‘পেছনের গল্পটাও জানা দরকার সাংবাদিকদের’
বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেছেন, সাংবাদিকদের পেছনের গল্পটাও জানতে হবে, একটি কাগজ পেলেই রিপোর্ট করা ঠিক হবে না। কাজটি হলে কে উপকৃত হবে, কারা সুবিধা পাবেন আর না হলে দেশের কি ক্ষতি হবে।
মঙ্গলবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) সচিবালয়ে এফইআরবি নেতৃবৃন্দের সঙ্গে মতবিনিময়কালে এমন মন্তব্য করেন।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, কিছু কাজ রয়েছে অনেকে চায় না। রাষ্ট্রের স্বার্থে জনগণের স্বার্থে এসব কাজ করতে হয়। আমি আজকে প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বে আছি, চিরকালতো এই দায়িত্বে থাকবো না। কোনো নির্দিষ্ট একটি কাজ করা-না করাতে আমার খুব ক্ষতি হবে না। কিন্তু রাষ্ট্রের বিশাল ক্ষতি হতে পারে। এমন হতে পারে বিদ্যুৎ-জ্বালানি সরবরাহ চেইন এবং নিরাপত্তা বিঘ্নিত হতে পারে। কিছু প্রকল্প রয়েছে যেগুলো বাস্তবায়ন হোকে বড় বড় ব্যবসায়ী চাননা। তারা চান নিজেরা ব্যবসা করুক সরকার এগুলোতে মাথা না দিক। তারা চান মনোপলি ব্যবসা করতে। সাংবাদিকরা যেনো এমন ক্ষেত্রে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত না হন।
সম্প্রতি এলপিজির টার্মিনাল নির্মাণ সংক্রান্ত নিউজের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন। আমরা খ্যতনামা কোম্পানি মারুবিনির সঙ্গে চুক্তি করতে যাচ্ছি। এখানে ৩০ শতাংশ শেয়ার থাকবে বাংলাদেশ সরকারের। ১০ বছর পর তারা টার্মিনালটি বাংলাদেশকে হস্তান্তর করে যাবে। এখন কেউ কেউ সমালোচনা করার চেষ্টা করছে। অনেকে রয়েছেন তারা মনোপলি ব্যবসা করতে চান। তারা চান, নিজেরা এলপিজি আনবে,নিজেরা বটলিং করবে, নিজেরা বাজারজাত করবে। এতে মনোপলি হওয়ার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না।
তাই সরকার এলপিজিতে শেয়ার বাড়াতে চায়। সরকারের এই উদ্যোগটি এই খাতের কোনো কোনো ব্যবসায়ী ভালো চোখে নাও দেখতে পারে। কিন্তু গণমাধ্যমের জনগণের স্বার্থে কাজ করা উচিত। ডিজেল, পেট্রোল, অকটেনের মতো সরকার এলপিজি এনে বাজারজাত করতে চায়। সেখানে পেট্রোল অকটেনের মতো ডিলার থাকবে। কোম্পানিগুলো এখান থেকে কিনে বটলিং করে বাজারজাত করবে। এতে দাম নিয়ন্ত্রণ করা যাবে অন্যান্য জ্বালানি তেলের মতো।
উল্লেখ্য বর্তমানে রাষ্ট্রীয় কোম্পানি বিপিসি জ্বালানি তেল আমদানি করে। রাষ্ট্রীয় তিনটি কোম্পানীর মাধ্যমে ডিলারদের কাছে নির্দিষ্ট দরে বিক্রি করেন। এখানে ডিলাররা কমিশন পেয়ে থাকেনা। অন্যদিকে এলপিজি বেসরকারি ২৮টি কোম্পানি সরাসরি আমদানির মাধ্যমে বোটলিং করে বাজারজাত করছে। কোম্পানি নির্ধারণ করছে সিলিন্ডার ও গ্যাসের মূল্য। সম্প্রতি বিইআরসি গণশুনানি গ্রহণ করেছে এলপিজির দর নির্ধারণ করতে।
