সেচে অগ্রাধিকার দিয়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হবে: বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী

  • স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ

বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ

সেচ মৌসুমে অগ্রাধিকার দিয়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করা হবে। রক্ষণাবেক্ষণের নামে অযথা সময় অপচয় না করার নির্দেশ দিয়েছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ।

মঙ্গলবার (২৪ জানুয়ারি) বিদ্যুৎ ভবনে সেচ মৌসুমে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ সংক্রান্ত আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

বিজ্ঞাপন

বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী বলেন, চাহিদার সঙ্গে সমন্বয় রেখে উৎপাদনও বাড়ানো হচ্ছে। বিদ্যুৎ ঘাটতির সম্ভাবনা দেখা দিলে তা সংশ্লিষ্ট বিতরণ কোম্পানি সমূহকে বিকল্প উপায়ে সমাধানের উদ্যোগ নিতে হবে। কৃষকরা সেচের সময় পিক ও অফপিক আওয়ার মেনে চললে ভালো ফল পাওয়া যাবে। পিডিবি’র চাহিদা মতো প্রাকৃতিক গ্যাস এবং জ্বালানি তেল সরবরাহের জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেয়া হয়।

বিপিসিকে চাহিদার অতিরিক্ত ফার্নেস অয়েল ক্রয়ের বিষয়ে নির্দেশনা দেন প্রতিমন্ত্রী।

প্রতি বছর ফেব্রুয়ারি হতে সেচ মৌসুম শুরু হয় যা ৩১ মে পর্যন্ত চালু থাকে। এ সময় বিদ্যুতের চাহিদা অনেক বেড়ে যায়। সেচ এবং গীষ্মকাল একসঙ্গে হওয়ার বরাবরেই চ্যালেঞ্জ হিসেবে হাজির হয়। এবার একই সময়ে রমজান মাসও থাকবে, যে কারণে চিন্তার ভাঁজ পড়ছে বিদ্যুৎ বিভাগের কপালে। গত বছর সেচ মৌসুমে এপ্রিল ২০২২ মাসে বিদ্যুতের সর্বোচ্চ চাহিদা ছিল ১৪৭৮২ মেগাওয়াট। আসছে সেচ মৌসুমে বিদ্যুতের সম্ভাব্য চাহিদা ধরা হয়েছে ১৬ হাজার মেগাওয়াট।

চলতি সেচ মৌসুমে মোট সেচ সংযোগের সংখ্যা ৪ লাখ ৬৫ হাজার ৪৫৬টি, যাতে বিদ্যুতের প্রয়োজন হবে ২৪’শ মেগাওয়াট। সবচেয়ে বেশি সেচ সংযোগ রয়েছে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের অধীনে। সংস্থাটির সেচ গ্রাহকের সংখ্যা রয়েছে ৩ লাখ ৯৩ হাজার ৮৯৫টি। সব সংযোগ এক সময়ে সচল রাখতে বিদ্যুতের প্রয়োজন পড়বে ২ হাজার ২৮ মেগাওয়াট। সংস্থাটির আর সাড়ে ১১ হাজার সেচের আবেদন ঝুলে রয়েছে। এসব গ্রাহকের সংযোগ প্রদান করা হলে চাহিদা আরও ৬৫ মেগাওয়াট বেড়ে যাবে।

চলতি সেচ মৌসুমে বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য গ্যাস, ফার্নেস অয়েল ও ডিজেল সরবরাহ বৃদ্ধি করা, যে সকল গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রসমূহ নির্বিঘ্নে বিদ্যুৎ উৎপাদনে সক্ষম, সে সব বিদ্যুৎ কেন্দ্রে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে গ্যাস সরবরাহ করার তাগিদ দেওয়া হয়েছে। পিডিবির পক্ষ থেকে গ্যাসের সরবরাহ বাড়ানোর ওপর জোর দেওয়া হয়। পিডিবি বলেছে, গত সেচ মৌসুমে বিদ্যুৎ উৎপাদনে ১৬’শ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের চাহিদার বিপরীতে সরবরাহ পাওয়া গেছে মাত্র ১ হাজার ৩১ মিলিয়ন ঘনফুট। আসছে মৌসুমে ১৬’শ মিলিয়ন চাহিদা, ন্যুনতম ১৪’শ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের প্রয়োজন পড়বে।

আর এখানেই রয়েছে সেচ মৌসুমের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। দেশীয় গ্যাস ফিল্ডগুলোতে গ্যাসের উৎপাদন কমে আসছে, আবার আন্তর্জাতিক বাজারও চড়া, সব মিলিয়ে গ্যাসের নিরবিচ্ছন্ন সরবরাহের বিষয়ে কেউই নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারছেন না।

সেচ মৌসুমে জ্বালানি পরিবহনের ক্ষেত্রে যাতে কোন প্রকার সমস্যা না হয় সে বিষয়ে রেলপথ মন্ত্রণালয়, সড়ক পরিবহণ ও মহাসড়ক বিভাগ, বিআইডব্লিউটিসি, বিআইডব্লিউটিএ ও বিপিসি'র সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সাথে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) যোগাযোগ করে জ্বালানি পরিবহন নিশ্চিত করা,বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি), পেট্রোবাংলা ও বড়পুকুরিয়া কোল মাইনিং কোম্পানির সাথে যোগাযোগ করে বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রসমূহে জ্বালানি তেল, গ্যাস এবং কয়লার সুষ্ঠু সরবরাহ নিশ্চিত করা, সেচে পানির সাশ্রয়ী ব্যবহার জনপ্রিয় করতে ব্যাপক প্রচারণা চালানো, সেচ পাম্পে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করার জন্য গ্রিড উপকেন্দ্র, সঞ্চালন লাইন, বিতরণ লাইন ও উপকেন্দ্রসমূহ সংরক্ষণ ও মেরামত কাজ জরুরি ভিত্তিতে সম্পন্ন করা, ওভারলোডেড সাবস্টেশনসমূহ ও সঞ্চালন লাইন আপ গ্রেডেশনের কাজ দ্রুততম সময়ের মধ্যে সম্পন্ন করা, বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রগুলোতে ন্যূনতম ২ মাসের উৎপাদন সক্ষমতা রাখার জন্য জ্বালানি তেলের মজুদ নিশ্চিত করা, সেচ মৌসুমে জরুরি সময়ে নিবিড় যোগাযোগ রক্ষার্থে সংশ্লিষ্ট সংস্থা ও কোম্পানির ফোকাল পয়েন্ট কর্মকর্তা নির্ধারণ ও আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে লাইভ মনিটরিং-এর ব্যবস্থা করা, সেচ পাম্পে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ তদারকির জন্য মনিটরিং কমিটি গঠন এবং গঠিত মনিটরিং কমিটির কার্যক্রম জোরদার করার সিদ্ধান্ত হয়।

আলোচনায় বিপিসি, পেট্রোবাংলা, জননিরাপত্তা বিভাগ, জ্বালানি বিভাগ, নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়, কৃষি মন্ত্রণালয়, বিআইডব্লিউটিসি তাদের গৃহীত পদক্ষেপ তুলে ধরেন।

আন্তঃমন্ত্রণালয় সমন্বয় সভায় অন্যান্যের মধ্যে বিদ্যুৎ সচিব মো. হাবিবুর রহমান, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মো. মাহবুবুর রহমান, বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (আরইবি) চেয়ারম্যান মোহাং সেলিম উদ্দিন, পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান জনেন্দ্র নাথ সরকার ও পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসাইন উপস্থিত ছিলেন।