বিইআরসি কর্তৃক বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রক্রিয়া বাতিল!
বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) কর্তৃক চলমান বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির প্রক্রিয়া পরিত্যক্ত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। নির্বাহী আদেশে বিদ্যুতের দাম বাড়িয়ে দেওয়ায় কমিশনের বৈঠকে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা নিশ্চিত করেছেন বিইআরসি সূত্র।
বুধবার (২৫ জানুয়ারি) কমিশনের বৈঠকে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। এর আগে ১৫ জানুয়ারি কমিশনের বৈঠকে সাময়িক স্থগিত করা হয়েছিল বিইআরসি কর্তৃক বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর চলমান প্রক্রিয়া।
বিইআরসির সদস্য মোহাম্মদ আবু ফারুক বার্তা২৪.কমকে বলেছেন, গণশুনানির পরে ৬০ কর্মদিবসের মধ্যে আদেশ দেওয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। সে কারণে ২৯ জানুয়ারি একটি আদেশ দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে।
কি ধরনের আদেশ দেওয়া হবে এমন প্রশ্নের জবাবে বলেন, শুনানির পর নির্বাহী আদেশে দাম বাড়ানো হয়েছে, সে কারণে বিইআরসির পক্ষ থেকে দাম না বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে।
বিইআরসি ৮ জানুয়ারি বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির আইনী প্রক্রিয়া শুনানি গ্রহণ করে। তার ঠিক ৪ দিনের মাথায় (১২ জানুয়ারি) নির্বাহী আদেশে ৫ শতাংশ দাম বাড়িয়ে দেওয়া হয়। বিইআরসি প্রতিষ্ঠার পর নির্বাহী আদেশে এভাবে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর নজির নেই। বিইআরসি কর্তৃক প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকাকালীন নির্বাহী আদেশ দেওয়ায় অনেকেই বিষ্ময় প্রকাশ করেন।
সংশোধিত বিইআরসি আইন অনুযায়ী গণশুনানি পরবর্তী ৬০ কর্মদিবসের মধ্যে সিদ্ধান্ত জানানোর বাধ্যবাধকতা রয়েছে। অনির্দিষ্টকাল ঝুলিয়ে রাখার কোন সুযোগ নেই। হয় দাম বাড়িয়ে দিতে হবে, অথবা প্রস্তাব নাকচ করে দিতে হবে। সে হিসেবে আরও কিছুটা সময় হাতে ছিল বিইআরসির। তবে বর্তমান কমিশনের চেয়ারম্যান এবং ৩ সদস্যের (মোট সদস্য ৪ জন) চুক্তির মেয়াদ শেষ হচ্ছে চলতি মাসেই। ৩০ জানুয়ারি সদস্য মোহাম্মদ আবু ফারুক, বীর মুক্তিযোদ্ধা মকবুল ই ইলাহী চৌধুরী ও বজলুর রহমানের মেয়াদ শেষ হয়ে যাচ্ছে। চেয়ারম্যান বজলুর রহমানের চুক্তির মেয়াদ শেষ হবে ৩ ফেব্রুয়ারি। ধারণা করা হচ্ছে মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে মতপার্থক্য তৈরি হওয়ায় তারা আর কোন দায়িত্ব নিতে চাইছেন না। তাদের প্রক্রিয়া চলমান থাকা অবস্থায় নির্বাহী আদেশ দেওয়ায় কমিশনও কিছুটা বিব্রত।
