মজুদে এগিয়ে, উত্তোলনে পিছিয়ে কেনো দেশীয় গ্যাসফিল্ড!



সেরাজুল ইসলাম সিরাজ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
মজুদে এগিয়ে, উত্তোলনে পিছিয়ে কেনো দেশীয় গ্যাসফিল্ড!

মজুদে এগিয়ে, উত্তোলনে পিছিয়ে কেনো দেশীয় গ্যাসফিল্ড!

  • Font increase
  • Font Decrease

যখন গ্যাসের জন্য হাহাকার শুরু হয়েছে ঠিক সে সময়েও বিশাল রিজার্ভ নিয়ে বসে রয়েছে দেশীয় গ্যাস ফিল্ডগুলো। বিবিয়ানায় ১.২২ টিসিএফ মজুদ থেকে আমেরিকান কোম্পানি শেভরন দৈনিক উৎপাদন করছে ১২৩৭ এমএমসিএফ। প্রায় দ্বিগুণ মজুদ (২.০২৬ টিসিএফ) থাকার পরও কৈলাশটিলা গ্যাস ফিল্ডে মাত্র ৬৮ এমএমসিএফ গ্যাস উত্তোলন করা হচ্ছে।

বিবিয়ানার তুলনায় গ্যাসের রিজার্ভ অনেক বেশি তিতাস ও রশিদপুর গ্যাস ফিল্ডেও। সেখানেও আশানূরূপ উৎপাদন করা হচ্ছে না। ১৯৬০ সালে আবিষ্কার হওয়া রশিদপুর গ্যাস ফিল্ডের অবশিষ্ট মজুদ (প্রমাণিত ও সম্ভাব্য মিলে) রয়েছে (৩১ ডিসেম্বর ২০২০ হিসেব অনুযায়ী) ১.৭৭৩ ট্রিলিয়ন ঘনফুট। রশিদপুরে গত ১ জুলাই গ্যাস উত্তোলন করা হয়েছে মাত্র ৪৪ এমএমসিএফ।

রশিদপুর গ্যাস ফিল্ডের ৯ নম্বর কূপটি ২০১৭ সাল থেকে গ্যাস উত্তোলনের জন্য প্রস্তুত হলেও বসিয়ে রাখা হয়েছে। কূপটি থেকে দৈনিক ১৪ থেকে ১৯ মিলিয়ন পর‌্যন্ত গ্যাস উত্তোলন করা সম্ভব। যা আমদানিকৃত (১৯ মিলিয়ন) এলএনজির সঙ্গে তুলনা করলে দৈনিক দাম দাঁড়ায় ৫ কোটি ১৩ লাখ টাকার উপরে। বছরে এই টাকার অংক দাঁড়ায় প্রায় ১৮’শ কোটি টাকা।

পেট্রোবাংলার যুক্তি হচ্ছে কূপটির সঙ্গে পাইপলাইন নেই যে কারণে গ্যাস উত্তোলন করা যাচ্ছে না। কূপটি থেকে গ্যাস গ্রিডে আনার জন্য ১৭ কিলোমিটার পাইপলাইন নির্মাণের প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে, যা সময় সাপেক্ষ এবং ব্যয়বহুল। বাস্তবতা হলো কূপটি থেকে ৫ কিলোমিটার দূরে রশিদপুর ৭ নম্বর কূপ পর্যন্ত পাইপলাইন রয়েছে। সেখানে হুকিং করে দিলেই গ্যাস সরবরাহ পাওয়া সম্ভব। বার্তা২৪.কম’এ রিপোর্টের পর সম্প্রতি পুরাতন পাইপ লাইনটির হাইড্রো টেস্ট করা হয়। এতে পাইপটি ব্যবহার উপযোগি রয়েছে বলে জানা গেছে। অথচ মহাসংকটের মধ্যেও ৫ বছর ধরে বসিয়ে রাখা হয়েছে কূপটি। এ রকম অনেক অব্যবস্থাপনার নজির দৃশ্যমান সর্বত্র।

