বিদ্যুৎ পেয়েছে লেটার, ফেলের খাতায় গ্যাস, ঝরে পড়েছে কয়লা



সেরাজুল ইসলাম সিরাজ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর শুভক্ষণে মুজিব শতবর্ষ উৎসবের মাত্রাকে বহুগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। যে রাখাল রাজাকে নিয়ে এতো আয়োজন এতো উন্মাদনা বাংলাদেশ কি তার জ্বালানি নীতি যথাযথভাবে অনুসরণ করেছে বা করছে।

বিশেষ করে তার কন্যা এবং তারই হাতে গড়া দল আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতাসীন, তখন চাহিদার পারদটা একটু চড়া থাকবে এটাই স্বাভাবিক। প্রত্যাশার সেই পারদের বিপরীতে পরিসংখ্যান কি স্বস্তিদায়ক। উত্তর হচ্ছে বিদ্যুৎ খাত লেটার মার্ক নিয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে, গ্যাস সেক্টর টেনে-টুনে পাস, আর কালোমানিক (কয়লা) প্রাথমিকের ঝরে পড়া ছাত্রদের মতো। দুই দশক আগে বিদ্যালয় থেকে ঝরে পড়েছে। এখন অনেকেই স্বীকার করতে বাধ্য হচ্ছেন বঙ্গবন্ধুর অনুসৃত জ্বালানি নীতি ও পথ হারিয়ে ফেলেছে বাংলাদেশ। বঙ্গবন্ধুর দর্শন ছিল দেশীয় সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহার, আর বাংলাদেশ এখন হাটছে আমদানি নির্ভরতার পথে। একে চরমঝূঁকিপুর্ণ মনে করা হচ্ছে। বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের সদস্য মকবুল ই ইলাহী চৌধুরী বলেছেন, আমরা এখন যেভাবে আমদানি নির্ভরতার দিকে যাচ্ছি ২০৩০ সালে ২৫-৩০ বিলিয়ন ডলার ব্যয় হবে জ্বালানি আমদানিতে। ফরেন রিজার্ভের সিংহভাগ যদি জ্বালানি ব্যয় করি তাহলে উন্নত দেশে যাওয়া কঠিন হয়ে পড়বে।

সুবর্ণজয়ন্তীতে বিদ্যুৎ খাত

বিদ্যুতের অর্জন আকাশচুম্বি, প্রায় সবার ঘরে ঘরে আলোক ঝলমলে যা এক দশক আগেও অনেকের কল্পনাতেও ছিল না। ২০০৮ সালে নির্বাচনী ইশতেহারে যখন সবার ঘরে ঘরে বিদ্যুতের কথা বলা হলো, অনেক বিশেষজ্ঞ তখন নাক সিটকে ছিলেন। তারা ইনিয়ে বিনিয়ে বলেছিলেন, এটি হচ্ছে নির্বাচনী স্ট্যান্ডবাজি। একযুগ পরে এসে বাংলাদেশের বিদ্যুৎ খাত অনন্য উচ্চতায় আসীন হয়েছে। সুবর্ণজয়ন্তীর এই পথচলায় বিদ্যুৎ খাতের এই পথচলা মোটেও কোমল ছিলনা। বলা চলে থমকে ছিল এর অগ্রযাত্রা। যা দৃশ্যমান সবটাই বলা চলে বিগত এক যুগের অর্জন।

