আপাতত এলএনজি আমদানিই ভরসা: তৌফিক-ই-ইলাহী

  • স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা ড. তৌফিক ই-ইলাহী চৌধুরী

প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা ড. তৌফিক ই-ইলাহী চৌধুরী

গভীর সাগরে গ্যাস পেলেও ১০ বছর সময় লাগবে, ততদিন আমরা কি করবো। সে জন্য সাশ্রয়ী হবো, কিছু লোডশেডিং করবো। আপাতত দীর্ঘমেয়াদী চুক্তির মাধ্যমে এলএনজি আমদানিই ভরসা বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা ড. তৌফিক ই-ইলাহী চৌধুরী।

মঙ্গলবার (৯ আগস্ট) জাতীয় জ্বালানি নিরাপত্তা দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এক ভার্চুয়াল আলোচনা সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন। এ বছর দিবসের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ‘বহুমূখী জ্বালানি সমৃদ্ধ আগামী”।

বিজ্ঞাপন

তিনি আরও বলেন, এক সময় বলা হলো বাংলাদেশ গ্যাসে ভাসছে, ওইসব বিষয়ে আশাবাদী হওয়া ঠিক, কিন্তু বেশি নির্ভর করা ঠিক হবে না। অনেকে বলেন ৩টি কূপ খনন করলে একটিতে গ্যাস পাওয়া যায়। কিন্তু কতটুকু গ্যাস পাওয়া যায়। বাপেক্স গত ৫ বছরে ৩৪টি কূপ করেছে।

সাগর থেকে কনোকো ফিলিপস ছেড়ে গেলো কেনো, পসকো দাইয়ু কেনো ছেড়ে গেলো। সেগুলো বিবেচনায় নিতে হবে। গত ১০ বছরে মায়ানমার তেমন কোন গ্যাস আবিষ্কার করতে পারেনি। বড় কোম্পানিগুলো বড় গ্যাস ফিল্ড ফেলে আমাদের এখানে আসতে চাইবে!

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, পৃথিবীর মধ্যে বিপর্যয় এসেছে, এটাই শেষ না আরও আসতে পারে। উন্নত দেশও তাদের জ্বালানির দাম বাড়িয়েছে। জার্মানী পুরনো কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র চালু করছে। আমরা যখন কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র করলাম, পরিবেশবাদীরা বললো পরিবেশ শেষ করে দিলাম। আমাদের প্রযুক্তি উন্নত প্রযুক্তি এতে পরিবেশের ক্ষতি হবে না। অনেকে শতাংশ বলেন, শতকরা জিনিসটা ব্যবহার করবেন না। জার্মানীতে ৬০ হাজার, আমেরিকায় ২ লাখ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কয়লা দিয়ে উৎপাদন করা হচ্ছে।

বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, বঙ্গবন্ধু যখন গ্যাস ফিল্ডগুলো কিনেছিলেন সেই সময়কার আর্থিক অবস্থা বিবেচনায় অনেক টাকা।এমন একটি সাহসী সিদ্ধান্ত পাওয়া যায় কেবল দূরদৃষ্টি সম্পন্ন নেতার কাছ থেকে। ওনি কিন্তু খাদ্য না কিনে গ্যাস ফিল্ড কিনেছিলেন। তখন কিন্তু গ্যাসের তেমন ব্যবহারও ছিল না।

বিশ্বের যে আঘাতটা এসেছে, বঙ্গবন্ধুর ওই সিদ্ধান্ত পথ দেখাবে, সাহস যোগাবে। আমাদের নিজেদের খাদ্য রয়েছে বলে অনেকটা ভালো আছি। অনেক দেশ খুবই খারাপ অবস্থায় রয়েছে। আমরা যদি সকলে একসঙ্গে ধয্যের সঙ্গে মোকাবেলা করতে পারি, তাহলে অবশ্যই সংকট কাটিয়ে উঠতে পারবো। আমাদের প্রচুর সম্পদ রয়ে গেছে, সেগুলো নিয়ে যদি কাজ করতে পারি অবশ্যই মোকাবেলা করতে পারবো। দ্বিধাদ্বন্দে না থাকিয়ে কাজে ঝাপিয়ে পড়তে হবে।

জ্বালানি বিভাগের সিনিয়র সচিব মোঃ মাহবুব হোসেন সভাপতির বক্তব্যে বলেন, জ্বালানি খাতকে অস্থিতিশীল করতে একটি গ্রুপ সক্রিয়। তারা এখনও অপচেষ্টায় লিপ্ত। কোন কথায় বিভ্রান্ত না হয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে যোগাযোগ করবেন। অবশ্যই সঠিক তথ্য পাবেন।

বিদ্যুৎ বিভাগের সচিব হাবিবুর রহমান বলেন, জ্বালানি ব্যবহারে সাশ্রয়ী হওয়ার প্রয়োজন রয়েছে। রেলসহ পরিবহন সেক্টর বিদ্যুতের আওতায় আনা গেলে আমদানি নির্ভরতা কমাতে সহায়ক হবে।

পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান নাজমুল আহসান বলেন, বঙ্গবন্ধুর দূরদর্শিতার কারণে এখনও আমরা এসব গ্যাস ফিল্ড থেকে ৩৫ শতাংশ গ্যাস পাচ্ছি। বঙ্গবন্ধুর পথ অনুসরণ করে বর্তমান সরকারও দেশীয় গ্যাস আহরণে কাজ করে যাচ্ছে। দেশীয় গ্যাস ফিল্ডের উন্নয়নের জন্য প্রথম প্রয়োজন সার্ভে, সে লক্ষ্যে সার্ভে কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়েছে।

বক্তারা বলেন, বর্তমান গ্যাস ফিল্ডগুলো ডাটা পুন:মূল্যায়ন করি তাহলে আরও গ্যাস পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়া সাগর ও পার্বত্য এলাকায় মনযোগ দেওয়া গলে গ্যাসের রিজার্ভ আরও বৃদ্ধি পাবে। পার্বত্য এলাকায় ৪৩ টিসিএফ গ্যাস পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে জ্বালানি উপদেষ্টা এসব বক্তব্যকে একাডেমিক বলে উড়িয়ে দেন।

বক্তব্য রাখেন বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি বেগম ওয়াসিকা আয়শা খান, বিপিসির চেয়ারম্যান এবিএম আজাদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূ-তত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন, এনার্জি এন্ড পাওয়ার ম্যাগাজিনের সম্পাদক মোল্লাহ এম আমজাদ হোসেন, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব ড. হেলাল উদ্দিন। তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন এন্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি, গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানি লিমিটেড, বাপেক্স, বিপিসিএমসিএল, ইআরএলসহ জ্বালানি বিভাগের আওতাধীন কোম্পানি সমুহের পদস্থ কর্মকর্তাগণ অংশ নেন।

বঙ্গবন্ধু ঘাতকদের হাতে নিহত হওয়ার ৬ দিন পূর্বে ৯ আগস্ট ৫টি গ্যাসক্ষেত্র (তিতাস, বাখরাবাদ, হবিগঞ্জ, রশিদপুর ও কৈলাশটিলা) বিদেশি কোম্পানির কাছ থেকে নামমাত্র মূলে কিনে নেন। একইসঙ্গে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিশন কোম্পানিতে থাকা শেল অয়েলের সব শেয়ার কিনে নেয় বাংলাদেশ। ঐতিহাসিক ওই ক্ষণকে স্মরণীয় করে রাখতে ২০১০ সালে থেকে ৯ আগস্টকে ‘জাতীয় জ্বালানি নিরাপত্তা দিবস’ হিসেবে পালন করা হচ্ছে।