বন্ধ হওয়ার পথে অ্যাপোলো ইস্পাত!
বন্ধ হওয়ার পথে অ্যাপোলো ইস্পাত কমপ্লেক্স লিমিটেড। ঋণে জর্জরিত এই কোম্পানির উৎপাদন ইতিমধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে। কোম্পানিতে মাল কেনার টাকা দিয়ে অনেক ব্যবসায়ী তা না পাওয়ায় তাদেরও পথে বসার উপক্রম।
সূত্র জানিয়েছে, এর জন্য মূলত দায়ী অ্যাপোলো ইস্পাত কমপ্লেক্সের ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শোয়েব। তার ভুল সিদ্ধান্তের কারণেই কোম্পানিটির আজ এই দুরবস্থা। তিনি কোম্পানির কারও কথা না শুনে নিজের মতো যে কোনও সিদ্ধান্ত নেন। তিনি কোম্পানিতে অযাচিত হস্তক্ষেপ করেন। কোম্পানিতে থাকা যোগ্যকর্মীদের মূল্যায়ন না করে অদক্ষ লোক নিয়োগ করে কোম্পানিটির বারোটা বাজিয়েছেন।
অ্যাপোলো ইস্পাতে কর্মরত এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, কোম্পানিটি দেশব্যাপী পাওনাদারদের পাওনা পরিশোধ করতে পারছে না। গত ৭-৮ মাস ধরে বেতন পাচ্ছেন না কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও। এসব কিছুর মূলে ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শোয়েব। তিনি কারও কথাই শুনেন না। তার অদক্ষতা, যোগ্যদের অপসারণ এবং অদক্ষ লোক নিয়োগের কারণেই কোম্পানিটির আজ এই পরিণতি।
অ্যাপোলো ইস্পাতের আরেক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, বর্তমানে কোম্পানির ব্যাংক ঋণ প্রায় ৫৫০ কোটি টাকা। আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কাছে ঋণ ২৪০ কোটি টাকা। এছাড়া পার্টি পাবে প্রায় ৫৫ কোটি টাকা। তিনি বলেন, কোম্পানিটি এই মুহূর্তে ঋণ শোধের অবস্থায় নেই। আর ভাইস চেয়ারম্যান যেসব পদক্ষেপ নিচ্ছেন তাতে এই ঋণ পরিশোধের চিন্তা তার মধ্যে নেই বললেই চলে।
রাজধানীর দয়াগঞ্জের ব্যবসায়ী নূরুল আলম জানান, আমি অ্যাপোলো ইস্পাতের কাছে ৪০ কোটি টাকা পাওনা। টাকা চাইলে আজ দিচ্ছি, দেব এই বলে মাসের পর মাস পার করছেন। তারা আমাকে চেক দিয়েছে কিন্তু তা ক্যাশ হয়নি। ফলে বাধ্য হয়ে আমি আদালতের দ্বারস্থ হয়েছি।
রংপুরের এক ব্যবসায়ী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, অ্যাপোলো ইস্পাতে মালের জন্য ৩ কোটি ৫১ লাখ টাকা দিয়েছিলাম। মাল দেব, দিচ্ছি করে কয়েক মাস পার করেছেন। এখন টাকা চাচ্ছি তাতেও কোনও সাড়া নেই। ইতিমধ্যে উকিল নোটিশ পাঠিয়েছি।
তিনি বলেন, ছোট একটা ব্যবসা পরিচালনা করে ভালোভাবেই সংসার চালাচ্ছিলাম। কিন্তু হঠাৎ করে অ্যাপোলো ইস্পাত আমাকে পথে বসিয়েছে। টাকা ফেরত দিচ্ছে না। আমিও ঋণ করে তাদের টাকা দিয়েছিলাম। কিন্তু টিন দেয়নি। টাকাও ফেরত পাচ্ছি না। ফলে পাওনাদার আমাকে চাপ দিচ্ছে। আমি টাকা ফেরত না পাওয়ায় তাদের টাকা ফেরত দিতে পারছি না। আমি এখন মহাবিপাকে আছি।
তাদের মতো এমন আরও অনেক ব্যবসায়ী টাকা পায় অ্যাপোলো ইস্পাতের কাছে।
অ্যাপোলো ইস্পাত পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয় ২০১৩ সালে। ২০১৮ সাল পর্যন্ত কোম্পানিটি ভালো মৌলভিত্তির কোম্পানির তালিকায় (‘এ’ শ্রেণিভুক্ত) থাকলেও, ২০১৯ সালে নেমে আসে ‘বি’ শ্রেণিতে।
পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত যেসব কোম্পানি বছর শেষে বিনিয়োগকারীদের ১০ শতাংশ বা তার বেশি লভ্যাংশ দেয়, সে সব কোম্পানি ‘এ’ শ্রেণিভুক্ত।
১০ শতাংশের কম লভ্যাংশ দিলে নেমে যায় ‘বি’ শ্রেণিতে। আর কোনো লভ্যাংশ না দিলে, অবনমন ঘটে দুর্বল মৌলভিত্তির কাতার, অর্থাৎ ‘জেড’ শ্রেণিতে।
সূত্র জানিয়েছে, অ্যাপোলো ইস্পাত দরপত্র ছাড়াই নামমাত্র মূল্যে ৭টি গাড়ি বিক্রি করেছে। এতে প্রতিষ্ঠানটির প্রায় ২ কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে।
এসব বিষয়ে জানার জন্য অ্যাপোলো ইস্পাতের ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শোয়েবের সঙ্গে টেলিফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। অ্যাপোলো ইস্পাতের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ রফিক বলেন, বর্তমানে কোম্পানির উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। ঋণের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এসব বিষয় চেয়ারম্যান সাহেব দেখছেন।
ট্রেডিং ব্যবসার মাধ্যমে ১৯৬০ সালে ক্যারিয়ার শুরু করেন সদ্যপ্রয়াত শিল্পপতি দীন মোহাম্মদ। ফিনিক্স গ্রুপ ও অ্যাপোলো গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের অধীনে ডজনখানেক শিল্প ও সেবা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন তিনি। এর মধ্যে অ্যাপোলো ইস্পাত কমপ্লেক্স লিমিটেড একটি।