বন্যায় ভেসে গেছে ৬৯৬১০ মৎস্য খামার, ক্ষতি ১৬০ কোটির বেশি

  • তরিকুল ইসলাম সুমন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

চলমান বন্যায় ৫ বিভাগের ১৫ টি জেলার ৯৩টি উপজেলার ৬৭ হাজার ৬শত ১০টি মৎস্য খামারে মাছ ভেসে গেছে। যার পরিমাণ ১৬ হাজার ৫৮২ মেট্রিক টন। পোনা বের হয়ে গেছে ৫৭ হাজার ৫৭৯ লাখ বা ৫৭৫ কোটি ৭৯ লাখ পোনা মাছ। মাছ ও মাছের পোনা মিলে ক্ষতি হয়েছে ১৬০ কোটি ৪২ লাখ টাকা। এক্ষেত্রে ক্ষতিগ্রস্ত মাছের খামারিদের বাণিজ্যিক মূল্য ১২৯ কোটি ৪১ লাখ টাকা। মাছের পোনার বাণিজ্যিক মূল্য ২১ কোটি ৭ লাখ টাকা। এছাড়াও অবকাঠামোগত ক্ষতি হয়েছে ৯ কোটি ৯১ লাখ টাকা।

মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক খ: মাহবুবুল হক বার্তা২৪.কমকে বলেন, গতকাল পর্যন্ত চলতি বন্যায় দেশে ৫টি বিভাগের সিলেট, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, রংপুর, নীলফামারী, লালমনিহাট, নেত্রকোনা, শেরপুর, জামালপুর, সিরাজগঞ্জ, বগুড়া, টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ ,কিশোরগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, মানিকগঞ্জ, ফেনি জেলা ও চট্টগ্রাম জেলা বন্যার পানিতে মাছের খামার ভেসে গেছে। এর মধ্যে ১৫ জেলায় বন্যার পানিতে ১৬০ কোটি ৪১ লাখ ৯১ হাজার টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

তিনি আরো বলেন, প্রতিদিনই ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বাড়ছে। প্রকৃত ক্ষতির পরিমাণ জানতে আরো সময় লাগবে। তবে ক্ষতিগ্রস্ত খামারিদের ক্ষতিপূরণের বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। সরকার এবিষয়ে সিদ্ধান্ত নিলে আমরা প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেব।

মৎস্য অধিদপ্তরের প্রাথমিক হিসাব অনুযায়ী: 

বিজ্ঞাপন

সুনামগঞ্জে ৮৬৬৫ টি খামার, চাষী ৬৪৮৪ জন, মাছ ২৯৮৫ মে. টন, পোনা ৪ কোটি ৬৫ লাখ, অর্থিক ক্ষতি ৫২ কোটি ৯৩ লাখ টাকা। হবিগঞ্জে ১৩৪৮ খামার, ১০৭৮ খামারির ক্ষতি হয়েছে ১৭ কোটি ১ লাখ টাকা।

সিলেটে ২৫ হজার ২৪০ খামারির ৩০ হাজার ২৫৫ খামার ভেসে গেছে। এতে ক্ষতি হয়েছে ৭০ কোটি ৮৫ লাখ টাকা। মৌলভীবাজার এলাকার ২১০ খামারিরা ২৭০ টি খামার ভেসে গেছে। এতে ক্ষতি হয়েছে ১৬ কোটি ১ লাখ টাকা।

বিভাগীয় শহর রংপুর, গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, নীলফামারী, দিনাজপুর, ঠাকুর গাঁও ও পঞ্চগড়ের ৮০৫ জন খামারির ১০৪২ টি খামার ভেসে গেছে। এতে ক্ষতি হয়েছে ১৯ কোটি ৫৯ হাজার টাকা। সিরাজগঞ্জের ১৯ জন খামারির ২৮ টি খামার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এত ক্ষতি হয়েছে ২০ লাখ ৯১ হাজার টাকা।

কিশোরগঞ্জে ৩২৫ জন খামারির ৩২৫ টি খামার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এক্ষেত্রে ক্ষতি হয়েছে ১৪ কোটি ৫ লাখ ৮০ হাজার টাকা। ব্রাহ্মণবাড়ীয়ার ১৫৫ খামারির ২২৯ টি খামার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে ক্ষতি হয়েছে ১১ কোটি ৯০ রাখ ৫০ হাজার টাকা।

ময়মনসিংহের ২১৫ জন খামারির ৩৫৫ টি খামার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এক্ষেত্রে ক্ষতি হয়েছে ১১ কোটি ৮০ লাখ টাকা। নেত্রকোনার ১৫ হাজার ৩৪৬ জন খামারির ২৫ হাজার ৯২৬ টি খামার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এক্ষেত্রে আর্থিক ক্ষতি হয়েছে ৮৫ কোটি ২০ লাখ টাকা।

জামালপুরের ১৪০ খামারির ১৩৬ টি খামার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে ক্ষতি হয়েছে ২১ লাখ ১০ হাজার টাকা। শেরপুরের ৭৪০ জন খামারির ১০৩১ টি খামার তলিয়ে গেছে। এতে ক্ষতি হয়েছে ৩৩ কোটি ৩ লাখ টাকা।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলার সীমান্তবর্তী মোগড়া ইউনিয়নের ছয়ঘরিয়া গ্রামের মাছ চাষি জয়নাল আবেদীন। তার ৭টি পুকুরের মধ্যে ৫টিই তলিয়ে গেছে বন্যার পানিতে। এসব পুকুরে ২০ লাখ টাকা পুঁজি খাটান তিনি। পোনা ছাড়াও বড় মাছও মজুদ ছিল পুকুরগুলোতে। আখাউড়ায় ভেসে গেছে ১০৯ পুকুরের মাছ, ক্ষতি ১ কোটি ২৩ লাখ টাকা।

মৎস্য খাদ্য ডিলার বাছির ট্রেডার্স এর স্বত্ত্বাধিকারী মো. বাছির মিয়া বলেন, বাণিজ্যিকভাবে চাষকৃত মৎস্য খামারে মাছের খাদ্য সরবরাহ করতে আমরা বিভিন্ন কোম্পানি থেকে কিনে মাছ চাষিদের কাছে তা বাকিতে বিক্রি করি। মাছ বড় করে বাজারজাত করার পর ওই মাছ বিক্রির টাকা দিয়ে আমাদের পাওনা টাকা পরিশোধ করেন মাছ চাষিরা। কিন্তু এবার আকস্মিক বন্যায় মাছ চাষিরাই শুধু ক্ষতিগ্রস্তই হননি, আমরা মাছের খাদ্য সরবরাহকারীরাও একইসঙ্গে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি।