বিইআরসি অবমাননার দায়ে ফেঁসে যাচ্ছেন এমএ মাজেদ!
বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনকে (বিইআরসি) অবমাননার দায়ে ফেঁসে যেতে পারেন কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের (কেজিডিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমএ মাজেদ। দুই দফায় দেওয়া চিঠির আদেশ বাস্তবায়ন না করায় সশরীরে হাজির হতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
জবাব সন্তোষজনক না হলে আর্থিক জরিমানা এমনকি ৩ মাসের জেল দেওয়ার এখতিয়ার রয়েছে বিইআরসির। আগামী ১১ অক্টোবর সশরীরে কমিশনে হাজির হতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
ঘটনার সূত্রপাত চট্টগ্রামের আনন্দ সোপ অ্যান্ড কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজের গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা নিয়ে। শিল্প ক্যাটাগরির গ্রাহক আনন্দ সোপ, সে অনুযায়ী নিয়মিত বিল প্রদান করে আসছে। কিন্তু হঠাৎ করেই কোম্পানিটির কাছে বাণিজ্যিক ক্যাটাগরিতে দর অনুযায়ী বেশি হারে বিল দিতে বলা হয়। এমনকি বিগত ৬ বছরের একটি এরিয়ার বিল ধরিয়ে দেওয়া হয়।
কর্ণফুলী গ্যাসের পক্ষ থেকে গত ২৯ জুন আনন্দ সোপকে একটি চিঠি দেওয়া হয় । জোন ৪ এর ব্যবস্থাপক স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে বলা হয়, আপনার প্রতিষ্ঠানটি অযান্ত্রিক হওয়ায় কোম্পানি (কেজিডিসিএল) কর্তৃক গঠিত কমিটির সুপারিশক্রমে ২০১৬ সাল জুন মাসে শিল্প গ্রাহক থেকে রূপান্তরিত করে বাণিজ্যিক শ্রেণিতে ভুক্ত হওয়ার বিষয়টি অনুমোদন করেছে কর্তৃপক্ষ। ২০১৬ সালের জুন মাসে রূপান্তরের তারিখ থেকে বাণিজ্যিক শ্রেণিতে বিল আদায়যোগ্য। শিল্প শ্রেণিতে পরিশোধিত অর্থ সমন্বয়ের পর (বাণিজ্যিক ট্যারিফের বর্ধিত টাকা জুন-২০১৬- এপ্রিল ২০২২) গ্যাস বিল বাবদ আরও ৫৫ লাখ ৩৩ হাজার ৯৬৪ টাকা পরিশোধ করতে বলা যাচ্ছে।
এরপর ১০ আগস্ট তাগাদা পত্র ইস্যু করা হয় আনন্দ সোপের নামে। এবার চিঠিতে ১৪ দিনের মধ্যে ৫৫ লাখ ৩৩ হাজার ৯৬৪ টাকা পরিশোধ করতে বলা হয়। বর্ধিত বিল পরিশোধ না করায় ২৯ আগস্ট গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। আনন্দ সোপ বিইআারসিতে বিরোধ নিষ্পত্তির আবেদন করা হয়।
বিইআরসি শুনানি শেষে ১ সেপ্টেম্বর একটি অন্তবর্তী আদেশ প্রদান করেন। এতে বলা হয়, গ্রাহকের শ্রেণির বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় অথবা যথাযোগ্য আদালতের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা গ্রহণ করবেন। প্রতিষ্ঠানের কাঁচামাল ও শ্রমিকদের জীবিকার বিষয়টি বিবেচনায় ১০ লাখ টাকা জমাদান সাপেক্ষে ওই দিনেই পুনঃসংযোগ প্রদান করবেন।