রশিদপুর গ্যাস ফিল্ডের মালিকানা রয়েছে সিলেট গ্যাস ফিল্ড কোম্পানির হাতে। কোম্পানিটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মিজানুর রহমান বার্তা২৪.কমকে বলেছেন, হাইড্রো টেস্টে পুরাতন পাইপটি ব্যবহার উপযোগি পাওয়া গেছে। পাইপ লাইন নির্মাণের জন্য ১৭ কিলোমিটারের যে প্রকল্প ছিল, সেখানে দরপত্রে লাইনের দৈর্ঘ্য কমানো বাড়ানোর অপশন রাখা হয়েছিল। এখন পুরাতন পাইপ লাইনের সঙ্গে হুকিং করতে যে পরিমাণ লাইন বসাতে হবে, সেটুকু করা হবে। আশা করছি ২০২৩ সালের মার্চের মধ্যেই উৎপাদন করা সম্ভব হবে। এতোদিন কেনো এই কাজটি করা গেলো না। জবাবে বলেন, আগে যারা দায়িত্বে ছিলেন তারা হয়তো ভালো বলতে পারতেন, তবে আমার মনে হয়, গ্যাসের দাম বেড়ে যাওয়ায় বাণিজ্যিকভাবে সফল মনে করা হচ্ছে। আগে হয়তো বাণিজ্যিকভাবে সফল বিবেচনা করা হয় নি।

বিবিয়ানার চেয়ে প্রায় দেড়গুণ মজুদ রয়েছে তিতাস গ্যাস ফিল্ডেও। ১৯৬২ সালে অবিস্কৃত তিতাস গ্যাস ফিল্ডে উত্তোলন শেষে অবশিষ্ট মজুদের পরিমাণ (প্রমাণিত ও সম্ভাব্য মিলে) রয়েছে (৩১ ডিসেম্বর ২০২০ হিসেব অনুযায়ী) ১.৪৩৬ টিসিএফ। সেখানে দৈনিক উত্তোলন করা হয়েছে মাত্র ৪১০ এমএমসিএফ গ্যাস। যা বিবিয়ানার তুলনায় এক-তৃতীয়াংশ মাত্র।

সম্প্রতি অনুষ্ঠিত গ্যাসের দাম বৃদ্ধির গণশুনানিতে অংশ নিয়ে জ্বালানি বিশেষজ্ঞ বদরুল ইমাম বলেন, দেশীয় গ্যাস ফিল্ডগুলোর উপর একটি সমীক্ষা পরিচালনা করে আন্তর্জাতিক কোম্পানি স্লামবার্জার। ২০১১ সালে দাখিলকৃত রিপোর্টে বলা হয় বিদ্যমান গ্যাস ফিল্ডগুলোর সংস্কার করে ৪০০ থেকে ৮০০ এমএমসিএফডি গ্যাস উৎপাদন বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে। এতে খরচ হতে পারে সর্বোচ্চ ১২৫ মিলিয়ন ইউএস ডলার। ১১ বছর পেরিয়ে গেলেও সেই রিপোর্ট রয়ে গেছে অন্ধকারে। আমরা ভূল পথে এগিয়ে চলছি। এখনই সঠিক পথে অগ্রসর হওয়া প্রয়োজন।

পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান নাজমুল আহসান বার্তা২৪.কমকে বলেন, আপনার মতো আমারও প্রশ্ন ছিল আমরা এতো কম উৎপাদন করছি কেনো! আমাদের দেশীয় কোম্পানির কূপগুলোর উৎপাদন সক্ষমতা অনেক কম (১০-২০এমএমসিএফডি)। প্রযুক্তিগতভাবেই উৎপাদন ক্ষমতা কম। অন্যদিকে শেভরনের কূপগুলোর উৎপাদন ক্ষমতা ৬০ থেকে ৭০ এমএমসিএফডি পর্যন্ত। প্রযুক্তিগতভাবেই তারা এগিয়ে রয়েছে। আমরা কম করে উৎপাদন করছি অনেকদিন ধরে চলবে আর ওরা বেশি করে উৎপাদন করছে দ্রুত শেষ হয়ে যাবে।

