বন্যায় ভেসে গেছে ৬৯৬১০ মৎস্য খামার, ক্ষতি ১৬০ কোটির বেশি



তরিকুল ইসলাম সুমন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

চলমান বন্যায় ৫ বিভাগের ১৫ টি জেলার ৯৩টি উপজেলার ৬৭ হাজার ৬শত ১০টি মৎস্য খামারে মাছ ভেসে গেছে। যার পরিমাণ ১৬ হাজার ৫৮২ মেট্রিক টন। পোনা বের হয়ে গেছে ৫৭ হাজার ৫৭৯ লাখ বা ৫৭৫ কোটি ৭৯ লাখ পোনা মাছ। মাছ ও মাছের পোনা মিলে ক্ষতি হয়েছে ১৬০ কোটি ৪২ লাখ টাকা। এক্ষেত্রে ক্ষতিগ্রস্ত মাছের খামারিদের বাণিজ্যিক মূল্য ১২৯ কোটি ৪১ লাখ টাকা। মাছের পোনার বাণিজ্যিক মূল্য ২১ কোটি ৭ লাখ টাকা। এছাড়াও অবকাঠামোগত ক্ষতি হয়েছে ৯ কোটি ৯১ লাখ টাকা।

মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক খ: মাহবুবুল হক বার্তা২৪.কমকে বলেন, গতকাল পর্যন্ত চলতি বন্যায় দেশে ৫টি বিভাগের সিলেট, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, রংপুর, নীলফামারী, লালমনিহাট, নেত্রকোনা, শেরপুর, জামালপুর, সিরাজগঞ্জ, বগুড়া, টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ ,কিশোরগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, মানিকগঞ্জ, ফেনি জেলা ও চট্টগ্রাম জেলা বন্যার পানিতে মাছের খামার ভেসে গেছে। এর মধ্যে ১৫ জেলায় বন্যার পানিতে ১৬০ কোটি ৪১ লাখ ৯১ হাজার টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, প্রতিদিনই ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বাড়ছে। প্রকৃত ক্ষতির পরিমাণ জানতে আরো সময় লাগবে। তবে ক্ষতিগ্রস্ত খামারিদের ক্ষতিপূরণের বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। সরকার এবিষয়ে সিদ্ধান্ত নিলে আমরা প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেব।

মৎস্য অধিদপ্তরের প্রাথমিক হিসাব অনুযায়ী: 

সুনামগঞ্জে ৮৬৬৫ টি খামার, চাষী ৬৪৮৪ জন, মাছ ২৯৮৫ মে. টন, পোনা ৪ কোটি ৬৫ লাখ, অর্থিক ক্ষতি ৫২ কোটি ৯৩ লাখ টাকা। হবিগঞ্জে ১৩৪৮ খামার, ১০৭৮ খামারির ক্ষতি হয়েছে ১৭ কোটি ১ লাখ টাকা।

সিলেটে ২৫ হজার ২৪০ খামারির ৩০ হাজার ২৫৫ খামার ভেসে গেছে। এতে ক্ষতি হয়েছে ৭০ কোটি ৮৫ লাখ টাকা। মৌলভীবাজার এলাকার ২১০ খামারিরা ২৭০ টি খামার ভেসে গেছে। এতে ক্ষতি হয়েছে ১৬ কোটি ১ লাখ টাকা।

বিভাগীয় শহর রংপুর, গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, নীলফামারী, দিনাজপুর, ঠাকুর গাঁও ও পঞ্চগড়ের ৮০৫ জন খামারির ১০৪২ টি খামার ভেসে গেছে। এতে ক্ষতি হয়েছে ১৯ কোটি ৫৯ হাজার টাকা। সিরাজগঞ্জের ১৯ জন খামারির ২৮ টি খামার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এত ক্ষতি হয়েছে ২০ লাখ ৯১ হাজার টাকা।

কিশোরগঞ্জে ৩২৫ জন খামারির ৩২৫ টি খামার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এক্ষেত্রে ক্ষতি হয়েছে ১৪ কোটি ৫ লাখ ৮০ হাজার টাকা। ব্রাহ্মণবাড়ীয়ার ১৫৫ খামারির ২২৯ টি খামার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে ক্ষতি হয়েছে ১১ কোটি ৯০ রাখ ৫০ হাজার টাকা।

