রোববার আসছে গ্যাসের দাম বৃদ্ধির ঘোষণা
সব আবেদন ও সমালোচনা উপেক্ষা করে গ্যাসের দাম বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। রোববার (৫ জুন) বেলা ৩টায় আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করা হবে বলে বিইআরসি জানিয়েছে।
সূত্র জানিয়েছে, গড়ে প্রায় ১৮ শতাংশের মতো দাম বৃদ্ধির তোড়জোড় চলছে। আবাসিকে প্রি-পেইড মিটার ব্যবহারকারিদের দাম ৪৫ শতাংশের মতো বাড়তে পারে। নন মিটার গ্রাহকদের ৯৭৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১০৮০ টাকার মতো হতে পারে।
গ্যাসের দাম বৃদ্ধির যুক্তি হিসেবে পেট্রোবাংলা বলেছে আন্তর্জাতিক বাজারে এলএনজির দাম বেড়ে গেছে। যে কারণে স্পর্ট মার্কেট থেকে চড়া দরে এলএনজি আমদানি করতে হচ্ছে। এ জন্য ১১৭ শতাংশ দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব দেয় পেট্রোবাংলা। তবে বিইআরসি কারিগরি মূল্যায়ন কমিটি ২০ শতাংশ দাম বৃদ্ধির পক্ষে মতামত দেয় গণশুনানিতে।
সবশেষ গ্যাসের দাম বৃদ্ধির আদেশে (২০১৯ সালে) পাইকারি দর প্রতি ঘনমিটার ১২.৬০ টাকা করা হয়। ভর্তুকি দিয়ে ৯.৭০ টাকায় বিক্রির নির্দেশ দেয় বিইআরসি। মার্চে টানা ৪ দিনব্যাপী গ্যাসের দামবৃদ্ধির উপর গণশুনানি অনুষ্ঠিত হয়। সেই রিপোর্ট চূড়ান্ত পর্যাায়ে, যে কোন দিন ঘোষণা আসতে পারে। অন্যদিকে বুধবার (১৮ মে) বিদ্যুতের পাইকারি মুল্য বৃদ্ধির উপর গণশুনানি অনুষ্ঠিত হবে। পাইকারি পরেই স্বাভাবিকভাবে খুচরা দামবৃদ্ধির প্রসঙ্গ সামনে চলে আসবে।
কনজুমারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) এর জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্ট অধ্যাপক শামসুল আলম বার্তা২৪.কমকে বলেছেন, বিতরণ কোম্পানিগুলো প্রত্যেকটিই মুনাফায় রয়েছে। বর্তমান অবস্থায় জনগণের বাড়তি দাম দেওয়ার সামর্থ নেই। আর কোম্পানিগুলো দাম বৃদ্ধির যৌক্তিকতা প্রমাণে ব্যর্থ হয়েছে। আমরা হিসেব করে দেখিয়ে দিয়েছি গ্যাসের দাম ১৬ পয়সা কমানো যায়। করোনার কারণে সংকটকালীন সময় পার করছি, এমন সময়ে ভর্তুকি বাড়ানোর কথা, সেখানে আগের নির্ধারিত ভর্তুকির অর্থই দেওয়া হয় নি।প্রায় ৭ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দেওয়ার কথা, এখন পর্যন্ত দিয়েছে মাত্র ৩ হাজার কোটি টাকা। সরকার আর ভর্তুকি দেবে না এমন কথা বলেনি। তারপরও বিইআরসি কারিগরি কমিটি অন্যায়ভাবে সেটাকেই (৩ হাজার কোটি) ভিত্তি ধরে ক্যালকুলেট করে ২০ শতাংশ বৃদ্ধি সুপারিশ করেছে।
তিনি বলেন, সরকার ভাট-ট্যাক্সসহ নানাভাবে টাকা নিয়ে যাচ্ছে। কোন কোম্পানি কত ডিভিডেন্ট দিবে সেই সিদ্ধান্তও চাপিয়ে দিচ্ছে। তারা মুনাফা তুলে দিচ্ছে আর কোম্পানিগুলো প্রকল্প বাস্তবায়নের নামে গ্রাহকের কাছে টাকা চাইছে। মালিক হিসেবে সরকারের দায়িত্ব প্রকল্প বাস্তবায়নে অর্থায়ন করা। কোম্পানিগুলো প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য বিতরণ মার্জিন বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে। এই প্রস্তাব গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।
কোম্পানিগুলো গ্যাসের দাম ১১৭ শতাংশ বৃদ্ধির পাশাপাশি বিতরণ মার্জিন বৃদ্ধির আবেদন করে। গণশুনানিতে বিইআরসি কারিগরি কমিটির মতামতে বলেছে ইউনিট (ঘনমিটার) প্রতি বিদ্যমান ২৫ পয়সা চার্জ কোন কোম্পানির প্রয়োজনীয়তা নেই। ৬ বিতরণ কোম্পানির মধ্যে কর্নফুলীর কমানো আর অন্যদের বিতরণ মার্জিন বাতিলের সুপারিশ করে।
বিইআরসির চেয়ারম্যান আবদুল জলিল গণশুনানি বলেছিলেন, গ্যাস খাতের সব সংস্থার কাছে ১২ হাজার কোটি টাকা জমা আছে। সাধারণত মানুষ দুর্যোগে পড়লে শেষ সঞ্চয় ব্যবহার করে। বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতি বিবেচনা করতে হবে। আবার বিতরণ কোম্পানির মালিক সরকার, তারা কেনো প্রস্তাব এনেছে সরকারের সিদ্ধান্ত কিনা, তাদের সঙ্গে কথা বলে যৌক্তিকতা নিশ্চিত করেই কমিশন আদেশ দেবে। হুমজিক্যাল কোন সিদ্ধান্ত দেবে না কমিশন।