পেট্রোবাংলা চেয়ারম্যান বলেন, বিবিয়ানা নতুন এলাকায় অনুসন্ধ্যান কূপ খনন করার প্রস্তুতি নিয়েছে। যদি গ্যাস পাওয়া যায় তাহলে আরও ৩টি কূপ খনন করবে। সফল হলে ২০০ এমএমসিএফডি গ্যাস উত্তোলন বৃদ্ধি পাবে।

আন্তর্জাতিক কোম্পানি স্লামবার্জার একটি সমীক্ষা পরিচালনা করে। ২০১১ সালে তারা একটি রিপোর্ট দাখিল করে পেট্রোবাংলায়। স্লামবার্জারের ওই রিপোর্ট নিয়ে কোন কাজ না হওয়ার কারণ কি। জবাবে নাজমুল আহসান বলেন, বিষয়টি অনেক আগের আমাকে খোঁজ নিয়ে দেখতে হবে। তার আগে কিছু বলা সম্ভব নয়।

বাংলাদেশ বর্তমানে দৈনিক কমবেশি ৩ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হচ্ছে। অন্যদিকে গত জুলাই-ডিসেম্বর সিস্টেম লস দেখানো হয়েছে সাড়ে ৮ শতাংশ। অর্থাৎ দৈনিক সিস্টেম লসের পরিমাণ ২৫৫ মিলিয়ন ঘনফুট।

বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের চেয়ারম্যান আব্দুল জলিল বলেছেন, গ্যাসের আদর্শ সিস্টেম লস হচ্ছে ২ শতাংশের নিচে। বিশ্বের কোথাও ২ শতাংশের ওপরে সিস্টেম লস নেই। সাড়ে ৮ শতাংশ সিস্টেম লস গ্রহণযোগ্য নয়। এই মাত্রা গ্রহণযোগ্য পর্যায়ে নামিয়ে আনতে হবে।

অর্থাৎ প্রায় ৬ শতাংশ চুরিকে সিস্টেম লসের নামে চালিয়ে দেওয়া হচ্ছে। দৈনিক চুরি যাওয়া গ্যাসের পরিমাণ হচ্ছে ১৮০ থেকে ২০০ মিলিয়ন ঘনফুট। অন্যদিকে চড়াদামে স্পর্ট মার্কেট থেকে আমদানি করা গ্যাসের পরিমাণ মাত্র ৯৯ মিলিয়ন ঘনফুট। স্পর্ট মার্কেটের এলএনজির মূল্যের (ঘনমিটার ৫০টাকা আমদানি শুল্কসহ) সঙ্গে তুলনা করলে দৈনিক চুরি যাওয়া ৬ শতাংশ গ্যাসের মূল্য দাঁড়ায় ৩৪৫ কোটিতে। যা বছরে ১ লাখ ৩ হাজার ৫’শ কোটি টাকার মতো। দাম বেড়ে যাওয়ার স্পর্ট মার্কেট থেকে এলএনজি আমদানি সাময়িক সময়ের জন্য স্থগিত করতে বাধ্য হয়েছে সরকার।

