বিদ্যুতের কবর খোঁড়ায় মত্ত জ্বালানি বিভাগ!



সেরাজুল ইসলাম সিরাজ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
বিদ্যুতের কবর খোঁড়ায় মত্ত জ্বালানি বিভাগ!

বিদ্যুতের কবর খোঁড়ায় মত্ত জ্বালানি বিভাগ!

  • Font increase
  • Font Decrease

সরকার শিল্পকে লক্ষ্য করে বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করছে, আর উদ্যোক্তারা শিল্প চালুকরার আগেই ক্যাপটিভ বসাচ্ছেন। সরকারের নতুন নতুন বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করছে সেগুলোর ভাগ্য কি হবে!

এখনই চাহিদা না থাকায় অনেক বিদ্যুৎ কেন্দ্র অলস বসে থাকছে। বিদ্যুৎ কেন্দ্র চলুক আর না চলুক মাসে ১৮’শ কোটি টাকার মতো ক্যাপাসিটি চার্জ দিতে হচ্ছে। উৎপাদন ক্ষমতা যত বৃদ্ধি পাবে ক্যাপাসিটি চার্জের অঙ্কও সমানতালে ‍বড় হবে। এতে করে বিদ্যুৎ খাত সংকটে পড়তে পারে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।

বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বার্তা২৪.কমকে বলেছেন, সংকটে হবে কি, অলরেডি শুরু হয়ে গেছে। চাহিদা না থাকায় বিদ্যুৎ কেন্দ্র বসে থাকছে। বিদ্যুৎ কেন্দ্র বসে থাকলেও ক্যাপাসিটি চার্জ দিতে হচ্ছে।

বিদ্যুৎ বিভাগের মাস্টার প্লানে বলা হয়েছে প্রতি বছর ১০ থেকে ১২ শতাংশ হারে চাহিদা বৃদ্ধি পাবে। করোনা, বিশ্ব মন্দাসহ নানা কারণে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) প্রবৃদ্ধির প্রাক্কলন মিলছে না। ২০২২ সালে বিদ্যুতের চাহিদা হওয়ার কথা ছিল ২০৪৪০ মেগাওয়াট। গত ১৭ এপ্রিল পিক আওয়ারে বাংলাদেশ ১৪ হাজার ৭৮২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহের রেকর্ড করেছে। ওই দিন ২৪ ঘণ্টায় ২৯ কোটি ৯৪ লাখ ৭৬ হাজার ৪৮২ ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছে। অর্থাৎ গড়ে ১২ হাজার ৪৭৮ মেগাওয়াট লোডে চলেছে বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো।

প্রকৃতপক্ষে বর্তমানে বিদ্যুতের চাহিদা ১০ থেকে ১৪ হাজারের ঘরে উঠানামা করছে। শীতের সময় এই চাহিদা ৮ থেকে ১০ হাজারে ওঠা-নামা করে। শিল্পায়নের কথা চিন্তা করে ২০৩০ সালের মধ্যে ৪০ হাজার মেগাওয়াট ও ২০৪০ সালে ৬০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।

শতভাগ বিদ্যুতায়ন হয়েছে এখন বিদ্যুতের ব্যবহার বৃদ্ধির একটি মাত্র পথ খোলা রয়েছে শিল্প। শিল্পায়ন হচ্ছেও, কিন্তু প্রকৃত অর্থে বিদ্যুতের চাহিদায় তারতম্য দেখা যাচ্ছে না। শিল্পে বিদ্যুতের ব্যবহার আশানুরূপ না হওয়ায় অনেকদিন ধরেই শঙ্কার কথা বলা হচ্ছে। এর প্রধান কারণ হচ্ছে গণ হারে ক্যাপটিভ বসানো।

বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) সুত্র জানিয়েছে, প্রতি মাসে গড়ে ১২০ থেকে ১৫০ মেগাওয়াট ক্যাপটিভের আবেদন (লাইসেন্সের) জমা পড়ছে। চলতি মাসে শুধু গ্যাস ভিত্তিক ২৭টি প্রস্তাবে (নতুন ১৩ টি ৩৯ মেগাওয়ার্ট এবং ১৪ টির লোডবৃদ্ধি ৬৯ মেগাওয়াট) ১০৮ মেগাওয়াট ক্যাপটিভের আবেদন জমা পড়েছে। আগের মাসে (২২ আগস্ট) কমিশনের সভায় ৫৫ টি ক্যাপটিভের লাইসেন্সের আবেদন তোলা হয়। যার মোট বিদ্যুৎউৎপাদন ক্ষমতা ১৪৯.০৮ মেগাওয়াট। নতুন ১০৫.৮ মেগাওয়াট, লোড বৃদ্ধি ১০টি ৪৩.১৭ মেগাওয়াট, ৪টির লাইসেন্স নবায়নের আবেদন। বেশকিছু ফেলে রাখা হয়েছে কাগজে ঘাটতি থাকায়।