১৯০১ সালের ৭ ডিসেম্বর আহসান মঞ্জিলে জেনারেটরের সহায়তায় বিদ্যুৎ সরবরাহের মাধ্যমে এই অঞ্চলে বিদ্যুতের যাত্রা শুরু হয়। ১৯৩০ সালে বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় প্রথম বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থা চালু হয়। পরবর্তী দুই দশকে ১৭ টি প্রাদেশিক জেলায় শুধুমাত্র রাতের বেলায় সীমিত সময়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হতো। ১৯৪৮ সালে, বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থাপনা, পরিকল্পনা ও উন্নয়নের লক্ষ্যে সরকারি পর্যায়ে বিদ্যুৎ অধিদপ্তর স্থাপন করা হয়। ১৯৫৯ সালে পানি ও বিদ্যুৎ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (ওয়াপদা) গঠন করা হয়। ওই সময়ে সিদ্ধিরগঞ্জ, খুলনা ও চট্টগ্রামে অপেক্ষাকৃত বৃহৎ আকারের বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করা হয়। ওই সময়ে স্থাপিত কাপ্তাই ৪০ মেগাওয়াট ক্ষমতার বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি বৃহৎ কেন্দ্র হিসেবে বিবেচিত ছিল। ১৯৬২ সালে (ঢাকা-চট্টগ্রাম ১৩২ কেভি) প্রথম ট্রান্সমিশন লাইন চালু করা হয়। স্বাধীনতার পর জাতির জনক বঙ্গবন্ধু ওয়াপদাকে দুই ভাগে বিভক্ত করে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিউবো) এবং বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড গঠন করেন। এরপরও প্রায় সাড়ে তিন দশক বক্ররেখার চলেছে দেশের বিদ্যুৎ খাত।

বিদ্যুৎ খাতের ঘুরে দাঁড়ানো

২০০৯ হতে বর্তমান সময় পর্যন্ত ১৮,৫৬৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হয়েছে। ফলে বিদ্যুতের স্থাপিত ক্ষমতা ক্যাপটিভসহ ২৪,৯৮২ মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে এবং বিদ্যুতের সুবিধাভোগী জনসংখ্যা ৪৭ হতে ৯৯ ভাগে উন্নীত হয়েছে। ১৪ হাজার ১১৫ মেগাওয়াট ক্ষমতার ৩৮টি বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণাধীন, ২ হাজার ৯৬১ মেগাওয়াট ক্ষমতার ২০টি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের চুক্তি স্বাক্ষর প্রক্রিয়াধীন (LOI এবং NOA প্রদান করা হয়েছে)। ৬৫০ মেগাওয়াট ক্ষমতার ৬টি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের দরপত্র প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। অদূর ভবিষ্যতে আরো ১৫ হাজার ১৯ মেগাওয়াট ক্ষমতার ৩৩ বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে।

বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিআইডিএস) এর এক সমীক্ষায় বলেছে, বাংলাদেশে প্রতি মিলিয়ন কিলো-ওয়াট-আওয়ার বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধি পেলে সামষ্টিক অর্থনীতিতে উাৎপাদন বৃদ্ধি পায় প্রায় ৪৬ মিলিয়ন টাকা হতে ১০৭ মিলিয়ন টাকা (১৯৯৫/৯৬ এর মূল্যকে স্থির ধরে)। আমেরিকান একটি সংস্থার সমীক্ষায় বলছে গ্রামে বিদ্যুতায়নের করাণে বাংলাদেশের শিশুদের গড় উচ্চতা বেড়ে গেছে। বিদ্যুৎ খাত যখন ভূয়সী প্রশংসার জোয়ারে ভাসছে, তখন জ্বালানি খাত ধুকছে বলা চলে। উন্নয়ন হলেও সেটি বিদ্যুৎ খাতের গতির সঙ্গে একেবারেই বেমানান।

বাংলাদেশের জ্বালানি খাত

এই খাতের অর্জনকে উদারপন্থীরা বলছেন টেনেটুনে পাস, কেউ বলছেন পাস মার্ক দেওয়া যায় না। বলা চলে আমদানি নির্ভরতার এখন মূখ্য হয়ে উঠেছে। যে কারণে এলএনজি আমদানির দিকে ঝুঁকতে হয়েছে বাংলাদেশকে। গ্যাস সংকট সামাল দিতে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানি করতে হচ্ছে। কক্সবাজারের মহেশখালিতে প্রতিটি ৫০০ এমএমসিএফডি ক্ষমতাসম্পন্ন দু’টি ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল (এফএসআরইউ) স্থাপন করা হয়েছে। দৈনিক ৫০০ থেকে ৭০০ এমএমসিএফডি আরএলএনজি জাতীয় গ্যাস গ্রিডে আরএলএনজি সরবরাহ করা হচ্ছে। এতে সামাল দিতে না পারায় কক্সবাজারের মাতারবাড়িতে দৈনিক ১০০০ মিলিয়ন ঘনফুট রি-গ্যাসিফিকেশন ক্ষমতার একটি স্থলভিত্তিক এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। চড়া দরে এলএনজি আমদানি ব্যায় মেটাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। ভিন্ন চিত্র হতে পারতো যদি গ্যাস অনুসন্ধ্যান ও উন্নয়ন কার্যয়ক্রম জোরদার করা যেতো।

যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশে গ্যাস নেটওয়ার্ক বৃদ্ধি ও অনুসন্ধ্যানের উদ্যোগ নেন বঙ্গবন্ধু। ব্রিটিশ তেল কোম্পানি শেল অয়েল পাইপলাইন নেটওয়ার্ক বাড়ানোর নির্দেশ দেন। তখন শেল অস্বীকৃতি জানালে ১৯৭৫ সালের ৯ আগস্ট শেলের নিকট থেকে তিতাস, হবিগঞ্জ, রশিদপুর, কৈলাশটিলা ও বাখরাবাদ-এ ৫টি গ্যাসক্ষেত্র ৪.৫ মিলিয়ন পাউন্ড স্টার্লিং মূল্যে কিনে নেন। উল্লিখিত ৫টি গ্যাসক্ষেত্রের Gas Initially in Place (GIIP) মজুদ ২০.৭৯ ট্রিলিয়ন ঘনফুট। সেসময়ে ৫টি গ্যাসক্ষেত্রের উত্তোলনযোগ্য গ্যাস মজুদের পরিমাণ ছিল ১৫.৪৪ ট্রিলিয়ন ঘনফুট, যার বর্তমান সমন্বিত গড় বিক্রয়মূল্য মোট প্রায় ৪৯.৮৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার অর্থাৎ ৪,২৪,০৯৬ কোটি টাকা।

স্বাধীনতার পূর্বে অনুসন্ধান ও উন্নয়ন কূপের সংখ্যা ছিলো যথাক্রমে  ২৫টি ও ১৫টি। স্বাধীনতার পর ৫০ বছরে অনুসন্ধান কূপ ৪৩টি এবং উন্নয়ন কূপ ১২১টি খনন করা হয়েছে। অর্থাৎ বছরে একটির কম অনুসন্ধ্যান কূপ খনন করেছে বাংলাদেশ। স্বাধীনতার পর অনশোরে ৯টি (বাপেক্স) এবং অফশোরে ২টি (আইওসি) গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কারের মাধ্যমে অনশোর ও অফশোরে গ্যাসক্ষেত্রের মোট সংখ্যা দাড়িয়েছে যথাক্রমে ১৭টি ও ২টি । স্বাধীনতার পূর্বে উৎপাদনরত কূপের সংখ্যা ছিলো ৮টি, স্বাধীনতার পর বর্তমানে এ সংখ্যা দাড়িয়েছে ১১১ টিতে। গ্যাসের গড় উৎপাদন ছিল দৈনিক ২৮ এমএমএসসিএফ, যা বর্তমানে দৈনিক ২,৫০০ এমএমসিএফ।

অথচ বাংলাদেশের গড় আবিষ্কারের হার অনেক উচ্চ। শুধুমাত্র যথাযথ উদ্যোগের অভাবে যেমন স্থলভাবে সেভাবে অগ্রগতি সাধিত হয়নি। তেমনি গভীর সাগরে বিশাল এলাকা জয় করেও অনেকটা হাত গুটিয়ে বসে রয়েছে।