গণশুনানিতে অংশ নেওয়া ভোক্তাদের প্রতিনিধিরা ক্ষুব্ধ প্রক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। তারা বলেছেন, সবে মাত্র বিইআরসি হাঁটি হাঁটি পা পা করে একটি প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর দিকে যাচ্ছে। একদিকে যেমন ভোক্তাদের স্বার্থ দেখা হতো, একইসঙ্গে কোম্পানিগুলোর কিছুটা হলেও জবাবদিহিতা নিশ্চিত হতো। এখন সেই জায়গাটি আর থাকল না। কোম্পানির বোর্ডসভায় বসে সচিব যে সিদ্ধান্ত নেবে, মন্ত্রণালয় বসে তা অনুমোদন দিয়ে যাবেন। কারও কিছু বলার থাকবে না।
বিদ্যুৎ বিভাগ নির্বাহী আদেশে গড়ে ৫ শতাংশ বাড়িয়ে দেওয়া হয়। ঘোষিত নতুন দর চলতি জানুয়ারি থেকেই কার্যকর হবে। আবাসিকের লাইফলাইন গ্রাহকের (৫০ ইউনিট ব্যবহারকারি) ইউনিট প্রতি ১৯ পয়সা বাড়িয়ে ৩.৯৪ টাকা, প্রথমধাপে ৭৫ ইউনিট ব্যবহারকারির ২১ পয়সা বাড়িয়ে ৪.৪০ টাকা করা হয়েছে।
আর ৮ জানুয়ারি নেওয়া শুনানিতে বিইআরসি টেকনিক্যাল কমিটি গড় ১৫.৪৩ শতাংশ দাম বাড়ানোর সুপারিশ দিয়েছিল। সবচেয়ে বেশি ডিপিডিসির ১৬.৭১ শতাংশ এবং সবচেয়ে কম আরইবির ১৪.৭৪ শতাংশ। এর আগে সর্বশেষ ২০২০ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি গ্রাহক পর্যায়ে ৫.৭৭ শতাংশ দাম বাড়ানো হয়।
অন্যদিকে গত জুনে আন্তর্জাতিক বাজারে গ্যাসের (এলএনজি) দাম বৃদ্ধির ধোয়া তুলে ২২ দশমিক ৭৮ শতাংশ দাম বাড়িয়ে দেয় বিইআরসি। সার উৎপাদনে সবচেয়ে বেশি ২৫৯ শতাংশ, শিল্পে ১১.৯৬ শতাংশ, বিদ্যুতে ১২ শতাংশ, ক্যাপটিভে ১৫.৫ শতাংশ দাম বাড়ানো হয়। আবাসিকে একচুলার দর ৯৫০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৯৯০ টাকা, দুই চুলা ৯৭৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১০৮০ টাকা করা হয়। প্রি-পেইড মিটার ব্যবহারকারী আবাসিক গ্রাহকদের ইউনিট প্রতি দর ১২.৬০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৮টাকা, সার উৎপাদনে ঘনমিটার ৪.৪৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৬ টাকা করা হয়।
ওই দাম বাড়ানোর কিছুদিন পরেই স্পর্ট মার্কেট থেকে এলএনজি আমদানি বন্ধ করে দেয় সরকার। এলএনজি আমদানি কমিয়ে দিলে বেড়ে যায় গ্যাস সংকট, এতে শিল্প মালিকদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি করে। তারা উৎপাদন অব্যাহত রাখতে নিরবিচ্ছিন্ন গ্যাস চান। মন্ত্রালয়ের সঙ্গে একাধিক বৈঠকে তার দাম বাড়িয়ে হলেও নিবচ্ছিন্ন গ্যাসের দাবি করেন। গ্যাস আমদানির বাড়ানোর কথা বলে ৭ মাসের ব্যবধানে (১৮ জানুয়ারি) নির্বাহী আদেশে আবারও বাড়ানো হয় গ্যাসের দাম। ওই আদেশে বিদ্যুৎ উৎপাদনে প্রতি ঘনমিটার ৮.৯৮টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৪ টাকা, ক্যাপটিভে ১৪টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩০ টাকা, বৃহৎ শিল্পে ১৮.০২ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩০ টাকা, বাণিজ্যিক হোটেল ৩.৩৬ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩০.৫০ টাকা করা হয়েছে। আবাসিকের আগের দর বহাল রাখা হয়েছে।