বিইআরসির সদস্য (অর্থ, প্রশাসন ও আইন) আবু ফারুক বার্তা২৪.কমকে বলেছেন, অনেকেই ক্যাপটিভের জন্য আবেদন নিয়ে আসছে। বিতরণ কোম্পানির সঙ্গে গ্যাস সরবরাহের চুক্তি থাকলে আমরা লাইসেন্স দিচ্ছি। তবে ক্যাপটিভ থেকে বের হয়ে আসাউচিত। ক্যাপটিভের কারণে অসম প্রতিযোগিতা তৈরি হচ্ছে।

বিপিডিবির প্রাক্কলন অনুযায়ী বছরে চাহিদা বাড়ছে ১৫০০ থেকে ১৮০০ মেগাওয়াট। অর্থাৎমাসে চাহিদা বৃদ্ধির যে প্রাক্কলন করা হয়েছে সেই জায়গা প্রায় পুরোটাই দখল করে নিচ্ছে ক্যাপটিভ। বসে থাকছে বেজড লোড বিদ্যুৎ কেন্দ্র, ভবিষ্যতে আরও বেশি বসে থাকার প্রেক্ষাপট তৈরি হচ্ছে। ভবিষ্যতে ক্যাপাসিটি চার্জের রেশ কোথায় গিয়ে ঠেকবে তা নিয়ে শঙ্কায় বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডও। একে অর্থনীতির ভাষায় ’দারিদ্রের দুষ্ট চক্র”র সঙ্গে তুলনা করেছেন জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা।

ক্যাপটিভ প্রশ্নে উদ্যোক্তাদের বক্তব্য হচ্ছে তারা নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ পাচ্ছেন না, তাই বাড়তি বিনিয়োগ করে ক্যাপটিভ বসাতে হচ্ছে। কয়েক সেকেন্ডের জন্য লোডশেডিং হলেও বিপুল পরিমাণ কাঁচামাল নষ্ট হয়ে যায়। বিপিডিবির বক্তব্য হচ্ছে ব্যবসায়ীরা আংশিক সত্য বলছেন। ২০১২ সালে নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুতের গ্যারান্টি দিয়ে কিউ শ্রেণি চালু করা হয়েছিল। বিশেষ লাইন দিয়ে তাদের বিদ্যুৎ দেওয়ার কথা। একজন উদ্যোক্তাও আবেদন নিয়ে আসেননি। প্রকৃত সত্য হচ্ছে ক্যাপটিভের সাশ্রয়ী বিদ্যুৎ।

ক্যাপটিভে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের খরচ পড়ছে ৮.৮২ টাকা। শিল্পের জন্য একই পরিমাণ বিদ্যুৎ কিনতে হলে (পিক আওয়ারে) গুণতে হচ্ছে ১০.৬৯ টাকা। অর্থাৎ ইউনিট প্রতি দরেপ্রায় ১.৮৭ টাকার মতো হেরফের হচ্ছে। একটি ৮ মেগাওয়াট ক্যাপটিভ বিদ্যুৎ কেন্দ্র ২৪ ঘণ্টায় ১ লাখ ৯২ হাজার ইউনিট উৎপাদন করছে। ইউনিট প্রতি ১.৮৭ টাকা হারে সাশ্রয় হলে দিনে দাঁড়াচ্ছে ৩ লাখ ৫৯ হাজার টাকার মতো। এভাবে যদি মাস ও বছর হিসেব করা যায় তাহলে সহজেই অনুমাণ করা যায় ক্যাপটিভের অঙ্ক। এর বাইরে লাইনের বিদ্যুতে রয়েছে ডিমান্ড চার্জ ও অন্যান্য মাশুল। যা ক্যাপটিভে নেই।

ক্যাপটিভের কারণে আরেক দিক দিয়েও লোকসানের শিকার হচ্ছে রাষ্ট্র। ১ মিলিয়ন ঘনফুটগ্যাস দিয়ে ক্যাপটিভে কমবেশি ৪ মেগাওয়াট (৪ হাজার ইউনিট) বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব। ওই পরিমাণ গ্যাস দিয়ে কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎ কেন্দ্র কমপক্ষে ৬ মেগাওয়াট ইউনিট বিদ্যুৎ পাওয়া যায়। থামরুল অনুযায়ী বিদ্যামান ২৮০০ মেগাওয়াট ক্যাপটিভে ৭০০ মিলিয়ন গ্যাস ব্যবহৃত হচ্ছে। ওই গ্যাস কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎ কেন্দ্রে সরবরাহ করা গেলে ৪২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন পাওয়া যেতো।

