বিদ্যুতের পাইকারি ও খুচরা দাম বৃদ্ধির তোড়জোড়

  • সেরাজুল ইসলাম সিরাজ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

বিদ্যুতের পাইকারি দাম বৃদ্ধি না হওয়ায় যারা স্বস্তি প্রকাশ করেছিলেন, তাদের জন্য দুঃসংবাদ হাজির হয়েছে। এবার পাইকারির পাশাপাশি খুচরা দাম বৃদ্ধির তোড়জোড় শুরু হয়েছে।

বিদ্যুতের ৬ বিতরণ কোম্পানিকে ‍খুচরা দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব জমা দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে। কোম্পানিগুলো আবেদন তৈরির কাজ শেষ পর্যায়ে নিয়ে এসেছে, আগামী সপ্তাহের মধ্যেই বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনে আবেদন জমা দিতে চান বলে জানা গেছে।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির (ডিপিডিসি) ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিকাশ দেওয়ান বার্তা২৪.কম-কে বলেছেন, আগে যখন বিদ্যুতের পাইকারি দাম বৃদ্ধির গণশুনানি হয়, তখন আমরা একটি ক্যালকুলেশন করেছিলাম। সেই ক্যালকুলেশন নিয়ে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে বিইআরসিতে জমা দিতে পারি।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, চলতি সপ্তাহে হচ্ছে না, সম্ভবত আগামী সপ্তাহে দিতে পারি। এনার্জি সেল কমে গেছে এতে রাজস্বে কিছুটা ঘাটতি হতে পারে। তবে পাইকারি দাম না বাড়লে, আমরা দাম বাড়াতে চাই না। আমরা প্রফিট চাই না, ব্রেক ইভেনে থাকতে চাই। শুধু অপরেশনাল, প্রশাসনিক ও এনার্জি খরচ তুলতে পারলেই হয়। আমরা চাই সাশ্রয়ী দরে উন্নত সেবা দিতে।

পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (আরইবি) একজন পদস্থ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বার্তা২৪.কম-কে বলেছেন, খুচরা দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব জমা দেওয়ার জন্য নির্দেশনা পাওয়া গেছে। আমাদের প্রস্তুতি প্রায় শেষ ধাপে, যে কোন দিন জমা দিতে পারি। তবে পাইকারি দাম না বাড়লে আমরা না বাড়ালেও চলবে।

বিইআরসির সদস্য মোহাম্মদ আবু ফারুক বার্তা২৪.কম-কে বলেছেন, বিদ্যুতের পাইকারি দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব বাতিল করেছিলাম, সেই প্রস্তাবটি রিভিউ করার আবেদন দিয়েছেন বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি)। আমরা যে তিনটি কারণ দেখিয়ে বাতিল করেছিলাম সেগুলোর বিষয়ে ব্যাখ্যাসহ আবেদন করেছে। আমরা মূলত ৩টি বিষয়ে উল্লেখ করেছিলাম এগুলো হচ্ছে বাল্ক পরিবর্তন হলে বিতরণ পর্যায়ের ওপর প্রভাব বিষয়ে প্রক্কলন ছিল না। কিছু তথ্যের অস্পষ্টতা ছিল। আর বিপিডিবি দাবি করে তারা সিঙ্গে বায়ার, কিন্তু আমরা দেখেছি আরইবি কিছু কোম্পানির কাছ থেকে কিনে থাকে। এসব বিষয়ে তারা ব্যাখ্যা দিয়েছে।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, গত ১৩ নভেম্বর রিভিউয়ের আবেদন জমা দিয়েছে। আমরা কমিশনের বৈঠক করে পরবর্তী ব্যবস্থা নেবো। রিভিউয়ের সিদ্ধান্ত জানাতে গণশুনানির প্রয়োজনীয়তা নেই।

সর্বশেষ ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে বিদ্যুতের পাইকারি দর ইউনিট প্রতি ৫.১৭ টাকা নির্ধারণ করে। বিপিডিবি ইউনিট প্রতি বর্তমান দর ৫.১৭ টাকা থেকে ৬৬ শতাংশ বাড়িয়ে ৮.৫৮ টাকা করার আবেদন করেছিল। সেই প্রস্তাবের ওপর গণশুনানি নেওয়া হয় গত মে মাসের ১৮ তারিখে। আর ১৩ অক্টোবর বিপিডিবি দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব নাকচ করে দেন বিইআরসি। তখন বলা হয়েছিল কমিশনের আদেশে কোন পক্ষ সংক্ষুব্ধ হলে এক মাসের মধ্যে রিভিউয়ের সুযোগ রয়েছে।

সেই সুযোগটিই কাজে লাগিয়েছে বিপিডিবি। তবে এবার বেশ আটঘাট বেঁধেই নেমেছে বলে মনে হচ্ছে। তাই এবার বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির সম্ভাবনাই বেশি বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

বিপিডিবির পাইকারি দাম বৃদ্ধির আবেদনে বলেছিল, চাহিদামতো গ্যাস সরবরাহ না পাওয়ায় তেল দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে গিয়ে খরচ বেড়ে গেছে। ২০১৯-২০ অর্থবছরে বিদ্যুতে গড় উৎপাদন খরচ ছিল ২.১৩ টাকা, ২০২০-২১ অর্থ বছরে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩.১৬ টাকায়। জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি, কয়লার মুসক বৃদ্ধির কারণে ২০২২ সালে ইউনিট প্রতি উৎপাদন খরচ দাঁড়াবে ৪.২৪ টাকায়। পাইকারি দাম না বাড়লে ২০২২ সালে ৩০ হাজার ২৫১ কোটি ৮০ লাখ টাকা লোকসান হবে। বিপিডিবি বিদ্যুতের একক পাইকারি বিক্রেতা।