ঈদের আগেই গ্যাসের দাম বাড়াতে বিইআরসিকে অর্থ বিভাগের চাপ

  • সেরাজুল ইসলাম সিরাজ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

ঢাকাঃ ঈদের আগেই গ্যাসের দাম বাড়াতে অব্যাহত চাপ দিয়ে যাচ্ছে অর্থ বিভাগ। জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের তৎপরতা না থাকলে অর্থ বিভাগের চাপে বিব্রত অবস্থায় পড়েছে বিইআরসি (বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন)।

অর্থ বিভাগের চাপের বিষয়টি নিয়ে প্রকাশ্যে কথা না বললেও নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্র বার্তা২৪.কমকে নিশ্চিত করেছেন।

বিজ্ঞাপন

কনজুমারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) এর জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক শামসুল আলম বার্তা২৪.কমকে বলেছেন, “চাপ দিলেই মানবে কেনো বিইআরসি, অর্থ বিভাগ এই চাপ দিতে পারে না। অর্থ বিভাগের কথা মতো কাজ করলে তাদের স্বাধীনতা খর্ব হয়। এমনিতেই গণশুনানির উপর মানুষের আস্থার সংকট রয়েছে।”

বিইআরসির সূত্রগুলো দাবি করেছে, বিতরণ কোম্পানিগুলো প্রত্যেকটিই মুনাফায় রয়েছে। তাদের পুঞ্জিভূত মুনাফার পরিমাণ রয়েছে প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকার উপরে। ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্ববাজারে গ্যাসের অস্বাভাবিক দর বিরাজ করছে। এই দর যে কোন সময়ে কমে আসবে, অস্বাভাবিক দরকে ভিত্তি করে দাম না বাড়াতে ভোক্তাদের যৌক্তিক আবেদন রয়েছে। সে কারণে কিছুটা সময় নিয়ে পরিস্থিতি বুঝে সিদ্ধান্ত দিতে চায় বিইআরসি। কিন্তু অর্থ বিভাগ থেকে বারবার চাপ দেওয়া হচ্ছে। ঈদের আগেই যাতে আদেশ দেওয়া হয় তেমন কথাও বলা হচ্ছে।

বিজ্ঞাপন

বিইআরসি সূত্র দাবি করেছে, তারা দরের বিষয়টি চূড়ান্ত করে রাখতে চান, পরিস্থিতি বুঝে সিদ্ধান্ত নেবেন। বিইআরসি’র চেয়ারম্যান আবদুল জলিল গণশুনানিতে বলেছিলেন, “গ্যাস খাতের সব সংস্থার কাছে ১২ হাজার কোটি টাকা জমা আছে। সাধারণত মানুষ দুর্যোগে পড়লে শেষ সঞ্চয় ব্যবহার করে। বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতি বিবেচনা করতে হবে। আবার বিতরণ কোম্পানির মালিক সরকার, তারা কেনো প্রস্তাব এনেছে সরকারের সিদ্ধান্ত কিনা, তাদের সঙ্গে কথা বলে যৌক্তিকতা নিশ্চিত করেই কমিশন আদেশ দেবে।

অন্যদিকে, ক্যাবের জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্টা বলেছেন, গ্যাসের দাম বৃদ্ধির যৌক্তিকতা প্রমাণ করতে পারেনি পেট্রোবাংলা। আমরা হিসেব করে দেখিয়ে দিয়েছি গ্যাসের দাম ১৬ পয়সা কমানো যায়। করোনার কারণে সংকটকালীন সময় পাড় করছি, এমন সময়ে ভর্তুকি বাড়ানোর কথা, সেখানে আগের নির্ধারিত ভর্তুকির অর্থই দেওয়া হয়নি। প্রায় ৭ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দেওয়ার কথা, এখন পর্যন্ত দিয়েছে মাত্র ৩ হাজার কোটি টাকা। সরকার আর ভর্তুকি দেবে না এমন কথা বলেনি। তারপরও বিইআরসি কারিগরি কমিটি অন্যায়ভাবে সেটাকেই (৩ হাজার কোটি) ভিত্তি ধরে ক্যালকুলেট করে ২০ শতাংশ বৃদ্ধির সুপারিশ করেছে।