পেট্রোবাংলা চেয়ারম্যানের কাছে প্রশ্ন ছিল দশ শতাংশের উপর গ্যাসের সিস্টেম লস। আন্তর্জাতিকভাবে ২ শতাংশের নিচে থাকলে তাকে আদর্শ বিবেচনা করা হয়। তার অর্থ দাঁড়ায় আমাদের ৮ শতাংশের উপরে গ্যাস চুরি হয়ে যাচ্ছে, যা সিস্টেম লসের নামে চালিয়ে দেওয়া হচ্ছে কি-না? এমন প্রশ্নের জবাবে বলেন, আমরা চুরি ঠেকানোর জন্য অনেক উদ্যোগ নিয়েছি। অনেক অভিযান করেছি যা আপনারা দেখে থাকবেন। সম্প্রতি বিইআরসি আদেশ দিয়েছে ২ শতাংশের নিচে নামিয়ে আনতে হবে গ্যাসের সিস্টেম লস। কোন বিতরণ কোম্পানি ব্যর্থ হলে তার দায় তাকেই নিতে হবে। গ্রাহক কিংবা অন্য কারো ওপর দায় চাপাতে পারবে না। এভাবে নানামুখী উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে সিস্টেম লস কমানোর জন্য।

নাজমুল আহসান আরও বলেন, মানলাম বিতরণ কোম্পানির কিছু কর্মকর্তা দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত। পাশাপাশি গ্রাহকদেরও সচেতন হওয়ার অনুরোধ করবো। তারা অসৎ উপায়ে সংযোগ নেবেন কেনো।

আন্তর্জাতিক জ্বালানি বিশেষজ্ঞ প্রকৌশলী খন্দকার সালেক সূফী বার্তা২৪.কমকে বলেছেন, আজকের এই সংকটের মুলে রয়েছে তেল-গ্যাস অনুসন্ধ্যানে কয়েক দশকের স্থবিরতা। যার পুঁঞ্জিভূত ফল আজকের এই মহাসংকট। যদি যথাযথভাবে তেল-গ্যাস অনুসন্ধান ও উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পরিচালনা করা যেতো তাহলে আজকে এই সংকট হতো না। আমি মনে করি পরিস্থিতি আরও জটিল হতে পারে। সবচেয়ে বড় গ্যাস ফিল্ড বিবিয়ানার রিজার্ভ কমে আসছে এখানে যে কোন সময় উৎপাদনে ধ্বস নামতে পারে। তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের চেয়ে আমদানিতে বেশি মনোযোগ দেখা গেছে।

বাংলাদেশে ২৮টি গ্যাস ফিল্ড আবিষ্কৃত হয়েছে। এসব ফিল্ডে প্রমাণিত মজুদের পরিমাণ ২১ দশমিক ৪ টিসিএফ, আরও ৬ টিসিএফ রয়েছে সম্ভাব্য মজুদ ধারণা করা হয়। এরমধ্যে প্রায় সাড়ে ১৮ টিসিএফ উত্তোলন করা হয়েছে। সে হিসেবে প্রমাণিত মজুদ অবশিষ্ট রয়েছে মাত্র ৩ টিসিএফ, আর সম্ভাব্য মজুদ রয়েছে আরও ৭ টিএসএফ’র মতো। প্রতি বছর প্রায় ১ টিসিএফ’র মতো গ্যাস উত্তোলিত হচ্ছে এতে প্রমাণিত মজুদ ২০২৪ সালে শেষ হয়ে যাওয়ার কথা। অন্যদিকে দ্রুত শিল্পায়ন ও ঘরে ঘরে বিদ্যুতের কারণে গ্যাসের চাহিদাও প্রতি বছর বেড়ে যাচ্ছে। আর ঘাটতি মোকাবেলায় বাজেটে এলএনজি আমদানির কথা বলা হয়েছে।

