‘রিপোর্ট পেলে রাশান ডিজেল আমদানির বিষয়ে সিদ্ধান্ত’
রাশিয়া থেকে ডিজেল আমদানির বিষয়ে একটি কমিটি করে দেওয়া হয়েছে। কমিটি চলতি সপ্তাহেই রিপোর্ট দেবে, তারপর সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে মন্তব্য করেছেন বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ।
সোমবার (২২ আগস্ট) বিকেলে মন্ত্রণালয়ের অফিস কক্ষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ মন্তব্য করেন।
দাম প্রসঙ্গে জানতে চাইলে প্রতিমন্ত্রী বলেন, বিষয়টি এখনও আমার কাছে আসেনি। আমরা কিভাবে আমদানি করতে পারি, সে বিষয়ে কমিটি কাজ করছে। তাদের মতামতের উপর নির্ভর করছে পরবর্তী সিদ্ধান্ত।
তবে বিপিসি সূত্র জানিয়েছে প্রতি টন রাশান পরিশোধিত ডিজেল ৪২৫ ইউএস ডলারে সরবরাহ দিতে আগ্রহ দেখিয়েছে একটি প্রতিষ্ঠান। প্রতি ব্যারেলের (১৫৯ লিটার) মূল্য দাঁড়ায় ৫৭.৪৩ ডলার মাত্র। ডলার ১১০ টাকা হিসেবে ধরলে প্রতি লিটারের আমদানি খরচ পড়বে ৪০ টাকার নীচে। গত ১৭ আগস্ট দুপুর দেশীয় এক আমদানিকারক এমন প্রস্তাব দিয়েছে। রাশিয়ান প্রস্তাবের বিষয়ে মুখ খুললেও দরের বিষয়ে কেউই মুখ খুলতে চাইছে না, সকলেই কৌশলে এড়িয়ে যেতে চাইছেন।
বর্তমানে প্রতি ব্যারেল ডিজেল আমদানি করতে ১২৫ ডলারের মতো খরচ পড়ছে। অপরিশোধিত ক্রড অয়েল আনতেও ৯০ ডলার খরচ পড়ছে। অর্থাৎ অপরিশোধিত ক্রডের চেয়েও অনেক কম দামে ডিজেল দিতে চায় প্রস্তাবকারি। পাশাপাশি ক্রড অয়েলও দিতে চায় রাশিয়া। তবে রাশিয়ার ক্রড পরিশোধনের সক্ষমতা নেই রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ইস্টার্ণ রিফাইনারী লিমিটেড এর। সে কারণে পরিশোধিত ডিজেল নিয়েই এখন আলোচনা চলমান রয়েছে।
দাম কম হলেও বৈশ্বিক পরিস্থিতির কারণে রাশান ডিজেল কেনাটা বেশ ঝূঁকিপুর্ণ। ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে রাশিয়ার উপর আমেরিকাসহ ইউরোপের নানা রকম নিষেধাজ্ঞা বহাল রয়েছে। তারপরও ভারতসহ অনেক দেশ সাশ্রয়ী দরে জ্বালানি তেল আমদানি অব্যাহত রেখেছে। রাশিয়া থেকে সরাসরি ডিজেল আমদানি করতে গেলে পশ্চিমা বলয়ের বিরাগভাজন হওয়ার ঝুঁকি থেকেই যায়। সে কারণে অনেকদিন ধরেই রাশান তেল আমদানির বিষয়ে আলোচিত হলেও সবই ছিল অনানুষ্ঠানিক। কিন্তু ১৬ আগস্ট জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভা শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, রাশিয়া থেকে জ্বালানি তেল আমদানির বিষয়টি পর্যালোচনার করার কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ভারত পারলে আমরা কেন পারব না? রুবলের সঙ্গে টাকা বিনিময়ের মাধ্যমে মূল্য পরিশোধের করা যায় কি না, সেই বিষয়ে উপায় খুঁজে দেখার পরামর্শ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রীর ওই নির্দেশনার পর নড়ে চড়ে বসেছে সংশ্লিষ্টরা। বিপিসির একটি সুত্র জানিয়েছে, তাদের কাছে একাদিক প্রস্তাব এসেছে। এরমধ্যে একটি প্রস্তাব এসেছে যারা চট্টগ্রাম বন্দরের কাস্টমস পয়েন্টে ৪২৫ ডলারে ডিজেল পৌঁছে দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে। সবগুলো নিয়ে কাজ করছে সরকার।
জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ সূত্র জানিয়েছে, রাশিয়া থেকে তেল কেনার বিষয়ে সুবিধা অসুবিধা বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। পাশাপাশি রাশান মুদ্রা রুবল ও টাকার বিনিময়ের যে বিষয়টি সামনে এসেছে তারও সম্ভাব্যতা যাচাই চলছে। রুবলে লেনদেন করতে হলে রাশিয়াতে আমাদের রপ্তানির বিষয়টি খুবই গুরুত্বপুর্ণ। বাণিজ্য ঘাটতি অনেক বেশি হয় তাহলে সেই ঘাটতি মোকাবেলা হবে কি করে। তখনতো ইউএস ডলার দিয়ে রুবল কিনে পরিশোধ করতে হবে। এতে দুই ধাপে কমিশন দিতে গিয়ে লোকসান হবে।
সৌভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পূর্বে বাংলাদেশের বাণিজ্য ছিল বাটা সিস্টেম। কোরিয়াসহ বেশ কয়েকটি দেশের সঙ্গে ওই পদ্ধতি অনুসরণ করা হতো। এদেশের ব্যাংকে ছিল রাশিয়ান একাউন্ট। বাংলাদেশ পণ্য আমদানি করে তার বিনিময়ে টাকা সেই হিসেব নম্বরে জমা করতো। ওই টাকা দিয়ে বাংলাদেশ থেকে পণ্য কিনে দেশে নিয়ে যেতো তারা। দ্বি-পাক্ষিক আলোচনার টেবিলে বাটা সিস্টেমও স্থান পাবে বলে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ সুত্র জানিয়েছে।
জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সিনিয়র সচিব মোঃ মাহবুব হোসেন বার্তা২৪.কমকে বলেছেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার পর আমরা কাজ শুরু করেছি। কিছু প্রস্তাব পাওয়া গেছে সেগুলো নিয়ে কাজ চলছে। এখনই বলার মতো কোন আপডেট নেই। আমরা কাজ করছি আপডেট হলেই জানাবো।
আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির কারণে বাংলাদেশের জ্বালানি খাতের বড় ধরণের ঝাঁকুনির শিকার হয়েছে। এরই মধ্যে ডিজেল ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো বসিয়ে রাখা হয়েছে। তারপরও পরিস্থিতি সামাল দিতে না পেরে, রেকর্ড পরিমাণে দাম বাড়ানো হয়েছে সবধরণের জ্বালানির দাম। সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত জ্বালানি তেল ডিজেল লিটার প্রতি ৮০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১১৪ টাকা করা হয়েছে। বিপিসি দাবী করেছে তারপরও লিটারে ৬ টাকা করে লোকসান দিতে হচ্ছে। ২০২০-২১ অর্থবছরে ডিজেলের চাহিদা ছিল ৪৫ লাখ ৯৭ হাজার ৫৮৫ মে. টন। যা মোট জ্বালানি চাহিদার ৭২.৯৮ শতাংশ।
বিপিসির ওই লোকসানের হিসেব আমদানিকৃত ডিজেলের ব্যারেল প্রতি মূল্য ১৩০ ডলার ধরে। সেখানে রাশান ডিজেল পাওয়া যাচ্ছে ৬০ ডলারের নিচে। অর্থাৎ আমদানি মূল্য অর্ধেকের নিচে নেমে আসবে।
জ্বালানি তেলের দাম কমানোর কোন চিন্তা ভাবনা আছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমে এলে অবশ্যই দাম কমিয়ে আনা হবে। কিছুটা দাম কমেছে তারপরও ডিজেলে লোকসান দিতে হচ্ছে। প্রতি ব্যারেল ডিজেল ৭৯ ডলারের পাওয়া গেলে ব্রেক ইভেনে চলে আসবে।