‘সাঙ্গু প্লাটফর্ম ব্যবহার করে ভোলার গ্যাস আনা উচিত’



মো: আমজাদ হোসেন
ভোলার গ্যাসক্ষেত্র

ভোলার গ্যাসক্ষেত্র

  • Font increase
  • Font Decrease

পরিত্যক্ত সাঙ্গু গ্যাস ফিল্ডের অবকাঠামো ব্যবহার করে ভোলার উদ্বৃত গ্যাস আনা সম্ভব। কাজটি করা গেলে দৈনিক ১০০মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস আনা সম্ভব। যার আন্তর্জাতিক বাজারমূল্য প্রায় ১৪ লাখ ডলারের মতো।

পাইপলাইনের কারণে যতো দিন গ্যাস ভোলা থেকে আনা যাচ্ছে না, ততদিন এভাবে গ্যাস আনা যেতে পারে। পাইপলাইন হলেও এ পদ্ধতি বহাল রাখার প্রয়োজন হতে পারে, কারণ ভোলার নদী এবং বিচ্ছিন্ন দ্বীপগুলোতে গ্যাস পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। যেখান থেকে এই পদ্ধতি ব্যবহার করে গ্যাস আনা যাবে। ইন্দোনেশিয়া তাদের দ্বীপগুলোতে এভাবে গ্যাস সরবরাহ অব্যাহত রেখেছে।

এ জন্য অভ্যন্তরীণ পাইপলাইন, জেটি নির্মাণ ও জাহাজের মাধ্যমে অ্যাসোসিয়েটেড গ্যাস সাঙ্গু ফিল্ডে ইনজেক্ট করতে হবে। সাঙ্গুতে গ্যাসক্ষেত্রে ৫০০ মিলিয়ন সক্ষমতার প্রসেস প্ল্যান্ট বেকার পড়ে রয়েছে। সেই প্রসেস প্ল্যান্টে গ্যাস পরিশোধন হয়ে পাইপলাইনের মাধ্যমে চলে যাবে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। এই প্রযুক্তি কোন হাইটেক বিষয় নয়। বিশ্বের অনেক দেশেই এ পদ্ধতি অনুসরণের নজির রয়েছে। ধারাবাহিক ভাবে কোন কাজ করলে, অবশ্যই সুফল পাওয়া যাবে। কোন কাজ কঠিন বা সহজও নয়। সম্মিলিত প্রচেষ্টা নেওয়া গেলে এ কাজটিকে করা সম্ভব বলে আমি মনে করি।

রাষ্ট্রীয় তেল-গ্যাস অনুসন্ধান কোম্পানি বাপেক্স ১৯৯৩ সালে আবিষ্কার করে শাহবাজপুর (ভোলা) গ্যাস ফিল্ড। এরপর ২০০১ সালে মার্চে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত দেন। আবিষ্কৃত গ্যাস সম্প্রসারণ, উন্নয়ন, উৎপাদন ও বিতরণের জন্যে প্রকল্প এবং লিংক প্রকল্প হিসেবে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) ২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্র অনুমোদন দেন। প্রকল্প পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয় আমাকে।

প্রকল্প ও পাইপলাইন নির্মাণের জন্য জমি অধিগ্রহণ ও মালামাল সংগ্রহের কাজ যখন চলমান। তখন একটি দমকা হাওয়ায় বাঁধার মূখে পড়ে প্রকল্পটি। তৎকালীন জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী ও মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ি প্রকল্পটি বাতিল ও ক্রয়কৃত পাইপলাইনের মালামাল গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানি জিটিসিএলকে হস্তান্তরের সিদ্ধান্ত দেন। ওই অবস্থায় মন্ত্রণালয়ের পরবর্তী সভায় সিদ্ধান্তটি প্রত্যাহারের অনুরোধ বিফল হয়। পরবর্তীতে বিভিন্ন মহলে দরবার ও অনুরোধসহ মন্ত্রণালয়ে পত্র মারফত সিদ্ধান্ত টি বাতিলের অনুরোধ করলে মন্ত্রণালয় আমার প্রস্তাবে সম্মতি দেয়। বহাল থাকে প্রকল্পটি।