আমদানিকে যেভাবে সামনে আনা হয়েছে বাস্তবতা মোটেই অনুকূলে নয়। অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে এফএসআরইউ (ফ্লোটিং স্টোরেজ রি-গ্যাসিফিকেশন ইউনিট) ১ হাজার এমএমসিএফডি এলএনজি আমদানি করার সক্ষমতা অর্জণ করেছে। এই এলএনজি আমদানির পরিকল্পনা ছিল ২০১৪ সালে। বাস্তবায়ন হতে আরও ৫ বছর বেশি সময় লেগে যায়। সাগর উত্তাল হলেই সরবরাহে বিঘ্ন ঘটছে। এলএনজি আমদানি বাড়াতে মাতারবাড়িতে ১ হাজার এমএমসিএফডি ক্ষমতা সম্পন্ন ল্যান্ডবেজড এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ২০২৪ সালের মধ্যে কাজ শেষ হওয়ার কথা। এখনও টেন্ডার প্রক্রিয়া শেষ করা যায় নি। অন্যদিকে মাতারবাড়িতে ও পায়রাতে পৃথক দু’টি এফএসআরইউ স্থাপনের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে, সেগুলোও এখন কাগজে সীমাবদ্ধ। চুক্তির পর ১৮ মাসের অধিক সময় প্রয়োজন পড়বে।

অর্থাৎ ঘাটতি বেড়ে গেলেও বাড়তি এলএনজি আমদানির ‍পথ প্রায় বন্ধ। এরসঙ্গে রয়েছে অস্থিতিশীল আন্তর্জাতিক বাজার দরের ইস্যু। স্পর্ট মার্কেট থেকে মাত্র ৩ শতাংশ এলএনজি আমদানি করায় সামাল দিতে পুরো গ্যাসে ১১৭ শতাংশ দাম বাড়ানোর আবেদন করে পেট্রোবাংলা। ভবিষ্যতে আমদানির পরিমাণ বেড়ে গেলে বাজারদর কোথায় গিয়ে ঠেকবে তা বলাই বাহুল্য। অথচ হাতের কাছেই অনেক বিকল্প রয়ে গেছে। যা দীর্ঘদিন ধরেই অনাদরে পড়ে রয়েছে। আর এ কারণেই আজকের মহাসংকট বলে মনে করেন জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা।

   

সরবরাহ বাড়ায় কমেছে পেঁয়াজের দাম



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা ২৪.কম
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

রমজানে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দামে যখন ঊর্ধ্বগতি তখন স্বস্তির বার্তা হয়ে এসেছে পেঁয়াজের দাম। গেলো কয়েক সপ্তাহে যেখানে পেঁয়াজের ঝাঁজে ক্রেতাদের নাজেহাল অবস্থা। সেই পেঁয়াজ এখন বাজারে পাওয়া যাচ্ছে সুলভ মূল্যে। মূলত দেশি পেঁয়াজের সরবরাহ বাড়ায় এবং ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানির ঘোষণার পর থেকে নেমে এসেছে পেঁয়াজের দাম।

শুক্রবার (২৯ মার্চ) সকালে রাজধানীর হাতিরপুল বাজার ঘুরে দেখা গেছে গত সপ্তাহে যে পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছিল ৯০-১০০ টাকা তা মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানে নেমে এসেছে অর্ধেকেরও কম দামে। বাজার ঘুরে দেখা যায় প্রকারভেদে প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৪০-৪৫ টাকা যা পাইকারি বাজারে ৩০-৩৫ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে।

ক্রেতারা বলছেন গত কয়েক সপ্তাহে সবকিছুর দামে যে আগুন লেগেছিল তা মনে হয় কিছুটা কমতে শুরু করেছে। যদিও অসাধু ব্যবসায়ীরা যা ব্যবসা করার তা করে ফেলেছে। সবার বাসায় এখন পর্যাপ্ত পেঁয়াজ, আলু ও অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের পর্যাপ্ত মজুদ আছে। তাই ক্রেতাদের আনাগোনা বাজারে কমে যাওয়ায় কমেছে জিনিসপত্রের দাম।

শুক্রবার বাজারে প্রতি কেজি শশা বিক্রি হচ্ছে ৬০-৭০। ক্যাপসিকাম ২৫০-৩০০ টাকা। বেগুন প্রতি কেজি ৫০-৬০, লেবুর হালি প্রকারভেদে ২০-৫০ টাকা, কচুর লতি ৬০ টাকা, শিম ৪০ টাকা, মুলা ৩০ টাকা, লাউ ৮০ টাকা, চাল কুমড়া ৫০, করলা ৬০-৭০, টমেটো ৫০-৬০ কেজি, পটল ৬০ টাকা, ঢেঁড়স ৬০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া প্রতি পিছ ৪০টাকা, বাঁধাকপি ৪০, ফুলকপি ৫০ এবং কাঁচকলা বিক্রি হচ্ছে ৩০-৪০ টাকা দরে।

পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকায় আগের দামেই পাওয়া যাচ্ছে সকল মাছ

এছাড়া আলু ৪০ টাকা প্রতি কেজি, আদা ২২০, রসুন ২০০, কাঁচামরিচ ৪০ টাকা, পেয়াজ ৪০-৪৫ টাকা , ধনেপাতা ৬০ টাকা কেজি।

হাতিরপুল বাজারের বিক্রেতা নিরব জানান, গত সপ্তাহের চাইতে এই সপ্তাহে সবজির দাম কিছুটা কম। মূলত আমদানি বাড়ার কারণে দাম কমেছে পেঁয়াজ সহ সকল শাক সবজির দাম। আগে ৮০ টাকার নিচে সবজির গায়ে হাত দেয়া যেতো না। কিন্তু এখন তা ৩০ থেকে ৪০ টাকায় নেমে এসেছে।

আরেক ব্যবসায়ী আমান হোসেন জানান, বেগুন ব্যবসায়ীরা এবার ধরা খাইছে। রমজানের প্রথম দুই দিনে বেগুন নিয়ে যে সিন্ডিকেট হইছিলো তাতে পাবলিক ক্ষেপে গিয়ে বেগুন কেনা কমাইয়া দিছে তাই প্রথম দুই দিনে বেগুন ১২০ টাকা করে পাইকারি বিক্রি হলেও এখন তা প্রকারভেদে মাত্র ১০-৩০ টাকা পাইকারিতে পাওয়া যাচ্ছে। এছাড়া ঈদের আগে আর কোন জিনিসের দাম বাড়ার সম্ভাবনা নাই আশাকরি।

এদিকে মাছের বাজারেও দেখা গেছে একই চিত্র। বাজারে ক্রেতা কম থাকায় এবং মাছের পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকায় আগের দামেই পাওয়া যাচ্ছে সকল মাছ।

বাজারে প্রতি কেজি কাচকি পাওয়া যাচ্ছে ৪০০-৬০০ টাকা কেজি। এছাড়া বেলে মাছ ৫০০, ফলি ৫০০, কোরাল ৭০০, পাবদা ৪৫০, লইট্টা ৩০০, বোয়াল ৬০০, আইর ৮০০, রুই ৩৫০, চিতল ৮০০, পাঙ্গাশ ২০০ তেলাপিয়া ২২০, বড় চিংড়ি ১০০০, রুপচাঁদা ১৩৫০, এবং ইলিশ মাছ বিক্রি হচ্ছে ১২০০ টাকা কেজি দরে।

;

রিজার্ভের পরিমাণ জানাল কেন্দ্রীয় ব্যাংক



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
রিজার্ভের পরিমাণ জানাল কেন্দ্রীয় ব্যাংক

রিজার্ভের পরিমাণ জানাল কেন্দ্রীয় ব্যাংক

  • Font increase
  • Font Decrease

দীর্ঘদিন ধরে দেশে ডলার সংকটের প্রভাবে বৈদেশিক মুদ্রার সঞ্চয় বা রিজার্ভ ধারাবাহিকভাবে কমছে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সর্বেশষ গণনায় দেশের রিজার্ভ ১৯ দশমিক ৪৫ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। অন্যদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসেবে তা ২৪ দশমিক ৮১ বিলিয়ন ডলার।

বৃহস্পতিবার (২৮ মার্চ) সাপ্তাহিক হালনাগাদ প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। 

