সর্বজনীন পেনশন ২০২২-২৩ অর্থবছরে চালুর পরিকল্পনা

  • স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

প্রতীকী ছবি

প্রতীকী ছবি

সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা প্রর্বতনের লক্ষ্যে জরুরিভিত্তিতে একটি আইন প্রণয়নের উদ্যোগ নিতে অর্থ বিভাগকে নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সব শ্রেণির বয়স্ক নাগরিকদের আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিতে এই সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা আগামী ২০২২-২৩ অর্থবছর থেকে শুরু করতে যাচ্ছে সরকার।

২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দেয়া ইশতেহারে সরকারি-বেসরকারিসহ সব ধরনের অনানুষ্ঠানিক খাতের জন্য পেনশন স্কিমের ঘোষণা দিয়েছে আওয়ামী লীগ। তারই ধারাবাহিকতায় এ নির্দেশ দিয়েছেন সরকারপ্রধান।

বিজ্ঞাপন

বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে উপস্থাপিত একটি সর্বজনীন পেনশন স্কিম প্রণয়নের কৌশলপত্রে জানা যায়, দেশের ১৮ থেকে ৬০ বছর বয়সি নাগরিকদের যে-কেউ প্রতি মাসে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ চাঁদা হিসেবে জমা দিয়ে এই পেনশন সুবিধায় অন্তর্ভুক্ত হতে পারবেন। সর্বনিম্ন মাসিক ফি-র পরিমাণ ১০০ টাকা নির্ধারণ করা হতে পারে। মোবাইলে আর্থিক পরিষেবা (এমএফএস) ও এজেন্ট ব্যাংকিংসহ সমস্ত অনলাইন পদ্ধতিতে এই ফি পরিশোধ করা যাবে।

এই সুবিধা পেতে হলে কমপক্ষে ১০ বছর ধরে মাসিক চালিয়ে নিতে হবে। তবে এই পেনশনে নাম অন্তর্ভুক্ত করানো বাধ্যতামূলক করা হবে না। ৬০ বছর বয়সে অবসর নেওয়ার পর পেনশন হিসেবে এককালীন অর্থ পাওয়াসহ প্রত্যেক নাগরিক তার নিজের কন্ট্রিবিউশন অনুযায়ী আজীবন মাসিক পেনশন সুবিধা পাবেন। আর সর্বজনীন পেনশনে অন্তর্ভুক্তির পর কেউ মারা গেলে তার পরিবারের সদস্যরা সুবিধা পাবেন।

বিজ্ঞাপন

পেনশন তহবিলে নাগরিকদের চাঁদা হিসেবে জমা দেওয়া তহবিল সরকার ট্রেজারি বিল ও বন্ডে বিনিয়োগের পাশাপাশি সরকারের লাভজনক অবকাঠামো খাতে বিনিয়োগ করা হবে। এতে সরকারের ব্যাংক ঋণ-নির্ভরতা কমবে।

বিনিয়োগ থেকে পাওয়া মুনাফার পাশাপাশি তহবিলে সরকারের কন্ট্রিবিউশনও থাকবে। তবে সরকারের অবদান কত শতাংশ এখনও নির্ধারণ হয়নি।

দেশজুড়ে সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা পুরোদমে চালু হওয়ার পর থেকে সরকারি চাকরিতে নিয়োগপ্রাপ্তদেরও এই পেনশন ব্যবস্থার অন্তর্ভুক্ত করা হবে। ২০২৫ সালের মধ্যে সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা পূর্ণাঙ্গভাবে দেশজুড়ে বাস্তবায়ন হবে বলে আশা করছে অর্থ মন্ত্রণালয়।

বাংলাদেশে সরকারি চাকরিজীবীরা অবসরে যাওয়ার পর আমৃত্যু তারা আর্থিক সুবিধা পান প্রতি মাসে। সেই চাকরিজীবী মারা গেলে তার স্ত্রী এবং বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী সন্তান থাকলে তাকেও আমৃত্যু পেনশন দেয়া হয়।

কিন্তু বেসরকারি খাতে কর্মরতদের জন্য অবসর জীবনে ও তাদের সন্তানদের জন্য প্রাতিষ্ঠানিক কোনো সুবিধা নেই।

অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা অনুযায়ী, ২০৫০ সাল নাগাদ ৬০ বছর বা তার বেশি বয়সি মানুষের সংখ্যা ৪০ মিলিয়নের উপরে পৌঁছতে পারে। ২০২০ সালে এই বয়সি মানুষের সংখ্যা ছিল মাত্র ১০ মিলিয়ন। অর্থাৎ পরবর্তী তিন দশকের প্রতি দশকে ১০ মিলিয়ন মানুষ বয়স্ক নাগরিকের কাতারে নাম লেখাবেন।

কৌশলপত্রে অর্থ বিভাগ প্রথান তিনটি লক্ষ্য সংবলিত সর্বজনীন পেনশন স্কিম প্রবর্তনের কথা বলা হয়।

প্রধান লক্ষ্যগুলো হলো—বৃদ্ধ বয়সে কর্মরত জনগোষ্ঠীর আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং এর মাধ্যমে তাদের জীবনযাত্রার মানকে দারিদ্র্যসীমার উপরে রাখা; নিম্ন আয়ের মানুষের সঞ্চয়ের প্রবণতা বৃদ্ধি করা এবং তাদের একটি টেকসই ও সুসংগঠিত সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় এনে তাদের কল্যাণ নিশ্চিত করা; এবং ক্ষুদ্র সঞ্চয়কে একীভূত করে সেটিকে বিনিয়োগে রূপান্তর করে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে অবদান রাখার মাধ্যমে মূলধন সঞ্চয়কে উৎসাহিত করা।

অর্থমন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, দেশের আপামর জনগণের জন্য বর্তমান সরকারের নির্বাচনী ইশতেহারে প্রধানমন্ত্রী একটি সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা প্রবর্তনের যে অঙ্গীকার করেছিলেন, তার আলোকে এ কৌশলপত্র প্রণয়ন করা হয়েছে।

আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতা, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট ও অর্থনৈতিক সক্ষমতার আলোকে প্রণীত কৌশলপত্রটির উপর প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন নির্দেশনা দিয়েছেন। সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা প্রবর্তনের জন্য জরুরি ভিত্তিতে একটি আইন প্রণয়নের উদ্যোগ নিতে অর্থ বিভাগকে নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

অর্থ বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, কৌশলপত্রে ২০২৩-২৪ অর্থবছর থেকে সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা চালুর করার কথা বলা হয়েছিল। তবে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে আগামী অর্থবছরেই এটি চালু করার জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিতে বলা হয়েছে।

অর্থ মন্ত্রণালয় চলতি অর্থবছরের মধ্যেই এ সংক্রান্ত আইন ও বিধিমালা প্রণয়নের কাজ সম্পন্ন করবে বলে জানান তারা।

ওই আইনের আওতায় অর্থ বিভাগের অধীনে একটি 'সর্বজনীন পেনশন অথরিটি' গঠন করা হবে। পুরোপুরি আইটিভিত্তিক এ প্রতিষ্ঠান সারা দেশের মানুষের পেনশন ব্যবস্থাপনা করবে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী কৌশলপত্রটি চূড়ান্ত হওয়ার পর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় আনুষ্ঠানিকভাবে এই পেনশন ব্যবস্থা ঘোষণা করবে।