সেখান থেকে আমরা তিনটি ফ্লাইট চট্টগ্রাম-চেন্নাই করে দেই। এতেই মানুষ এখন সরাসরি এই এয়ারলাইন্সের মাধ্যমে চট্টগ্রাম-চেন্নাই যাতায়াত করতে পারছে।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশি শ্রমিকদের জন্য উল্লেখযোগ্য একটি দেশ হচ্ছে মালদ্বীপ। কিন্তু বাংলাদেশ থেকে মালদ্বীপ যাওয়ার কোনো সরাসরি ফ্লাইট ছিলো না। বারবার বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সকে বলেও ব্যর্থ হয়েছে কর্তৃপক্ষ। অথচ এই দ্বীপ দেশটিতে বাংলাদেশের প্রায় দেড় লক্ষাধিক শ্রমিক কাজ করছে। কিন্তু বাংলদেশ থেকে সরাসরি কোনো ফ্লাইট না থাকার কারণে কলম্বো, চেন্নাই অথবা মধ্যপ্রাচ্য থেকে যেতে হতো। এতে সময় ও টাকা দুটোই বেশি খরচ হতো। সেই ভোগান্তি দূর করার জন্য আমরা সরাসরি ঢাকা-মালদ্বীপ ফ্লাইট চালু করেছি।
এপ্রিল-মে মাসের মধ্যে রিয়াদ ও মদিনা রুটে আমরা ফ্লাইট চালু করার পরিকল্পনা করেছি। এর জন্য আমাদের বহরে এয়ারবাস-৩৩০ যোগ করতে হবে। সেটি ২০২৫ সালের মধ্যেই সম্ভব হবে বলে আশা করছি। এছাড়াও ২০২৬ সালের দিকে ইউরোপের বিভিন্ন দেশসহ ইতালির রোমে ও ২০২৭ সালের মধ্যে ঢাকা থেকে নিউইয়র্ক ও কানাডার টরেন্টোতে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট পরিচালনার পরিকল্পনা রয়েছে বলেও জানান এই কর্মকর্তা।
উল্লেখ্য, ২০১৪ সালের ১৭ জুলাই ইউএস-বাংলা ড্যাশ৮-কিউ ৪০০ এয়ারক্রাফট দিয়ে ঢাকা-যশোর রুটে ফ্লাইট পরিচালনার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের আকাশপথে যাত্রা শুরু করে। পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রথম এক বছরের মধ্যে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে সকল বিমানবন্দরে ফ্লাইট পরিচালনা করে স্বল্পতম সময়ে আকাশপথের যোগাযোগব্যবস্থাকে সুদৃঢ় করেছে ইউএস-বাংলা।
যশোর, সৈয়দপুর, রাজশাহীতে ফ্লাইট পরিচালনা করছে। ইউএস-বাংলা যাত্রা শুরুর দুই বছরের মধ্যে ১৫ মে ২০১৬ তারিখে ঢাকা-কাঠমান্ডু রুটে ফ্লাইট পরিচালনার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক রুটে ডানা মেলে। ইউএস-বাংলার আন্তর্জাতিক রুটগুলোর মধ্যে রয়েছে কলকাতা, চেন্নাই, মালে, মাসকাট, দোহা, দুবাই, শারজাহ, আবুধাবি, জেদ্দা, কুয়ালালামপুর, সিঙ্গাপুর, ব্যাংকক ও গুয়াংজু।
বর্তমানে ইউএস-বাংলার বিমান বহরে ২৪টি এয়ারক্রাফট রয়েছে। এগুলোর মধ্যে ২টি এয়ারবাস ৩৩০-৩০০, ৯টি বোয়িং ৭৩৭-৮০০, ১০টি এটিআর ৭২-৬০০ এবং ৩টি ড্যাশ৮-কিউ ৪০০ এয়ারক্রাফট আছে। যাত্রা শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত ৯০ শতাংশের অধিক অন-টাইম ফ্লাইট পরিচালনার রেকর্ড রয়েছে ইউএস-বাংলার।
যাত্রীসেবায় অনন্য নজির স্থাপন করায় ইউএস-বাংলা দেশীয় এয়ারলাইনস হিসেবে যাত্রীদের কাছে আস্থা অর্জনে সক্ষম হয়েছে। দেশে-বিদেশে বর্তমানে প্রায় ৩ হাজার জন কর্মকর্তা-কর্মচারী আছে ইউএস-বাংলার; যা দেশের বেকার সমস্যা সমাধানেও কাজ করে যাচ্ছে। এ ছাড়া নিয়মিত ট্যাক্স-সারচার্জ পরিশোধ করে দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখছে। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক রুটে ফ্লাইট পরিচালনা করে দেশের সুনাম বৃদ্ধি করে চলেছে। বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে দেশের অর্থনীতিকে করছে আরও সুদৃঢ়।
ইউএস-বাংলার টিকিট সংগ্রহ করার জন্য রয়েছে ওয়েবসাইট ও মোবাইল অ্যাপস সুবিধা। দেশে এবং দেশের বাইরে নিজস্ব ৪০টির বেশি সেলস অফিস রয়েছে। ফ্রিকোয়েন্ট ফ্লাইয়ারদের জন্য রয়েছে ‘স্কাইস্টার’ প্রোগ্রাম।