বাপেক্স প্রয়োজনীয় পাইপ ও মালামাল সংগ্রহ করে ২ নম্বর কূপ খনন ও ১ নম্বর কূপ ওয়ার্ক ওভার করে। কিন্তু ১ নম্বর কূপে ওয়ার্ক ওভারের সময় গ্যাস ফ্লো না হলে রিপারফোরেশন করা হয়। হেলি বার্টন কর্তৃক লগিং ক্যাবল উঠানোর সময় উচ্চচাপে গ্যাস আসে এবং মুখে সার্ফেসে ৪ হাজার চাপ (পিএসআই) গ্যাস এসে নিয়ন্ত্রণহীন অবস্থার সৃষ্টি হলে লোকজন পালাতে থাকে। রিগ মাস্ট (টাওয়ারের) উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল গ্যাস। কিছুটা ভয় পেলেও হাল ছাড়িনি সেই দিন। আমার নীচের কর্মকর্তাকে ডেকে এনে অনুরোধ করে তাকে দিয়ে তার টুলবক্স থেকে প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম দিয়ে কূপটির গ্যাস ফ্লো বন্ধ করি। কূপটি নিয়ন্ত্রণ ও ওয়ার্ক ওভারের পরে গ্যাস ফ্লো করতে গেলে কোন ফ্লো কূপ থেকে আসে না। পরবর্তিতে ওপেন ও শাট প্রসেস (মানুষের হার্ট সচলের জন্য বুকের চাপ) ১০দিন করার পর কূপটি ফ্লো করে। ওই প্রসেস জোন বাংলাদেশের মধ্যে উচ্চ ও টাইট ওয়েল সম্পৃক্ত বলে আমার ধারনা। ১ ও ২ কূপের জোন অব্যবহৃত অবস্থায় মোমের মত আঠা জাতীয় গ্রিস দ্বারা বন্ধ হয়েছিল। ১ নম্বর কূপে রিপারফোরেট করে হেলি বার্টন যখন কেবল নিয়ে উঠে আসছিল, তখন তার টুল আঠা যুক্ত হয়ে বল্ড ও পিষ্টন এফেক্টের কারণে গ্যাস ফ্লো নিয়ন্ত্রণহীন হয়েছিল।

আমরা যখন গ্যাস নিয়ে প্রস্তুত তখন বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে পিডিবি নীরব নীতি গ্রহণ করে। ঠিকাদারের সঙ্গে যোগাযোগ করে বাপেক্সের জায়গায় বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের ব্যবস্থা নেওয়া হয়। ২০০৯ সালের মে মাসে গ্যাস দ্বারা বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি চালু হয়। প্রকল্প বাস্তবায়নকালীন সময় পেট্রোবাংলা মন্ত্রণালয় এই ঝুঁকিপূর্ণ কাজগুলি না করার জন্য নিরুৎসাহিত করলেও অফিসিয়ালি বাধা প্রদান করে নি।

