জালিয়াতির দায়ে দুবাই ও নবীনগর সিএনজির সংযোগ বিচ্ছিন্ন
জালিয়াতি করায় মেসার্স নবীনগর সিএনজি রিফুয়েলিং স্টেশন ও দুবাই সিএনজি রিফুয়েলিং স্টেশনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার কথা নিশ্চিত করেছেন সাভার জোনের ডিজিএম অজিত কুমার দেব। অন্যদিকে লাইসেন্স দেওয়ার আগেই পুনঃসংযোগ দেওয়ায় তিতাস গ্যাসের কাছে ব্যাখ্যা চেয়েছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)।
বিইআরসির লাইসেন্স না থাকায় সম্প্রতি বেশকিছু সিএনজি ফিলিং স্টেশনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। এরমধ্যে সাভার অঞ্চলেই নবীনগর ও দুবাইসহ ১৪টি। সংযোগ বিচ্ছিন্নের পর লাইসেন্স পেতে আবেদন জমা দেয় ৭০টির মতো প্রতিষ্ঠান। সেসব আবেদন বিষয়ে (২৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত) যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে বিইআরসি।
কিন্তু কালিয়াকৈরে অবস্থিত দুবাই সিএনজি ও নবীনগর সিএনজি তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন এন্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির লোকজনকে ম্যানেজ করে ২৫ সেপ্টেম্বর সংযোগ নেন। এ নিয়ে বার্তা২৪.কমে একটি নিউজ প্রকাশ হলে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে।
তিতাস গ্যাস সাভার জোনের ডিজিএম অজিত কুমার দেব বার্তা২৪.কমকে বলেছেন, ওরা আমাদের লোকজনকে লাইসেন্স পাওয়ার মিথ্যা তথ্য দিয়ে পুনঃসংযোগ নিয়েছিল। খবরটি জানার পরেই আবার বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়েছে। আমার নির্দেশনা রয়েছে, কোন প্রতিষ্ঠান লাইসেন্স দেখাতে পারলে তাকে সংযোগ দিয়ে দিতে।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, তিতাস গ্যাসের সহকারি ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী মমতাজ উদ্দিন ওই অপকর্মের মূল হোতা। দুবাই সিএনজির মালিকপক্ষের সঙ্গে আতাত করে কাগজপত্র ছাড়াই পুনঃসংযোগ দিয়েছে। মমতাজ উদ্দিন ওই অঞ্চলে দীর্ঘ ৮ বছর ধরে কর্মরত। এরমাধ্যমে একটি সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছেন।
দুবাই সিএনজি রিফুয়েলিং স্টেশনের ম্যানেজার ইকবাল হোসেন বার্তা২৪.কমকে বলেন, আমরা এখনও লাইসেন্স পাইনি। কিভাবে সংযোগের ব্যবস্থা হয়েছে আমার জানার বাইরে। আমাদের হেড অফিস তিতাস গ্যাসের সঙ্গে যোগাযোগ করে পুনঃসংযোগের ব্যবস্থা করেছিলেন। মালিক আলহাজ্ব আব্দুর রহিম মিয়ার সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায় নি।
তিতাস গ্যাসের সাভার জোনের সহকারি ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী মমতাজ উদ্দিন ফোন দিলে রিসিভ করেন। তবে প্রশ্ন জানার পর লাইন কেটে দেন।
বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) সূত্র জানিয়েছে, বার্তা২৪.কম এর নিউজটি নজরে এলে, কমিশন বিষয়টি আমলে নিয়েছে। এ বিষয়ে ব্যাখ্যা চেয়ে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন এন্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক বরাবরে চিঠি দেওয়া হয়েছে।
অন্যদিকে জালিয়াতি করার দুবাই ও নবীনগর সিএনজির লাইসেন্সির আবেদনের ইস্যুটি স্থগিত করা হয়েছে। আজ (২৮ সেপ্টেম্বর) নতুন লাইসেন্স প্রদান শুরু হলেও ওই দুইটি এখনই না দেওয়া সিদ্ধান্ত রয়েছে।
