চট্টগ্রামের রিয়াজউদ্দীন বাজারে

  • আবুল খায়ের মোহাম্মদ, কন্ট্রিবিউটিং করেসপন্ডেন্ট,  বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

চিরচেনা পরিবেশ ফিরে পাচ্ছে রিয়াজউদ্দীন বাজার। বার্তা২৪.কম

চিরচেনা পরিবেশ ফিরে পাচ্ছে রিয়াজউদ্দীন বাজার। বার্তা২৪.কম

ঢাকার যেমন চকবাজার, গুলিস্তান-ফুলবাড়িয়া, কলকাতার বড়বাজার, দিল্লির চাঁদনিচক, লাহোরের আনারকলি বাজার, চট্টগ্রামের তেমনই রিয়াজউদ্দীন বাজার। হাতির দাঁত থেকে বাঘের নখ পর্যন্ত হেন বস্তু নেই, যা রিয়াজউদ্দীন বাজারে পাওয়া যায় না! খাবার, পোষাক, কসমেটিক, বিদেশি পণ্য, পাহাড়ের মঘা কবিরাজের টোটকা, হেকিমের দাওয়াই ইত্যাদি যাবতীয় দ্রব্যের সমাবেশ চট্টগ্রামের এই প্রাচীন মার্কেট প্লেস ঘিরে। নগর জুড়ে ঝা চকচকে মল, সুপার মার্কেট, শপিং প্লাজার রমরমার মধ্যেও সাশ্রয়ী মূল্যে বিপুল কেনাকাটার জন্য চট্টগ্রামের মানুষের ভরসা রিয়াজউদ্দীন বাজার। করোনাকালে দীর্ঘদিন স্থবির থাকলেও ক্রমেই ক্রেতা-বিক্রেতার পদভারে আবার মুখরিত হচ্ছে এই মার্কেট এরিয়া।

রিয়াজউদ্দীন বাজার চট্টগ্রাম শহরের একটি ঐতিহাসিক বাজার। এটি চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশন আর নিউমার্কেটের মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থিত। উল্লেখ্য, নোয়াখালী অঞ্চলের প্রথম গ্র্যাজুয়েট শেখ রিয়াজউদ্দীন আহমদ সিদ্দিকীর নামে এই বাজারের নামকরণ হয়। ব্রিটিশ আমলের শুরুর দিকে চট্টগ্রাম শহরের কেন্দ্রস্থলে জঙ্গলাকীর্ণ বিশাল অঞ্চল তিনি কম দামে কিনে নেন এবং এই বাজারটি প্রতিষ্ঠা করেন।

বিজ্ঞাপন

রিয়াজউদ্দীন বাজার চট্টগ্রাম শহরের অন্যতম ব্যস্ততম একটি বাজার। এখানে সবধরনের জিনিসপত্রই পাওয়া যায়। এখানে রয়েছে দুই শতাধিক মার্কেটে ১০ হাজারেরও বেশি দোকান। উত্তরে এনায়েতবাজার, দক্ষিণে স্টেশন রোড, পূর্বে জুবিলী রোড এবং পশ্চিমে বিআরটিসি বাস স্ট্যান্ড-এর বিশাল এলাকা নিয়েই রিয়াজউদ্দীন বাজারের পরিধি।

রাত-দিন চলছে কেনাকাটা

সকাল থেকে গভীর রাত ক্রেতাদের পদচারণা আর বিক্রেতার হাঁকডাকে সরগরম থাকে রিয়াজউদ্দিন বাজার। কী নেই এখানে! তৈরি পোশাক থেকে শুরু করে সুঁই-সূতা, ঝাড়ু সবই মিলছে। ফলে সবসময় নানা পেশার ক্রেতাঠাসা থাকে রিয়াজউদ্দীন বাজারের অলিগলি।

বিজ্ঞাপন

দৈনন্দিন কেনাকাটার পাশাপাশি বিভিন্ন উৎসব উপলক্ষ্যে মানুষের ভিড় আর কেনাকাটার স্রোতের তোড়ে জনসমুদ্রে পরিণত হয় রিয়াজউদ্দীন বাজার। ঈদের প্রাক্কালে গান, বাজনা, আলোকমালায় পুরো বাজার ঝকমক করে। আসন্ন পূজাকে সামনে রেখেও সেজেছে রিয়াজউদ্দীন বাজার। শনিবার (২ অক্টোবর) সরেজমিনে দেখা গেলো বাজার ঘিরে উৎসবের আমেজ আর জমজমাট পরিবেশ।

