জ্বালানির ভ্যাট-ট্যাক্স প্রত্যাহার না হলে অর্থনীতি ধসের শঙ্কা

  • স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

এফইআরবি’র নেতৃবৃন্দের সঙ্গে বৈঠকে সামিট গ্রুপের চেয়ারম্যান আব্দুল আজিজ খান

এফইআরবি’র নেতৃবৃন্দের সঙ্গে বৈঠকে সামিট গ্রুপের চেয়ারম্যান আব্দুল আজিজ খান

ভোজ্য তেলের মতো ডিজেল, ফার্নেস অয়েল এবং এলএনজি সব ধরণের ভ্যাট-ট্যাক্স প্রত্যাহার করে নেওয়া উচিত। ভোজ্য তেল আমাদের পেটকে এনার্জি দেয়, আর জ্বালানি পুরো অর্থনীতির সাইকেলকে সচল রাখে।

শুক্রবার (২৫ মার্চ) ফোরাম ফর এনার্জি রিপোর্টার্স বাংলাদেশ (এফইআরবি) নেতৃবৃন্দের সঙ্গে বৈঠকে সরকারের প্রতি এমন আহ্বান জানিয়েছেন সামিট গ্রুপের চেয়ারম্যান মো. আজিজ খান।

বিজ্ঞাপন

তিনি আরও বলেন, যে ফার্নেস অয়েল টন প্রতি ২৫০ ডলারে আমদানি করতাম,  এখন ৭০০ ডলার দিয়ে কিনতে হচ্ছে। আগেও ৩০ শতাংশ ডিউটি দিতে হতো, এখনও ৩০ শতাংশ দিতে হচ্ছে। ৭০০ ডলারের উপর ডিউটি দাঁড়াচ্ছে ২১০ ডলার, যা প্রায় আগের আমদানি মূল্যের সমান। জ্বালানির দাম বেড়ে গেলে তার চেইন ইফেক্ট অনেক দূর পর‌্যন্ত গড়ায়। তেলের দাম বেড়ে গেলে সেচের খরচ বাড়বে, সেচের খরচ বাড়লে চালের উৎপাদন ব্যহত হতে পারে, পরিবহন খরচ বেড়ে যাবে, এতে উৎপাদনের পাশাপাশি সরবরাহ চেইনও বিঘ্ন হতে হবে। মারাত্মক সংকট তৈরি হতে পারে। অন্তবর্তী কালের জন্য হলেও ডিউটি প্রত্যাহার করা জরুরি।

ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে তেল-গ্যাসের দাম অস্বাভাবিক অবস্থা বিরাজ করছে। আমরা পেটকে সচল রাখার জন্য যেভাবে ভ্যাট কমিয়েছি, সেভাবে অর্থনীতিকে সচল রাখার জন্য জ্বালানির উপর থেকে ভ্যাট প্রত্যাহার করা জরুরি। না হলে অর্থনীতির চাকা ভেঙে পড়তে পারে। সাধারণ জনগণের এই টাকা যোগান দেওয়া সম্ভব না।

বিজ্ঞাপন

এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, আমাদের ৪২ বিলিয়ন ডলারের বিশাল রিজার্ভ রয়েছে, প্রয়োজনে সেখান থেকে কিছু অর্থ দিয়ে সমন্বয় করা উচিত। মানুষের উপর এই বোঝা চাপানো মোটেই সঠিক হবে না। আমরা সরকারের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছি, আশা করছি দ্রুতই এসআরও জারি করে ভ্যাট-ট্যাক্স প্রত্যাহার করবে। জ্বালানির এই অস্বাভাবিক মূল্য বেশিদিন থাকবে না। দাম কমে এলে তখন না হয় আবার ভ্যাট-ট্যাক্স নেওয়া হবে।

তিনি বলেন, অবস্থাটা এমন দাঁড়িয়েছে একটি হচ্ছে দাম, আরেকটি হচ্ছে পণ্যটি প্রাপ্যতা। যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, জাপানের মতো রাষ্ট্র পণ্যটি কেনার জন্য মধ্যপ্রাচ্যের দিকে ছুটছে। তাদের কাছে দাম কোন বিষয় নয়, তাদের বক্তব্য হচ্ছে কত লাগে লাগুক, আমি দিতে রাজি আছি। কিন্তু আমাদের কাছে দামটিও বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। এতে হয়তো ব্যবসায়ীর খুব একটা যায় আসবে না, জনগণ এটি সামাল দিতে পারবে না। উন্নয়ন অব্যাহত রাখতে হলে সরকারকে এখনই সিদ্ধান্ত নেওয়ার অনুরোধ করেছি আমরা।

