গ্যাস বিল আটকিয়ে ব্যাংকে টাকা জমানোর প্রবণতা
গ্যাস বিল পরিশোধে অনীহা বেসরকারি বিদ্যুৎ কেন্দ্র মালিকদের, ১৬ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কাছে তিতাস গ্যাসের বকেয়া পড়েছেছে ৪০৩ কোটি টাকা। অন্যদিকে সারাদেশে বিভিন্ন কোম্পানি সংস্থার গ্যাস বিল বকেয়ার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৮৯৪ কোটি টাকা।
পেট্রোবাংলা সূত্র জানিয়েছে, তিতাসের আওতাধীন পাঁচ সরকারি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বকেয়া ২৪৪ কোটি টাকা। তিন সরকারি সার কারখানার বকেয়া ২৪ কোটি ১২ লাখ। বেসরকারি বিদ্যুৎ কেন্দ্রসহ খ্যাতনামা ২০ প্রতিষ্ঠানের কাছে তিতাসের পাওনার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২৯৭ কোটি ৫৬ লাখ টাকা।
তিতাস সূত্র জানিয়েছে, সবচেয়ে বেশি সময় ধরে বিল পরিশোধ করছেন না ডরিন গ্রুপের দুটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র। কোম্পানিটির কাছে তিতাসের পাওনার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৭৮ কোটি ৭ লাখ টাকা।
অন্যদিকে পেট্রোবাংলার এক রিপোর্টে দেখা গেছে, সবচেয়ে বেশি বকেয়া সরকারি আবাসিক খাতে। এই খাতে গড়ে ২২.১৭ মাসের সমপরিমাণ বকেয়া পড়েছে, যা টাকার হিসেবে ৩৪৮ কোটি টাকা। শিল্প কারখানায় বকেয়া পড়েছে ১ হাজার ৬৫৬ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। এখানেও বকেয়ার শীর্ষে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন শিল্প কারখানা। রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন শিল্পের কাছে ১২.৭৫ মাসের সমান মোট ৩ কোটি ৪৩ লাখ টাকা।
গড়ে ৯.৭১ মাস ধরে গ্যাস বিল পরিশোধ করছেন না সরকারি ক্যাপটিভ বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো। এসব প্রতিষ্ঠানের কাছে গ্যাস বিতরণ কোম্পানিগুলোর বকেয়া পড়েছে ৬ কোটি ৭০ লাখ টাকা। এই খাতের সবচেয়ে সুবিধাভোগি ক্যাপটিভ পাওয়ারে বকেয়া পড়েছে ৫০৮ কোটি ৫১ লাখ টাকা।
গ্যাস বিল পরিশোধের দিক থেকে ভালো অবস্থানে রয়েছে সরকারি বেসরকারি সার কারখানা। সরকারি সার কারখানায় ২.৭২ মাসের সমান ৪৯ কোটি ৬২ লাখ টাকা বকেয়া পড়েছে। একই সময়ে বেসরকারি সার কারখানায় ৩.৯১ মাসের সমান ৪১ কোটি ৩৭ লাখ টাকা বকেয়া দাঁড়িয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছে, অভাবের চেয়ে স্বভাবজাত কারণে বকেয়ার পরিমাণ বাড়ছে। কি সরকারি কি বেসরকারি কোম্পানি সকলেই এই দুষ্ট চক্রের শামীল হয়েছেন। সরকারি কোম্পানি ও প্রতিষ্ঠানগুলোর ক্ষেত্রে দেখায় যায়, এক মাসের টাকা আটকে ব্যাংকে লগ্নি করতে পারলে সুদ পাচ্ছে। এতে যেমন একদিকে কোম্পানি লাভবান হচ্ছে তেমনি সংশ্লিষ্টরা কর্মকর্তারা ব্যাংক থেকে ব্যক্তিগত সুবিধা পাচ্ছেন। এ ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলো অসমপ্রতিযোগিতা এবং অসাধু তৎপরতা বিশেষ ভূমিকা রাখছে। ব্যাংকগুলো আমানত বাড়াতে স্বল্প সময়ের পুঁজির দিকে ঝুঁকছে। এ কারণে কোম্পানিগুলো বিল পরিশোধের যতটা সম্ভব বিলম্বিত করার সংস্কৃতিতে ডুবে আছে। গ্যাস বিলের মতো, বিদ্যুতের বিল পরিশোধের ক্ষেত্রেও অনেক বিতরণ কোম্পানির ক্ষেত্রে ইচ্ছা করেই বিলম্ব করার প্রবণতা লক্ষ্যনীয়।