পরবর্তীতে ভোলা শহরে ২০ কিলোমিটার বিতরণ লাইন নির্মাণ করা হয়। আমি দেখলাম ভূমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়ায় গেলে বিষয়টি অনেক ব্যয়বহুল ও সময় সাপেক্ষ। সে কারণে কৌশলী ভূমিকা নিয়ে তৎকালীন ভোলার পৌর মেয়রের সঙ্গে যোগাযোগ করি। আলোচনার পর কোন রকম ক্ষতিপূরণ ছাড়া পাইপলাইন নির্মাণের সম্মতি দেন। ভোলা ও সংলগ্ন দ্বীপ এলাকাগুলো গ্যাসের প্রধান উৎস মনে করে এক পাতার একটি লিফলেট কর্তৃপক্ষের কাছে প্রদান করি, অত্র এলাকায় প্যাস অনুসন্ধান, উন্নয়ন ও উৎপাদনের জন্য যা বার্তা চব্বিশে প্রকাশ করা হয়। কিন্তু কোন ইতিবাচক সারা পাইনি। প্রকল্পটি আরও একটি নজীর তৈরি করে। মোট বরাদ্দ ছিল ১৬২ কোটি টাকা, মাত্র ৮০কোটি টাকায় কাজ শেষ করা হয়। উদ্বৃত্ত টাকা দিয়ে ভোলায় আরও দুটি কূপ খননের জন্য কর্তৃপক্ষ এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জ্বালানি উপদেষ্টার কাছে ধর্না দিয়ে কোন সাড়া পাইনি। পরে অব্যায়িত অর্থ সরকারি কোষাগারে ফেরত প্রদান করা হয়। প্রজেক্ট সমাপ্তির প্রতিবেদনে নতুন দুটি কূপ খননের সুপারিশ করি (শাহবাজপুর ৩ ও ৪)। পরবর্তীতে শাহবাজপুরে দু’টি, শ্রীকাইলে একটি, শেমুতাংয়ে একটি, বেগমগঞ্জে একটিসহ ৫টি কূপ খননের প্রস্তাব এমডি কর্তৃক অনুমোদন গ্রহণ করা হয়। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের দ্বারা মাত্র ১৫ দিনে কূপের লোকেশন নির্ধারণ করি, যা বাপেক্সের ইতিহাসে একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। অজ্ঞাত কারনে কর্তৃপক্ষ এই পাঁচটি কূপ গ্যাসপ্রম কে দিয়ে খনন করায়। গ্যাসপ্রম ভোলার বিস্তীর্ণ এলাকায় চারটি কূপ খনন করেছে। গ্যাসপ্রম ভোলাও তীরবর্তি দ্বীপে ১২টি কূপ খননের প্রস্তাব দেয়। বাপেক্স তিনটি কূপ অনুমোদন করলে সেখানে গ্যাস পাওয়া যায়। এই কাজের মাধ্যমে আমার লিফলেটের বহিঃপ্রকাশ হয়েছে বলে আমি মনে করি।

ভোলার বিদ্যমান ৯টি কূপ থেকে দৈনিক ২’শ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উৎপাদন যোগ্য হলেও বর্তমান মাত্র ৬০ মিলিয়ন উৎপাদন হচ্ছে। আপাতত ভোলায় কুপ খনন না করে অতিরিক্ত ১০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সাঙ্গু প্লাটফর্মের মাধ্যমে জাতীয় গ্রিস সরবরাহের জরুরি ভিত্তিতে উদ্যোগ গ্রহণ করা প্রয়োজন। সরকার ভোলা থেকে ২৫ মিলিয়ন গ্যাস সিএনজি আকারে আনার উদ্যোগ নিয়েছে। এজন্য একটি বেসরকারি কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি করেছে। চুক্তিতে প্রতি ঘনমিটার সিএনজির পরিবহন খরচ ধরা হয়েছে ৩০.৬০ টাকা। এরচেয়ে অনেক কম খরচে সাঙ্গু প্লাটফর্ম ব্যবহার করে গ্যাস আনা সম্ভব। এতে ঘনমিটারের খরচ ১০ টাকার নিচে থাকবে।

ভোলায় যখন উদ্বৃত্ত গ্যাস পড়ে রয়েছে তখন দেশের অন্যান্য অঞ্চলে চলছে গ্যাস চরম সংকট। সেই সংকট মোকাবেলায় বিদেশ থেকে চড়াদামে এলএনজি আমদানি করতে হচ্ছে। আমদানিকৃত প্রতি এমএমবিটিইউ এলএনজির জন্য গুণতে হচ্ছে ১৪ ডলারের মতো। সে হিসাব করলে ১০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের মূল্য দাঁড়ায় ১৪ লাখ ডলারের মতো। গ্যাসের পরিমাণ আরও বাড়ানো সম্ভব, এ জন্য ভোলার নদীগুলোর মধ্যেও গ্যাস কূপ খননের ও উৎপাদনের সুযোগ রয়েছে। এ কাজটি জরুরি ভিত্তিতে না করলে বিদেশি কোম্পানীগুলো আমাদের অভাবের সুযোগ নিতে চাইবে। এ বিশাল সম্পদটি বিবিয়ানার মত হাত ছাড়া হয়ে যেতে পারে৷