বিইআরসিতে দাখিলকরা পিডিবির এক চিঠিতে বলা হয়েছে, ক্যাপটিভ পাওয়ারে গ্যাসসরবরাহ করতে গিয়ে বিতরণ কোম্পানির অবহেলার শিকার হচ্ছে দক্ষ কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎ কেন্দ্র। এতে একদিকে বিদ্যুৎ কেন্দ্র অলস বসে থাকছে, অপরদিকে সরকারের ভর্তুকির গ্যাস ক্যাপটিভ পাওয়ার প্ল্যান্টে অপচয় হচ্ছে।

গ্যাসের অভাবে যখন অর্ধেকের বেশি বিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ, তখন দেদারছে ক্যাপটিভ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের অনুমোদন বিস্ময়ের সৃষ্টি করেছে। ক্যাপটিভে গ্যাস সংযোগকে বিদ্যুৎ খাতের কবর খোঁড়ার সঙ্গে তুলনা করেছেন জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা।

এই প্রক্রিয়ার গোর খোদকের ভূমিকায় রয়েছে রাষ্ট্রীয় দুই প্রতিষ্ঠান তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন এন্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (টিজিটিডিসিএল) ও কর্ণফূলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (কেজিডিসিএল)। কঠোরভাবে বিধি নিষেধ আরোপ করা থাকলেও শত শত ক্যাপটিভ গ্যাস সংযোগ দিয়ে যাচ্ছে কোম্পানি দু’টি। কখনও বোর্ডের অনুমোদন নিয়ে, কখনও বোর্ডের অনুমোদন ছাড়াই। দীর্ঘদিন ধরেই কোম্পানি দু’টির বোর্ড চেয়ারম্যানের দায়িত্বে রয়েছেন জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সিনিয়র সচিবগণ। যে কারণে অন্যরা মুখ খোলার সাহস দেখান না।

সবচেয়ে বেশি সংযোগ বাণিজ্যের অভিযোগ রয়েছে তিতাস গ্যাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হারুনুর রশীদ মোল্লাহ ও কর্ণফূলী গ্যাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমএ মাজেদরে বিরুদ্ধে। কোন রকম নিয়ম নীতির তোয়াক্কা করেই ক্যাপটিভে সংযোগ দিয়ে যাচ্ছেন।

ক্যাপটিভ পাওয়ার প্লান্টে (শিল্প কারখানায় স্থাপিত বিদ্যুৎ উৎপাদন জেনারেটর) নতুন করেআর গ্যাস সংযোগ না দেওয়ার আদেশ দেওয়া হয় ২০১৫ সালে আগস্টে। ওই আদেশ বলা হয় ‘ক্যাপটিভ পাওয়ার প্লান্টের জন্য পুনরাদেশ না দেয়া পর্যন্ত গ্যাস সংযোগ প্রদান না করার বিষয়ে সরকার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে।

অনদিকে ১০ মেগাওয়াটের বেশি ক্যাপটিভে গ্যাস সংযোগ দিতে বিদ্যুৎ বিভাগের পুর্বানুমতি নেওয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। সেই বাধ্যবাধকতা এড়াতে একই শিল্প কারখানায় পৃথক আইডি দিয়ে সংযোগ প্রদানের তথ্য পাওয়া গেছে। ভালুকা উপজেলার জামিরদিয়ায় অবস্থিত এনআর গ্রুপকে ভিন্ন তিনটি গ্রাহক সংকেত দিয়ে ২৪.৯২ মেগাওয়াট ক্যাপটিভ দেওয়া হয়েছে। এগুলো হচ্ছে এনআরজি স্পিনিং মিলস ১৬.২৫ মেগাওয়াট, এনআরজি কম্পোজিট ইয়ার্ন ডাইন ৩.৮৭ মেগাওয়াট, এনআরজি নিট কম্পোজিট ৪.৮০ মেগাওয়াট। এনআরজি কম্পোজিট ইয়ার্ন ডাইন ৩.৮৭ মেগাওয়াট থেকে বৃদ্ধি করে ১১.৯০ মেগাওয়াট, এনআরজি নিট কম্পোজিট ৪.৮০ মেগাওয়াট থেকে বর্ধিত করে ৬.২০ মেগাওয়াটের অনুমোদন দিয়েছে তিতাস। এছাড়া একই কম্পাউন্ডে এনআরজি হোমটেক্স নামে আরেকটি নতুন (৭.৭৮ মেগাওয়াট) সংযোগ অনুমোদন দিয়েছে।