ঝরে পড়েছে কয়লা

কয়লার ভবিষ্যত এর রঙের মতোই অন্ধকার। দেশের উত্তরাঞ্চলে ৫টি ফিল্ডে বিশাল মজুদ থাকলেও শুধুমাত্র বড়ুপুকুরিয়া থেকে সীমিত আকারে উত্তোলন করা হচ্ছে। অন্যগুলোর বিষয়ে মুখে কূলুপ এটে রয়েছে বিগত ৪টি সরকার। ফুলবাড়িতে থেকে বিএনপি সরকার জোর করে কয়লা তুলতে গিয়ে লঙ্কাকাণ্ড ঘটিয়ে ফেলে। এরপর থেকে কয়লা ক্ষেত্রগুলোর ফাইল সিল্ড করে রাখা হয়েছে। এটাকে বিদ্যালয় থেকে ঝরে পড়া ছাত্রের সঙ্গে তুলনা করেছেন অনেকে।

অথচ বলা হচ্ছে কয়লা উত্তোলনের এটাই শেষ সময়। বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী বেলায়েত হোসেন বলেন, সারাবিশ্ব উন্নত হয়েছে কয়লা দিয়ে। এমন একটি দেশ দেখাতে পারবে না, কয়লা ছাড়া উন্নয়ন হয়েছে। বলা হয় গ্যাস দিয়ে বিদ্যুতের উৎপাদন খরচ কম। দেশের গ্যাস কমদামে পাই বলে। এলএনজির দাম যদি বিবেচনায় নেওয়া হয় তাহলে কি করে বলবো, গ্যাসের খরচ কম। আমাদের বিকল্প ফুয়েল রাখতে হবে। গ্যাসের উৎপাদন বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া উচিত ছিল। সেদিকে সেভাবে দৃষ্টি দেওয়া হচেছ না। দেশিয় জ্বালানির বিকল্প হতে পারে না। অবশ্যই বিকল্প রাখা উচিত। আর কয়লা হতে পারে উত্তম বিকল্প।

তিনি বলেন. বঙ্গবন্ধু যেটুকু করে গিয়েছিলেন সেটার সুবিধা ভোগ করছি। আমরা তার নীতি, পথও অনেকটা হারিয়ে ফেলেছি। আমাদের অনসোর ও অফসোরে সমানভাবে তেল-গ্যাস অনুসন্ধ্যান করে যেতে হবে।

   

বেঁধে দেয়া দামে বিক্রি হচ্ছে না সয়াবিন তেল



রাকিব হাসান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
বেঁধে দেয়া দামে বিক্রি হচ্ছে না সয়াবিন তেল

বেঁধে দেয়া দামে বিক্রি হচ্ছে না সয়াবিন তেল

  • Font increase
  • Font Decrease

 

ভোজ্য তেলের ওপর থেকে মূল্য সংযোজন কর (মূসক-ভ্যাট) প্রত্যাহারের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার কারণে সয়াবিন তেলের নতুন দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। কিন্তু, ভোজ্য তেলের ‘যৌক্তিক মূল্য’ নির্ধারণ করে দিলেও তা মানার ব্যাপারে আগ্রহ দেখা যাচ্ছে না ব্যবসায়ীদের মধ্যে।

বাজারে গিয়ে দেখা যায় নির্ধারিত মূল্যের চাইতেও বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে সয়াবিন তেল। দাম নেবার কারণ জানতে চাইলে দায়সারা উত্তর ব্যবসায়ীদের।

গতকাল (১৮ এপ্রিল) দুপুরে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে ভোজ্য তেলের দাম নির্ধারণ নিয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে নতুন দাম ঘোষণা করে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু।

সংবাদ সম্মেলনে বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম প্রতি লিটারে ৪ টাকা বাড়িয়ে ১৬৭ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। পাঁচ লিটারের সয়াবিন তেলের বোতলের দাম ১৮ টাকা বাড়িয়ে ৮১৮ টাকা করা হয়েছে। এছাড়া খোলা সয়াবিন তেলের দাম দুই টাকা কমিয়ে ১৪৭ টাকা করা হয়েছে।

তবে শুক্রবার (১৯ এপ্রিল) বাজারে গিয়ে দেখা গেছে সরকার নির্ধারিত মূল্যের কোন তোয়াক্কা করছে না দোকানীরা।