লেখক: মো: আমজাদ হোসেন, সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক, বাপেক্স, প্রকল্প পরিচালক,শাহবাজপুর গ্যাস ক্ষেত্র মূল্যায়ন ও উন্নয়ন প্রকল্প

বৈঠকে ফলাফল নেই, বহাল থাকছে পবিসের কর্মবিরতি



স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
বৈঠকে ফলাফল নেই, বহাল থাকছে পবিসের কর্মবিরতি

বৈঠকে ফলাফল নেই, বহাল থাকছে পবিসের কর্মবিরতি

  • Font increase
  • Font Decrease

আন্দোলনরত পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে বৈঠকে কোন সমঝোতায় পৌঁছতে পারেনি বিদ্যুৎ বিভাগ। কর্মবিরতি অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির নেতারা।

শুক্রবার (৫ জুলাই) বিদ্যুৎ ভবনে বিদ্যুৎ বিভাগের সিনিয়র সচিব হাবিবুর রহমানের সাথে বৈঠকে বসে ৮০টি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির প্রতিনিধিরা। এসময় বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড আরইবি চেয়ারম্যান অজয় কুমার চক্রবর্ত্তীসহ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন আন্দোলনরত পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির এজিএম প্রকৌশলী রাজন কুমার দাস। তিনি প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি) ও পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি (পবিস) একীভূত করে অভিন্ন চাকরিবিধি বাস্তবায়ন এবং চুক্তিভিত্তিক কর্মচারীদের নিয়মিত করার দাবীতে গত ১ জুলাই থেকে দেশের ৮০টি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিতে পূর্বের ন্যায় জরুরী বিদ্যুৎ সেবা সচল রেখে কর্মবিরতি চলছে।

এর আগে গত ৫ মে থেকে একই আন্দোলনে গেলে বিদ্যুৎ সচিব তাদের সঙ্গে আলোচনায় বসেন। দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাসে দুই শর্তে কর্মবিরতি স্থগিত করা হয়। শর্ত ছিল এই ইস্যুতে বরখাস্ত, সংযুক্ত, স্ট্যান্ড রিলিজকৃত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অব্যাহতি দিয়ে স্ব স্ব কর্মস্থলে পুনর্বহাল করতে হবে। দুই, প্রত্যেক স্তরের প্রতিনিধিসহ ১৫ দিনের মধ্যে দাবি-দাওয়া সংক্রান্ত আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। এ আলোচনা সভায় আরইবির প্রতি কোনো আস্থা নাই বলে জানানো হয়।

কিন্তু প্রায় ২ মাস অতিবাহিত হলেও প্রস্তাবনার আলোকে আলোচনা বা কোন ধরণের উদ্যোগ ব্যবস্থা নেয়া হয় নাই। তাছাড়া বিদ্যুৎ বিভাগের সিনিয়র সচিবের সিদ্ধান্ত অমান্য করে সাময়িক বরখাস্তকৃত ২ (দুই) জন এবং স্ট্যান্ড রিলিজ থাকা ২ (দুই) জন কর্মকর্তাকে অদ্যাবধি অব্যাহতি দিয়ে নিজ কর্মস্থলে পুনর্বহাল করা হয় নি বলে অভিযোগ তুলেছেন আন্দোলনকারীরা।

;

যেসব কারণে চ্যালেঞ্জের মুখে নতুন ইএফডিএমএস প্রকল্পের সাফল্য



স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের অসহযোগিতা এবং প্রযুক্তিগত জটিলতার কারণে ঝুঁকির মুখে পড়েছে ইলেক্ট্রনিক ফিসক্যাল ডিভাইস ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (ইএফডিএমএস) প্রকল্পের সাফল্য। রাজস্ব ভ্যাট আহরণে স্বচ্ছতা এবং গতি বৃদ্ধির লক্ষ্যে গত বছরের অগাস্টে প্রকল্পটি চালু করে (এনবিআর)।

