বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের ঘটনায় আরও চার কমিটি
গ্রিড বিপর্যয়ের ঘটনায় নতুন করে ৪টি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি), ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ডিপিডিসি), ঢাকা ইলেক্ট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানি (ডেসকো) এবং পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (আরইবি) কমিটি গঠনের তথ্য পাওয়া গেছে।
বিদ্যুৎ বিভাগের চিঠির প্রেক্ষিতে ওই তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে বিতরণ সংস্থাগুলো সূত্র নিশ্চিত করেছে। কমিটির কার্যপরিধিতে এনএলডিসির নির্দেশনা মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ না করে অতিরিক্ত লোড গ্রহণ করার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের সনাক্ত করার কথা বলা হয়েছে।
এ নিয়ে ৪ অক্টোবর গ্রিড বিপর্যয়ের ঘটনায় তদন্ত কমিটির সংখ্যা দাঁড়াল সাতে। ঘটনার পর পরেই পৃথক ৩টি কমিটি গঠন করা হয়। ইতিমধ্যেই পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশের (পিজিসিবি) তদন্ত রিপোর্ট জমা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, উৎপাদনের চেয়ে চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় গ্রিড বিপর্যয়ের ঘটনা ঘটেছে। যথা সময়ে পদক্ষেপ নিতে পারলে গ্রিড বিপর্যয়ের ঘটনা ঘটতো না। তদন্ত রিপোর্টের প্রেক্ষিতে দায়িত্বে অবহেলার দায়ে পিজিসিবির দুই কর্মকর্তাকে (১৬ অক্টোবর) সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।
ডেসকোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাওসার আমীর আলী বার্তা২৪.কম-কে বলেছেন, বিদ্যুৎ বিভাগ থেকে চিঠি দিয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করতে বলা হয়েছে। আমরা চিঠি পাওয়ার পর প্রধান প্রকৌশলী (নেটওয়ার্ক অপরেশন) মো. মঞ্জুরুল হককে প্রধান করে কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে আগামী ৩ কর্মদিবসের মধ্যে রিপোর্ট জমা দিতে বলা হয়েছে।
তদন্ত কমিটি গঠনের কারণ জানতে চাইলে ডেসকো ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, বিতরণ প্রান্তে আমাদের কোন কর্মকর্তার গাফিলতি রয়েছে কিনা, তদন্ত করে দেখতে বলা হয়েছে। এনএলডিসি (ন্যাশনাল লোড ডেসপার্চ সেন্টার) থেকে প্রেরিত কোন বার্তা যথাযথভাবে বাস্তবায়ন হয়েছে কিনা। কেউ যদি অবহেলা করে থাকেন তাদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য।
আরইবির সদস্য (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) মো. আমজাদ হোসেন বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এতে আহ্বায়ক করা হয়েছে প্রধান প্রকৌশলী (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) মো. মহিউদ্দিনকে। সদস্য সচিব করা হয়েছে পরিচালক (সিস্টেম অপরেশন) মো. রফিকুল ইসলামকে। বিদ্যুৎ বিভাগের প্রতিনিধি হিসেবে রয়েছেন উপসচিব এম রায়হান আখতার।
১৬ অক্টোবর পিজিসিবির তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেছিলেন, গ্রিড বিপর্যয়ের পর তিনটি কমিটি করা হয়। পিজিসিবি গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন আমরা হাতে পেয়েছি। ওই প্রতিবেদনের মাধ্যমে আমরা জানতে পারি, পিজিসিবিতে দায়িত্ব পালনে গাফিলতি ছিল। একজন সহকারী প্রকৌশলী এবং একজন উপ-সহকারী প্রকৌশলীকে সাময়িক বরখাস্ত করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আরও কিছু নাম আসছে এক সপ্তাহের মধ্যেই তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তিনি আরও বলেন, বিতরণ কোম্পানির দায়ী ব্যক্তিদের খুঁজে বের করে শাস্তির আওতায় আনা হবে। তদন্ত প্রতিবেদনে গ্রিড বিপর্যয়ের প্রথম কারণ হিসেবে দায়িত্বে অবহেলাই পাওয়া গেছে। সে অনুযায়ী আপাতত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। পিজিসিবির বাইরে আরও দুটি তদন্ত কমিটি আমরা করেছি। এরমধ্যে একটি রয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগের। বাইরে থেকেও একটি কমিটি আমরা করেছি। তাদের প্রতিবেদন পেতে কিছুটা সময় লাগতে পারে। সব প্রতিবেদন হাতে না পাওয়া পর্যন্ত নিশ্চিত করে বলা সম্ভব নয়।
গত ৪ অক্টোবর একযোগে দেশের পূর্ব ও মধ্যাঞ্চলে বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের ঘটনা ঘটে। দুপুর ২টা ৪ মিনিটে ব্ল্যাক আউট হয়ে দেশের বেশিরভাগ অঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। বিকেল ৫টার পর ধীরে ধীর বিদ্যুৎ সরবরাহ চালু করা হয়। কোথাও কোথাও বিদ্যুৎ সরবরাহ দিতে মধ্যরাত গড়িয়ে যাওয়ার তথ্য পাওয়া যায়। ঘটনার পর থেকেই বলা হচ্ছে চাহিদা বেড়ে যাওয়ার গ্রিড ট্রিপ করে যায়।