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত এক সপ্তাহে গ্রস রিজার্ভ কমেছে ৫৩ কোটি ডলার। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে গত ২১ মার্চ সঞ্চিত বিদেশি অর্থের পরিমাণ ছিল ২৫ দশমিক ২৪ বিলিয়ন ডলার। আর আইএমএফের গণনা পদ্ধতি বিপিএম-৬ অনুযায়ী তা ছিল ১৯ দশমিক ৯৮ বিলিয়ন ডলার।

এ ছাড়া কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিট রিজার্ভের আরেকটি হিসাব রয়েছে। যা শুধু প্রকাশ করা হয় না, শুধুমাত্র আইএমএফকে দেওয়া হয়। জানা গেছে, ওই হিসাবে বর্তমানে দেশের প্রকৃত রিজার্ভ এখন প্রায় সাড়ে ১৭ বিলিয়ন ডলার। যা দিয়ে ৩ মাসের আমদানি ব্যয় মিটবে।

অর্থাৎ, পণ্য কেনা বাবদ মাসিক প্রায় ৬ বিলিয়ন ডলার করে দায় পরিশোধ করা হয়। নিয়ম অনুযায়ী যেকোনো দেশের ন্যূনতম ৩ মাসের আমদানি খরচের সমান রিজার্ভ থাকতে হয়। বাংলাদেশেরও সেই পরিমাণ রিজার্ভ রয়েছে।

;

ইসলামী ব্যাংকে বঙ্গবন্ধুর জীবনাদর্শের উপর আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসির উদ্যোগে এবং বঙ্গবন্ধু পরিষদ ইসলামী ব্যাংক ইউনিটের সহযোগিতায় “বঙ্গবন্ধুর জীবনাদর্শ ও বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবন” শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (২৮ মার্চ) জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মবার্ষিকী এবং স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষ্যে ইসলামী ব্যাংক টাওয়ারে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন। ব্যাংকের ম্যানেজিং ডাইরেক্টর ও সিইও মুহাম্মদ মুনিরুল মওলার সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বঙ্গবন্ধু পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আ.ব.ম ফারুক, ইসলামী ব্যাংকের পরিচালক, মুক্তিযোদ্ধা মো. জয়নাল আবেদীন, বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষক কর্মচারী কল্যাণ ট্রাস্টের সচিব অধ্যক্ষ মো. শাহজাহান আলম সাজু, বাংলাদেশ আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক একেএম আফজালুর রহমান বাবু, বঙ্গবন্ধু পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডাঃ শেখ আব্দুল্লাহ আল মামুন। স্বাগত বক্তব্য দেন বঙ্গবন্ধু পরিষদ ইসলামী ব্যাংক ইউনিটের সভাপতি মো. মোজাহারুল ইসলাম মেহেদী। অনুষ্ঠানে প্রধান কার্যালয়ের নির্বাহী ও কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।

;

চীনের সঙ্গে এফটিএ করতে সম্ভাব্যতা সমীক্ষা প্রতিবেদন বিনিময়



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
চীনের সঙ্গে এফটিএ করতে সম্ভাব্যতা সমীক্ষা প্রতিবেদন বিনিময়

চীনের সঙ্গে এফটিএ করতে সম্ভাব্যতা সমীক্ষা প্রতিবেদন বিনিময়

  • Font increase
  • Font Decrease

বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে বাণিজ্য এবং বিনিয়োগ বাড়ানোর লক্ষ্যে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) সই করার বিষয়ে যৌথভাবে খসড়া সম্ভাব্যতা সমীক্ষা প্রতিবেদন বিনিময় করেছে দুই দেশ।

বৃহস্পতিবার (২৮ মার্চ) সচিবালয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে এ সমীক্ষা প্রতিবেদন বিনিময় করে বাংলাদেশ ও চীন।

এসময় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ, বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