কিন্তু এনবিআর’র মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা পদক্ষেপটিকে স্বাগত জানননি। তারা খুচরা পর্যায়ে সনাতন পদ্ধতিতে ভ্যাট সংগ্রহ করতে বেশি আগ্রহী। এজন্য শুরুর দিকে এই ডিভাইসের জন্য তারা কম রাজস্ব আহরণ হয় এমন বিজনেস আইডেনটিফিকেশন নাম্বারগুলো (বিআইএন) প্রদান করেছিলেন এবং সেগুলোও বিক্ষিপ্ত উপায়ে। এর ফলে ইএফডি মেশিনের জন্য সঠিক ব্যবসায়িক আবহ তৈরি হয়নি এবং প্রত্যাশিত সাফল্যও আসেনি। অন্যদিকে ইএফডিএমএস সিস্টেমের কারিগরি কোন ত্রুটি দেখা দিলে তা মেরাতম করতে চারটি পক্ষের উপর নির্ভর করতে হয়।

বেসরকারি অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে এই প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছিল। এই প্রকল্পে এনবিআর’র কোন খরচ হয়নি, পুরোটা বেসরকারি বিনিয়োগ। সহযোগী প্রতিষ্ঠান ইতোমধ্যে বড় অঙ্কের টাকা বিনিয়োগ করেছে। কিন্তু তারা যখন কাজটি পায় তখন ডলার রেট ছিল ৮৮ টাকা, যা বর্তমানে প্রায় ১২০ টাকা। এতে ডিভাইস কেনার খরচ অনেক বেড়ে গেছে। অন্যদিকে ব্যাংকগুলোতে লেটার অব ক্রেডিট (এলসি) নিয়েও চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হচ্ছে তাদের।

;

কলড্রপ ইস্যুতে কঠোর অবস্থানে বিটিআরসি

কক্সবাজারে প্রতিমন্ত্রীর ড্রাইভ টেস্ট



স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
ছবি: সংগৃহীত,  কল ড্রপ নিয়ে কঠোর অবস্থানে বিটিআরসি

ছবি: সংগৃহীত, কল ড্রপ নিয়ে কঠোর অবস্থানে বিটিআরসি

  • Font increase
  • Font Decrease

মোবাইল ফোনে কলড্রপ নিয়ে কঠোর অবস্থান নিয়েছে, বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। নিয়ন্ত্রক সংস্থা এরই মধ্যে কল ড্রপ ইস্যুতে গ্রামীণফোনকে কারণ দর্শাও নোটিশ (শোকজ) দিয়েছে। শুধু গ্রামীণফোনই নয়, অন্য অপারেটরদের কলড্রপও মনিটরিং করা হচ্ছে।

সোমবার (১ জুলাই) ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বিটিআরসিতে এক বৈঠকে মোবাইল অপারেটরদের মান্নোয়ন সংক্রান্ত এক বৈঠকে আগামী ৬ মাসের মধ্যে গ্রাহক পর্যায়ে কলড্রপের হার উল্লেখযোগ্য সংখ্যক কমিয়ে আনতে কঠোর নির্দেশ দিয়েছেন। তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী কলড্রপের বিষয়ে গ্রাহক অসন্তোষের কথা উল্লেখ করেন এবং এ বিষয়ে কোনো মোবাইল অপারেটরকে ছাড় দেওয়া হবে না বলে জানান। এজন্য ক্ষতিপূরণের পাশাপাশি জরিমানা আদায়ের ঘোষণা দেন পলক।

বৃহস্পতিবার (৪ জুলাই) কক্সবাজারে ড্রাইভ টেস্ট মনিটরিং করেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, ছবি-বার্তা২৪.কম


 

এরই মধ্যে প্রতিমন্ত্রী বৃহস্পতিবার (৪ জুলাই) কক্সবাজার বিমানবন্দরে নিজে উপস্থিত থেকে ড্রাইভ টেস্ট মনিটরিং করেন।

জানা গেছে, প্রতিমন্ত্রীর নির্দেশে দেশব্যাপী টেস্ট ড্রাইভ শুরু হয়ে গেছে। ড্রাইভ টেস্টের তথ্যের ওপর ভিত্তি করে অপারেটরদের ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ইন্টারন্যাশনাল টেলিকমিনিউকেশন ইউনিয়নের (আইটিইউ) স্বীকৃত কলড্রপের হার ৩ শতাংশ বা এর নিচে। সম্প্রতি, টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসির তথ্যমতে, গ্রামীণফোন, রবি ও বাংলালিংক সবারই কলড্রপ ওই সীমার নিচে রয়েছে।

