জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধিতে ক্ষোভে ফুসছে ভোক্তারা
জ্বালানি তেলের নজির বিহীন দাম বৃদ্ধি ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া পাওয়া গেছে ভোক্তাদের মধ্যে। আন্তর্জাতিক বাজারের দোহাই দেওয়া হলেও দেশীয় পণ্য পেট্রোল অকটেনের দাম আকাশচুম্বি করে ফেলায় অনেকেই সরকারের কঠোর সমালোচনা করেছেন।
অতীতে কখনও এমন ক্ষোভ দেখা যায় নি। তখন কিছু সংখ্যাক লোক ক্ষুব্ধ হলেও কেউ কেউ এর পক্ষে যুক্তি দিতেন। কিন্তু এবার পক্ষে যুক্তি দেওয়ার লোকের সংখ্যা খুবই নগণ্য। যারাও ইনিয়ে বিনিয়ে বলতে চাইছেন, তাদেরকেও অন্যাদের তোপের মুখে পড়তে হচ্ছে।
অনেকে বলেছেন কয়েকদিন আগেই প্রধানমন্ত্রী এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, পেট্রোল-অকটেন দেশীয় গ্যাস ফিল্ডগুলো থেকে গ্যাসের উপজাত হিসেবে পাওয়া যায়। তাহলে সেই পণ্যের দাম লিটারে ৪৪ টাকা বাড়াতে হলো কেনো। কেউ কেউ ফেসবুকে প্রধানমন্ত্রীর সেই বক্তব্য জুড়ে দিয়ে বর্তমান বাজারদর শেয়ার করে বিষ্ময় প্রকাশ করেছেন।
জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, সরকারের হাতে অনেক বিকল্প ছিল, এতো বেশি পরিমাণে দাম বাড়ানো উচিত হয় নি। ধরে নিলাম বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) কিছুটা লোকসান দিচ্ছে। নানা রকম ভ্যাট ট্যাক্স আদায় করা হয়। সেই ডিউটি কিছুটা কমিয়ে দিলেওতো ঘাটতি কমে আসতো। সরকার জ্বালানি তেলে ১৮ শতাংশ পর্যন্ত কর আদায় করছে। বছরে ৫০ হাজার কোটি টাকা মূল্যের তেল থেকে ৯ হাজার কোটি টাকার মতো কর তুলে নিয়ে যাচ্ছে। সেখানে কিছুটা কমিয়ে দিলেও এতো বেশি দাম বাড়াতে হতো না। সরকার সেদিকে না গিয়ে জনগণের উপর বোঝা চাপিয়ে দিয়েছে। জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের পক্ষ থেকে অনেকদিন ধরেই কর কমানোর জন্য দেন দরবার করা হচ্ছে, তবে ফলাফল শূন্য।
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ড. ইজাজ হোসেন বার্তা২৪.কমকে বলেছেন, আমার মনে হয় আমাদের কোর্টে যাওয়ার সময় এসেছে। আইন অনুযায়ী জ্বালানি পণ্যের দাম বিইআরসির নির্ধারণ করার কথা। কিন্তু করা হয়েছে নির্বাহী আদেশে। আমাদের বিইআরসি আছে তারা দাম নির্ধারণ করবে। ভোক্তারা সেখানে আলোচনা করে দেখবে যৌক্তিকতা আছে কিনা। এতো বেশি পরিমাণে দাম বাড়ানোর কোন যুক্তি দেখি না।
এলপি গ্যাস যেভাবে প্রতিমাসে দর উঠা-নামা করে বিইআরসি তাই করবে। সরকার নিজের হাতে রেখেছে বিষয়টি জনগণের উপর চাপ সহনীয় রাখার জন্য। এখন যা হলো একে সহনীয় বলা যায় না। সরকারের হাতে থাকলে আন্তর্জাতিক বাজারে যখন দাম কমে তখনতো সেভাবে কমানো হয় না।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত প্রতি ব্যারেল বিট্রিশ ব্যারেন্ট তেলের দাম গত ছয় মাসের মধ্যে গতকাল সর্বনিন্মে ৯৫ ডলারের নিচে এসে দাড়িয়েছে। গত ৮ মার্চে এ দাম ছিল ১২৭.৯৮ ডলার। আর্ন্তজাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম টানা মূল্যপতনের মধ্যে দেশের বাজারে দাম বৃদ্ধির যৌক্তকতা নেই।
বাংলাদশ কনজুমারস অ্যসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্বালানি উপদেষ্টা ড. শামসুল আলম বলেন, আইন অনুযায়ী বিইআরসি ছাড়া এভাবে নির্বাহী আদেশে আমলারা জ্বালানি তেলের দাম বাড়াতে পারেনা। এই কাজটি বেআইনি শাস্তিযোগ্য অপরাধ। ক্ষমতাবর্হিভূতভাবে জ্বালানি তেলের দাম বাড়িয়ে জনগনের সর্বনাশ করার কোনো এখতিয়ার তাদের নেই। দেশের সব খাতে এবার আগুন ধরে যাবে। বিভন্ন খাতে যৌক্তিক ব্যয় কমনো গেলে জ্বালানিতে কোনো লোকসান থাকার কারণ নেই। ৪২ হাজার কোটি টাকা কোথায় গেলো? ২০০৮ সালের অক্টোবরে অপরিশোধিত বিট্রিশ ব্যারেন্ট প্রতি ব্যারেল তেলের দাম ছল ১৮৯.৫৬ ডলার। বিপিসি তখনও লোককসানেই তেল আমদানি করত। ২০১৪ সাল থেকে জ্বালানি তেলের দাম পড়তে শুরু করে। ২০২০ সালে সেটা নামতে নামতে ব্যারেল প্রতি ২০ ডলারে এসে দাড়ায়। লোকসানি প্রতিষ্ঠান বিপিসি এই সাত বছরে ৪২ হাজার কোটি টাকা মুনাফা করে।
অন্যদিকে বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেছেন, জনবান্ধব আওয়ামী লীগ সরকার সব সময় আমজনতার স্বস্তি ও স্বাচ্ছন্দ্য বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়। যত দিন সম্ভব ছিল, তত দিন সরকার জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর চিন্তা করেনি। অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে অনেকটা নিরুপায় হয়েই দাম কিছুটা সমন্বয়ে যেতে হচ্ছে। সরকার জনগণের সরকার। জনগণের দুর্ভোগ হয় এমন কিছু করবে না।
প্রতিমন্ত্রীর ওই বক্তব্যকেও অনেকেই ট্রল করছেন বেশি পরিমাণে দাম বৃদ্ধির কারণে।