বাড়ছে না বিদ্যুতের দাম, জনমনে স্বস্তি
বিদ্যুতের পাইকারি দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব নাকচ করে দিয়েছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। এতে দেশ আরেকটি মূল্যস্ফীতির হাত থেকে রক্ষা পেল বলে মন্তব্য করেছেন সংশ্লিষ্টরা।
বৃহস্পতিবার (১৩ অক্টোবর) বেলা সাড়ে ১১টায় ভার্চুয়াল সাংবাদিক সম্মেলনের মাধ্যমে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব নাকচ করে দেন বিইআরসি চেয়ারম্যান আব্দুল জলিল। সর্বশেষ ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে বিদ্যুতের পাইকারি দর ইউনিট প্রতি ৫.১৭ টাকা নির্ধারণ করে। বিপিডিবি ইউনিট প্রতি বর্তমান দর ৫.১৭ টাকা থেকে ৬৬ শতাংশ বাড়িয়ে ৮.৫৮ টাকা করার আবেদন করেছিল। সেই প্রস্তাবের উপর গণশুনানি নেওয়া হয় গত মে মাসের ১৮ তারিখে। কমিশনের আদেশে কোন পক্ষ সংক্ষুব্ধ হলে ১ মাসের মধ্যে রিভিউয়ের সুযোগ রয়েছে।
বিইআরসির ঘোষণাকে গ্রাহকদের পাশাপাশি বিদ্যুতের বিতরণ সংস্থাগুলোও স্বাগত জানিয়েছে। বিতরণ সংস্থাগুলো বলেছে, পাইকারি দাম বাড়লে খুচরা দাম বৃদ্ধির প্রসঙ্গ সামনে চলে আসতো। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিসহ সার্বিক পরিস্থিতিতে দাম বৃদ্ধির চাপ নেওয়ার মতো অবস্থায় নেই গ্রাহকরা। বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি হলে শিল্পপণ্যের দাম বৃদ্ধি পায়, অন্যান্য পণ্যের উপরও প্রভাব পড়ে। বিইআরসি একটি সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সরকারের ভর্তুকির পরিমাণ কিছুটা বাড়াতে হতে পারে। তবে দ্রব্যমূল্য আরেক দফা বৃদ্ধির হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে ভোক্তারা।
সাংবাদিক সম্মেলনে অংশ নেন, কমিশনের সদস্য মোহাম্মদ আবু ফারুক, মকবুল ই-ইলাহী চৌধুরী, বজলুর রহমান, কামরুজ্জামান প্রমুখ।
বিইআরসি চেয়ারম্যান আব্দুল জলিল বলেন, বিপিডিবির পাইকারি দাম বৃদ্ধির প্রস্তাবে বলা হয়, চাহিদা মতো গ্যাস সরবরাহ না পাওয়ায় তেল দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে গিয়ে খরচ বেড়ে গেছে। ২০১৯-২০ অর্থ বছরে বিদ্যুতে গড় উৎপাদন খরচ ছিল ২.১৩ টাকা, ২০২০-২১ অর্থ বছরে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩.১৬ টাকায়। জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি, কয়লার মুসক বৃদ্ধির কারণে ২০২২ সালে ইউনিট প্রতি উৎপাদন খরচ দাঁড়াবে ৪.২৪ টাকায়। পাইকারি দাম না বাড়লে ২০২২ সালে ৩০ হাজার ২৫১ কোটি ৮০ লাখ টাকা লোকসান হবে। বিপিডিবি বিদ্যুতের একক পাইকারি বিক্রেতা। ৫টি বিতরণ কোম্পানির কাছে পাইকারি দরে বিক্রির পাশাপাশি নিজে ময়মনসিংহ, সিলেট ও চট্টগ্রাম বিভাগের শহরাঞ্চলে বিতরণ করে যাচ্ছে।
ক্যাবের সিনিয়র সহসভাপতি জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ড. শামসুল আলম প্রতিক্রিয়া বার্তা২৪.কমকে বলেছেন, মূল্যহার নির্ধারণের ক্ষেত্রে পাইকারি বিদ্যুতের না বাড়িয়ে যৌক্তিক ন্যায্যতা নিশ্চিত করায় সন্তোষ প্রকাশ করছি। বিতরণ কোম্পানিগুলোর মধ্যে যাদের কাছে চাহিদা অপেক্ষা বেশি রাজস্ব জমা হয়। সেগুলো বিদ্যুৎ উন্নয়ন তহবিলে জমা করার দাবি জানাচ্ছি।
৩৩ কেভিতে পাইকারি বিদ্যুতের মূল্যহার সমতা নিশ্চিত করা, মিটারভাড়া বিতরণ চার্জের মধ্যে আনা। বিদ্যুৎ উন্নয়ন তহবিল থেকে যে, পায়রা টাকা দেওয়া হয়েছে, সেই প্রফিট বিদ্যুৎ উন্নয়ন তহবিলে জমা করা ও তরল জ্বালানির দাম বিইআরসি আইনের আওতায় আনার দাবি জানান ড. শামসুল আলম।
তিনি আরও বলেন, স্পর্ট মার্কেট থেকে এলএনজি সরবরাহ করার শর্তে গ্যাসের মূল্য বাড়িয়ে নেওয়া হয়েছে। এখন স্পর্ট মার্কেট থেকে এলএনজি আমদানি না করায় রাজস্ব উদ্বৃত্ত থাকছে। এখন সময় এসেছে গাসের মূল্য রিভিউ করে কমিয়ে আনা।