এই প্রসঙ্গে প্রতিমন্ত্রী কলড্রপের জন্য ক্ষতিপূরণ দিতে হবে বলে উল্লেখ করে বলেন, মনিটরিং এবং অডিট নিয়মিত করা হবে। বেঞ্চমার্ক যাই থাকুক, কলড্রপ রেট কাগজে-কলমে যাই থাকুক, আমরা গ্রাহক সন্তষ্টির ওপর জোর দেবো।

সাধারণত, মোবাইল অপারেটরদের নেটওয়ার্কের কারণে কলড্রপ হয়ে থাকে। মূলত, প্রযুক্তিগত সীমাবদ্ধতা, নেটওয়ার্কের অপ্রতুলতা, স্প্রেকট্রাম স্বল্পতা, এন্টেনা ও রেডিওতে ক্যাবলের কানেকশন দুর্বলতার কারণে কলড্রপ হয়ে থাকে।

তবে শুধুমাত্র এসব কারণেই অনেক সময় কলড্রপের জন্য এককভাবে দায়ী থাকে না। হ্যান্ডসেট সমস্যা, ভূগর্ভস্থ ক্যাবল কাটা পড়া বা এর মানের অবনতি এবং টাওয়ার কোম্পানির সেবার মানের কমতি থাকলেও এই সমস্যা তৈরি হতে পারে। তবে ঢাকা শহরে উঁচু ভবন, টাওয়ার রেডিয়েশন নিয়ে বিভ্রান্তি থাকায় অনেক গুরুত্বপূর্ণ স্থানে স্থাপনে বাধা, অবৈধ জ্যামার, রিপিটার, বুস্টারের কারণেই নেটওয়ার্ক বাধাগ্রস্ত হয়।

২০২২ সালে জাতীয় সংসদে তৎকালীন ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার কলড্রপের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন। ২০১৮ সালে তৎকালীন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ জাতীয় সংসদে কলড্রপ নিয়েও অসন্তোষ প্রকাশ করেন।

;

লোকসানে থাকা চিনিকল নিয়ে সরকারের সাথে এস.আলমের যৌথ উদ্যোগ



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
লোকসানে থাকা চিনিকল নিয়ে সরকারের সাথে এস.আলমের যৌথ উদ্যোগ

লোকসানে থাকা চিনিকল নিয়ে সরকারের সাথে এস.আলমের যৌথ উদ্যোগ

  • Font increase
  • Font Decrease

দেশের চিনিশিল্পের রুগ্নদশা কাটাতে আখ উৎপাদন ও চিনিকলের আধুনিকায়নে সরকারের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে বিভিন্ন প্রকল্পের মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করেছে দেশের অন্যতম শীর্ষ শিল্পগ্রুপ এস.আলম অ্যান্ড কো.। বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশন- বিএসএফআইসি এবং শিল্প মন্ত্রণালয়কে সঙ্গে নিয়ে এসব প্রকল্প বাস্তবায়িত হবে। যার মধ্যে রয়েছে- প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে উন্নত আখ উৎপাদন ও কৃষকদের প্রশিক্ষণ, আধুনিক আখ প্রক্রিয়াকরণ কারখানা গড়ে তোলা, ৬ মেগাওয়াট পাওয়ার কো-জেনারেশন, অ্যাগ্রো-ভোলটিক সোলার পাওয়ার প্ল্যান্ট নির্মাণ, বাই-প্রোডাক্ট ভিত্তিক প্ল্যান্ট তৈরি, কোল্ড স্টোরেজ ও অ্যাগ্রো প্রসেসিং ইন্ডাস্ট্রিজ গড়ে তোলা, প্যাকেজিং ফ্যাক্টরি নির্মাণ ইত্যাদি। দিনাজপুরের সেতাবগঞ্জ ও ফরিদপুর এর চিনি কল অঞ্চলে উক্ত প্রকল্পগুলো বাস্তবায়িত হবে।

