নির্বাহী আদেশেই বাড়ছে গ্যাসের বিতরণ ও সঞ্চালন চার্জ

  • সেরাজুল ইসলাম সিরাজ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

বিতর্কের মধ্যেই নির্বাহী আদেশেই গ্যাসের সঞ্চালন ও বিতরণ চার্জ নির্ধারণের পথে হাটছে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ। এবার বিতরণ কোম্পানিগুলোর অভিন্ন চার্জ থাকছে না, কোম্পানির চাহিদা অনুযায়ী ভিন্ন হতে যাচ্ছে বলে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ সুত্র জানিয়েছে।

সুত্র জানিয়েছে, সুন্দরবন গ্যাস কোম্পানির বিতরণ চার্জ ১৫ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ২৪ পয়সা এবং গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানির সঞ্চালন চার্জ ৪৭ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ১.০২ টাকা করার সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে। অন্যান্য বিতরণ কোম্পানির বিতরণ চার্জও ৬০ শতাংশ হারে বৃদ্ধি হতে পারে।

বিজ্ঞাপন

একাধিক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বার্তা২৪.কমকে বলেছেন, আমরা ৫টি বিতরণ কোম্পানির আবেদন বিতরণ চার্জ বৃদ্ধির আবেদন পেয়েছি। এছাড়া গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানিও (জিটিসিএল) তাদের সঞ্চালন চার্জ বৃদ্ধির আবেদন দিয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যেই এ বিষয়ে সিদ্ধান্তে আসতে চাই আমরা।

সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা বার্তা২৪.কমকে বলেছেন, এক সময় বিতরণ কোম্পানিগুলোর অভিন্ন চার্জ (২৫ পয়সা) নির্ধারিত ছিল। বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন তার সর্বশেষ আদেশে (৬ জুন ২০২২)। রাজম্ব চাহিদা অনুযায়ী নির্ধারণ করে দেয়। নির্বাহী আদেশেও সংশ্লিষ্ট কোম্পানির রাজস্ব চাহিদা অনুযায়ী চার্জ নির্ধারণ করা হবে। মুনাফাও নয়, লোকসানও নয় এমন ফর্মুলা ফলো করা হচ্ছে।

বিজ্ঞাপন

অন্যদিকে গত ২ এপ্রিল জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সচিব ড. মোঃ খায়েরুজ্জামান মজুমদার বিইআরসির কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। ওই বৈঠকেও ইঙ্গিত দিয়ে এসেছিলেন, আপনাদের (বিইআরসিতে) কাছে প্রস্তাব আসলে যাচাই-বাছাই করে যেটি সঠিক হবে তাই করবেন। জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ এখানে হস্তক্ষেপ করতে চায় না।

২০২২ সালে অনুষ্ঠিত গণশুনানিতে তিতাস গ্যাস প্রতি ঘন মিটারের বিতরণ চার্জ ২৫ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৬৮ পয়সা করার আবেদন করেছিল। বিইআরসি টেকনিক্যাল কমিটির রিপোর্টে বলা হয়, তিতাস বিতরণ চার্জ ছাড়াই মুনাফায় থাকবে। শেষ পর‌্যন্ত ১৩ পয়সা নির্ধারণ করা হয়।

গ্যাসের বিতরণ কোম্পানিগুলো অনেক বছর ধরেই মুনাফা করে চলছে। তাদের মুনাফার কিছুটা নজীর পাওয়া যায় প্রফিট বোনাস প্রদানের হার থেকে। ২০২১-২২ অর্থ বছরে কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড তার ৩৮৩ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর প্রত্যেকটে ১৮ লাখ টাকা করে প্রফিট বোনাস দিয়েছে। অতীতে জিটিসিএল, তিতাস গ্যাস, পিজিসিবি ও অন্যান্য কোম্পানিতে এই প্রফিট বোনাস প্রদানের প্রতিযোগিতা ছিল। অনেক সময় হিসেবে গোজামিল দিয়েও প্রফিট বোনাস দেওয়ার অনেক নজীর রয়েছে। কোম্পানিগুলোর প্রফিট বোনাসে কিছুটা লাগাম টানার চেষ্টা করে চলেছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)।

