গ্যাসের দাম বাড়ানোর চিন্তা ভাবনা চলছে: জ্বালানি সচিব
গ্যাসের দাম বাড়ানোর বিষয়ে চিন্তা ভাবনা চলছে। তবে এখনও কিছুই চূড়ান্ত হয়নি বলে জানিয়েছেন জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সচিব ড. মো. খায়েরুজ্জামান মজুমদার।
তিনি বার্তা২৪.কম-কে বলেছেন, আমরা গ্যাসের সরবরাহ বাড়াতে চাই, এ জন্য আমদানি বাড়ানোর প্রয়োজন হবে। আমদানি বাড়াতে হলে খরচ বেড়ে যাবে, সে কারণে দাম বাড়ানোর বিষয়ে আলাপ আলোচনা চলছে। স্বস্তির খবর হচ্ছে স্পর্ট মার্কেটে এলএনজির দর কমতির দিকে রয়েছে।
জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ সূত্র জানিয়েছে, চলতি সপ্তাহেই দাম বাড়ানোর বিষয়ে প্রক্রিয়া চলছে। এ দফায় শিল্প ও বিদ্যুৎ উৎপাদনে দাম বাড়তে পারে। আবাসিকের বিষয়ে এখনও কোন সিদ্ধান্তে আসতে পারেনি। শিল্পের বর্তমান দর ইউনিট প্রতি ১১.৯৮ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২৫-৩০ টাকা করা হতে পারে। ব্যবসায়ী নেতাদের পরামর্শেই এমনটি করা হচ্ছে। ব্যবসায়ী নেতারা শিল্পে নিরবিচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহ পেতে চান। চড়াদামে এলএনজি আমদানি করলে গ্যাসের দর বেড়ে যাবে। যে কারণে গ্যাস সরবরাহ বাড়াতে হলে দাম বাড়ানোর বিকল্প নেই। সরকারের এমন প্রস্তাবে ব্যবসায়ীদের প্রস্তাব ছিল, তারা বাড়তি দামেই দিতে রাজি আছেন। তাদের সেই প্রস্তাব কার্যকরের প্রক্রিয়া চলমান।
পেট্রোবাংলার গত জুন মাসের হিসাব অনুযায়ী স্পর্ট মার্কেট থেকে আমদানি করা এলএনজির (ট্যাক্স-ভ্যাটসহ) ইউনিট প্রতি ঘনমিটারের দর পড়েছিল ৪৬.৮৫ টাকা। বাপেক্স থেকে কেনা গ্যাস ৪.৫৪ টাকা, সিলেট গ্যাস ফিল্ড কোম্পানির দশমিক ৩৩ টাকা, বাংলাদেশ গ্যাস ফিল্ড কোম্পানি দশমিক ৮৭ টাকা এবং আইওসির কাছ থেকে ২.৯০ টাকা। দৈনিক ৮৫০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস আমদানি বিবেচনায় মিশ্রিত গ্যাসের মূল্য দাঁড়াবে ১৫.৩০ টাকা। অন্যান্য চার্জসহ গড়মূল্য ২০.৩৫ টাকা করার প্রস্তাব করা হয়।
বিইআরসি টেকনিক্যাল কমিটি তার হিসাবে বলেছিল, ২০১৯-২০ অর্থবছরে গড়ে দৈনিক ৮৫০ মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি আমদানি বিবেচনায় দর নির্ধারণ করা হয়েছিল। প্রকৃতপক্ষে গড়ে ২৯২ মিলিয়ন কম হয়েছে। এতে প্রতি ঘনমিটারে ২.৪০ টাকা হারে কমে মোট ব্যয় কমেছে ৭২ হাজার ৮৪৩ মিলিয়ন টাকা। একইভাবে ২০২১-২২ অর্থবছরে দৈনিক গড়ে ৬৮৪.৮৪ মিলিয়ন এলএনজি বিবেচনায় মিশ্রিত ক্রয়মূল্য দাড়িয়েছে ১২.৪৭ টাকা।
পরে আন্তর্জাতিক বাজারে গ্যাসের (এলএনজি) দাম বৃদ্ধির ধোয়া তুলে ২২ দশমিক ৭৮ শতাংশ দাম বাড়িয়ে দেয় বিইআরসি। তখন সার উৎপাদনে ২৫৯ শতাংশ, শিল্পে ১১.৯৬ শতাংশ (বৃহৎ শিল্পে ১১.৯৮ টাকা, মাঝারি শিল্পে ১১.৭৮ টাকা, ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পে ১০.৭৮ টাকা, চা শিল্পে ১১.৯৩ টাকা) বিদ্যুতে ১২ শতাংশ, ক্যাপটিভে ১৫.৫ শতাংশ দাম বাড়ানো হয়। আবাসিকে একচুলার দর ৯৫০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৯৯০ টাকা, দুই চুলা ৯৭৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১০৮০ টাকা করা হয়। প্রি-পেইড মিটার ব্যবহারকারী আবাসিক গ্রাহকদের ইউনিট প্রতি দর ১২.৬০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৮টাকা, সার উৎপাদনে ঘনমিটার ৪.৪৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৬ টাকা করা হয়।
ওই দাম বাড়ানোর কিছুদিন পরেই স্পর্ট মার্কেট থেকে এলএনজি আমদানি বন্ধ করে দেয় সরকার। এলএনজি আমদানি কমিয়ে দিলে বেড়ে যায় গ্যাস সংকট, এতে শিল্প মালিকদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি করে। গ্যাসের দাম বাড়ানো সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব পেট্রোবাংলা ঘুরে মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর খবর পাওয়া গেছে।
গত ১৪ ডিসেম্বর জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের এক সভায় কোম্পানিগুলো লোকসানের বিষয়ে তুলে ধরে। তাদের অভিযোগের তীর ছিল বিইআরসির প্রতি। গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানির (জিটিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেছিলেন প্রতি ঘনমিটারে সঞ্চালন চার্জ পাচ্ছেন ৪৭ পয়সা। এতে করে গত অর্থ বছরে তাদের লোকসান হয়েছে ২১৬ কোটি টাকা। সঞ্চালন খরচ না বাড়ালে চলতি অর্থবছরে ৫৫০ কোটি টাকা লোকসান হবে।
ক্যাবের সিনিয়র সহ-সভাপতি ও জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্টা ড. শামসুল আলম বার্তা২৪.কম-কে বলেছেন, অতীতে এলএনজি আমদানির কথা বলে দাম বাড়িয়ে নিয়ে গেছে। কিন্তু সেই পরিমাণে গ্যাস আমদানি করা হয়নি। এতে পেট্রোবাংলার কাছে উদ্বৃত্ত অর্থ রয়ে গেছে। গত বছরের জুন মাসে যে দাম বাড়িয়ে নেওয়া হয়েছে তারপরে স্পর্ট মার্কেটের এলএনজি আমদানি বন্ধ করা হয়েছে। এতে অনেক মুনাফা করছে পেট্রোবাংলা। বিতরণ কোম্পানিগুলো এখনই মুনাফায় রয়েছে এখন দাম বাড়ানোর কোন যৌক্তিকতা নেই।
করোনায় এমনিতেই মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থা নাজেহাল। তারা এই দাম বৃদ্ধির চাপ নেওয়ার মতো অবস্থায় নেই। কেউ কেউ অকারণে দাম বাড়িয়ে সরকারের ওপর ভোক্তাদের খেপিয়ে তুলতে চাইছে কিনা খতিয়ে দেওয়া উচিত বলে মনে করেন ড. শামসুল আলম।