আবার কেউ কেউ গোপনে লেনদেনের মাধ্যমে তিতাসের অনুমোদন পেয়ে গেছেন। নারায়নগঞ্জের চৈতি কম্পোজিট টেক্সটাইল ১২.৯৩ মেগাওয়াট, টঙ্গীতে অবস্থিত স্কাই বিডি লিমিটেড ১২.২৫ মেগাওয়াট, মুন্সীগঞ্জের প্রিমিয়ার সিমেন্ট ফ্যাক্টরীতে ১২.৫১ মেগাওয়াটেরনতুন ক্যাপটিভের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। মতিন স্পিনিং মিলের লোড বাড়িয়ে ২২.০৪ মেগাওয়াট করা হয়েছে। পিছিয়ে নেই জালালাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানিও। তারাআকিজ ফুড এন্ড বেভারেজ কোম্পানিতে ৯.৫৮ মেগাওয়াটের ক্যাপটিভের অনুমোদন দিয়েছেন।

২০১০-২০১১ সালের দিকে ভয়াবহ বিদ্যুৎ সংকটের কারণে শিল্প কারখানায় নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ নিশ্চিত করতে ক্যাপটিভ (শিল্প কারখানায় স্থাপিত বিদ্যুত উৎপাদন জেনারেটর) বিদ্যুৎ কেন্দ্র অনুমোদন দেওয়া হয়। এখন সেই চিত্র অনেকটাই বদলে গেছে, সরকার চাহিদারচেয়ে অনেক বেশি উৎপাদনে সক্ষমতা অর্জন করেছে। বর্তমানে কমবেশি ১৫ হাজার মেগাওয়াট চাহিদার বিপরীতে উৎপাদন ক্ষমতা ২৫ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। তারপরও নতুন নতুন ক্যাপটিভ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) সূত্র জানিয়েছে প্রায় ২৮০০ মেগাওয়াটের মতো ক্যাপটিভ বিদ্যুৎ রয়েছে। পেট্রোবাংলার ওয়েবসাইটের তথ্য মতে বিদ্যুৎ কেন্দ্রে ২২৫২এমএমসিএফডি চাহিদার বিপরীতে গত ২৩ সেপ্টেম্বর গ্যাস সরবরাহ করা হয়েছে মাত্র ৯৭৩.৭ এমএমসিএফডি। সরবরাহ ঘাটতি থাকায় বেশিরভাগ বিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ থেকেছে। কোথাও কোথাও আংশিক উৎপাদন হয়েছে। অন্যদিকে ক্যাপটিভে ৭৩.৭ এমএমসিএফডিগ্যাস সরবরাহ করার তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে। তবে এই হিসাবেও শুভঙ্করের ফাঁকি বলে মন্তব্য করেছেন অনেকেই। তারা বলেছেন, থামরুল অনুযায়ী ২৮’শ মেগাওয়াটে ৭০০এমএমসিএফ গ্যাস ব্যবহার হওয়ার কথা। হয়তো সবগুলো একসঙ্গে চলছেনা, এতে কিছুটা তারতম্য হতে পারে, তবে পেট্রোবাংলার ৭৩.৭ এমএমসিএফডি তথ্য বিশ্বাসযোগ্য নয়। লাইনে গ্যাসের চাপ কমে গেলে প্রথম ধাক্কাই বিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ হয়ে যায়, তখনও ক্যাপটিভ সচল থাকে। অর্থাৎ ক্যাপটিভ যতো বাড়বে বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বসে থাকার হার বৃদ্ধি পাবে।

বিদ্যুৎ বিভাগের উন্নয়ন ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান পাওয়ার সেল’র মহাপরিচালক মোহম্মদ হোসাইন বার্তা২৪.কমকে বলেছেন, ক্যাপটিভ বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো এখনই বন্ধ করা দরকার এগুলোতে গ্যাসের অপচয় হচ্ছে। ক্যাপটিভের গ্যাস বিদ্যুৎ কেন্দ্রে দিলে বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব। আমরা নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ দিতে প্রস্তুত আছি। আমরা এমনও বলেছি, চুক্তি থাকবে বিতরণ কোম্পানি যদি নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ দিতে ব্যর্থ হয় তাহলে তারা জরিমানা হবে। তারপরও তারা আগ্রহ দেখাচ্ছে না। ক্যাপটিভের কারণে দ্বৈত্ব বিনিয়োগ হচ্ছে। ক্যাপটিভ থেকে বের করে আনতে শিল্পে বিদ্যুতের দাম কমানোর চিন্তা ভাবনাও চলছে।

বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) সদস্য (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) ধৃর‌্যটী প্রসাদ সেন বার্তা২৪.কমকে বলেন, ওরা যদি ওদের মতো বিদ্যুৎ উৎপাদন করে তাহলে অবশ্যই সমস্যা। আমরা (বিপিডিবি) শুধু জেনারেশন না, এর সঙ্গে সঞ্চালন ও বিতরণ লাইন তৈরি করছি। এগুলো যদি অব্যবহৃত পড়ে থাকে তাহলেতো সমস্যাই। আমি মনে করে ক্যাপটিভকোন সমাধান না।

তিনি বলেন, এভাবে যদি ক্যাপটিভ দেওয়া হয়, তারা যে গ্যাস ব্যবহার করবে। একই গ্যাস দিয়ে দেড়গুণ বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব। আমাদের বিদ্যুতে কোন সংকট নেই, জ্বালানি পেলে চাহিদার তুলনায় বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা রয়েছে। সমস্যা রয়েছে জ্বালানিতে। গ্যাসের অভাবে আমাদের বিদ্যুৎ কেন্দ্র বসিয়ে রাখলে সেখানও ক্ষতি। ক্যাপটিভকে আমি সলিউশন মনে করি না। বিদ্যৎ সেক্টরের জন্য না, কারো জন্যই না। শিল্প মালিকরা যদি নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুতের প্রস্তাব নিয়ে আসেন,তাহলে সেভাবে সিস্টেম গড়ে উঠবে। বিতরণ কোম্পানিরও সক্ষমতা বাড়বে, তখন জনগণও নিরবিচ্ছিন্ন পাবে।

বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রীর কাছে প্রশ্ন ছিল ক্যাপটিভের অনুমোদন দেয়া হচ্ছে কেনো? জবাবে বলেছেন, শিল্প মালিকদের দাবি হচ্ছে তারা নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ পাচ্ছে না, তাই ক্যাপটিভ নিচ্ছে। ক্যাপটিভের জন্য সময় বেঁধে দিতে হবে। ধীরে ধীরে ক্যাপটিভ ফেজ আউট করতে হবে। না হলে সমস্যা জটিল হবে।

   

ইসলামী ব্যাংকের ১০ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড ঘোষণা



নিউজ ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসি-এর পরিচালনা পর্ষদ ব্যাংকের শেয়ারহোল্ডারদের জন্য ২০২৩ সালে ১০% ক্যাশ ডিভিডেন্ড সুপারিশ করেছে। ব্যাংকের ৪১তম বার্ষিক সাধারণ সভার অনুমোদন সাপেক্ষে এ ডিভিডেন্ড প্রদান করা হবে।

বুধবার (২৪ এপ্রিল) ব্যাংকের চেয়ারম্যান আহসানুল আলম-এর সভাপতিত্বে পরিচালনা পর্ষদের সভায় এ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। সভায় ভাইস চেয়ারম্যান তানভীর আহমেদসহ অন্যান্য পরিচালকবৃন্দ, ম্যানেজিং ডাইরেক্টর ও সিইও মুহাম্মদ মুনিরুল মওলা এবং অ্যাডিশনাল ম্যানেজিং ডাইরেক্টর ও কোম্পানি সেক্রেটারি জে কিউ এম হাবিবুল্লাহ, এফসিএস উপস্থিত ছিলেন।

আগামী ২৫ জুন ২০২৪, মঙ্গলবার ব্যাংকের ৪১তম বার্ষিক সাধারণ সভা অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। লভ্যাংশ প্রাপ্তি এবং সাধারণ সভায় যোগদানের ক্ষেত্রে রেকর্ড তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে ১৬ মে ২০২৪। এ ছাড়া সভায় অন্যান্য আলোচ্যসূচির সাথে ৩১ মার্চ শেষ হওয়া ২০২৪ সালের প্রথম প্রান্তিকের অনিরীক্ষিত আর্থিক বিবরণী অনুমোদন করা হয়।

;

টেন মিনিট স্কুলের কোর্স ফি বিকাশ পেমেন্টে ১৫% ক্যাশব্যাক



নিউজ ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

বিকাশ অ্যাপ থেকে দেশের শীর্ষস্থানীয় অনলাইন শিক্ষামূলক প্ল্যাটফর্ম টেন মিনিট স্কুল-এর নির্দিষ্ট কোর্স নিয়ে পেমেন্ট করলেই গ্রাহকরা পাচ্ছেন ১৫% ইনস্ট্যান্ট ক্যাশব্যাক, সর্বোচ্চ ২০০ টাকা পর্যন্ত। বিকাশ অ্যাপের হোম স্ক্রিনের সাজেশনস সেকশন থেকে ‘টেন মিনিট স্কুল’ সিলেক্ট করে ৩০ জুন পর্যন্ত অফারটি গ্রহণ করা যাবে।