তিনি বলেন, সরকার ভাট-ট্যাক্সসহ নানাভাবে টাকা নিয়ে যাচ্ছে। ভোক্তাদের টাকায় গঠিত জিডিএফ (গ্যাস উন্নয়ন তহবিল) থেকেও টাকা নিয়ে গেছে। আবার কোন কোম্পানি কত ডিভিডেন্ট দিবে সেই সিদ্ধান্তও চাপিয়ে দিচ্ছে। তারা মুনাফা তুলে দিচ্ছে আর কোম্পানিগুলো প্রকল্প বাস্তবায়নের নামে গ্রাহকের কাছে টাকা চাইছে। মালিক হিসেবে সরকারের দায়িত্ব প্রকল্প বাস্তবায়নে অর্থায়ন করা। কোম্পানিগুলো প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য বিতরণ মার্জিন বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে।

গত ২১ মার্চ থেকে টানা ৪ দিনব্যাপী গ্যাসের দাম বৃদ্ধির গণশুনানিতে আকাশচুম্বী দামের বিষয়ে কোন যৌক্তিকতা প্রমাণ করতে পারেনি বিতরণ কোম্পানিগুলো। গণশুনানিতে অংশ নিয়ে চরম তোপের মুখে স্বীকার করেন দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব তাদের আগ্রহে হয়নি। পেট্রোবাংলার নির্দেশে ১১৭ শতাংশ দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব দিয়েছেন।

তিতাস ও বাখারাবাদ জানায়, অর্থমন্ত্রণালয়ের নির্ধারিত ডিভিডেন্ট দিতে গিয়ে তাদের সংকট তৈরি হচ্ছে। অন্যদিকে আগ্রিম ট্যাক্স দিতে হচ্ছে যা পরে সমন্বয় না করায় দ্বিতীয় দফায় দিতে হচ্ছে। আবার সময়ে সময়ে পেট্রোবাংলার অনেক আদেশ কোম্পানির স্বার্থে হচ্ছে না। তারপরও তারা মেনে নিতে বাধ্য হচ্ছেন। এতে সংকটে পড়তে হচ্ছে।

গ্যাসের দাম বৃদ্ধির যুক্তি হিসেবে পেট্রোবাংলা বলেছে আন্তর্জাতিক বাজারে এলএনজির দাম বেড়ে গেছে স্পর্ট মার্কেট থেকে চড়া দরে এলএনজি আমদানি করতে হচ্ছে। তাই দাম বাড়াতে হচ্ছে। পেট্রোবাংলার হিসেব মতে সেই স্পর্ট মার্কেটের গ্যাসের পরিমাণ মাত্র ৩ শতাংশ। সামান্য পরিমাণ গ্যাসের দাম বেড়েছে বলে ১১৭ শতাংশ দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব অযৌক্তিক বলে আখ্যায়িত করেছে ভোক্তারা।

ক্যাব জানিয়েছে, অস্বাভাবিক দর বিবেচনা করে দাম বাড়ালে তার প্রতিঘাত অনেক দূর পর‌্যন্ত গড়াবে। পরে দাম স্বাভাবিক হলে যদি দাম কমানো হয়, ভোক্তারা সেই সুবিধা পাবেন না। অতীতে দেখা গেছে জ্বালানি তেলের দাম কমেছে কিন্তু গাড়ি ভাড়া কমেনি। তাই আরও কিছুদিন অপেক্ষা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত হবে। কেউ সরকারকে বিব্রত করতে ভেতরে ভেতরে ষড়যন্ত্র করছে কিনা তাও ভেবে দেখার দাবি রাখে।