‘জ্বালানি খাতের ডলার সংকট কেটে গেছে’

  • স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

জ্বালানির উৎস হোক কিংবা মিশ্রণ বহুমুখী ব্যবহার নিশ্চিত করা জরুরি। একদিকে অভিঘাত এলে আমরা যাতে অন্যদিকে যেতে পারি বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. তৌফিক ই-ইলাহী চৌধুরী।

বুধবার (৯ আগস্ট) জাতীয় জ্বালানি নিরাপত্তা দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এক ভার্চুয়াল সেমিনারে তিনি এ মন্তব্য করেন।

বিজ্ঞাপন

১৯৭৫ সালের ৯ আগস্ট তিতাস (ব্রাহ্মণবাড়িয়া), বাখরাবাদ (কুমিল্লা), হবিগঞ্জ, রশিদপুর ও কৈলাশটিলা (হবিগঞ্জ) গ্যাসফিল্ড কিনে নিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধুর। ওই ৫টি গ্যাস ফিল্ড থেকে এখনও ২৯ শতাংশ গ্যাসের সরবরাহ পাওয়া যাচ্ছে। বঙ্গবন্ধুর সেই অসামান্য অবদানকে স্মরণ করতে ২০০৯ সাল থেকে ৯ আগস্টকে জাতীয় জ্বালানি নিরাপত্তা দিবস হিসেবে পালন করে আসছে সরকার।

তিনি আরও বলেন, আমরা যে পরিকল্পনা নেবো, সেজন্য বিকল্প সময় রাখতে হবে। জ্বালানি ব্যবহারে দায়িত্বশীলতা থাকা আবশ্যক, আমাদের আচরণগত পরিবর্তন দরকার, পকেটে টাকা থাকলেই অপচয় করা যাবে না। কৃষিতে যখন পানি ব্যবহার করছেন, পানির ব্যবহার যদি কম করেন, তাহলে বিদ্যুতের খরচ কম ও জ্বালানি সাশ্রয় হবে। ভবিষ্যতের জন্য পানির রিজার্ভ নিশ্চিত হবে।

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, বর্তমানে জ্বালানির যে সংকট সেখানে বাংলাদেশের কোন হাত ছিল না। জ্বালানি ও খাদ্য ভূ-রাজনৈতিক ইস্যু জড়িত থাকে। ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে জ্বালানি, সারসহ সকল পণ্যের দাম বেড়ে যায়। ৮ বিলিয়ন ডলার, নিয়ে গেছে এটা অনেকটা ডাকাতির মতো। নতুন করে সাজাতে হয়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেই কাজটি করছেন। আমরা সভ্য উন্নত মানবিক দেশ গড়বো।

সেমিনারে একজনের বক্তব্যের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, আমি ভূতত্ত্ব বিষয়ে তেমন বুঝি না। তবে কূপ খনন করে গ্যাস না পাওয়া পর্যন্ত কিছুই বলা যাবে না। যারা ২-৩ টিসিএফ পাওয়া যাবে বলে মন্তব্য করেছেন, এটা ক্লাস রুমের জন্য ঠিক আছে, কিন্তু সাধারণ মানুষ বিভ্রান্ত হবে, তারা মনে করবে কূপ খনন করলেই গ্যাস পাওয়া যাবে।

বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ওয়াসিকা আয়শা খান এমপি বলেন, বঙ্গবন্ধু যে ৫টি গ্যাসক্ষেত্র কিনে নিয়েছেন তার অর্থনৈতিক মূল্য অনেক বেশি। বাংলাদেশের জ্বালানির নিরাপত্তা নিশ্চিত করে গেছেন বঙ্গবন্ধু। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জ্বালানি নিরাপত্তায় আঞ্চলিক সহযোগিতার উপর জোর দিয়েছেন।

বিদ্যুৎ বিভাগের সিনিয়র সচিব হাবিবুর রহমান বলেন, যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশে সঙ্গতভাবেই খাদ্য নিরাপত্তাকে জোর দেওয়ার কথা। বঙ্গবন্ধু সংবিধানে বিদ্যুৎকে মৌলিক অধিকারে অন্তর্ভুক্ত করেন। পৃথিবীর কম দেশেই বিদ্যুৎকে মৌলিক অধিকারে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, সমন্বিত মাস্টারপ্ল্যানের ড্রাফট রেডি হয়েছে। এতে তিনটি বিশেষ বিষয়কে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে, প্রথম হচ্ছে প্রাথমিক জ্বালানির বহুমুখীকরণ, যতো বেশি উৎসে যেতে পারবো তত বেশি নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে। পরিচ্ছন্ন জ্বালানির ব্যবহার বাড়ানোর উপর জোর দেওয়া হয়েছে। কৃষি জমিকে বাঁচিয়ে যতটা সম্ভব সৌর বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। ফসিল ফুয়েল নির্ভর জ্বালানির ব্যবহার কমানো এবং জ্বালানির সাশ্রয়ী ব্যবহার নিশ্চিতে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।