তপন কান্তি ঘোষ বলেন, বাংলাদেশের স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ বর্তমান সরকারের অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রার উল্লেখযোগ্য অর্জন। এ অর্জন বিশ্বে বাংলাদেশের ইতিবাচক ভাবমূর্তি সৃষ্টি এবং বিনিয়োগ ও বাণিজ্যে নতুন সম্ভাবনা তৈরির পাশাপাশি বেশ কিছু চ্যালেঞ্জও তৈরি করবে।

তিনি আরও বলেন, যার মধ্যে স্বল্পোন্নত দেশ হিসাবে উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশে পণ্য রপ্তানির সময় শুল্কমুক্ত কোটামুক্ত প্রবেশাধিকার সুবিধা ২০২৬ সালের পরে হারানো এবং মূল্য সংযোজনের হার অন্যতম। এর ফলে বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যকে ওই সব দেশের বাজারে প্রবেশের সময় সাধারণভাবে আরোপিত শুল্কের সম্মুখীন হতে হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ফলে ওই সকল দেশে বাংলাদেশের রপ্তানি বাজার সংকোচনের সম্ভাবনা রয়েছে।

কবে নাগাদ এফটিএ সই হতে পারে সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে সচিব বলেন, এখনো চুক্তি হয়নি। এখন আলোচনা শুরু হবে। আগামী তিন বছরের মধ্যে চুক্তি সম্পন্ন করতে পারলে ভালো। যদি না হয় আমাদের আলোচনা চালিয়ে যেতে হবে। আলোচনা শেষ না হলে ততোদিন যেন আমাদের এলডিসি হিসাবে এই সুবিধাগুলো তাঁরা দেয় এর জন্য বলবো।

চুক্তির ফলে বাংলাদেশ কি ধরনের সুবিধা পাবে এ বিষয়ে তপন কান্তি ঘোষ বলেন, আমাদের প্রধান রপ্তানি পণ্য গার্মেন্টের বাইরে আরও কিছু পণ্য আছে। রাষ্ট্রদূততের সঙ্গে আলাপকালে তিনি জানিয়েছেন আম ও পাটজাত পণ্যের অনেক সম্ভাবনা আছে। তারপর হস্তশিল্পের বিষয় আছে।

তিনি বলেন, এছাড়া আরও পণ্য আছে। আমরা ইতোমধ্যে চামড়া রপ্তানি করছি। আমরা মানসম্মত চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি করতে পারি। চীনে ১৪০ কোটি মানুষ। সেখানে যদি আমরা বৈচিত্র্য পণ্য নিয়ে যেতে পারি, বড় বাজার। চুক্তি হয়ে গেলে বিনিয়োগ বাড়ারও সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানান তিনি।

তপন কান্তি ঘোষ বলেন, আমরা প্রধানত তৈরি পোশাক রপ্তানি করি। ২০২২-২৩ অর্থবছরে আমরা চীনে ৬৭৭ মিলিয় মার্কিন ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছি। বিপরীতে চীন থেকে ২২ দশমিক ৯০ বিলিয়ন ডলার আমদানি করা হয়েছে।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন বলেন, বাংলাদেশে চীনের বড় বিনিয়োগ রয়েছে। এখন চীন বাংলাদেশে দ্বিতীয় বৃহৎ বিনিয়োগকারী দেশ। এফটিএ সই হওয়ার পর বিনিয়োগ আরও বাড়বে। বাংলাদেশ চীনে আম, কাঠাল, আলু, পাটপণ্য, চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি করতে পারে।

তিনি আরও বলেন, বর্তমান বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা এবং টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য এফটিএ করা প্রয়োজন।

অনুষ্ঠানে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়, এলডিসি উত্তরণ পরবর্তী সম্ভাব্য চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সরকারের অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা অনুসারে বাংলাদেশের রপ্তানি বাজার সংরক্ষণ এবং সম্প্রসারণে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যে বাণিজ্যিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন দেশ ও ট্রেড ব্লকের সাথে আঞ্চলিক বাণিজ্য চুক্তি সম্পাদনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।

;