টেন মিনিট স্কুল-এর লাইভ কোর্স, স্পোকেন ইংলিশ, আইইএলটিএস, ফ্রিল্যান্সিং এর মতো ভাষা শিক্ষা ও স্কিল ডেভেলপমেন্ট কোর্স, ইংলিশ মাস্টার্স, কনটেন্ট ক্রিয়েশন, ডিজিটাল মার্কেটিং-এর মতো বান্ডেল কোর্স, বুয়েট, মেডিকেল, ভার্সিটির ভর্তি পরীক্ষার কোর্স, এসএসসি-এইচএসসি প্রস্তুতি ও অনলাইন ব্যাচের জন্য একাডেমিক কোর্স, চাকরির নিয়োগ পরীক্ষার প্রস্তুতি সহ নানা ধরনের কোর্স নিতে পারবেন বিকাশ গ্রাহকরা এই অফারের আওতায়।

অফারের সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যাবে https://www.bkash.com/campaign/10minuteschool-bkash-offer লিংকটিতে।

 

;

এক দিনের ব্যবধানে ফের কমল সোনার দাম



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

দেশের বাজারে সোনার দামের উত্থান-পতন অব্যাহত আছে। একদিনের ব্যবধানে সোনার দাম ভরিতে ২ হাজার ১০০ টাকা কমছে। তাতে ভালো মানের, অর্থাৎ হল-মার্ক করা ২২ ক্যারেট সোনার দাম দাঁড়িয়েছে প্রতি ভরি ১ লাখ ১৪ হাজার ১৯০ টাকায়। নতুন এ দাম আজ বুধবার থেকেই কার্যকর হবে।

বুধবার (২৪ এপ্রিল) বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি (বাজুস) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি জানিয়েছে। এতে বলা হয়, স্থানীয় বাজারে খাঁটি সোনার দাম কমেছে, সে জন্য সোনার নতুন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে।

নতুন দাম অনুযায়ী প্রতি ভরি (১১ দশমিক ৬৬৪ গ্রাম) ২২ ক্যারেটের স্বর্ণের দাম পড়বে ১ লাখ ১৪ হাজার ১৯০ টাকা। এছাড়া ২১ ক্যারেটের প্রতি ভরি ১ লাখ ৯ হাজার টাকা, ১৮ ক্যারেটের প্রতি ভরি ৯৩ হাজার ৪২৯ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম ৭৫ হাজার ২০৯ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।

এর আগে, ২৩ এপ্রিল সোনার দাম ভরিতে ৩ হাজার ১৩৮ টাকা কমিয়ে ভালো মানের, অর্থাৎ হল-মার্ক করা ২২ ক্যারেট সোনার দাম নির্ধারণ করা হয় ১ লাখ ১৬ হাজার ২৯০ টাকা। এছাড়া ২১ ক্যারেটের প্রতি ভরি ১ লাখ ১০ হাজার ৯৯৫ টাকা, ১৮ ক্যারেটের প্রতি ভরি ৯৫ হাজার ১৪৩ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরি সোনার দাম ৭৬ হাজার ৫৮৬ টাকা নির্ধারণ করা হয়।

আর গত ২১ এপ্রিল ভরিতে ৬৩০ টাকা বাড়িয়ে ২২ ক্যারেটের এক ভরি সোনার দাম ১ লাখ ১৯ হাজার ৪২৮ টাকা নির্ধারণ করেছিল বাজুস। এছাড়া ২১ ক্যারেটের প্রতি ভরি ১ লাখ ১৪ হাজার ৪ টাকা, ১৮ ক্যারেটের প্রতি ভরি ৯৭ হাজার ৭০৯ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরি সোনার দাম ৭৮ হাজার ৬৬২ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছিল। যা সেদিন বিকেল ৩টা ৩০ মিনিট থেকে কার্যকর হয়েছিল।

তার আগে, ২০ এপ্রিল সোনার দাম ক‌মিয়ে‌ছিল বাজুস। যা ওইদিনই কার্যকর হয়। ওই দাম অনুযায়ী রোববার বিকেল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত সবচেয়ে ভালো মানের বা ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি সোনার দাম ছিল ১ লাখ ১৮ হাজার ৭৯৮ টাকা, ২১ ক্যারেট সোনার দাম ১ লাখ ১৩ হাজার ৩৯৭ টাকা, ১৮ ক্যারেট ৯৭ হাজার ১৯৭ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরি সোনার দাম ছিল ৭৮ হাজার ২৪২ টাকা।

;

জ্বালানি তেল পরিবহনের খোলনলচে বদলে দিচ্ছে ৩ মেগা প্রকল্প



সেরাজুল ইসলাম সিরাজ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, ঢাকা
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

তিন মেগা প্রকল্প বাংলাদেশের জ্বালানি তেল পরিবহনের খোলনলচে বদলে দিতে যাচ্ছে। মেগা প্রকল্প তিনটি হলো, এসপিএম (সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং), বাংলাদেশ-ইন্ডিয়া ফ্রেন্ডশিপ পাইপলাইন প্রকল্প এবং ঢাকা-চট্টগ্রাম পাইপলাইন প্রকল্প।

