নিত্যপণ্যের দাম বাড়ছে কেন?

  • সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট বার্তা২৪.কম ঢাকা
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ফাইল ছবি

ফাইল ছবি

নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়ার তো কোনো কারণ দেখছি না। খবরের কাগজে দেখলাম, দেশে চাল-ডাল-তেলের যথেষ্ট মজুদ আছে। আর্ন্তাজতিক বাজারেও দাম কম। তাহলে দাম বাড়ছে কেন?

বলছিলেন ঢাকা ক্যান্টনমেন্টের মাটিকাটার বাসিন্দা মু. শফিকুল ইসলাম ভুইয়া। আজ মঙ্গলবার বাজার করতে এসে তিনি বার্তা২৪কমকে আরো বলেন, বাজারে জিনিসপত্রের দাম যেভাবে বেড়েছে তাতে সংসার চালানোই মুশকিল হয়ে পড়েছে।

বিজ্ঞাপন

দেশে কয়েক সপ্তাহ ধরে বাজারে চাল, ডাল, পেঁয়াজ ও ভোজ্য-তেলের মত নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়ছে। এ নিয়ে শফিকুল ইসলামের মতো রাজধানীর মধ্য এবং নিম্ন আয়ের মানুষের ওপর বাড়তি বড় চাপ তৈরি হয়েছে। বাজারে সব ধরনের চালের দামই গত কয়েক সপ্তাহে বেড়েছে। পেঁয়াজের দাম গত দুই সপ্তাহে প্রায় দ্বিগুণ হয়ে গেছে। এছাড়া মসুর ডাল, আদা, চিনি, ভোজ্য তেল-সব কিছুরই দাম উর্ধমুখী। এমনকি সবজি, মুরগি এবং মুরগির ডিমের দামও বেড়েছে।

রাজধানীর বাজারে এখন মিনিকেট চালের কেজি ৭৫ টাকা, মোটা চাল ৫৪, আটা ৪০, ময়দা ৪৫ , দেশি মশুর ডাল ১৪০, পেঁয়াজ ৯০, খোলা সয়াবিন ১৬০ টাকা। কিন্তু দাম বাড়ানোর দায় নিতে নারাজ বিক্রেতারা। তারা বলছেন, আড়তদারেরা দাম বাড়িয়ে বিক্রি করছেন, ফলে তাদেরও বাড়তি দামে পণ্য বেচতে হচ্ছে।

বিজ্ঞাপন

কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) বার্ষিক পণ্য মূল্য প্রতিবেদনে দেখা যায়, করোনার কারণে গত বছর দেশে সব ধরনের চালের দাম আগের বছরের তুলনায় বেড়েছে গড়ে ২০ শতাংশ। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ২৭ শতাংশ বেড়েছে স্বর্ণা পারিজাসহ মোটা চালের দাম। মিনিকেট ও নাজিরশাইলসহ সরু চালের দাম বেড়েছে ১৫ শতাংশ পর্যন্ত।

সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) দৈনিক খুচরা বাজারে পণ্যমূল্য তালিকা পর্যালোচনা করে দেখা যায়, দুইদিনের ব্যবধানে প্রতি লিটার খোলা সয়াবিনের দাম ৩ দশমিক ৭৭ শতাংশ, পাঁচ লিটার বোতলজাত সয়াবিনের দাম শূন্য দশমিক ৭২ শতাংশ, পাম অয়েল লিটারে শূন্য দশমিক ৭৯ শতাংশ ও পাম অয়েল সুপারের লিটারে ২ দশমিক ৭১ শতাংশ বেড়েছে। তিন দিনের ব্যবধানে কেজিতে চিনির মূল্য ২ দশমিক ৫৮ শতাংশ, দুই দিনের ব্যবধানে দেশি পেঁয়াজের মূল্য বেড়েছে ১৬ শতাংশ।

রাজধানীর ভাষাণটেকের মুদি দোকানদার আনোয়ার হোসেন মিয়া বার্তা২৪কমকে বলেন, আমাদের আসলে করার কিছু নাই। আমাদেরও তো বেশি দামে কিনতে হচ্ছে। যারা আমদানি করেন, তারাই দাম বাড়াচ্ছেন। কিন্তু কেন দাম বাড়াচ্ছেন সেটা বলতে পারছি না।

বিদ্যমান পরিস্থিতিতে সোমবার মিলার, আমদানিকারক ও পাইকারি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে জরুরি বৈঠক করেছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। সেখানে সংশ্লিষ্ট সবাইকে কঠোরভাবে সতর্ক করা হয়। সরকরের মনিটরিং কার্যক্রম আরও জোরদার করতে সব জেলা প্রশাসককে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ভোজ্যতেল, চিনি ও পেঁয়াজের ওপর শুল্ক স্থগিত করার চিঠি দেওয়া হয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর)।

বৈঠক শেষে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি সাংবাদিকদের বলেছেন, আমরা চারদিক থেকে চেষ্টা করছি যতটা নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। এক মাস ধরে পেঁয়াজের বাড়তি দাম থাকার কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু আমাদের দেশে ৫ লাখ টন পেঁয়াজ মজুত আছে, যা দিয়ে আগামী আড়াই থেকে তিন মাস চলতে পারে। তারপরও আমরা বিভিন্ন রকম শুল্ক প্রত্যাহার করার জন্য এনবিআরকে চিঠি দিয়েছি। আশা করছি বাজার পরিস্থিতি শিগগিরই স্বাভাবিক হয়ে আসবে।

একই দিন খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার গণমাধ্যমকে বলেছেন, উৎপাদনের সঠিক তথ্য না থাকলে বাজার নিয়ন্ত্রণ ও ব্যবস্থাপনা সম্ভব নয়। সঠিক তথ্যের ওপর নির্ভর করে চাহিদা ও সরবরাহ ঠিক রাখা যাবে।