গত ১৯ সেপ্টেম্বর বিইআরসির কমিশনের বৈঠকে ৪৭টি লাইসেন্সের আবেদন উপস্থাপন করে। এরমধ্যে ৪০টি আবেদনে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র থাকায় লাইসেন্স ইস্যুর সিদ্ধান্ত নেয় কমিশন।
বিইআরসি আইন ২০০৩ ও গ্যাস আইন ২০১০ অনুযায়ী বিইআরসির লাইসেন্স ছাড়া সিএনজি স্টেশন পরিচালনা করার কোন সুযোগ নেই। লাইসেন্স ছাড়াই ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে শতাধিক ফিলিং স্টেশন। ওইসব সিএনজি রি-ফুয়েলিং স্টেশনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ২০১৪ সালে প্রথম চিঠি দেয় বিইআরসি। এরপরও মোট ৮ দফায় দফায় চিঠি দেওয়া হলেও তিতাসের সাড়া দিচ্ছিল না। ওই বিষয়েও ৬ সেপ্টেম্বর বার্তা২৪.কমে রিপোর্ট প্রকাশিত হয়। নিউজের পর কিছুটা ক্ষুব্ধ হয়ে গণহারে সংযোগ বিচ্ছিন্নে নামেন। বিইআরসির নির্দেশনা ছিল যারা এখন পর্যন্ত লাইসেন্স নেননি,তাদের বিষয়ে কঠোর পদক্ষেপ নিতে।
কিন্তু তিতাস সম্প্রতি গত ১০ ও ১১ সেপ্টেম্বর বেশকিছু ফিলিং স্টেশনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। এর মধ্যে নবায়নের মেয়াদ শেষ হয়েছে এমন সংযোগও বিচ্ছিন্ন করা হয়। এতে সিএনজি ফিলিং স্টেশন মালিকদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের সঞ্চার করে। একসঙ্গে অনেক লাইসেন্সের আবেদন জমা পড়ায় সামলাতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে বিইআরসিকে।
বিইআরসির সদস্য মোহাম্মদ আবু ফারুক বার্তা২৪.কমকে বলেছেন, আমাদের লোকবলের সংকট রয়েছে। আমরা চেষ্টা করেছি দ্রুততার সঙ্গে লাইসেন্স ইস্যু করতে। গভীর রাত পর্যন্ত কাজ করেছে সংশ্লিষ্ট বিভাগ। এমনকি দ্রুত সেবা প্রদানের জন্য বন্ধের দিনেও কাজ করা হয়েছে। একজন সহকারি পরিচালক আড়াই হাজার লাইসেন্স ডিল করে। তাহলে বুঝতে পারছেন তাকে কি পরিমাণ লোড নিতে হয়। আমরা একটি লোকবল বাড়ানোর জন্য অর্গানোগ্রাম রেডি করেছি। চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে, লোকবল পেলে সেবার মান আরও বৃদ্ধি পাবে।
ইদানিং কমিশনের কিছু কর্মকর্তার ঘুষ দুর্নীতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়ার অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। কমিশনের মিটিংয়ে অনুমোদন হয়নি তার আগেই পেট্রোলিয়ামের একটি লাইসেন্স ইস্যুর ঘটনা সামনে এসেছে। বিষয়টি কমিশনের চেয়ারম্যানের নজরে এলে ৫জনকে শোকজ করা হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা মনে করে অংকুরেই দুর্নীতির শেকড় উপড়ে ফেলতে না পারলে বিইআরসি তার ভাবমূর্তি ধরে রাখতে ব্যর্থ হবে।
বিইআরসির চেয়ারম্যান আব্দুল জলিল বার্তা২৪.কমকে বলেছেন, আপনি সঠিক জেনেছেন, একজনের বিষয়ে অ্যাকশনে যাওয়া হয়েছে। অপরাধ প্রমাণ হলে কাউকে চুল পরিমাণ ছাড় দেওয়া হবে না। নবীনগর ও দুবাই সিএনজি বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য কমিশনের সদস্য (গ্যাস) মকবুল ই ইলাহীকে বলা হয়েছে।
কমিশনের সদস্য (গ্যাস) মকবুল ই ইলাহী চৌধুরী বার্তা২৪.কমকে বলেছেন, আমরা ব্যাখা চেয়ে চিঠি দিচ্ছি। ব্যাখ্যা পেলে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ বিষয়ে কথা বলার জন্য ফোন দিলেও রিসিভ করেন নি তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন এন্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক হারুনুর রশীদ মোল্লাহ।