প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেল ১৪৭ টাকা নির্ধারণ করা হলেও লিটার প্রতি ১৮ টাকা বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে ১৬৫ টাকা করে। আর বোতলজাত সয়াবিন তেল প্রতি লিটার ১৬৭ টাকা বিক্রি করার কথা থাকলেও তা বিক্রি হচ্ছে ১৭০ টাকা দরে। তবে ভিন্ন চিত্র ছিলো ৫ লিটারের বোতলজাত তেলের দামে। সরকারের বেঁধে দামের চাইতেও প্রতি ৫ লিটারের বোতলে ১৮ টাকা কম মূল্যে ৮০০ টাকা করে বিক্রি করছেন দোকানীরা।

সরকারের বেঁধে দামে তেল বিক্রি না করার কারণ জানতে চাইলে রাব্বি ফ্লাওয়ার মিলের স্বত্বাধিকারী লুতফুর রহমান বার্তা২৪.কম’কে বলেন, গতকাল কি ঘোষণা হইছে তেলের দাম কমছে নাকি বাড়ছে তা ভালো করে জানিনা। তবে শুনছি ফেছবুকে টিভিতে। আমাদের দোকানে যে তেল আছে তা আগের দামে কেনা। তাই আগের দামেই বিক্রি করতে হচ্ছে। নতুন তেল আসলে আবার নতুম দামে বিক্রি করবো। খোলা তেলে ১৮ টাকা বেশি নেয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ঐ যে বললাম আগের দামে কেনা। আমি তো নতুন দামের চাইতে ৫ লিটারের বোতলে ১৮ টাকা কম নিচ্ছি এখনো। কিন্তু খোলা তেল আমার আগের দামে কেনা তাই ১৮ টাকা বেশি নিতেছি। দাম বৃদ্ধির ঘোষণা এলে যতো দ্রুত দাম বাড়ে কিন্তু দাম কমানোর ঘোষণা এলে কমেনা কেনো জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা বড় বড় পাইকারদের কাজ। তারা সিন্ডিকেট করে। কিন্তু আমাদের এমন সুযোগ নেই। আমরা এক দুই টন মাল সর্বোচ্চ কিনি। কখনো আরও কম কিনি।

আরেক ব্যবসায়ী খাদিজা এন্টারপ্রাইজের মালিক মোসলে উদ্দিন বলেন, ৫ লিটারের তেলের বোতলে যে দাম ৮০০ টাকা দেয়া সেই দামে বিক্রি করছি। এছাড়া এক লিটারের বোতলের দাম ১৬৩ টাকা দামে বিক্রি করছি। তবে খোলা তেল আমার কেনা ছিলো ১৬৩ টাকা করে তাই আমি ১৬৪/১৬৫ টাকা দামে বিক্রি করতেছি। খোলা তেল ১৪৭ টাকা সরকার নির্ধারণ করছে কিন্তু সেটা কি ভালো নাকি মন্দা জানিনা। যে দামে কিনি তার থেকে এক দুই টাকা বেশি দামে বিক্রি করি।

একটি সিকিউরিটি গার্ডের প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন আলতাফ হোসেন। তার কাছে খোলা তেল কতো নিলো জানতে চাইলে তিনি বলেন, ১৬৫ টাকা নিলো। খোলা তেলে দুই টাকা কমে ১৪৭ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে জানেন কিনা প্রশ্ন করলে আলতাফ হোসেন বলেন, ভাই এসব খবর দিয়ে তো কোন কাজ হয়না। দাম বাড়লে তখন ব্যবসায়ীরা পারলে আরও বাড়িয়ে নেয়। অথচ কমলে তিন মাসেও দাম কমার খবর থাকেনা। আপনার সামনেই তো বেশি নিলো কিছু করার আছে বলেন? আমি এক লিটার তেল নিতে আসছি। এখন এদের সাথে কি দাম নিয়ে ঝগড়া করবো।

