যেসব কারণে ২০২১ সালে সর্বোচ্চ চা উৎপাদন
চা উৎপাদনে অনেক দূর এগিয়েছে বাংলাদেশ। অতীতের সকল চা উৎপাদন-রেকর্ডকে পেছনে ফেলে চা শিল্পে নতুন রেকর্ড অর্জিত হয়েছে। যা এ পর্যন্ত সর্বাধিক উৎপাদিত চা এর সমৃদ্ধি। ২০২০ সালে কভিড-১৯ এর অনাকাঙ্খিত ধাক্কার পরও চা উৎপাদনে হতাশায় নিমজ্জিত হয়নি বাংলাদেশ।
সম্প্রতি ১৯ জানুয়ারি বাংলাদেশ চা বোর্ড ২০২১ সালের চা উৎপাদনের বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ করে। তাতে উল্লেখ করা হয়েছে ২০২১ সালে দেশের ১৬৭টি চা বাগান এবং ক্ষুদ্রায়ন চা বাগান থেকে ৯৬ দশমিক ৫০৬ মিলিয়ন (৯ কোটি ৬৫ লাখ) কেজি চা বার্ষিক উৎপাদন হয়েছে। বাংলাদেশে ১৬৮ বছরের ‘চা’ ইতিহাসে এটিই সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ রেকর্ড।
২০২০ সালে দেশে ৮৬ দশমিক ৩৯৪ মিলিয়ন (৮ কোটি ৬৩ লাখ) কেজি চা উৎপাদন হয়েছিল। যা ২০২১ সালের উৎপাদন থেকে ১ কোটি ১ লাখ ১১ হাজার কেজি বেশি। এক বছরের মাথায় উৎপাদন ১ কোটি ১ লাখ কেজি বেড়ে নতুন এ রেকর্ড হয়েছে। এর কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে, উত্তরাঞ্চলে সমতলের চা-বাগান ও ক্ষুদ্র চাষ থেকে সবচেয়ে বেশি সাফল্য এসেছে। ২০২০ সালে যেখানে ১ কোটি ৩ লাখ কেজি চা উৎপাদিত হয়েছিল, সেখানে এবার হয়েছে ১ কোটি ৪৫ লাখ কেজি।
২০১৯ সালে ৯৬ দশমিক ০৬৯ মিলিয়ন কেজি (৯ কোটি ৬০ লাখ ৬৯ হাজার) কেজি চা এর উৎপাদনই ছিল সেসময় পর্যন্ত চা শিল্পের ইতিহাসে সর্বোচ্চ পরিমাণ। ওইটুকুই নিয়ে সন্তুষ্ট ছিলাম আমরা।
বাংলাদেশ চা গবেষণা ইন্সটিটিউট (বিটিআরআই) এর পরিচালক ড. মোহাম্মদ আলী বলেন, ২০২০ সালে দেশে ৮৬ দশমিক ৩৯৪ মিলিয়ন কেজি চা উৎপাদন হয়েছিল। এবছর ১০ মিলিয়নের কিছু বেশি চা অতিরিক্ত উৎপাদন হয়েছে। করোনা মোকাবেলা করেও অতীতের সকল রেকর্ড অতিক্রম করে চা এর এরূপ বাম্পার ফলন হয়েছে। যা প্রমাণ করে দেশে চা শিল্পের সক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছে।
এর কারণ হিসেবে বছরের পর বছর ধারাবাহিকভাবে চা-বাগানে যে সংস্কার কার্যক্রম চলছে, তারই ফসল এ রেকর্ড উৎপাদন। নতুন চারা ও নতুন আবাদে উৎপাদন বেড়েছে। এছাড়াও বর্তমান বাংলাদেশ চা বোর্ডের চেয়ারম্যান মহোদয়ের সঠিক নেতৃত্ব ও দিক-নির্দেশনা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে বলে বিটিআরআই পরিচালক জানান।
চা উৎপাদনে সফলতার কারণ উল্লেখ করে বাংলাদেশ চা বোর্ডের প্রকল্প উন্নয়ন ইউনিট (পিডিইউ) এর পরিচালক ড. একেএম রফিকুল হক বলেন, চা বোর্ডের চেয়ারম্যান মহোদয়ের নিদের্শনায় বেশ কিছু যুগান্তকারী পদক্ষেপ তাদের এ সফলতার পিছনে অনেকাংশেই কাজ করেছে। এ উৎপাদন ধরে রাখতে চা বাগানগুলোতে বিশেষ করে উত্তরাঞ্চলে চা চাষিদের ‘ক্যামেলিয়া খোলা আকাশ স্কুলে’র মাধ্যমে চা আবাদ বিষয়ে হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে।
আধুনিক প্রযুক্তি সরবরাহের ফলে শুধুমাত্র সমতলের চা বাগান ও ক্ষুদ্র চা চাষ থেকে এ বছর (২০২১) গত বছরের (২০২০) তুলনায় ৪১ শতাংশ বেশি চা উৎপাদন সম্ভব হয়। আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে সমতলের চা-বাগান ও ক্ষুদ্র চা চাষে উৎপাদন এ বছর ৪১ শতাংশ বেড়েছে বলে ড. রফিকুল হক বলেন।