বিদ্যুতের দাম না বাড়ানোর পথেই হাঁটছে বিইআরসি

  • সেরাজুল ইসলাম সিরাজ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

বিদ্যুতের পাইকারি দর না বাড়ানোর পক্ষেই হাঁটছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)।

এ বিষয়ে বৃহস্পতিবার (১৩ অক্টোবর) দুপুর সাড়ে ১১টায় আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিতে পারে বিইআরসি।

বিজ্ঞাপন

বিইআরসির চেয়ারম্যান আব্দুল জলিল বার্তা২৪.কম-কে বলেছেন, এখনও এ বিষয়ে চূড়ান্ত কথা বলতে চাই না। দাম ‍বৃদ্ধি হতে পারে আবার নাও পারে। সংশ্লিষ্ট শাখা থেকে মঙ্গলবার (১১ অক্টোবর) আমাদের কাছে ফাইল এসেছে। কমিশনের সভায় সবটুকু দেখা সম্ভব হয়নি, কিছু বিষয়ে অস্পষ্টতা রয়ে গেছে। বুধবার সেগুলো যাচাই করার পর সিদ্ধান্তে পৌঁছতে পারবো। তার আগে দাম বাড়ছে কিংবা বাড়ছে না কোনটাই বলা সম্ভব নয়।

তবে কমিশনের একাধিক সূত্র নাম প্রকাশ না করার শর্তে বার্তা২৪.কম-কে বলেছেন, বিদ্যুতের পাইকারি দর বাড়ছে না এ কথা প্রায় অনেকটাই নিশ্চিত। যদি সিদ্ধান্তে বড় ধরনের কোন পরিবর্তন না ঘটে।

সূত্রগুলো জানিয়েছে, সাম্প্রতিক সময়ে ব্যয়বহুল ডিজেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ রাখা, স্পর্ট মার্কেট থেকে চড়া দামের এলএনজি আমদানি না করায় বিষয়টি প্রভাব ফেলেছে। মূলত বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রবৃদ্ধিকে সামনে এনে বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধিকে প্রাসঙ্গিক করে তোলা হয়। প্রবৃদ্ধি না হয়ে উল্টো কমিয়ে আনায় বিইআরসির নতুন সিদ্ধান্তে অনেকখানি ভূমিকা রেখেছে।

অন্যদিকে সরকারের দিক থেকে দাম বাড়ানোর বিষয়ে চাপ অনেকটা কম লক্ষ্যণীয়। বিশেষ করে লোডশেডিংয়ের মধ্যে দাম বৃদ্ধি করে জনগণের ক্ষোভ বাড়াতে চায় না বিদ্যুৎ বিভাগ। তারা আরও কিছুদিন অপেক্ষা করে সিদ্ধান্ত দেওয়ার পক্ষে ছিলেন। কিন্তু আইনি বাধ্যবাধকতার কারণে ১৪ অক্টোবরের মধ্যে সিদ্ধান্ত দিতে যাচ্ছে বিইআরসিকে।

বিইআরসি আইন অনুযায়ী গণশুনানির পর ৯০ কর্মদিবসের মধ্যে আদেশ দেওয়ার আইনি বাধ্যবাধকতা রয়েছে। গত ১৮ মে গণশুনানি অনুষ্ঠিত হয়, সে হিসেবে ১৪ অক্টোবর পর্যন্ত হাতে সময় রয়েছে বলে জানিয়েছেন বিইআরসির সদস্য (বিদ্যুৎ) বজলুর রহমান।

বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) বর্তমান দর ইউনিট প্রতি ৫.১৭ টাকা থেকে ৬৬ শতাংশ বাড়িয়ে ৮.৫৮ টাকা করার আবেদন করে। বিপিডিবির এই প্রস্তাব গ্যাসের আগের দর ইউনিট প্রতি ৪.৪৫ টাকা বিবেচনায়। ওই প্রস্তাবের পর ইউনিট প্রতি গ্যাসের দাম বৃদ্ধি হয়েছে ৫৭ পয়সা করে। বিইআরসি টেকনিক্যাল কমিটি ভর্তুকি ছাড়া ৮.১৬ টাকা করার মতামত দেয়। অতীতে কখনও এতো বেশি পরিমাণে দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব দেওয়ার নজির নেই। পরে যাচাই-বাছাই শেষে বিইআরসি ১৯.৯২ শতাংশ দাম বৃদ্ধির প্রস্তাবনা প্রস্তুত করে এনেছিল। তবে সাম্প্রতিক সময়ে লোডশেডিংসহ নানা কারণে সেখান থেকে সরে এসেছে বিইআরসি।

সর্বশেষ ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে বিদ্যুতের পাইকারি দর ইউনিট প্রতি ৫.১৭ টাকা নির্ধারণ করে। বিপিডিবির পাইকারি দাম বৃদ্ধির প্রস্তাবে বলা হয়, চাহিদা মতো গ্যাস সরবরাহ না পাওয়ায় তেল দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে গিয়ে খরচ বেড়ে গেছে। ২০১৯-২০ অর্থবছরে বিদ্যুতে গড় উৎপাদন খরচ ছিল ২.১৩ টাকা, ২০২০-২১ অর্থ বছরে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩.১৬ টাকায়। জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি, কয়লার মুসক বৃদ্ধির কারণে ২০২২ সালে ইউনিট প্রতি উৎপাদন খরচ দাঁড়াবে ৪.২৪ টাকায়। পাইকারি দাম না বাড়লে ২০২২ সালে ৩০ হাজার ২৫১ কোটি ৮০ লাখ টাকা লোকসান হবে। বিপিডিবি বিদ্যুতের একক পাইকারি বিক্রেতা। ৫টি বিতরণ কোম্পানির কাছে পাইকারি দরে বিক্রির পাশাপাশি নিজে ময়মনসিংহ, সিলেট ও চট্টগ্রাম বিভাগের শহরাঞ্চলে বিতরণ করে যাচ্ছে।

বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির কোন যৌক্তিকতা দেখছেন না ক্যাবের সিনিয়র সহসভাপতি জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ড. শামসুল আলম। তিনি বার্তা২৪.কম-কে বলেছেন, ব্যয়বহুল বলে ডিজেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ রয়েছে, একই কারণে স্পর্ট মার্কেট থেকে এলএনজি আমদানি বন্ধ। এখনতো বিদ্যুতের দাম কমানো উচিত। বিইআরসি চাইলেই দাম আরও কমিয়ে দিতে পারে।

জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, সম্প্রতি গ্যাসের দাম বেড়েছে। এরপর জ্বালানি তেলের দাম ব্যাপক পরিমাণে বাড়ানো হয়েছে। সেই ধাক্কা এখনও সামাল দিতে পারছে না জনগণ। এসব দাম ‍বৃদ্ধির কারণে নিত্যপণ্যের বাজার অস্থিতিশীল হয়ে পড়েছে। পাইকারি দাম বৃদ্ধি হলে সরাসরি ভোক্তাদের ওপর প্রভাব পড়বে না। তবে পাইকারি দাম বাড়লেই খুচরা দাম বৃদ্ধি আবশ্যক হয়ে পড়বে। তাতে বাজার পরিস্থিতি নাজুক পড়ে পড়বে।