বার্তা২৪.কমকে একাধিক ব্যবসায়ী জানান, 'প্রতিবছরের মতো এবার ঈদবাজার ততটুকু না জমলেও আসন্ন  পূজাবাজারে ক্রেতাদের সুবিধার্থে বেশ কিছু ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। পুরো বাজারে ত্রিপল প্যান্ডেল করা হয়েছে যাতে ক্রেতারা বৃষ্টিতেও নির্বিঘ্নে কেনাকাটা করতে পারেন।'

স্বাস্থবিধি পালন করার পাশাপাশি সাদা ও পোশাকধারী পুলিশের সার্বক্ষণিক টহলের ব্যবস্থা করা হয়েছে। যাতে স্বাস্থবিধি লঙ্ঘন ও নিরাপত্তাহীনতায় পড়তে না হয় কাউকে। সার্বক্ষণিক জেনারেটরের ব্যবস্থা রয়েছে। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার ওপরও জোর দেওয়া হয়েছে বলে জানান ব্যবসায়ীগণ।

ক্রেতাদের পদভারে মুখরিত বাজার

সরেজমিনে দেখা যায়, কেনাকাটা সুন্দর ও নির্বিঘ্ন করতে রিয়াজউদ্দীন বাজারের চারপাশ সাজানো হয়েছে। হঠাৎ বৃষ্টিতেও যাতে ক্রেতাদের ভোগান্তিতে পড়তে না হয় সেজন্য বাজারের বেশির ভাগ এলাকা ত্রিপল-প্যান্ডেল দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়। বাজারের কাদেরিয়া বেনারসী ভাণ্ডার, মুন্নি শাড়িজ, এম আবু আহমদ অ্যান্ড সন্স, সুগন্ধা শাড়ি বিপণি, মেসার্স রূপসজ্জা, সিল্ক প্যারাডাইস, পরীস্থান, ঝুমুর শাড়ি বিতান, শতদল স্টোর, কাসেম গার্মেন্টস, অদুদ ফেন্সী স্টোর, তনু শাড়ি বিতান, নোবেল ক্লথ স্টোর, প্রগতি শাড়ি বিতানসহ বাজারের সব মার্কেট ও কাপড়ের দোকানে ক্রেতার ভিড়। প্যারামাউন্ট হোটেলে ভেতরে ও বাইরে বুফেতে ব্যবস্থা করা হয়েছে বিশাল খাবারবাজারের। লক্ষ্য রাখা হয়েছে, ক্রেতাদের জন্য স্বাস্থ্যসম্মত খাবারের দিকেও।

দেখা গেছে, জামা কাপড়ের পাশাপাশি প্রসাধন সামগ্রীর বাজারও আবার জমে উঠেছে। তামাকুমণ্ডি লেনের একজন দোকানি বার্তা২৪কম'কে বলেন, 'সাধারণত কাপড়চোপড় কেনাকাটা নিশ্চিতের পর ক্রেতারা প্রসাধন সামগ্রী কেনার জন্য ভিড় করেন। তবে গত সিজনে করোনার জন্য ক্রেতা সমাগম কম হলেও আবার বিভিন্ন বয়সী ক্রেতাদের ভিড় দেখা যাচ্ছে।'

আবার সরব রিয়াজউদ্দীন বাজার

চট্টগ্রামের বাজার-সংস্কৃতিতে যুগ যুগ ধরে জাত ব্যবসায়ীদের কারণেই রিয়াজউদ্দীন বাজার শুধু দেশে নয়, বিদেশেও সুখ্যাতি পেয়েছে। সব ধরনের পোশাক থেকে শুরু করে নিত্যপ্রয়োজনীয় দেশি-বিদেশি দরকারি সবই পাওয়া যাচ্ছে এখানে। তবে, প্রতিবছর রোজার শুরু থেকেই সকাল হতে গভীর রাত পর্যন্ত ক্রেতাদের পদচারণা আর বিক্রেতাদের হাঁকডাকে মুখরিত থাকার ছবি করোনাকালে রিয়াজউদ্দীন বাজারে দেখা যায় নি। সেই থমথমে পরিবেশ ভেঙে আবার জমেছে বাজার। দেখা যাচ্ছে প্রচুর ভিড়। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভিড়ও বাড়তে থাকে। মধ্যরাত পর্যন্ত চলে বেচাকেনা।

রিয়াজউদ্দীন বাজারের মহিউদ্দীন সুপার মার্কেটের কর্মকর্তা সালেহ আহমদ সোলাইমান জানান, 'প্রতিদিনই প্রচুর ক্রেতার সমাগম হচ্ছে। সবশ্রেণির মানুষ কেনাকাটা করতে আসছেন এখানে। করোনার প্রকোপ কমায় চাঙ্গা হয়েছে ব্যবসা। গত সিজনের মন্দা কাটিয়ে রিয়াজউদ্দীন বাজার আবার ধীরে ধীরে আগের চিরচেনা জমজমাট পরিবেশ ফিরে পাচ্ছে।'