ময়মনসিংহের ২১৫ জন খামারির ৩৫৫ টি খামার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এক্ষেত্রে ক্ষতি হয়েছে ১১ কোটি ৮০ লাখ টাকা। নেত্রকোনার ১৫ হাজার ৩৪৬ জন খামারির ২৫ হাজার ৯২৬ টি খামার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এক্ষেত্রে আর্থিক ক্ষতি হয়েছে ৮৫ কোটি ২০ লাখ টাকা।

জামালপুরের ১৪০ খামারির ১৩৬ টি খামার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে ক্ষতি হয়েছে ২১ লাখ ১০ হাজার টাকা। শেরপুরের ৭৪০ জন খামারির ১০৩১ টি খামার তলিয়ে গেছে। এতে ক্ষতি হয়েছে ৩৩ কোটি ৩ লাখ টাকা।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলার সীমান্তবর্তী মোগড়া ইউনিয়নের ছয়ঘরিয়া গ্রামের মাছ চাষি জয়নাল আবেদীন। তার ৭টি পুকুরের মধ্যে ৫টিই তলিয়ে গেছে বন্যার পানিতে। এসব পুকুরে ২০ লাখ টাকা পুঁজি খাটান তিনি। পোনা ছাড়াও বড় মাছও মজুদ ছিল পুকুরগুলোতে। আখাউড়ায় ভেসে গেছে ১০৯ পুকুরের মাছ, ক্ষতি ১ কোটি ২৩ লাখ টাকা।

মৎস্য খাদ্য ডিলার বাছির ট্রেডার্স এর স্বত্ত্বাধিকারী মো. বাছির মিয়া বলেন, বাণিজ্যিকভাবে চাষকৃত মৎস্য খামারে মাছের খাদ্য সরবরাহ করতে আমরা বিভিন্ন কোম্পানি থেকে কিনে মাছ চাষিদের কাছে তা বাকিতে বিক্রি করি। মাছ বড় করে বাজারজাত করার পর ওই মাছ বিক্রির টাকা দিয়ে আমাদের পাওনা টাকা পরিশোধ করেন মাছ চাষিরা। কিন্তু এবার আকস্মিক বন্যায় মাছ চাষিরাই শুধু ক্ষতিগ্রস্তই হননি, আমরা মাছের খাদ্য সরবরাহকারীরাও একইসঙ্গে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি।

   

এক বছরে বৈদেশিক ঋণ বেড়েছে ৩৯ হাজার কোটি টাকা



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট বার্তা২৪.কম ঢাকা
সংগৃহীত প্রতীকী ছবি।

সংগৃহীত প্রতীকী ছবি।

  • Font increase
  • Font Decrease

দেশে বৈদেশিক ঋণ গত এক বছরে বেড়েছে ৩৪৯ কোটি ডলার। টাকার অঙ্কে যা ৩৮ হাজার ৯৪০ কোটি টাকা। গত বছরের (২০২২) জুনে মোট বৈদেশিক ঋণের স্থিতি ছিল ৯ হাজার ৫৪৫ কোটি ডলার। আর চলতি বছরের জুনে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯ হাজার ৮৯৪ কোটি ডলার।

এই সময়ে ব্যাপকভাবে বৈদেশিক ঋণ পরিশোধের পরও পরিমাণ বেড়ে চলেছে। আলোচ্য সময়ে দীর্ঘমেয়াদি ঋণ বেড়েছে, কমেছে স্বল্পমেয়াদি ঋণ।

রবিবার (৩ ডিসেম্বর) প্রকাশিত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক গবেষণা প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। বৈদেশিক ঋণ ও বিনিয়োগে গত জুন পর্যন্ত তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে।

প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০২২ সালের জুনের তুলনায় চলতি বছরের জুনে দেশের বৈদেশিক ঋণের স্থিতি বেড়েছে। দেশে আসা সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগ বা এফডিআই কমেছে। আর বাংলাদেশি উদ্যোক্তাদের বিদেশে বিনিয়োগের স্থিতিও সামান্য কমেছে।