উচ্চ মানসম্পন্ন আখ উৎপাদনে উদ্যোগ নেবে এস.আলম অ্যান্ড কো.। এক্ষেত্রে কোম্পানিটি যৌথভাবে কাজ করবে বিএসএফআইসি, বিএসআরআই এবং আন্তর্জাতিক গবেষকদের সঙ্গে। বিভিন্ন হাইব্রিড জাত উদ্ভাবনে ব্যবহার করা হবে ক্লোনিং, জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিংসহ আধুনিক প্রযুক্তি। একইসঙ্গে কৃষকদের প্রশিক্ষিত করার মাধ্যমে সর্বোচ্চ উৎপাদনের উদ্যোগ নেওয়া হবে। 

এছাড়া, এস.আলম অ্যান্ড কো. দিনাজপুরের সেতাবগঞ্জ চিনি কল এ ১২৫০টিসিডি সক্ষমতার একটি আধুনিক আখ প্রক্রিয়াকরণ কারখানা গড়ে তুলবে, যেটির সক্ষমতা সর্বোচ্চ ২৫০০টিসিডি পর্যন্ত বর্ধিতযোগ্য। এবং ফরিদপুরে চিনি কল এ ১০০০টিসিডি সক্ষমতার একটি আধুনিক আখ প্রক্রিয়াকরণ কারখানা গড়ে তুলবে, যেটির সক্ষমতাও সর্বোচ্চ ২৫০০টিসিডি পর্যন্ত বর্ধিতযোগ্য।

এখান থেকে প্রতি বছর ১২ হাজার টন প্রিমিয়াম কোয়ালিটির ব্রাউন সুগার উৎপাদিত হবে। যা পরে বৃদ্ধি পেয়ে প্রতি বছর ১৫ থেকে ১৮ হাজার টন হবে। যেহেতু সারা বছর ধরে কোনো শিল্প প্রতিষ্ঠান চালু না রাখলে সেখান থেকে মুনাফা অর্জন করা সম্ভব নয়, তাই একটি চিনি শোধনাগার  প্রতিষ্ঠা করবে এস.আলম অ্যান্ড কো.। এর মাধ্যমে চাহিদা থাকলে (সিজনে) বছরে প্রায় ৯০০ টিপিডি আমদানিকৃত কাঁচা চিনি এবং কম চাহিদার সময় (অফ সিজনে) ১ হাজার টিপিডি কাঁচা চিনি পরিশোধন করা সম্ভব হবে।

অধিকন্তু, চিনি কারখানার, চিনি রিফাইনারি এবং অন্যান্য প্ল্যান্ট, ফ্যাক্টরির চাহিদা মেটাতে তৈরি করা হবে ৬ মেগাওয়াট বা এর বেশি সক্ষমতার পাওয়ার প্ল্যান্ট। এক্ষেত্রে বয়লার জ্বালানি হিসেবে আখের অবশিষ্ট অংশ বা ছোবড়া ব্যবহার করা হবে। এছাড়া- ডুয়েল ফুয়েল বয়লার ব্যবহার করা হতে পারে, যেখানে জ্বালানি হিসেবে কয়লারও ব্যবহার থাকবে।    

পাশাপাশি সেতাবগঞ্জ এ ১০০ মেগাওয়াট সক্ষমতার এবং ফরিদপুর এ চিনি কল অঞ্চলে ১০ মেগাওয়াট সক্ষমতার অ্যাগ্রো-ভোলটিক সোলার পাওয়ার প্ল্যান্ট তৈরি করবে এস.আলম অ্যান্ড কো.। তাতে যথাক্রমে ৪০০ একর ও ৪০ একর ভূমির প্রয়োজন হবে। বিভিন্ন শস্য এই সোলার প্ল্যান্ট প্রকল্পের আওতায় উৎপাদন করা হবে। অভ্যন্তরীণ ব্যবহারের পর সোলার প্ল্যান্টের অতিরিক্ত বিদ্যুৎ যুক্ত করা হবে জাতীয় গ্রিডে।

