কৈলাশটিলায় নতুন গ্যাস স্তর
কৈলাশটিলা গ্যাস ফিল্ডে নতুন স্তর আবিষ্কার করেছে দেশীয় তেল গ্যাস অনুসন্ধান কোম্পানি বাপেক্স। পরিত্যক্ত ৭ নম্বর কূপের ওয়ার্কওভারের মাধ্যমে পাওয়া স্তরটি থেকে দৈনিক ১৫ মিলিয়ন গ্যাস উৎপাদনের আশা করা হচ্ছে।
গ্যাস সংকটে নাকাল অবস্থায় এই খবরটি খুবই স্বস্তিদায়ক মনে করছে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ। কূপটির পরীক্ষামূলক উৎপাদনকালে ২৭০০ পিএসআই (প্রতি বর্গ ইঞ্চি) পাওয়া গেছে। যা খুবই আশাব্যঞ্জক বলে মনে করছে সংশ্লিষ্টরা।
কৈলাশটিলা গ্যাস ফিল্ডের মালিকানায় সিলেট গ্যাস ফিল্ড কোম্পানি (এসজিএফসিএল)। কোম্পানিটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মিজানুর রহমান বার্তা২৪.কম-কে বলেছেন, কৈলাশটিলা ৭ নম্বর কূপটির ওয়ার্কওভার সম্পন্ন করা হয়েছে, এখন টেস্টিং চলছে, ভালো কিছুর সম্ভাবনা দেখছি। এখনই এর বেশি মন্তব্য করতে পারছি না।
তবে বাপেক্স, পেট্রোবাংলা, জ্বালানি ও খনিজ বিভাগের একাধিক কর্মকর্তা নতুন স্তর আবিষ্কারের তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তারা বলেছেন, দৈনিক ১৫ থেকে ১৭ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস পাওয়ার আশা করা হচ্ছে। গত দুই দিন ধরে চলা পরীক্ষামূলক উৎপাদন তাই বলছে। পাশাপাশি কনডেনসেটের পরিমাণও বাণিজ্যিকভাবে খুবই ইতিবাচক। প্রতি মিলিয়ন ঘনফুটে ১১ ব্যারেল কনডেনসেট পাওয়া যাবে বলে ইঙ্গিত পাওয়া গেছে।
সবচেয়ে আনন্দের খবরটি হচ্ছে কূপটিতে পাইপলাইন সহ সব অবকাঠামানো বিদ্যমান। চাইলে আগামী সপ্তাহ থেকেই বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন করা সম্ভব। এসএফসিএল এর এমডি মিজানুর রহমান বলেছেন, সফল হলে ঈদের পরপরই উৎপাদন করার প্রস্তুতি রয়েছে।
তিনি জানান, কৈলাশটিলা ৭ নম্বর কূপটি ২০১৭ বন্ধ হয়ে যায়। বন্ধ হয়ে যাওয়ার পূর্বে কূপটির ৩০১৫ মিটার গভীর থেকে গ্যাস উত্তোলন করা হয়েছিল। সম্ভাবনাময় স্তরটির অবস্থান তার কিছুটা কম গভীরতায় দেখা যাচ্ছে। ফিল্ডটিতে মোট ৭টি কূপ রয়েছে। এরমধ্যে বর্তমানে মাত্র ২টি কূপ দিয়ে ২৯ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উত্তোলন করা হচ্ছে।
সম্প্র্রতি সিলেট কূপ ৮ ওয়ার্কওভারের মাধ্যমে ৫ মিলিয়ন ঘনফুট, পরিত্যক্ত সালদা ২ কূপ নতুন স্তর আবিষ্কার করে বাপেক্স। আগে কূপটির ২৪৩৫ মিটার মাটির নিচ থেকে গ্যাস উত্তোলন করা হতো, সেই স্তরের গ্যাস শেষ হলে বন্ধ হয়ে যায় কূপটি। বাপেক্স ওয়াকওভারের মাধ্যমে আরও ১২০ মিটার খনন করে নতুন স্তরটি আবিষ্কার করেছে। নতুন স্তরটি ২৫৩৫ মিটার থেকে ২৫৪৫ মিটার পর্যন্ত পুরু।
গ্যাস সংকটের কারণে ভীষণ খারাপ সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। সিএনজি ফিলিং স্টেশনে ৬ ঘণ্টা গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করা হয়েছে। দেশীয় গ্যাস ফিল্ডগুলোর উৎপাদন হ্রাস পাচ্ছে। অন্যদিকে ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে গ্যাসের দাম লাফিয়ে বাড়ছে। ৫ ডলারে বিক্রি হওয়া এলএনজি (এমএমবিটিইউ) এখন ৩৯ ডলারে কিনতে হচ্ছে। এ কারণে সরকার গ্যাসের দাম ১১৭ শতাংশ বাড়ানোর আবেদন করেছে বিইআরসিতে।
এক সময় বাংলাদেশ সবগুলো গ্যাস ফিল্ড থেকে ২৭০০ এমএমসিএফডি পর্যন্ত উৎপাদন করেছে ২৬ এপ্রিল উৎপাদন করেছে মাত্র ২৩৫৬ এমএমসিএফডি। ২০২৩ সাল নাগাদ গ্যাস উৎপাদনে বড় ধরনের ধস নামতে পারে বলে শঙ্কা করা হচ্ছে।
বাংলাদেশে ২৮টি গ্যাস ফিল্ড আবিস্কৃত হয়েছে। এসব ফিল্ডে প্রমাণিত মজুদের পরিমাণ ২১ দশমিক ৪ টিসিএফ, আরও ৬ টিসিএফ রয়েছে সম্ভাব্য মজুদ ধারণা করা হয়। এরমধ্যে প্রায় সাড়ে ১৮ টিসিএফ উত্তোলন করা হয়েছে। সে হিসেবে প্রমাণিত মজুদ অবশিষ্ট রয়েছে মাত্র ৩ টিসিএফ, আর সম্ভাব্য মজুদ রয়েছে আরও ৭ টিএসএফ’র মতো। প্রতি বছর প্রায় ১ টিসিএফ’র মতো গ্যাস উত্তোলিত হচ্ছে। অন্যদিকে দ্রুত শিল্পায়ন ও ঘরে ঘরে বিদ্যুতের কারণে গ্যাসের চাহিদাও প্রতি বছর বেড়ে যাচ্ছে।