সভাপতির বক্তব্যে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সচিব ড. খায়েরুজ্জামান মজুমদার বলেন, মিডিয়ায় অনেক সময় খবর আসছে ডলার সংকটের। জ্বালানি খাতের ডলার সংকট কেটে গেছে। প্রতি সপ্তাহে ৮০ থেকে ৯০ মিলিয়ন ডলার ছাড় করা হচ্ছে। যে বকেয়া ছিল এক দুই সপ্তাহের মধ্যে পরিশোধ হয়ে যাবে।

বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) চেয়ারম্যান এবিএম আজাদ বলেন, বিপিসি তার কাজগুলোকে বৈজ্ঞানিক উপায়ে করতে পারলে কিছুটা সাশ্রয় হবে। এখন ১৩ লাখ টনের মতো মজুদ সক্ষমতা রয়েছে, আরও ৩ লাখ মজুদ সক্ষমতা বাড়ানোর কাজ চলমান রয়েছে। এগুলো হলে ৬০ দিনের মজুদ নিশ্চিত হবে। যাকে নিরাপদ মজুদ বিবেচনা করা হয়।

পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান জনেন্দ্র নাথ সরকার বলেন, তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য বঙ্গবন্ধু পিএসসি ধারণা প্রবর্তন করেন। তার ধারাবাহিকতায় বিবিয়ানাসহ অনেকগুলো সাফল্য পেয়েছি। মানবসম্পদ উন্নয়ন, তেল-গ্যাস অনুসন্ধান ও উন্নয়নে বঙ্গবন্ধুর দেখানো পথে চলছি। দেশব্যপী নিরবিচ্ছিন্ন জ্বালানি তেল সরবরাহের নেটওয়ার্ক গড়ে তোলার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে সরকার। অর্থনীতির মূল চালিকা শক্তি জ্বালানি সরবরাহ বৃদ্ধির ফলে দেশ আজ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা লাভ করেছে। বাংলাদেশকে ২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশে রূপান্তরের লক্ষ্য সামনে রেখে ২০৪১ সালের মধ্যে চাহিদা ও সরবরাহের রূপরেখা প্রস্তুত করে দেশীয় গ্যাস উৎপাদনের পাশাপাশি এলএনজি আমদানির সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।

এনার্জি এন্ড পাওয়ারের এডিটর মোল্লাহ আমজাদ হোসেন বলেন, অনুসন্ধান ব্যাপক ভিত্তিতে করতে হবে এর কোন বিকল্প নেই। বঙ্গবন্ধু স্বপ্ন দেখেছিলেন দারিদ্র দূরকরে সোনারবাংলা গঠনের। তার জন্য উপজীব্য করেছেন দেশীয় সম্পকের সর্বোচ্চ ব্যবহার। বিশ্বে এখন কয়লার ব্যবহার বেড়ে যাচ্ছে, বাংলাদেশের বিশাল কয়লার মজুদ রয়েছে। এই কয়লা বিদ্যুৎ উৎপাদনে পরিকল্পনা নেওয়া উচিত। উন্নয়নের ক্ষেত্রে জ্বালানি ও বিদ্যুতের সমন্বয়ে ঘাটতি লক্ষ্যণীয় হয় নি। এই সংকট দূর করা প্রয়োজন। বাংলাদেশের নীতি খুব ভালো, কিন্তু বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে অনেক ঘাটতি দেখা যায়।

অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন ভূঁইয়া বলেন, ২০০৯ সাল থেকে বর্তমানে ২৪টি অনুসন্ধান কূপ খনন করা হয়েছে, এরমধ্যে ৯টি গ্যাস ক্ষেত্র আবিস্কার হয়েছে। এসব ক্ষেত্রে মজুদ গ্যাসের পরিমাণ ২.৩ টিসিএফ। চিত্রটি অনেক ভালো, তবে আরও ভালো হতে পারতো। সাইচমিক সার্ভের মাধ্যমে ১৭৬টি লিডি প্রসপেক্ট আবিষ্কার করেছি। কূপ খনন করলে গ্যাস পাওয়া যাবে।