নদী বন্দরের নাব্যতা সংকট ও চাহিদা তারতম্যের কারণে ছোট ট্যাংকারে করে এলপিজি আনায় আমদানি নির্ভর এই জ্বালানির দাম বেড়ে যাচ্ছে। সরকার সে কারণে গভীরসমুদ্রে একটি টার্মিনাল নির্মাণ করতে চায়। এ জন্য জাপানি কোম্পানি মারুবিনির সঙ্গে জেভি করার চূড়ান্ত প্রস্তুতি নিচ্ছে।
প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, আপনাদের গভীরভাবে ভাবতে হবে। এই এলপিজি টার্মিনাল না হলে কারা সুবিধা পাবেন। সরকার চায় রংপুরে গ্যাস দিতে। আমরা চাই সেখানে কলকারখানা গড়ে উঠুক। মানুষের কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পাক। এখানেও হয়তো কারও কারও আপত্তি থাকতে পারে।
এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, আমাদের গ্যাসের সংকট কাটিয়ে ওঠার ব্যবস্থা করেছি। স্পর্ট মার্কেট থেকে এলএনজি আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আশা করছি সামনে আর সংকট থাকবে না। একই সঙ্গে বিদ্যুৎ উৎপাদনেও গ্যাস সরবরাহ বেড়ে যাবে। চলমান সেচ মৌসুমে বিদ্যুতের কোনো ঘাটতি হবে না।
এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, আমরা ধারণা করছি এবার সেচ ও গ্রীষ্ম মৌসুমে বিদ্যুতের সর্বোচ্চ চাহিদা ১৪ হাজার মেগাওয়াটে সীমাবদ্ধ থাকবে। বিদ্যুতে চাহিদার যে প্রাক্কলন করা হয়েছিল, করোনার কারণে সেখানে যাবে না। করোনার কারণে কেউই পেডিক্ট করতে পারছে না, কি হচ্ছে আর কি হতে যাচ্ছে। শুধু আমরা না সারাবিশ্বে স্থবিরতা নেমে এসেছে। করোনাকালে ২৫০টি গার্মেন্ট বন্ধ হয়ে গেছে। ব্যবসায়ীরা মুনাফা করলে নতুন বিনিয়োগ করেন। সে কারণে শিল্পের প্রবৃদ্ধিও সেভাবে হয় নি, ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। উন্নত দেশের জন্য এই ধাক্কা হয়তো সামাল দেওয়া সহজ, কিন্তু বাংলাদেশের মতো একটি উঠতি অর্থনীতির জন্য মারাত্বক হতে পারতো। কিন্তু সরকার প্রণোদনা নিয়ে সামাল দেওয়ার চেষ্টা করছে। গার্মেন্টে কেনো প্রণোদনা দেওয়া হলো সেখানেও সমালোচনা হয়েছে।
নসরুল হামিদ বলেন, ৯ হাজার কোটি টাকার গ্যাস বিল বকেয়া, বিপুল পরিমাণ বিদ্যুৎ বিলও বকেয়া। তারা দিতে পারছে না। অতীতেতো এমন হয়নি। তাদের হাতে টাকা নেই যে কারণে বিল দিতে পারছে না। করোনার কারণে অনেকে অর্ডার পায়নি। যে কারণে অনেক কোম্পানি বসে গেছে।
বিদ্যমান পাইপলাইন রয়েছে যে সব অঞ্চলে সেখানে সিলিন্ডারে গ্যাস না দিয়ে পাইপ লাইনে দিলে সাশ্রয় হয়। তবুও কেনো নতুন সংযোগ বন্ধ। এমন প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী বলেন, এতে মানুষ অপচয় বেশি করে। সিলিন্ডারে হলে মিতব্যায়ী হবেন। আমরা চাই রিহ্যাব আবাসন প্রকল্পে গ্যাসের পাইপলাইন বসিয়ে এলপিজি সরবরাহ দিক সিলিন্ডারের পরিবর্তে। কোনো নির্দিষ্ট এলাকায় এমন কেউ আগ্রহী হলে আমরা তাদের সহায়তা করতে চাই।