এর মধ্যে এসপিএম (সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং) ও বাংলাদেশ-ইন্ডিয়া ফ্রেন্ডশিপ পাইপলাইন ইতোমধ্যেই অপারেশনে এসেছে। আর ঢাকা-চট্টগ্রাম পাইপলাইন চলতি বছরেই শেষ হতে যাচ্ছে বলে জানিয়েছে মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র।

এখন ভোক্তার হাতে জ্বালানি তেল পৌঁছাতে বহুঘাট ঘুরতে হবে না। আবার বৃষ্টি-বাদল কিংবা হরতাল, ধর্মঘটেও জ্বালানি তেল সরবরাহ থাকবে নির্ভার। শুধু কী নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ নিশ্চয়তা, তাও নয়, এক এসপিএম বছরে সাশ্রয় করবে কমপক্ষে ১ হাজার কোটি টাকা! কমে যাবে জ্বালানি তেলের সিস্টেম লসও।

জ্বালানি তেল পরিবহনের খোলনলচে পাল্টে দিচ্ছে মেগা তিন প্রকল্প

এজন্য কক্সবাজারের মহেশখালীতে স্থাপন করা হয়েছে, এসপিএম উইথ ডাবল পাইপলাইন। এতদিন আমদানি করা জ্বালানি তেলের জাহাজ গভীর সমুদ্রে নোঙর করতো। সেখান থেকে লাইটার জাহাজে করে রিফাইনারি ট্যাংকে পৌঁছাতে সময় লাগত ১১, ১২ দিন। এসপিএম হওয়ায় সমপরিমাণ তেল পরিবহনে সময় লাগবে মাত্র ৪৮ ঘণ্টা। এতে করে মাদার ভেসেলের ওয়েটিং চার্জ এবং লাইটারেজ জাহাজের পরিবহন খরচ আর থাকছে না।

মহেশখালী দ্বীপের দক্ষিণ-পশ্চিমে গভীর সমুদ্রে স্থাপন করা হয়েছে, ভাসমান বয়া। সেই বয়া থেকে সাগরের তলদেশ দিয়ে ৩৬ ইঞ্চি ব্যাসের পৃথক দুটি পাইপলাইন পৌঁছে গেছে স্টোরেজ ট্যাংক টার্মিনালে। একটি ক্রড অয়েল সঞ্চালনের জন্য। আরেকটি দিয়ে সফলভাবে ডিজেল পরিবহন কার্যক্রম ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে।

গভীর সমুদ্রে বয়াতে এসে নোঙর করবে মাদার ভেসেল। সেখান থেকে পাাইপলাইনের মাধ্যমে কয়েক ঘণ্টায় তেল পৌঁছে যাবে চট্টগ্রামের জ্বালানি তেলের প্রধান স্থাপনায়।

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেছেন, জ্বালানি তেল ব্যবস্থাপনা সাশ্রয়ী ও টেকসই করতে এসপিএম (সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং) কার্যকরী অবদান রাখবে। প্রকল্পটি চালু হলে বছরে ১ হাজার কোটি টাকা খরচ সাশ্রয় হবে।

তিনি বলেন, প্রকল্পের আওতায় ২শ ২০ কিলোমিটার পাইপলাইনে পাশাপাশি তৈরি করা হয়েছে ৬টি বিশালাকৃতির স্টোরেজ ট্যাঙ্ক; যার মাধ্যমে বাংলাদেশের তেল মজুত সক্ষমতা পৌঁছে গেছে নতুন এক উচ্চতায়।

এসপিএম প্রকল্পের পরিচালক শরীফ হাসনাত বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘বড় জাহাজ থেকে তেল খালাস করতে অন্তত ১১ দিন সময় লাগে। কখনো কখনো এই তেল খালাস করতে আরো সময় লেগে যায়। বিশেষ করে সমুদ্র উত্তাল হয়ে পড়লে তখন খালাস করা অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। জাহাজ মালিকদের সঙ্গে চুক্তির চেয়ে বেশি সময় লাগায় কখনো কখনো জরিমানা গুণতে হতো। এসপিএম প্রকল্প বাস্তবায়ন হওয়ায় ২৮ থেকে ৪৮ ঘণ্টায় ডিজেল ও ক্রুড অয়েল খালাস করা সম্ভব হবে। এতে একদিকে যেমন জাহাজ ভাড়া কমে আসবে, অন্যদিকে তেল পরিবহনে সিস্টেম লস ও নানান ধরনের চুরিও প্রতিরোধ সম্ভবপর হবে।