কেউ কেউ মনে করেন বিইআরসি ও কোম্পানির দ্বন্দের অন্যতম কারণও এটাই। যে কারণে আইন সংশোধন করে নির্বাহী আদেশে দাম বাড়ানোর বিকল্প চালু করা হয়েছে। অনেকের ধারণা মুনাফায় লাগাম দেওয়ায় চটে গেছেন বিতরণ কোম্পানিগুলোর লোকজন।

গত ১৪ ডিসেম্বর আন্তমন্ত্রণালয় সভার কার‌্যপত্রে বিইআরসিকে নিয়ে চচ্চার আলামত পাওয়া গেছে। ওই সভায় জিটিসিএল এমডি বলেন, প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের সঞ্চালন চার্জ নির্ধারিত রয়েছে ৪৭ পয়সা। এরফলে গত অর্থ বছরে ২১৬ কোটি টাকা লোকসান হয়েছে। চলতি অর্থবছরে ৫৫০ কোটি টাকা লোকসান হবে।

ওই সভায় তিতাস গ্যাস এমডি হারুনুর রশীদ মোল্লাহ বলেন, তাদের কোম্পানি লোকসান দিচ্ছে, বিতরণ চার্জ বাড়ানো দরকার। অথচ ২০২২ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত গণশুনানিতে বিইআরসি টেকনিক্যাল কমিটির রিপোর্টে বলা হয়েছে, রেট বেজের উপর রিটার্ন বিবেচনায় ২০২১-২২ অর্থবছরে তিতাস গ্যাসের নীট রাজস্ব চাহিদা মাইনাস ১০ পয়সা। তিতাসের প্রতি ঘনমিটারের বিদ্যমান বিতরণ চার্জ ২৫ পয়সা হারে ( জুলাই ২০১৯ থেকে) বাতিল করা যেতে পারে।

অডিট রিপোর্ট অনুযায়ী তিতাস গ্যাস ২০২০-২১ অর্থবছরে অন্যান্য পরিচালন আয় করেছে ২ হাজার ৬০৮ মিলিয়ন টাকা, অন্যান্য অপরিচালন আয় করেছে ১২৩ মিলিয়ন টাকা। একই বছরে ব্যাংকে জমা আমানতের সুদ থেকে আয় করেছে ২ হাজার ৫১১ মিলিয়ন টাকা। তিতাস ২০২০-২১অর্থবছরে অন্যান্য খাত থেকে সর্বোমোট আয় করেছে ১০ হাজার ৩৭১ মিলিয়ন টাকা।

বিতরণ চার্জ বিলুপ্ত করার পক্ষে বিইআরসি টেকনিক্যাল কমিটি তার ব্যাখ্যাও দিয়েছে। কমিটি বলেছে, তিতাসের রাজস্ব চাহিদায় অবচয় হার, ঋণের সুদ, রিটার্ণ অন ইক্যুইটি, পরিচালন ও রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয়, সুদ আয় সিস্টেম লস বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। ভবনের অবচয় ৩ থেকে ১০ শতাংশ, ফার্ণিচার ১০ থেকে ১৫ শতাংশ, অফিস ইক্যুইপমেন্ট ১৫ শতাংশ অন্যান্য ইক্যুইপমেন্ট ১৫ থেকে ৩০ শতাংশ যানবাহন ২০ শতাংশ, অন্যান্য সম্পদ ১০ থেকে ২০ শতাংশ অবচয় বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে।পরিচালন ও রক্ষণাবেক্ষণ খাতে ৫ শতাংশ ব্যয় বৃদ্ধি বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। এতে তাদের বিতরণ চার্জ বিলুপ্ত করলেও কোম্পানি মুনাফায় থাকবে।