গ্যাসের দাম বৃদ্ধির গণশুনানির পর বিদ্যুতের বিষয়ে সিদ্ধান্ত
এখনই বিদ্যুতের দামের গণশুনানির কথা ভাবছে না বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। কমিশন আগে গ্যাসের দাম বৃদ্ধির প্রস্তাবের সমাধান করতে চায় বলে জানিয়েছেন কমিশনের সদস্য মোহাম্মদ বজলুর রহমান।
তিনি বার্তা২৪.কম-কে বলেন, গ্যাসের দাম সমন্বয় হলে তার প্রভাব বিদ্যুতের উপরও পড়বে। তাই আগে গ্যাসের দর বৃদ্ধির প্রস্তাবের সিদ্ধান্ত নিতে চায় কমিশন। হয়তো এমন হতে পারে গ্যাসের দরের বিষয়ে একটি ধারণায় পৌঁছা গেলে তখন বিদ্যুতের প্রস্তাবের প্রক্রিয়া শুরু হবে।
বজলুর রহমান বলেন, বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি) আবেদন দিলে তিন বছরের অডিট রিপোর্ট, এক বছরের প্রাক্কলিত আয় ব্যয়ের হিসেব, প্রস্তাবনা অনুযায়ী দর বাড়ানো হলে ভোক্তাদের ওপর কি ধরণের প্রভাব পড়তে পারে। এসব রিপোর্ট জমা দিতে বলা হয়। বিপিডিবি সেসব কাগজপত্র জমা দিয়েছে। এখন সেগুলো মূল্যায়ন করা হচ্ছে।
বিপিডিবির প্রস্তাবে বলা হয়েছে, চাহিদা মতো গ্যাস সরবরাহ না পাওয়ায় তেল দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে গিয়ে খরচ বেড়ে গেছে। ২০১৯-২০ অর্থ বছরে বিদ্যুতের গড় উৎপাদন খরচ ছিল ২.১৩ টাকা, ২০২০-২১ অর্থ বছরে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩.১৬ টাকায়। জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি, কয়লার মুসক বৃদ্ধির কারণে ২০২২ সালে ইউনিট প্রতি উৎপাদন খরচ দাঁড়াবে ৪.২৪ টাকায়। পাইকারি দাম না বাড়লে ২০২২ সালে ৩০ হাজার ২৫১ কোটি ৮০ লাখ টাকা লোকসান হবে বিপিডিবির। গ্যাসের প্রস্তাবিত দাম বৃদ্ধির প্রভাব ছাড়াই এই অবস্থা হবে। গ্যাসের দাম বাড়লে সেই বাড়তি অর্থ যোগ করে দাম বাড়ানোর করার আবেদন করেছে বিপিডিবি।
বিদ্যুতের একক ক্রেতা বিপিডিবি। নিজেরা উৎপাদনের পাশাপাশি বিদেশ থেকে আমদানি ও বেসরকারি মালিকানাধীন বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কাছ থেকে বিদ্যুৎ কিনছে। সব বিদ্যুৎ ৫টি বিতরণ কোম্পানির কাছে পাইকারি দরে বিক্রি করে আসছে। আর নিজেরা ময়মনসিংহ, সিলেট ও চট্টগ্রাম বিভাগের শহরাঞ্চলে বিতরণ করে যাচ্ছে।
বিপিডিবির জনসংযোগ পরিদফতরের পরিচালক সাইফুল হাসান চৌধুরী বার্তা২৪.কমকে বলেছেন, বিদ্যুতের উৎপাদন খরচের চেয়ে কম দামে বিক্রি করা হচ্ছে। এ কারণে লোকসান দিয়ে যাচ্ছে বিপিডিবি। তাই পাইকারি দাম সমন্বয়ের একটি প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। দাম সমন্বয় করা না হলে ২০২২ সালে ৩০ হাজার কোটি টাকা লোকসান হবে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের। তাই দাম সমন্বয়ের প্রস্তাব করা হয়েছে। এর পাশাপাশি যদি গ্যাসের দাম বৃদ্ধি পায় তাহলে লোকসান আরও বাড়বে। গ্যাসের দাম বৃদ্ধি করা হলে সেটিও সমন্বয় করার আবেদন করা হয়েছে বিইআরসির কাছে।
বিইআরসি হচ্ছে দাম চূড়ান্ত করার আইনগত প্রতিষ্ঠান। তারা আবেদন পাওয়ার পর প্রথমে যাচাই-বাছাই করে দেখেন। আবেদন যথাযথ হলে কমিশনের বৈঠক করে গণশুনানি করা হয়। তারপর দর ঘোষণা করা হয়। পাইকারি দাম বেড়ে গেলে বিতরণ কোম্পানিগুলো সেটাকে ভিত্তি ধরে খুচরা দাম বাড়ানোর প্রস্তাব জমা দিয়ে থাকেন।
অন্যদিকে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের (এলএনজি) দাম বেড়ে যাওয়ায় গ্যাসের দর গড়ে ১১৭ শতাংশ বাড়ানোর আবেদন করেছে পেট্রোবাংলা। এতে বলা হয়েছে বিক্রয়মূল্য না বাড়লে বছরে ৭০ হাজার কোটি টাকা লোকসান হবে।
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. শামসুল আলম বার্তা২৪.কম-কে বলেছেন, ৫-৬ শতাংশের দাম বেড়েছে বলে ১০০ ভাগ গ্যাসের দাম ১১৭ শতাংশ বাড়াতে হয় এটা বিশ্বাসযোগ্য! তারা গোঁজামিল দিয়ে হিসেব দেখাচ্ছে, এসব হিসাব বাস্তব সম্মত না। প্রয়োজন হলে ওই পরিমাণ এলএনজি আমদানি না করার পক্ষে আমরা। জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির পর জনগণের নাভিশ্বাস উঠেছে। এই অবস্থায় গ্যাসের দাম বৃদ্ধি কোনভাবেই কাম্য হতে পারে না। এই মুহূর্তে আমাদের অর্থনীতি ভর্তুকি বৃদ্ধি কিংবা দাম বৃদ্ধি কোনটার জন্য প্রস্তুত নয়। বরং রেশনিং করে ওই পরিমাণ এলএনজি আমদানি কমিয়ে দেওয়া উচিত। গ্যাসের দাম বাড়লে বিদ্যুতের দামও বাড়ানোর ইস্যু সামনে আসবে। আমরা মনে করি গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়ানো ছাড়াও অনেক বিকল্প রয়েছে।