আরেকজন ক্রেতা সজিব মোল্লা বলেন, বাজারে সব কিছুর দাম বাড়ে তবে খোলা তেলের দাম কমাইছে শুনে ভালো লাগলো। তবে দুই টাকা দাম কমায় তার প্রভাব আসলে বাজারে পরেনি। তাছাড়া লোক দেখানো বাজার মনিটরিং করে বাজারের দাম নিয়ন্ত্রণ করা কখনো সম্ভব না। একদিকে ব্যবসায়ীদের উপর ট্যাক্স বসাইবেন। জরিমানা করবেন আবার বলবেন দাম কমাইতে তারা কিভাবে দাম কমাবে। জীবনে শুনছেন কোনকিছুর দাম বাড়লে তা আবার কমে সহজে।

;

শিশুখাদ্য সেরেলাক ও নিডোতে উচ্চমাত্রায় চিনি



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

নেসলের শিশুখাদ্য সেরেলাক ও নিডোতে উচ্চমাত্রার চিনির উপস্থিতি পাওয়া গেছে। সুইজারল্যান্ডভিত্তিক বেসরকারি সংস্থা পাবলিক আই ও ইন্টারন্যাশনাল বেবি ফুড অ্যাকশন নেটওয়ার্কের করা গবেষণায় এ তথ্য মিলেছে। শিশুদের খাবারে যাতে চিনি যুক্ত করা না হয় এ বিষয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) সুপারিশ রয়েছে।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, মানদণ্ড পরীক্ষায় কোনো ধরনের ক্ষতিকারক বিষয় সামনে আসলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তাছাড়া বিএসটিআই’র পক্ষ থেকেও একই কথা বলা হয়েছে। বৃহস্পতিবার সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য জানা গেছে।

গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশ্বের বৃহত্তম ভোগ্যপণ্য কোম্পানি নেসলে বেশ কয়েকটি দেশে শিশুদের জন্য তৈরি করা দুধ ও সিরিয়াল পণ্যগুলোতে বাড়তি চিনি ও মধু যুক্ত করে, যা স্থূলতা এবং দীর্ঘস্থায়ী রোগ প্রতিরোধের আন্তর্জাতিক নীতিমালার লঙ্ঘন। নেসলের শিশুখাদ্যে বাড়তি চিনি যুক্ত করার আইন লঙ্ঘনের এই ঘটনা কেবল এশিয়ান, আফ্রিকান এবং লাতিন আমেরিকার দেশগুলোতে পাওয়া গেছে। বাংলাদেশে নেসলের শিশুখাদ্য সেরেলাক থেকে একজন শিশুকে একবার যে পরিমাণ খাবার পরিবেশন করা হয়, তাতে প্রায় ৩ দশমিক ৩ গ্রাম বাড়তি চিনি উপস্থিতি আছে।

পাবলিক আই বলছে, নেসলে সুইজারল্যান্ডে বাজারজাত করা তাদের পণ্য সেরেলাকে বাড়তি কোনও চিনি ব্যবহার করে না। কিন্তু বাংলাদেশ, ভারত, থাইল্যান্ডসহ এশিয়ার উন্নয়নশীল ও দরিদ্র দেশগুলোতে সেরেলাকে বাড়তি চিনি যুক্ত করে তারা।

এই গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার পর ভারতে ব্যাপক তোলপাড় শুরু হয়েছে। নেসলের শিশুখাদ্য পণ্যের বিষয়ে ওঠা অভিযোগের তদন্ত করছে দেশটির কর্তৃপক্ষ। ভারতের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, গবেষণায় পাওয়া ফল একটি বৈজ্ঞানিক প্যানেলের সামনে উপস্থাপন করা হবে।

এদিকে প্রতিবেদন প্রকাশের পর বাংলাদেশেও পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের কথা বলা হয়েছে। জানতে চাইলে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান জাকারিয়া যুগান্তরকে বলেন, খাদ্যে ভেজাল কিংবা দূষণের কারণে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ সব সময় ব্যবস্থা নিয়ে আসছে। এক গবেষণায় নেসলের দুটি পণ্য সেরেলাক ও নিডোতে উচ্চমাত্রার চিনির উপস্থিতির কথা বলা হচ্ছে। এটা আমরা পরীক্ষাগারে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখব। বিএসটিআই’র মানদণ্ডে পরিমাপ করব। সেক্ষেত্রে কোনো ধরনের সমস্যা সামনে এলে বা অভিযোগ প্রমাণিত হলে পণ্য দুটি বাজার থেকে তুলে নেওয়ার সুপারিশ করব। এছাড়া মামলা করারও সুযোগ আছে।