বিইআরসির ওই আদেশের পর ১০ লাখ টাকার পে-অর্ডার নিয়ে কর্ণফুলী গ্যাসে জমা দিতে যায় আনন্দ সোপ। সেই পে-অর্ডার গ্রহণে অস্বীকৃতি জানায় কর্ণফুলী গ্যাস কর্তৃপক্ষ। ১২ দিনে ধর্না দিয়েও পে-অর্ডার জাম দিতে ব্যর্থ হয়ে কেজিডিসিএল ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমএ মাজেদ বরাবরে লিখিত আবেদন করে আনন্দ সোপ। তারপরও কোন সুরাহা হয়নি, এমনকি কোন জবাবও দেওয়া হয়নি কেজিডিসিএল এর পক্ষ থেকে।
কমিশনের আদেশের পরও পুনঃসংযোগ না দেওয়ায় ২২ সেপ্টেম্বর দ্বিতীয় আদেশ দেয় বিইআরসি। এবার আদেশে পুনঃসংযোগ দেওয়ার পাশাপাশি কমিশনের আদেশে সত্ত্বেও পুনঃসংযোগ প্রদান না করার কারণ জানাতে পরবর্তী শুনানির তারিখে (গত ২৭ সেপ্টেম্বর) ব্যবস্থাপনা পরিচালক অথবা তার স্থলাভিষিক্ত হতে পারেন এমন কেউ অথবা সংশ্লিষ্ট জোনের মহাব্যবস্থাপককে উপস্থিত হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়।
বিইআরসির দ্বিতীয় আদেশের পরও আনন্দ সোপের পুনঃসংযোগ প্রদান থেকে বিরত থাকে কেজিডিসিএল। আদেশ প্রতিপালন না করার কমিশন উষ্মা প্রকাশ করেন। পরবর্তী শুনানির দিনে কেজিডিসিএল ব্যবস্থাপনা পরিচালককে সশরীরে হাজির হয়ে কারণ দর্শাতে বলা হয়েছে।
সশরীরে উপস্থিত হয়ে সন্তোষজনক জবাব দিতে ব্যর্থ হলে কি হতে পারে। এমন প্রশ্নের জবাবে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের সদস্য (প্রশাসন ও অর্থ) মোহাম্মদ আবু ফারুক বার্তা২৪.কম-কে বলেছেন, কমিশন আইনের ৪৩ ধারায় জরিমানা বিধান রয়েছে। সে অনুযায়ী ব্যবস্থা হতে পারে।
বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন আইনের ৪৩ ধারায় (আদেশ লঙ্ঘনের জন্য জরিমানা ও শাস্তি) বলা হয়েছে, যদি কোন লাইসেন্সি বা অন্য কোন ব্যক্তি যুক্তিসংগত কারণ ব্যতীত এই আইনের অধীনে প্রদত্ত কমিশনের কোন আদেশ কিংবা নির্দেশ পালন করিতে অস্বীকার করেন বা ব্যর্থ হন তাহা হইলে- (ক) কমিশন উক্ত ব্যক্তির উপর প্রবিধান ধারা নির্ধারিত অর্থ প্রশাসনিক জরিমানা হিসেবে আরোপ করিতে পারিবে। এইরূপ জরিমানা সরকারি পাওনা হিসেবে আদায়যোগ্য হইবে। (খ) ইহা অপরাধ হিসেবে গণ্য হইবে, উক্ত অপরাধের জন্য উক্ত ব্যক্তি অনধিক ৩ মাসের কারাদণ্ড বা অন্যূন ২ হাজার টাকার অর্থদণ্ড বা উভয়দণ্ডে দণ্ডিত হইবেন, অপরাধ অব্যাহত থাকার ক্ষেত্রে প্রতিদিনের জন্য ৫’শ টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হইবেন।
বিইআরসি ট্রাইব্যুনালের সাবেক চেয়ারম্যান ড. সেলিম মাহমুদ বার্তা২৪.কম-কে বলেছেন, বিইআরসি নিজেই নিজের ক্ষমতা সম্পর্কে অবগত না, অথবা জানলেও ক্ষমতা প্রয়োগ করার সাহস রাখে না। আদালতের নির্দেশের সমান বিইআরসির আদেশ। কেউ না মানলে তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে পারবে। প্রথম দফায় চিঠির পর আদেশ প্রতিপালন না করায় শাস্তি দিতে পারতো। আমাদের সময়ে আদেশ প্রতিপালন না করার কোন নজির নেই।