২০২২ সালের জুনে দীর্ঘমেয়াদি ঋণ ছিল ৭ হাজার ৪৮০ কোটি ডলার। আর চলতি বছরের জুনে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮ হাজার ২৯০ কোটি ডলার। গত বছরের জুনে স্বল্পমেয়াদি ঋণ ছিল ২ হাজার ৬৫ কোটি ডলার। আর চলতি বছরের জুনে তা কমে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৬০৩ কোটি ডলার। সাম্প্রতিক সময়ে এ ঋণ আরও কমেছে।

সূত্র জানায়, গত দেড় বছর ধরে দেশে প্রকট ডলার সংকট চলছে। স্বল্পমেয়াদি বৈদেশিক ঋণ পরিশোধের কারণে এ সংকট আরও বেড়েছে। কিন্তু সার্বিকভাবে স্বল্পমেয়াদি ঋণ কমলেও এখন বেড়ে গেছে দীর্ঘমেয়াদি ঋণ। ফলে সার্বিকভাবে মোট বৈদেশিক ঋণের স্থিতি বেড়ে গেছে, যা পরিশোধে ডলারের ওপর আরও চাপ সৃষ্টি করতে পারে।

তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক মনে করছে, বাজারে ডলারের প্রবাহ বেড়েছে। আগে যেসব ঘাটতি ছিল তা এখন কমে এসেছে। দীর্ঘমেয়াদি ঋণ পরিশোধে ডলারের ওপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি করবে না।

প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, বৈদেশিক ঋণ বাড়লেও প্রবৃদ্ধির হার কমেছে। ২০২১ সালের জুনে মোট ঋণ বেড়েছিল ১৯ শতাংশের বেশি। গত বছরের জুনে তা কমে ঋণ বৃদ্ধির হার দাঁড়ায় ১৭ শতাংশে। চলতি বছরের জুনে তা আরও কমে ঋণ প্রবৃদ্ধির হার দাঁড়িয়েছে ৩ দশমিক ৭০ শতাংশ।

গত বছরের জুনে তুলনায় চলতি বছরের জুনে স্বল্পমেয়াদি ঋণ কমেছে ২২ দশমিক ৩০ শতাংশ এবং দীর্ঘমেয়াদি ঋণ কমেছে প্রায় ১০ দশমিক ৮০ শতাংশ। গত বছরের (২০২২) জুনে স্বল্পমেয়াদি ঋণ বেড়েছিল ৪৭ শতাংশ এবং দীর্ঘমেয়াদি ঋণ বেড়েছিল ১১ শতাংশ।

প্রতিবেদনের তথ্যে আরও দেখা যায়, ২০২১-২২ অর্থবছরে দেশে এফডিআই এসেছিল ৩৪৪ কোটি ডলার। গত অর্থবছরে এসেছে ৩২৫ কোটি ডলার। আলোচ্য সময়ে এফডিআই কমেছে ৫ দশমিক ৫২ শতাংশ। মোট এফডিআইয়ের মধ্যে মাত্র ৮০ কোটি ডলার এসেছে বিদেশ থেকে পুঁজি হিসাবে। বাকি অর্থ দেশে কার্যরত বিদেশি কোম্পানিগুলোর মুনাফা থেকে পুনরায় বিনিয়োগ ও এক কোম্পানি থেকে অন্য কোম্পানির ঋণ।

দেশে ক্রিয়াশীল বিদেশি কোম্পানিগুলোর অর্জিত মুনাফা থেকে পুনরায় বিনিয়োগ হিসাবে এফডিআই এসেছে ২৩৭ কোটি ডলার। মাত্র ৮ কোটি ডলার এসেছে এক কোম্পানি থেকে অন্য কোম্পানির ঋণ হিসাবে।

গত অর্থবছরে সবচেয়ে বেশি নিট পুঁজি এসেছে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ২৬ কোটি ডলার। সব মিলে এসেছে ২৯ কোটি ডলার। ২০২১-২২ অর্থবছরে যুক্তরাষ্ট্র বিনিয়োগ এসেছিল ৬২ কোটি ডলার। আলোচ্য এক বছরের ব্যবধানে দেশটি থেকে বিনিয়োগ কমেছে।