এ বিষয়ে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি নেসলে ইন্ডিয়ার একজন মুখপাত্রর সঙ্গে কথা বলেছে। ওই মুখপাত্র বলেছেন, তারা গত পাঁচ বছরে নেসলের শিশুখাদ্যে যোগ করা চিনির পরিমাণ প্রায় ৩০ শতাংশ কমিয়েছে। এছাড়া আরও কমিয়ে আনার বিষয়ে তারা পণ্যগুলো নিয়ে পর্যালোচনা করছেন।

গবেষণায় দেখা যায়, ভারতে নেসলের ১৫টি সেরেলাক শিশুখাদ্য থেকে একটি শিশুকে একবার যে পরিমাণ খাবার দেওয়া হয় তাতে গড়ে প্রায় ৩ গ্রাম চিনি থাকে। একই পণ্য জার্মানি এবং যুক্তরাজ্যে বিক্রি করা হচ্ছে বাড়তি চিনি ছাড়াই। অন্যদিকে ইথিওপিয়া ও থাইল্যান্ডে এই চিনির পরিমাণ প্রায় ৬ গ্রাম।

বৃহস্পতিবার বাংলাদেশের পণ্যের মান প্রণয়ন ও নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা বিএসটিআই সূত্র জানায়, এটি অন্য দেশের তৈরিকৃত পণ্য। তবে এগুলো আমাদের দেশের মানদণ্ড অনুযায়ী এক নাও হতে পারে। সেরেলাক ও নিডো যদি দেশের স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী মান ঠিক রেখে পণ্য তৈরি করে তাহলে ঠিক আছে। কিন্তু যেহেতু একটি প্রতিবেদনে ক্ষতির বিষয়টি এসেছে, তাই এই বিষয়ে সংস্থার পক্ষ থেকে দেখা হবে। যদি কোনো ক্ষতিকারক কিছু থাকে, তাহলে পদক্ষেপ নেব।

;

সরবরাহ স্বাভাবিক তবুও বাজার চড়া



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
সরবরাহ স্বাভাবিক তবুও বাজার চড়া

সরবরাহ স্বাভাবিক তবুও বাজার চড়া

  • Font increase
  • Font Decrease

 

ঈদ পরবর্তীত বাজারে পণ্যের সরবরাহ স্বাভাবিক থাকলেও নিত্য পণ্যের দাম চড়া। ক্রেতাদের আনাগোনা কম থাকলেও ঊর্ধ্বমুখী শাক সবজি ও মাছের দাম। বিশেষ করে ৫০ টাকার নিচে কোন সবজি নেই বাজারে।

শুক্রবার (১৯ এপ্রিল) সকালে রাজধানীর কাওরান কাওরান বাজার ঘুরে দেখা যায় এমন চিত্র।

কাওরান বাজারের খুচরা বাজারে গিয়ে দেখা যায়, আজকে আলু বিক্রি হচ্ছে ৫০টাকা কেজি, পেঁয়াজ ৬০-৬৫ টাকা কেজি, রসুন ২০০-২২০ টাকা কেজি, আদা ২০০ টাকা কেজি, কাঁচা মরিচ ৮০-১২০ টাকা কেজি, ধনেপাতা কেজি ১০০টাকা আর আটি বিক্রি হচ্ছে ২০ টাকা করে। লেবুর হালি ৩০-৪০ টাকা।

