‘কয়লা উত্তোলনের এটাই শেষ সময়’

  • স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

কয়লার ফাইন্যান্স সংকুচিত হয়ে আসছে, কয়লা উত্তোলন করতে হলে এখনই উপযুক্ত সময়। হয়তো এমন হতে পারে আমরা তুলতে চাইলেও হয়তো তোলা সম্ভব হবে না।

শনিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) এনার্জি এন্ড পাওয়ার আয়োজিত, “বঙ্গবন্ধুর জ্বালানি দর্শন” শীর্ষক ভার্চুয়াল সেমিনারে এমন মতামত উঠে আসে। সেমিনার সঞ্চালনা করেন, এনার্জি এন্ড পাওয়ারের এডিটর মোল্লাহ আমজাদ হোসেন।

বিজ্ঞাপন

বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী বেলায়েত হোসেন বলেন, কয়লার ব্যাপারে অনেক বিতর্ক, পরিবেশ নষ্ট করে। সারাবিশ্ব উন্নত হয়েছে কয়লা দিয়ে। এমন একটি দেশ দেখাতে পারবে না, কয়লা ছাড়া উন্নয়ন হয়েছে। বলা হয় গ্যাস দিয়ে বিদ্যুতের উৎপাদন খরচ কম। দেশের গ্যাস কমদামে পাই বলে। এলএনজির দাম যদি বিবেচনায় নেওয়া হয় তাহলে কি করে বলবো, গ্যাসের খরচ কম। আমাদের বিকল্প ফুয়েল রাখতে হবে। গ্যাসের উৎপাদন বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া উচিত ছিল। সেদিকে সেভাবে দৃষ্টি দেওয়া হচেছ না। দেশিয় জ্বালানির বিকল্প হতে পারে না। অবশ্যই বিকল্প রাখা উচিত। আর কয়লা হতে পারে উত্তম বিকল্প।

তিনি বলেন. বঙ্গবন্ধু যেটুকু করে গিয়েছিলেন সেটার সুবিধা ভোগ করছি। আমরা তার নীতি, পথও অনেকটা হারিয়ে ফেলেছি। আমাদের অনসোর ও অফসোরে সমানভাবে তেল-গ্যাস অনুসন্ধ্যান করে যেতে হবে।

বিজ্ঞাপন

বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের সদস্য মকবুল ই ইলাহী চৌধুরী বলেন, বঙ্গবন্ধু যুদ্ধবিধ্বস্ত অবস্থায় চিন্তা করেছিলেন সোনার বাংলাদেশ গড়তে হলে শুধু কৃষি নির্ভর দিয়ে হবে না। শিল্পায়ন করতে হবে, শিল্পায়ন করতে হলে তেল-গ্যাস লাগবে। সে জন্য জ্বালানিটাকে নিশ্চিত করতে হবে।

বঙ্গবন্ধু তখন শেলওয়েলকে গ্যাস নেটওয়ার্ক বৃদ্ধি করার নির্দেশ দেন। শেলওয়েল বললো আমাদের যেসব লাইন রয়েছে, সেখানেই গ্রাহক পাচ্ছি না। লাইন বাড়ানোর সম্ভব না। তখন বঙ্গবন্ধু বললেন, পনের দিনের মধ্যে পাইপলাইন স্থাপনের প্রস্তাব নিয়ে আসবা, না হলে বিক্রি করার প্রস্তাব নিয়ে আসো। তখন শেল যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ ভেবে বিক্রির প্রস্তাব নিয়ে আসে। বঙ্গবন্ধু বললেন ৯ বছরে ১৮টি কিস্তিতে দেবো। এভাবে ৫টি গ্যাস ফিল্ডের মালিক হয়ে যায় বাংলাদেশ।

তিনি বলেন, আমরা এখন যেভাবে আমদানি নির্ভরতার দিকে যাচ্ছি ২০৩০ সালে ২৫-৩০ বিলিয়ন ডলার ব্যয় হবে জ্বালানি আমদানিতে। ফরেন রিজার্ভের সিংহভাগ যদি জ্বালানি ব্যয় করি তাহলে উন্নত দেশে যাওয়া কঠিন হয়ে পড়বে। এখন সমস্যা হচ্ছে বঙ্গবন্ধু ৩দিনে যে সিদ্ধান্ত দিতেন, সেটি এখন ৩ মাসেও হয় না।

আন্তর্জাতিক জ্বালানি বিশেষজ্ঞ এএসএম বশিরুল হক বলেন, বঙ্গবন্ধুর বলেছিলেন সবার জন্য সহজলভ্য ও নিজস্ব সম্পদ থেকে জ্বালানি নিশ্চিত করতে হবে। এখন যা হচ্ছে পুরো আমদানি নির্ভর। এর কোনো বিকল্প নেই। ১ লাখ টনের জাহাজ থেকে তেল খালাস করতে ১০ দিন লাগে। সিঙ্গাপুরে আড়াই লাখ টনের জাহাজ খালাস করা হয় ২৪ ঘণ্টায়। রাষ্ট্রীয় তেল কোম্পানিগুলো এখন হয়েছে এজেন্ট। তারা আগে অনেক কাজ করতো। এখন কিছু করার নেই।

জ্বালানি বিশেষজ্ঞ বদরুল ইমাম বলেন, কয়লা পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গা থেকে আস্তে আস্তে গুটিয়ে নেওয়া হচ্ছে। ভবিষ্যতে আরও জটিল হয়ে উঠছে। কতোগুলো যুক্তি আছে যেগুলোকে বৈজ্ঞানিকভাবে খণ্ডন করে এগিয়ে যাওয়া যায়। বাংলাদেশ একটি ঘনবসতি পুর্ণ দেশ, উর্বর জমি। টেকনোলজিক্যাল ভাবে সম্ভব। সোস্যালি যদি সম্ভব করতে হয়, ইঞ্জিনিয়ারকে দিয়ে হবে না।  আপনাকে তৃণমূলে যেতে হবে। তাদের বুঝাতে হবে। বাংলাদেশের ড্র ব্যাকটা হচ্ছে। কেউ এই বিষয়টি বুঝতে চায় নি। আগে জোরাজুরি পর‌্যায়ে গিয়েছিলাম, সমঝোতার মাধ্যমে করা উচিত।

দীপন গ্রুপের সিইও রাশেদ মাহমুদ বলেন, বঙ্গবন্ধু যেভাবে অফসোরে কাজ শুরু করে দিয়েছিলেন। সেইভাবে কাজ করতে হবে। শুধু বিদেশী কোম্পানি ও টেকনিক্যালের উপর নির্ভর না। করে দেশীয় উদ্যোক্তা ও জনবল বাড়াতে হবে। আমাদের যতো রকম উৎস রয়েছে সবদিকে যেতে হবে। ওনি যে দর্শন দিয়ে গেছেন তার কাছেও যেতে পারিনি।

তিনি বলেন, কয়লা উত্তোলনে ফাইন্যান্স সংকুচিত হয়ে এসেছে। দাতা সংস্থাও বিনিয়োগ করছেন না। এটা ফিউচারে মাটির নিচেই থেকে যাবে। হয়তো এমন হতে পারে আমরা কিছু ‍করতে চাইলেও হয়তো তোলা সম্ভব হবে না। তাই এখনই ব্যবস্থা নেওয়ার উৎকৃষ্ট সময়। আমরা আমদানি নির্ভর হয়ে পড়েছি। যা বঙ্গবন্ধুর দর্শনের বিরোধী।