বিদেশে বাংলাদেশি উদ্যোক্তাদের বিনিয়োগের স্থিতি গত বছরের জুনে ছিল ৪০ কোটি ডলার, চলতি বছরের জুনে তা সামান্য কমে ৩৮ কোটি ডলারে দাঁড়িয়েছে। আলোচ্য সময়ে বাংলাদেশি উদ্যোক্তাদের বিদেশে বিনিয়োগের স্থিতি কমেছে ২ কোটি ডলার।

;

শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকগুলোর আমানত বেড়েছে



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা ২৪.কম, ঢাকা 
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

চলতি বছরের সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে দেশের শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকগুলোর আমানত ও ঋণ প্রদানের পরিমাণ বেড়েছে। আগের প্রান্তিকের তুলনায় যার পরিমাণ ৩ হাজার ৯৮৯ কোটি টাকা বা দশমিক ৯৩ শতাংশ বেশি।

সম্প্রতি প্রকাশিত বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য মতে, সেপ্টেম্বর শেষে এসব ব্যাংকে আমানত দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ৩১ হাজার ৯৮৯ কোটি টাকায়। আগের প্রান্তিকের চেয়ে যার পরিমাণ ৩ হাজার ৯৮৯ কোটি টাকা বা দশমিক ৯৩ শতাংশ বেশি। আর ২০২২ সালের একই সময়ের চেয়ে ১০ হাজার ৬১৪ কোটি টাকার আমানত বেড়েছে।

এর মধ্যে সম্পূর্ণ ইসলামী ১০টি ব্যাংকের আমানত দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ৯৫ হাজার ১৪২ কোটি টাকা। প্রথাগত ব্যাংকের ইসলামিক ব্যাংকিং শাখার আমানত দাঁড়িয়েছে ১৭ হাজার ৪৬৪ কোটি টাকা। আর ইসলামিক ব্যাংকিং উইন্ডোর আমানত দাঁড়িয়েছে ১৯ হাজার ৩৮৩ কোটি টাকা।

এছাড়া ঋণ প্রদান বেড়েছে ৭ হাজার ৫৯৫ কোটি টাকা। সেপ্টেম্বর শেষে ইসলামী ধারার ব্যাংকগুলোর ঋণ প্রদান বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ২৯ হাজার ৭১ কোটি টাকা। আগের বছরের একই প্রান্তিকের তুলনায় ৩৭ হাজার ৭৬৯ কোটি টাকা বেড়েছে ঋণ প্রদান।

এদিকে তিন মাসে প্রথাগত ব্যাংকের ইসলামিক ব্যাংকিংসহ ইসলামী ধারার শাখা বেড়েছে মাত্র ৭টি। আগের প্রান্তিকে ১৬৯৪ টি শাখা থেকে বেড়ে সেপ্টেম্বর শেষে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৭০১ টি। এক বছরের ব্যবধানে শাখা বেড়েছে ৭৩ টি। এসব শাখায় সর্বমোট ৫০ হাজার ১৪৬ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী চাকুরিরত রয়েছেন। যা আগের প্রান্তিকের তুলনায় বেড়েছে মাত্র ১২৭ জন।

সর্বশেষ তথ্যমতে, দেশে এখন পর্যন্ত ১০টি ইসলামিক ব্যাংকের ১ হাজার ৬৭১টি শাখা রয়েছে। এছাড়া প্রথাগত ব্যাংকের ইসলামিক ব্যাংকিং শাখা রয়েছে ১৫টি ব্যাংকের ৩০টি। পাশাপাশি ১৬ টি সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকের ইসলামিক উইন্ডো রয়েছে ৬১৫টি।