তিনি বলেন, ওপেক যুদ্ধের কারণে ১৯৭৩ সালে জ্বালানি সংকট দেখা দেয়। আর সেই সংকটকে কেন্দ্র করে সারাবিশ্বে অনেকগুলো কিলিং হয়, আমরাও আমাদের জাতির জনককে হারিয়েছি। কোন পণ্যের সংকট হলে সেটি দিয়েও অনেক কিছুকে প্রভাবিত করা যায়। ধরেন আমি ২ দিন ধরে পানির জন্য ছটফট করছি, আর দেখতে পাচ্ছি পানির একটি মাত্র বোতল আপনার নিয়ন্ত্রণে। তখনতো আমি আমার সবকিছুর বিনিময়ে পানি পেতে চাইব। 

বাংলাদেশি মালিকানাধীন একমাত্র বহুজাতিক কোম্পানির সফল উদ্যোক্তা মো. আজিজ খান। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আমরা স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধ করেছি। এখান তার কন্যার নেতৃত্বে অর্থনৈতিক স্বাধীনতার যুদ্ধে অবতীর্ণ। এতে বুদ্ধিজীবী, ব্যবসায়ী, রাজনীতিবীদ সকলেই শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সামিল হয়েছি। আমরা অনেক পেছন থেকে দৌঁড় শুরু করে ভারত, পাকিস্তান, নেপালকে মাথাপিছু আয়ে ছাড়িযে গেছি। তারা স্বাধীন হয়েছে ৭৫ বছর আগে, আমরা ৫০ বছরেই তাদের পেছনে ফেলেছি। দ্বিতীয় এই যুদ্ধে রক্ত না দেন অন্তত দেশত্মবোধ নিয়ে কাজ করতে হবে। আরেকটি বিষয় মনে রাখতে হবে জ্বালানির দাম কারো হাতে নেই। দাম নির্ভর করছে আন্তর্জাতিক বাজারের উপর।

বিইআরসিতে দাখিলকৃত বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের প্রস্তাবে বলা হয়েছে, গ্যাস সরবরাহে ঘাটতি থাকায় ফার্নেস অয়েল আমদানি বাড়াতে হয়েছে। বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহৃত ফার্নেস অয়েলে আগে শুল্ক ও কর অব্যাহতি ছিল। কিন্তু গত জুনে ফার্নেস অয়েলে শুল্ক-কর আরোপ করায় খরচ ৩৪ শতাংশ বেড়েছে। গত অর্থবছরে শুধু জ্বালানি বাবদ ব্যয় বেড়েছে ৮ হাজার ১৮০ কোটি টাকা। ২০২০-২১ অর্থবছরে প্রতি ইউনিট (কিলোওয়াট) বিদ্যুৎ উৎপাদনে ৩ টাকা ১৬ পয়সা জ্বালানি খরচ হয়। আগের অর্থবছর ২০১৯-২০ এই ব্যয় ছিল প্রতি ইউনিটে ২ টাকা ১৩ পয়সা।

আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বৃদ্ধির কারণে গত নভেম্বরে ডিজেল কেরোসিনের লিটারে ১৫ টাকা করে বাড়ানো হয়। বিদ্যুৎ বিভাগ বলছে জ্বালানির দাম বেড়ে গেছে দাম না বাড়ালে তাদের প্রায় ৩০ হাজার ২’শ কোটি টাকা ভর্তুকি দিতে হবে।

অন্যদিকে গ্যাসের উৎপাদন ঘাটতি থাকায় আন্তর্জাতিক বাজার থেকে উচ্চমূল্যে এলএনজি আমদানি করতে হচ্ছে। যার দাম এখন আকাশচুম্বি। এলএনজির প্রকৃত ক্রয়মূল্য পড়ছে (মার্চে) ৩৬.৬৯ টাকা অন্যান্য চার্জ দিয়ে ৫০.৩৮ টাকা পড়ছে। গ্যাস সেক্টর বলছে দাম না বাড়ালে তাদের প্রায় ২২ হাজার কোটি টাকা লোকসান হবে চলতি বছরে (২০২২ সালে)।