গ্যাস সেক্টরে ভবিষ্যতে শঙ্কা দেখছেন না পেট্রোবাংলা চেয়ারম্যান
বৈশ্বিক পরিস্থিতির কারণে আমরা কিছুটা নাজুক অবস্থায় রয়েছি এ কথা সত্য। আমরা বেশ কিছু উদ্যোগ গ্রহণ করেছি, ভবিষ্যতে বেশি খারাপ হওয়ার সম্ভাবনা নেই বলে মন্তব্য করেছেন পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান নাজমুল আহসান।
বাংলাদেশের গ্যাস সেক্টরের ভবিষ্যৎ নিয়ে অনেকেই শঙ্কা ব্যক্ত করেন, প্রকৃত অবস্থা কি? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি এ মন্তব্য করেন।
পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান বলেন, জাইকার প্রাক্কলন করেছিল ২০২২ সালে দেশীয় গ্যাসের উৎপাদন কমে ১৯০০ এমএমসিএফ (মিলিয়ন ঘনফুট) এ নেমে আসবে। এখন আমরা উত্তোলন করছি ২৩৫০ এমএমসিএফ। অর্থাৎ তারা যে শঙ্কা প্রকাশ করেছিল, তার চেয়ে ভালো অবস্থানে রয়েছি। বিবিয়ানা গ্যাস ফিল্ডে যে পরিমাণ গ্যাস থাকার আশা করা হচ্ছিল তার চেয়ে বেশি ধারনা করা হচ্ছে। দেশীয় গ্যাসের উৎপাদন বাড়াতে সরকার স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা করেছে। ৪৬টি কূপ খননের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে, যেখান থেকে জাতীয় গ্রিডে অন্তত ৬১৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস বাড়ানো হবে। আমরা বসে নেই কাজ করে যাচ্ছি। এরমধ্যে নতুন নতুন গ্যাস আবিষ্কার করেছি, কিন্তু মজুদ কম।
তিনি বলেন, স্বাভাবিক সময়ে স্পট মার্কেটের প্রায় ২০০ মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজিসহ গড়ে দৈনিক প্রায় তিন হাজার মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হতো। এখন প্রায় দুই হাজার ৮৫০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হচ্ছে। তার মধ্যে দেশীয় কূপগুলো থেকে আসছে দৈনিক প্রায় দুই হাজার ৩৫০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস এবং দীর্ঘমেয়াদি চুক্তিতে আসছে ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি। আমরা গভীর সমুদ্রে আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বানের প্রস্তুতি গুছিয়ে এনেছি। আশা করছি আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে ২৪টি ব্লকের জন্য দরপত্র আহ্বান করতে পারবো।
দরপত্র আহ্বানের জন্য মডেল পিএসসি-২০১৮ সংশোধন করা হচ্ছে। কনসালটেন্ট প্রতিষ্ঠান ইতিমধ্যে খসড়া জমা দিয়েছে। তাদের প্রস্তাব যাচাই-বাছাই চলছে, শিগগিরিই সংশ্লিষ্টদের মতামত নিয়ে চূড়ান্ত করা হবে। এরপর কেবিনেটে পাঠানো হবে। গভীর সমুদ্রে ভালো পরিমাণে গ্যাস মজুদ রয়েছে ধারনা করা হচ্ছে।
পিএসসিতে কি ধরনের পরিবর্তন থাকছে এমন প্রশ্নের জবাবে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান বলেন, দর কিছুটা হয়তো বাড়তে পারে। প্রতিবেশী দেশসমূহের গ্যাসের দরের সঙ্গে কিছুটা সামঞ্জস্য আনা হবে। আগের মতোই বাক্সের ক্যারিড শেয়ার ১০ শতাংশ অবিকল থাকছে। এতে বাপেক্সের সক্ষমতা বাড়বে, তাদের লোকজন হাতে কলমে শিক্ষা নিতে পারবে।
তিনি বলেন, ভোলায় ৩টি কূপ খননের কাজ শুরু হয়েছে। আমরা নদীগর্ভে গ্যাস পাওয়ার সম্ভাবনা দেখছি। সুনেত্র থেকে শুরু করে কিশোরগঞ্জের নিকলী হয়ে ভোলা পর্যন্ত গ্যাস প্রাপ্তির সম্ভাবনার কথা বলা হচ্ছে। আমাদের গ্যাসের চাহিদা আরও বাড়বে, উৎপাদনও বাড়বে। নতুন গ্যাস পাওয়ার সম্ভাবনা নেই এ কথার সঙ্গে আমি একমত না। আমাদের চেষ্টা থাকবে নিজেরটুকু কিভাবে তুলতে পারি। তারপর অন্য চিন্তা।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমেরিকান কোম্পানি শেভরন বিবিয়ানায় নতুন এলাকায় অনুসন্ধান কার্যক্রম পরিচালনা করবে। ওই এলাকাগুলো এক সময় তাদেরই ছিল, ছেড়ে দিয়েছিল। এখন আবার প্রস্তাব নিয়ে এসেছে। আমরা সম্মত হয়েছি, আগের সব শর্তেই একটি সম্পূরক চুক্তি স্বাক্ষরিত হবে। আগামী পনের থেকে ২০ দিনের মধ্যে চুক্তি হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বিবিয়ানায় অতিরিক্ত উৎপাদন গ্যাস ফিল্ড ঝুঁকিতে ফেলতে পারে কিনা। এমন প্রশ্নের জবাবে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান বলেন, আমরা তাদের সঙ্গে কথা বলেছি, টেকনিক্যালি যতটুকু সম্ভব সেটুই উত্তোলন করা হচ্ছে। এখানে ঝুঁকির নেওয়ার কোন অবকাশ নেই। তাদের প্রযুক্তি অনেক ভালো, সেদিক থেকেও তারা অনেকখানি সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে। ফেনী এলাকায় সিসমিক সার্ভে পরিচালনা করা হচ্ছে। এখানে চীনা কোম্পানির সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করছে বাপেক্স। চীনা কোম্পানি পাহাড়ি জোনে, আর বাপেক্স সমতলে কাজ করছে।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান বলেন, সাতক্ষীরা সীমান্ত দিয়ে ভারত থেকে গ্যাস আমদানির বিষয়ে আলোচনা চলছে। এখনও চুক্তি হয়নি। আমরা এমনও ভাবছি কোথাও কম চাপে গ্যাস পাওয়া গেলে আঞ্চলিকভাবে বিতরণ করা যায় কিনা। তার সম্ভাব্যতা যাচাই করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, উন্নয়নের অন্যতম নিয়ামক হচ্ছে জ্বালানি। সরকার এর সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে কাজ করে যাচ্ছে। স্পর্ট মার্কেটে অস্বাভাবিক দরের কারণে এলএনজি আমদানি আপাতত বন্ধ।