আমানত-ঋণে প্রবৃদ্ধি হলেও ইসলামী ধারার ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে আমদানি ও রপ্তানি বাণিজ্য কমেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, চলতি বছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে রপ্তানি হয়েছে ২৯ হাজার ৮৩৫ কোটি টাকা। এর আগের প্রান্তিকে রপ্তানি হয়েছিলো ৩৭ হাজার ৫৭৫ কোটি টাকা। অর্থাৎ তিন মাসে এসব ব্যাংকের রপ্তানি আয় কমেছে ৭ হাজার ৭৪১ কোটি টাকা বা ২০ দশমিক ৬০ শতাংশ। আর ২০২২ সালের একই সময়ের তুলনায় রপ্তানি কমেছে ৩৩ দশমিক ৬৬ শতাংশ। টাকার অঙ্কে যার পরিমাণ ১৫ হাজারের ১৩৫ কোটি টাকা।

রপ্তানির পাশাপাশি ইসলামী ধারার ব্যাংকগুলোতে আমদানি বাণিজ্যও কম হয়েছে। সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে আমদানি হয়েছে ৩৯ হাজার ১৯৩ কোটি টাকার। আগের প্রান্তিকে আমদানি হয় ৪৭ হাজার ৫৮৫ কোটি টাকা। অর্থাৎ আলোচ্য তিন মাসে এসব ব্যাংকের মাধ্যমে আমদানি কমেছে ৩ হাজার ৮৯২ কোটি টাকা বা ১৭ দশমিক ৬৪ শতাংশ।

;

আবাসিকের গ্যাস বিল বাড়াতে বিইআরসির তোড়জোড়!



স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
আবাসিকের গ্যাস বিল বাড়াতে বিইআরসির তোড়জোড়!

আবাসিকের গ্যাস বিল বাড়াতে বিইআরসির তোড়জোড়!

  • Font increase
  • Font Decrease

মিটারবিহীন আবাসিক গ্রাহকের গ্যাস বিল বাড়ানোর তোড়জোড় শুরু করেছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। তিতাসের গ্যাস বিল বাড়ানোর প্রস্তাব শিগগিরিই কমিশনের সভায় তোলা হবে বলে জানিয়েছেন বিইআরসি চেয়ারম্যান নুরুল আমিন।

তিতাস গ্যাস বিদ্যমান দর এক চুলা ৫৫ ঘনমিটার (৯৯০ টাকা) বাড়িয়ে ৭৬.৬৫ ঘনমিটার (১৩৭৯.৭০ টাকা) করা, দুই চুলা ৬০ ঘনমিটার (১০৮০ টাকা) থেকে বাড়িয়ে ৮৮.৪৪ ঘনমিটার (১৫৯১.৯২) করার আবেদন করেছে বিইআরসির কাছে। আবেদনটি চলতি বছরে মে মাসে জমা হয় বিইআরসিতে। ব্যাপক বিতর্কের পর বিষয়টি অনেকটা ধামাচাপা পড়ে যায়।

তবে সম্প্রতি বেশ গোপনে এ বিষয়ে আবার তৎপরতার শুরুর কথা জানা গেছে। বিইআরসির চেয়ারম্যানের কাছে জানতে চাইলে বলেন, আগে শুধু তিতাস গ্যাসের প্রস্তাব এসেছিল, যে কারণে পেট্রোবাংলার মতামত চাওয়া হয়। সম্প্রতি পেট্রোবাংলা মতামত দিয়েছে, এখন কমিশনের সভায় উঠবে আবেদনটি, সেখানে সিদ্ধান্ত হবে কি করা হবে না হবে।

গণশুনানি কোনো সম্ভাবনা আছে কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে বিইআরসির সদস্য (গ্যাস) ড. মোঃ হেলাল উদ্দিন বলেন, কমিশনের সভার আগে কিছু বলা সম্ভব হচ্ছে না। বিল বাড়ানোর কি যুক্তি দিয়েছে সে বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি তিনি।

বিইআরসি সর্বশেষ গ্যাসের দাম বৃদ্ধির ঘোষণা দেয় গত বছরের ৫ জুন। বিইআরসি ও ঘোষণার আগে মার্চে গণশুনানি গ্রহণ করে। তখন বিতরণ কোম্পানিগুলোর প্রিপেইড মিটারের পরিসংখ্যানে দেখা যায় গড়ে এক চুলা ৪০ এবং দুই চুলা সর্বোচ্চ ৫০ ঘনমিটার ব্যবহার করছে। প্রিপেইড গ্রাহকের ব্যবহারের পরিসংখ্যানের উপর ভিত্তি করে এক চুলা ৭৩.৪১ ঘনমিটার ও দুই চুলা ৭৭.৪১ ঘনমিটার থেকে কমিয়ে যথাক্রমে ৫৫ ও ৬০ ঘনমিটার করা হয়।