এছাড়া শবজির বাজারে ক্রেতাদের আনাগোনা কম থাকলেও দাম আগের মতোই চড়া ৫০ টাকার নিচে কোন সবজি নাই। মিষ্টি কুমড়া ৪০, মুলা ৫০-৬০, পটল ৭০ _১২০, বেগুন ৬০ টাকা,বরবটি ৮০,  জালি প্রতি পিছ ৬০ টাকা, ভেন্ডি ৬০ টাকা কেজি, টমেটো ৫০ শশা ৫০, লাউ প্রতি পিস ৭০-৮০ করলা ১২০ টাকা, করলা ৬০-৭০, বাধাকপি ৫০ টাকা, ফুলকপি ৫০ টাকা, গাজর ৬০, ক্যাপসিকাম ৪৫০ টাকা।

তবে মাছ মাংসের বাজারে দাম এখনো অপরিবর্তিত রয়েছে বলে জানায় ব্যবসায়ীরা। কিন্তু ক্রেতারা বলছে মাছের গায়ে হাত দেয়া যায় না। বাজারে আজকে দেশি রুই মাছ বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৪৫০ টাকা কেজি, মলা মাছ ৭০০ টাকা কেজি, নদীর চিংড়ি বিক্রি হচ্ছে ১৮০০ টাকা কেজি, এবং চাষের চিংড়ি ৭০০টাকা কেজি, আইর মাছ ৮০০টাকা কেজি,কাতল ৭০০ টাকা, দেশি বড় বোয়াল ১২০০ টাকা, কোরাল মাছ ১০০০ টাকা। আর ৫০০গ্রাম ওজনের ইলিশ মাছ বিক্রি হচ্ছে ১৩০০ টাকা কেজি।মুরগী ২১০ টাকা, গরু ৭৫০-৭৮০ টাকা,

কল্যাণপুর থেকে কাওরান বাজারে সপ্তাহের বাজার করতে এসেছেন সুফিয়া বেগম। তিনি জানান ৫ হাজার টাকা নিয়ে এসেছি বাজারে। মাত্র ৫ জনের সংসারের বাজার করতে ইতিমধ্যে বাজারের প্রায় অর্ধেক টাকা শেষ হয়েছে শুধু মাছ কিনতে। এখনো সবজি ও ঘরের অন্যান্য বাজার করা বাকি। আগে যেখানে মাত্র ৩ হাজার টাকায় সপ্তাহের পুরো বাজার শেষ হয়ে যেতো সেখানে এখন ৫ হাজার টাকা দিয়ে কোনমতে টেনেটুনে সংসার চালাতে হচ্ছে তাকে। কাওরান বাজারে কিছুটা কম দামে কিনতে আসলে দামের পার্থক্য এলাকার বাজারের চাইতে খুব একটা কম না। তবে টাটকা পণ্য পাওয়ায় কিছুটা স্বস্তি পাওয়া যায় বলে তিনি জানান। বাজারের  ভয়াবহ বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, দুইজনে মিলে কামাই করেও এখন অনেকটা হিমশিম খেতে হচ্ছে সংসারের চাহিদা মেটাতে।

কাওরান বাজারের মাছ ব্যবসায়ী লতিফ বার্তা২৪.কম’কে জানান, বাজারে সরবরাহ আছে কিন্তু চাহিদার তুলনায় কম। তাই বেড়েছে সকল মাছের দাম। দেশি মাছের চাহিদা বেশি থাকায় তার দাম একটু বেশি। তবে চাষের মাছের দাম আগের মতোই আছে।

;

ফের বাড়ল স্বর্ণের দাম



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ফের বাড়ল স্বর্ণের দাম

ফের বাড়ল স্বর্ণের দাম

  • Font increase
  • Font Decrease

ভরিতে ২ হাজার ৬৫ টাকা বাড়িয়ে একভরি ২২ ক্যারেটের স্বর্ণের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ১ লাখ ১৯ হাজার ৬৩৮ টাকা। যা দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ।

বৃহস্পতিবার (১৮ এপ্রিল) এক বিজ্ঞপ্তিতে বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাজুস) জানিয়েছে, শুক্রবার (১৯ এপ্রিল) থেকে নতুন এ দাম কার্যকর হবে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, স্থানীয় বাজারে তেজাবি স্বর্ণের (পিওর গোল্ড) মূল্য বেড়েছে। ফলে সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় স্বর্ণের নতুন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে।

;