বিদ্যুতের দাম প্রশ্নে মন্ত্রণালয়ের চিঠির অপেক্ষায় বিইআরসি

  • সেরাজুল ইসলাম সিরাজ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম ‍বৃদ্ধি প্রশ্নে মন্ত্রণালয়ের মতামত চেয়ে চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। চিঠিতে জানতে চাওয়া হয়েছে মন্ত্রণালয় দামের বিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত দিতে চায় কিনা।

মন্ত্রণালয়ের মতামত পাওয়া গেলে সেভাবে পদক্ষেপ নিতে চায় বিইআরসি। এমন তথ্যই বার্তা২৪.কম-কে নিশ্চিত করেছেন বিইআরসির সদস্য বজলুর রহমান। তিনি বলেছেন, আমরা মতামতের জন্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছি। জানতে চাওয়া হয়েছে দামের বিষয়ে তাদের আদেশ দেওয়ার কোন আগ্রহ আছে কিনা। তারা করতে না চাইলে বিইআরসি পরবর্তী পদক্ষেপ নেবে।

বিজ্ঞাপন

এ বিষয়ে বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়। তিনি বার্তা২৪.কম-কে বলেছেন, গ্রাহক পর্যায়ে দামের বিষয়ে বিইআরসিই সিদ্ধান্ত নেবেন। তারা যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত দেবেন। মন্ত্রণালয় বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া কখনই হস্তক্ষেপ করবে না।

বিদ্যুতের পাইকারি ও খুচরা দামের বিষয়ে একক এখতিয়ার ছিল বিইআরসির। গত মাসে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (সংশোধন) অধ্যাদেশ ২০২২ জারি হওয়ার পর বিইআরসির পাশাপাশি মন্ত্র্রণালয়ও দাম বাড়ানো কমানোর এখতিয়ার সংরক্ষণ করেন। গত ২১ নভেম্বর বিদ্যুতের পাইকারি দাম ১৯.৯২ শতাংশ বাড়িয়ে প্রতি ইউনিট ৫.১৭ টাকা বাড়িয়ে ৬.২০ টাকা নির্ধারণ করে বিইআরসি। ওই আদেশের দিনেই বিতরণ একটি বিতরণ কোম্পানি গ্রাহক পর্যায়ে দাম বৃদ্ধির আবেদন করে। অন্যান্য বিতরণ কোম্পানিও দাম বৃদ্ধির আবেদন জমা দিয়েছে বিইআরসিতে।

বিজ্ঞাপন

স্বাভাবিক সময়ে এমন দাম বাড়ানোর আবেদন পেলে কমিশনের সভায় যাচাই-বাছাই করে দেখেন। এতে আবেদনের গ্রহণযোগ্যতা থাকলে টেকনিক্যাল কমিটির মাধ্যমে মূল্যায়ন করা হয়। এরপর গণশুনানির মাধ্যমে সিদ্ধান্ত দিয়ে থাকেন বিইআরসি। কিন্তু বিইআরসি অধ্যাদেশ সংশোধনের পর এখন নির্বাহী আদেশেও দাম বাড়ানো কমানো যাবে। যে কারণে মন্ত্রণালয়ের মতামত নিয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ নিতে চায় বিইআরসি।

জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, বিইআরসি বিতরণ কোম্পানিগুলোর লাগাম টানতে পারতো। তাদের ইচ্ছামাফিক মুনাফার জায়গায় কিছুটা মার্জিন টানার সুযোগ ছিল। গণশুনানিতে বিতর্কের ভয়ে কোম্পানিগুলো কিছুটা হলেও ভেবে চিন্তে প্রস্তাব নিয়ে আসতো। এখনও তাদের লাগাম টানার আর কেউ থাকল না। হয়তো এমন হবে তারা যেভাবে প্রস্তাব পাবে সেভাবেই বাড়িয়ে দেবে মন্ত্রণালয়। এতে ভোক্তার স্বার্থ লঙ্ঘিত হবে।

ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির (ডিপিডিসি) ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিকাশ দেওয়ান বার্তা২৪.কম-কে বলেছেন, এনার্জি সেল কমে গেছে এতে রাজস্বে কিছুটা ঘাটতি হতে পারে। তবে পাইকারি দাম না বাড়লে, আমরা দাম বাড়াতে আগ্রহী ছিলাম না। আমরা প্রফিট চাই না, ব্রেক ইভেনে থাকতে চাই। শুধু অপরেশনাল, প্রশাসনিক ও এনার্জি খরচ তুলতে পারলেই হয়। আমরা চাই সাশ্রয়ী দরে উন্নত সেবা দিতে। সেভাবেই দাম সমন্বয় করার প্রস্তাব করা হয়েছে।

বিপিডিবি ইউনিট প্রতি বর্তমান দর ৫.১৭ টাকা থেকে ৬৬ শতাংশ বাড়িয়ে ৮.৫৮ টাকা করার আবেদন করেছিল। সেই প্রস্তাবের ওপর গণশুনানি নেওয়া হয় গত মে মাসের ১৮ তারিখে। আর ১৩ অক্টোবর বিপিডিবি দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব নাকচ করে দেন বিইআরসি। তখন বলা হয়েছিল কমিশনের আদেশে কোন পক্ষ সংক্ষুব্ধ হলে ১ মাসের মধ্যে রিভিউয়ের সুযোগ রয়েছে। সেই সুযোগটিই কাজে লাগিয়েছে বিপিডিবি। রিভিই আবেদন জমা দিলে দাম বাড়িয়ে দেয় বিইআরসি।

বিপিডিবির পাইকারি দাম বৃদ্ধির আবেদনে বলেছিল, চাহিদা মতো গ্যাস সরবরাহ না পাওয়ায় তেল দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে গিয়ে খরচ বেড়ে গেছে। ২০১৯-২০ অর্থ বছরে বিদ্যুতে গড় উৎপাদন খরচ ছিল ২.১৩ টাকা, ২০২০-২১ অর্থবছরে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩.১৬ টাকায়। জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি ও কয়লার মুসক বৃদ্ধির কারণে ২০২২ সালে ইউনিট প্রতি উৎপাদন খরচ দাঁড়াবে ৪.২৪ টাকায়। পাইকারি দাম না বাড়লে ২০২২ সালে ৩০ হাজার ২৫১ কোটি ৮০ লাখ টাকা লোকসান হবে।