বিইআরসির তৎকালীন (২০২২ সাল) সদস্য (গ্যাস) মকবুল ই-এলাহী চৌধুরী বার্তা২৪কমকে বলেছেন, আমারতো মনে হয় ৫০ ঘনমিটারের নিচে করা উচিত ছিল। প্রথমবার জন্য ৫৫ ও ৬০ ঘনমিটার করা হয়েছিল। তখন শর্ত দেওয়া হয়, প্রিপেইড মিটার বসানো এবং পরবর্তীতে কমিয়ে আনার।

আপনাদের সময়ে আদেশটি হয়েছে। কীসের ভিত্তিতে এক ও দুই চলা যথাক্রমে ৫৫ ও ৬০ ঘনমিটার করা হয়েছে। এমন প্রশ্নের জবাবে মকবুল ই-এলাহী চৌধুরী বলেন, তাদের যে সাড়ে ৩ লাখ প্রিপেইড মিটার ছিল সেখানে দেখা গেছে গড়ে ৪৫ এর নিচে ব্যবহৃত হয়েছে। প্রিপেইড মিটারের বিলের তথ্য দেখলেই বুঝতে পারা যায়। বিষয়টির জন্য রকেট সায়েন্স জানা দরকার হয় না।

জুনের ওই আদেশে আবাসিকে প্রি-পেইড মিটার ব্যবহারকারী গ্রাহকদের বর্তমান দর ১২.৬০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৮ টাকা করা হয়। সে হিসেবে নন মিটার একচুলার ৯৫০ টাকা থেকে বৃদ্ধি করে ৯৯০ টাকা, দুই চুলা ৯৭৫ টাকা থেকে বৃদ্ধি করে ১০৮০টাকা করা হয়।

তিতাস দাবি করেছেন, নির্ধারিত পরিমাণের (৫৫ ও ৬০ ঘনমিটার) চেয়ে মিটারবিহীন গ্রাহকগণ বেশী গ্যাস ব্যবহার করে। ফলে সিস্টেম লস বৃদ্ধি পেয়েছে। এক চুলা ৭৬.৬৫ ঘনমিটার ও দুই চুলা ৮৮.৪৪ ঘনমিটার করার আবেদন করা হয়েছে। বিইআরসি আগে যে আদেশ দিয়েছে তা বাস্তব সম্মত ছিল না।

গ্যাসের প্রিপেইড মিটার স্থাপন করা গেলে এই সংকট থাকে না। প্রথম দিকে গ্যাসের প্রি-পেইড মিটার স্থাপনে বেশ তোড়জোড় ছিল। এখন যতটা পারা যায় বিলম্বিত করার কৌশলী অবস্থান নিয়েছে বিতরণ কোম্পানিগুলো। প্রথম দিকে তারা মনে করেছিলেন আবাসিকে অনেক বেশি গ্যাস পুড়ছে, মিটার স্থাপন করলে তাদের রাজস্ব বেড়ে যাবে। কিন্তু লালমাটিয়া (২০১৬ সালে) এলাকায় প্রথম যখন মিটার বসানো হলো তার রেজাল্ট এলো উল্টো। দেখা গেল প্রি-পেইড মিটার ব্যবহারকারীদের বিল আসছে দেড়’শ থেকে আড়াই’শ টাকা। যাদের মিটার নেই তাদের কাছ থেকে তখন বিল আদায় করা হচ্ছিল দুই চুলা সাড়ে ৪’শ টাকা।

বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ ২০১৬ সালে জাতীয় সংসদে প্রশ্নোত্তর পূর্বে বলেছিলেন, প্রি-পেইড মিটার স্থাপনের পাইলট প্রকল্পের রেজাল্ট ভালো। দুই চুলায় মাসে ৩৩ ঘনমিটার গ্যাস সাশ্রয় হচ্ছে। প্রতিমন্ত্রীর হিসেব ক্যালকুলেট করলে বৈধ ৩৮ লাখ আবাসিক গ্রাহকের মাসে সাশ্রয় দাঁড়ায় ১২ কোটি ৫৪ লাখ ঘনমিটার। যার পুরোটাই এখন চোরের পেটে চলে যাচ্ছে।

বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)২০১৮ সালে গ্যাসের দাম বৃদ্ধির আদেশে প্রি-পেইড মিটার স্থাপনের দ্রুত করার আদেশ দেন। গ্রাহক যাতে নিজেরা মার্কেট থেকে মিটার কিনে স্থাপন করতে পারে সেই সুবিধা উন্মুক্ত করার সিদ্ধান্ত হয়। সে অনুযায়ী দীর্ঘ প্রতিক্ষার পর একটি নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়। সেই নীতিমালায় বলা হয়েছে গ্রাহক নিজের পছন্দমতো দোকান থেকে মিটার ক্রয় করে বিতরণ কোম্পানিতে জমা দেবেন। বিতরণ কোম্পানিগুলো পরীক্ষা করে গ্রাহকের আঙ্গিনায় স্থাপন করবে। তবে নানা জটিলতা দেখিয়ে আটকে রাখা হয়েছে। কোম্পানিগুলো বাজারের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি দামে মিটার কিনেই নিজেরাই স্থাপন করছে, তাও চলছে ঢিমেতালে।

বিইআরসি ২০২২ সালে প্রিপেইড মিটার সংক্রান্ত একটি চিঠি ইস্যু করে। তাতে বলা হয় ২০১৮ সালের ১৬ অক্টোবর গেজেটে পর্যায়ক্রমে সকল আবাসিকে প্রি-পেইড গ্যাস মিটার স্থাপনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তবে এ বিষয় বিতরণ কোম্পানিগুলোর গৃহীত ব্যবস্থা কাঙ্ক্ষিত পর্যা‌য়ে নয়। নীতিমালা বাস্তবায়ন হলে প্রি-পেইড মিটার স্থাপন কার্যক্রম ত্বরান্বিত হবে বলে কমিশন আশা করে।

কমিশন একটি পত্রিকার রিপোর্টের সূত্র চিঠিতে উল্লেখ করেছে, প্রি-পেইড মিটার স্থাপন কাজ শেষ হলে প্রতি চুলায় ৩৩ ঘনমিটার গ্যাস সাশ্রয় হবে। এতে বছরে ৫৩ বিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সাশ্রয় হবে। এমতাবস্থায় বিতরণ কোম্পানিসমুহের গৃহীত ব্যবস্থা কমিশনকে অবহিত করা জন্য বলা যাচ্ছে।

;

নভেম্বরে রেমিট্যান্স এল ২১ হাজার ১৮১ কোটি টাকা



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

ডলারের দাম কমানোর সিদ্ধান্তের প্রভাব পড়েছে প্রবাসী আয়ে। সদ্য বিদায়ী নভেম্বর মাসে বিভিন্ন দেশে অবস্থানরত বাংলাদেশি প্রবাসীরা ১৯৩ কোটি ডলারের সমমূল্যের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ ২১ হাজার ১৮১ কোটি ৭৫ লাখ টাকা (প্রতি ডলার সমান ১০৯ টাকা ৭৫ পয়সা হিসেবে)। এর আগের মাসে (অক্টোবর) ১৯৭ কোটি ৭৫ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছে প্রবাসীরা।

