‘বাংলাদেশ ৫১ বছরের যাত্রায় কখনোই ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হয়নি’

  • স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল

অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল

অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, বর্তমানে বাংলাদেশে ADB-এর ক্রমবর্ধমান অর্থায়ন দাঁড়িয়েছে ২৭.৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। যার মধ্যে মোট বকেয়া ১১.৬৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, বাংলাদেশ অত্যন্ত সক্ষমতার সাথে নিয়মিত ঋণ পরিশোধ করে চলেছে। বাংলাদেশের ৫১ বছরের যাত্রায় কখনোই দেশি-বিদেশি ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হয়নি। জিডিপি অনুপাতে বাংলাদেশ বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে কম ঋণের দেশের মধ্যে অন্যতম একটি দেশ, মাত্র ৩৪ শতাংশ।

মঙ্গলবার (২৭ সেপ্টেম্বর) দুপুরে, ম্যানিলায় এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)’র সদর দপ্তরে বার্ষিক সভার অংশ হিসাবে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সাথে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)’র প্রেসিডেন্ট মাসাতসুগু আসাকাওয়ার দ্বিপাক্ষিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকের শুরুতে প্রতিষ্ঠার পর থেকে ADB বাংলাদেশের বিষয়গুলো অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করায় অর্থমন্ত্রী আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

অর্থমন্ত্রী অপ্রত্যাশিত অভিঘাত কোভিড-১৯-এর সংকটে এডিবি দ্রুত সাড়া দেওয়ার ক্ষেতে প্রেসিডেন্টের সক্রিয় এবং গতিশীল নেতৃত্বের জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন।

বিজ্ঞাপন

তিনি আরো বলেন, এডিবি এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে অর্থনৈতিক ও স্বাস্থ্য সংকট পুনরুদ্ধারের জন্য বাংলাদেশসহ উন্নয়নশীল সদস্য দেশগুলোকে দ্রুত ভ্যাকসিন ও ব্যয় সহায়তা দিয়ে সাহায্য করেছে। এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যে, বাংলাদেশ-এডিবি কান্ট্রি পার্টনারশিপ স্ট্র্যাটেজি (২০২১-২০২৫), বাংলাদেশের জাতীয় উন্নয়ন ও লক্ষ্যগুলির সাথে সমন্বয় করে তৈরি করা হয়েছে। যা আগামী পাঁচ বছরে আমাদের জন্য ১২-১৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণ সহয়তার যোগান থাকবে বলে আশা করা যায়। আমাদের উন্নয়নের মাইলফলক অর্জনে এডিবির ক্রমাগত সমর্থন বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ।

বাংলাদেশর সক্ষমতা ও অগ্রগতি তুলে ধরে অর্থমন্ত্রী বলেন, আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী ও বিচক্ষণ নেতৃত্বে বাংলাদেশ সকল আর্থ-সামাজিক সূচকে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি সাধন করেছে। সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের উন্নয়ন বিশ্ব সম্প্রদায়ের দ্বারা ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হয়েছে। বাংলাদেশ গত ১৩ বছরে গড়ে ৬.৬% জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। কিন্তু কোভিড-১৯ মহামারী এবং বর্তমান ভূ-রাজনৈতিক সংকটের কারণে, খাদ্য, জ্বালানি, সার, এবং আর্থিক সংকট বিশ্বব্যাপী সরবরাহ চেইনকে ব্যাহত করেছে এবং সারা বিশ্বে মূল্যস্ফীতি বাড়িয়েছে। সামাজিক ও অর্থনৈতিক স্থিতিস্থাপকতা নিশ্চিত করার জন্য, আমাদের এডিবি থেকে বাজেট সহায়তার পাশাপাশি নীতি ভিত্তিক ঋণ (PBL) প্রয়োজন।

বিজ্ঞাপন

এ বিষয়ে অর্থমন্ত্রী এডিবি’র বিশেষ সহযোগিতা কামনা করেন এবং বাংলাদেশও এডিবি সদর দপ্তরের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রাখবে বলে আশা ব্যক্ত করেন।

তিনি আরো বলেন, আমরা দৃঢ়ভাবে আশা করি যে ADB এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে বিশেষ করে বাংলাদেশকে জলবায়ু অভিযোজন, প্রশমন এবং দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাসে অসহায় মানুষদের সাহায্য করার জন্য গতিশীল ভূমিকা পালন করতে পারে। আমি বিশ্বাস করি যে জলবায়ু পরিবর্তনের দুর্বলতা মোকাবেলায় মিশ্র অর্থায়নের পরিবর্তে নমনীয় ঋণ সহায়তা হবে বাস্তবসম্মত পদ্ধতি। এছাড়াও ADB চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের উপর বিশেষ মনোযোগ দিয়ে আইসিটি ভিত্তিক উদ্যোক্তা উন্নয়ন, কৃষি বৈচিত্র্যকরণ, স্থিতিস্থাপক স্বাস্থ্য, শিক্ষা এবং মানসম্পন্ন অবকাঠামোর কৃষি প্রবর্তনে তার উদার সহায়তা প্রসারিত করতে পারে।

বাংলাদেশ ও এডিবির সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তিকে গুর্ত্বারোপ করে অর্থমন্ত্রী বলেন, আগামী বছর বাংলাদেশ ও এডিবির জন্য একটি ঐতিহাসিক মাইলফলক। ২০২৩ সাল আমাদের অংশীদারিত্বের ৫০তম বার্ষিকী হবে। ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে অর্থমন্ত্রী, আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং ১৬৫ মিলিয়ন বাংলাদেশি নাগরিকদের পক্ষ থেকে এডিবি প্রেসিডেন্টকে বাংলাদেশ সফর এবং ৫০ বছর পূর্তি অনুষ্ঠান উদযাপন করার জন্য আমন্ত্রণ জানান।

বিশাল পোর্টফোলিও এবং ADB-এর সাথে দৃঢ় সম্পৃক্ততার কথা বিবেচনা করে, বাংলাদেশ থেকে ADB-এর শীর্ষ ব্যবস্থাপনা ও প্রশাসনে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, বিশেষ করে ভাইস-প্রেসিডেন্ট নিয়োগ করার কথা বিবেচনা করতে অনুরোধ করেন।

এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)’র প্রেসিডেন্ট মাসাতসুগু আসাকাওয়া বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি ও সক্ষমতার ভূয়সী প্রশংসা করেন।

তিনি বলেন, নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মান বাংলাদেশের সক্ষমতার একটি প্রতীক। এজন্য তিনি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃঢ় নেতৃত্বের বিশেষ প্রসংশা করেন। কোভিড-১৯ মহামারির কারণে সৃষ্ট স্বাস্থ্যগত ও আর্থ-সামাজিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বাংলাদেশ গৃহীত পদক্ষেপ এবং টিকা কার্যক্রমেরও প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, শুরু থেকেই বাংলাদেশের প্রতি এডিবি’র বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। এবারের বার্ষিক সভায় বাংলাদেশ যে বিষয়গুলো তুলে ধরেছে সেগুলোও গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা হবে। করোনা মহামারি কাটিয়ে উঠতে বাংলাদেশের সামাজিক এবং অর্থনৈতিক নিরাপত্তা পুনরুদ্ধারে এডিবি শুরু থেকেই বাংলাদেশের পাশে থেকে সহযোগিতা করছে এবং ভবিষ্যতেও বাংলাদেশের পাশে সবসময় এডিবি থাকবে বলে তিনি আশা ব্যক্ত করেছেন।