বাংলাদেশ জ্বালানি তেল উৎপাদন করে না। গ্যাস ফিল্ডগুলো থেকে প্রাপ্ত কনডেনসেট থেকে পেট্রোল এবং ৪০ শতাংশের মতো অকটেন জোগান আসে। বিপুল পরিমাণ ডিজেলসহ অন্যান্য পণ্য আমদানি করে জোগান দেওয়া হয়। বিপুল পরিমাণ জ্বালানি আমদানি করা হয়, নদীপথে। কিন্তু নদী বন্দরগুলোতে নাব্যতার অভাবে বড় বড় জাহাজ বন্দরে ভিড়তে পারে না। সে কারণে নির্ভর করতে হয় লাইটারেজ জাহাজের ওপর।

মেগা প্রকল্প বদলে দিচ্ছে জ্বালানি তেল পরিবহনের ব্যবস্থা

মাদারভেসেল থেকে লাইটার বা ছোট জাহাজে করে তেল আনা হয়, বিপিসি’র (বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন) ডিপোতে।

বিপিসি থেকে আবার জাহাজে করে তেল দেশের বিভিন্ন জায়গায় পৌঁছে দেওয়া হয়। ক্ষেত্র বিশেষে রেলের ওয়াগন এবং ট্যাংকলরিতে করেও তেল পৌঁছাতে নানান রকম ঝাক্কি-ঝামেলা পোহাতে হয়। বিষয়টি ছিল সময়সাপেক্ষ ও অনেক কিছুর ওপর নির্ভরশীল। সেখানেও পরিবর্তনের হাওয়া লাগতে শুরু করেছে।

অবশেষে, ঢাকা-চট্টগ্রাম তেলের পাইপলাইন করার কাজও প্রায় শেষ হয়ে এসেছে। ২০১৭ সালে প্রাক-সমীক্ষা শেষ হলেও নানা কারণে নির্ধারিত গতিতে চলতে পারেনি প্রকল্পটি।

বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) অর্থায়নে গৃহীত এই প্রকল্পের আওতায় ঢাকা-চট্টগ্রাম ২শ ৩৭ কিলোমিটার, কুমিল্লা থেকে চাঁদপুর পর্যন্ত ৫৯ কিলোমিটার, ফতুল্লা থেকে থেকে গোদনাইল ডিপো পর্যন্ত সাড়ে ৮ কিলোমিটার পাইপলাইন স্থাপন করা হবে। পাইপলাইনটি চালু হলে বছরে ৬৫ কোটি টাকা পরিবহন খরচ সাশ্রয় হবে বলে আশা করছে বিপিসি।

প্রকল্পের আওতায় ২শ ৩৭ কিলোমিটার পাইপলাইন নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। এখন চট্টগ্রাম ডেচপার্স টার্মিনাল ও নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় রিসিভিং পয়েন্টের ফিনিশিংয়ের কাজ চলছে। ডিসেম্বরের আগেই পাইপলাইনটি চালু করার বিষয়ে আশাবাদী জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগ।

অন্যদিকে, দেশের শস্যভাণ্ডার খ্যাত উত্তরাঞ্চলের জ্বালানি পরিবহন ব্যবস্থা ছিল খুবই জটিল ও বহুঘাট, হাত ঘুরে। লাইটারেজে করে তেল নেওয়া হতো। এছাড়াও ট্যাংকলরি, আরেকটি রুট হচ্ছে রেলওয়ের মাধ্যমে পৌঁছানো। এখন সেখানেও পরিবর্তন এনেছে, বাংলাদেশ-ইন্ডিয়া ফ্রেন্ডশিপ পাইপলাইন।

দেশের উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলায় নিরবচ্ছিন্ন, দ্রুত ও সাশ্রয়ীভাবে জ্বালানি সরবরাহের জন্য ২০১৮ সালে ইন্ডিয়া-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ পাইপ লাইন নির্মাণ প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। ৩ হাজার ৬শ ২৩ কোটি টাকা ব্যয়ে ১শ ৩১.৫০ কিলোমিটার পাইপ লাইন নির্মাণের সময়কাল ছিল ২০২৩ সালের জুন মাস পর্যন্ত। নির্ধারিত সময়ের আগেই পাইপলাইনটি চালু করা হয়েছে বলে জানা গেছে।

ভারতের নুমালীগড় থেকে বাংলাদেশের পার্বতীপুর ডিপো পর্যন্ত বিস্তৃত এই পাইপলাইনের কারণে উত্তরাঞ্চলের দৈনিক অতিরিক্ত ২৯ হাজার মেট্রিক টন জ্বালানি মজুত সক্ষমতা বৃদ্ধি হবে। সহজে বিদ্যুৎকেন্দ্রে জ্বালানি সরবরাহ করা, উত্তরাঞ্চলের ১৬টি জেলায় কম খরচে এবং দ্রুততম উপায়ে জ্বালানি তেল সরবরাহ করা সম্ভব হবে এই পাইপ লাইনের কারণে।

;