রোববার (৩ ডিসেম্বর) বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রকাশিত হালনাগাদ প্রতিবেদন সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য মতে, নভেম্বরে সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স এসেছে বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে। এ খাতের ৪১টি ব্যাংকের মাধ্যমে প্রবাসী আয় এসেছে ১৭২ কোটি ৬৬ লাখ ডলার। যা এক মাসে পাঠানো মোট রেমিট্যান্সের ৮৯ দশমিক ৪৬ শতাংশ। রাষ্ট্রায়ত্ত পাঁচটি ব্যাংকের মাধ্যমে নভেম্বরে রেমিট্যান্স এসেছে ১৪ কোটি ৪২ লাখ ডলার। বিশেষায়িত বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের মাধ্যমে এ সময়ে ৫ কোটি ৩১ লাখ ডলারের সমপরিমাণের রেমিট্যান্স এসেছে। আর দেশে কার্যরত বিদেশি ৬টি ব্যাংকের মাধ্যমে প্রবাসীরা রেমিট্যান্স পাঠিয়েছে ৫৯ লাখ ডলার।

বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর মধ্যে কমিউনিটি ব্যাংক ও সিটিজেন ব্যাংক গত মাসে রেমিট্যান্স আহরণ করতে পারেনি। রাষ্ট্রায়ত্ত্ব বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের মাধ্যমে রেমিট্যান্স পাঠায়নি প্রবাসীরা। আর বিদেশি ব্যাংকগুলোর মধ্যে হাবিব ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তান এবং স্টেট ব্যাংক অ ইন্ডিয়া নভেম্বরে দেশে প্রবাসী আয় আনতে পারেনি।

ব্যাংক কর্মকর্তারা বলছেন, সংকট কাটাতে লোকসান দিয়ে বেশি দামে ডলার কিনতে পারছে ব্যাংকগুলো। প্রবাসী আয়ে সরকারের আড়াই শতাংশ প্রণোদনার সঙ্গে ব্যাংকগুলো বাড়তি ২ দশমিক ৫ শতাংশ বেশি দামে ডলার কিনতে পারছে। এখন বৈধ পথে দেশে রে‌মিট্যা‌ন্স আসলে মোট ৫ শতাংশ প্রণোদনা মিলছে। ফলে প্রবাসী আয়ে প্রতি ডলারের বিপরীতে এখন পাওয়া যাচ্ছে ১১৫ টাকার মতো।

এদিকে চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম মাসে রেমিট্যান্স এসেছিলো ১৯৭ কোটি ডলার। এরপর টানা দুই মাস প্রবাসী আয় কমেছিলো। ডলার সংকটের কারণে গত আগস্ট মাসে এসেছিলো ১৬০ কোটি ডলার। আর সেপ্টেম্বর মাসে প্রবাসী আয়ে বড় হোঁচট খায়। ওই মাসে গত সাড়ে ৩ বছর বা ৪১ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন প্রবাসী আয় আসে বাংলাদেশে, যা পরিমাণে ১৩৪ কোটি ডলার। এর আগে ২০২০ সালের এপ্রিল মাসে ১০৯ কোটি ডলার রেমিট্যান্স এসেছিল। এরপর অক্টোবর মাসে এসেছিলো ১৯৭ কোটি ডলার।

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর থেকে দেশে ডলার সংকট দেখা দেয়। সেই থেকে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর কাছে ডলার-সংকট থাকায় জ্বালানি ও নিত্যপণ্য আমদানি স্বাভাবিক রাখার লক্ষ্যে রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে রিজার্ভের ওপর চাপ বাড়ছে।

তথ্য অনুযায়ী, ২০২২-২৩ অর্থবছরে রিজার্ভ থেকে ১৩ দশমিক ৫৮ বিলিয়ন বা ১ হাজার ৩৫৮ কোটি ডলার বিক্রি করেছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। আর চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের ৫ মাসে রিজার্ভ থেকে প্রায় ৬ বিলিয়ন ডলারের বেশি ডলার বিক্রি করা হয়েছে। এতে ৬ মাসে রিজার্ভ কমেছে ৬ বিলিয়নের বেশি। অর্থাৎ প্রতিমাসে গড়ে রিজার্ভ থেকে কমছে ১ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার।

গত অর্থবছরের শুরুর দিকে দেশে ডলারের সংকট দেখা দিলে আমদানিতে কড়াকড়ি শর্ত আরোপ করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ সময় নিত্যপণ্য বাদে বিলাসী পণ্য আমদানিতে শতভাগ মার্জিন দেওয়া হয়। এতে এলসি নিষ্পত্তি ও পরিশোধ কমে যায়।

;