চিনি কলে বিভিন্ন বাই-প্রোডাক্ট থাকে যেমন- মোলাসেস, ফিল্টার প্রেস মাড ও ছাই। মোলাসেস বিক্রি করা হবে কেরু অ্যান্ড কো. এর কাছে। অন্যান্য বাই-প্রোডাক্ট এর জন্য সে অনুযায়ী প্ল্যান্ট নির্মিত হবে। এছাড়া- সোলার প্ল্যান্ট ও দিনাজপুর ও ফরিদপুর এলাকার মৌসুমী শস্যের সংরক্ষণ প্রয়োজন হবে। তাই ২০০০০ মেট্রিক টন সক্ষমতার কোল্ড স্টোরেজ নির্মিত হবে সেতাবগঞ্জ  ও ফরিদপুর এর চিনি কল অঞ্চলে।

সেতাবগঞ্জ চিনিকল ও ফরিদপুর চিনিকলকে লাভজনক উদ্যোগে রূপান্তর করতে পণ্য বহুমুখীকরণ অপরিহার্য। দিনাজপুর ও ফরিদপুর অঞ্চলে শাকসবজি ও ফলমূলের প্রাচুর্য রয়েছে, যা কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণের জন্য একটি উল্লেখযোগ্য সুযোগ উপস্থাপন করে।  এস.আলম অ্যান্ড কো. এর পরিকল্পনায় হিমায়িত, টিনজাত, ডিহাইড্রেটেড এবং আচারযুক্ত শাকসবজি প্রক্রিয়াকরণ-উত্পাদনে একটি উদ্ভিজ্জ প্রক্রিয়াকরণ প্ল্যান্ট স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে।

এছাড়া- টিনজাত ফলের শাঁস, ফলের রস, মিশ্র ফলের রস এবং বিভিন্ন ধরণের ফল থেকে শুকনো ফল উত্পাদন, হিমায়িত ফ্রেঞ্চ ফ্রাই, আলুর চিপস, স্টার্চ, পাস্তা, নুডলস, স্যুপ, হিমায়িত খাবার, টিনজাত খাবার, আচার, সিরিয়াল এবং অন্যান্য খাদ্য পণ্য উত্পাদন ও প্রক্রিয়াজাতের পরিকল্পনাও রয়েছে এস.আলম অ্যান্ড কো. এর।

প্রস্তাবিত কারখানাগুলোতে পণ্যের জন্য বিভিন্ন ধরনের পিপি ব্যাগ, এলডিপিই প্যাকেট ও বিভিন্ন ধরনের প্যাকেজিং প্রয়োজন হবে। তাই সেতাবগঞ্জ ও ফরিদপুর দুই জায়গাতেই একটি করে প্যাকেজিং ফ্যাক্টরি স্থাপন করবে এস.আলম অ্যান্ড কো.। সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের মাধ্যমে এসব কারখানার উৎপাদন সক্ষমতা নির্ধারণ করা হবে।

টেকসই কৃষি-ভিত্তিক শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার মাধ্যমে কর্মসংস্থান তৈরি, স্থানীয় অর্থনীতির পালে হাওয়া দিতে ও দেশের অর্থনীতি আরো শক্তিশালী করতে এস.আলম অ্যান্ড কো. এর এসব বিনিয়োগ গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।

এই উদ্যোগের সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন- শিল্প মন্ত্রণালয় এর মাননীয় মন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হূমায়ুন, এমপি; শিল্প মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব জাকিয়া সুলতানা; শিল্প মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (রাষ্ট্রায়ত্ত কর্পোরেশন) এস এম আলম; শিল্প মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (পরিকল্পনা) মো. শামীমুল হক; বিএসএফআইসি এর সচিব চৌধুরী রুহুল আমিন কায়সার এবং বিএসএফআইসি এর চেয়ারম্যান শেখ শোয়েবুল আলম এনডিসি। এছাড়া এস.আলম অ্যান্ড কো. এর পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন- প্রতিষ্ঠানটির ডিরেক্টর বেলাল আহমেদ, ডিরেক্টর আশরাফুল আলম, নির্বাহী পরিচালক (অর্থ), সুব্রত কুমার ভৌমিক, এফসিএ; উপদেষ্টা মো. আরিফুর রহমান অপু; অ্যাকাউন্টস, ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার, মো. মনিরুজ্জামান, এফসিএ; অ্যাকাউন্টস, এজিএম মো. নজরুল ইসলাম, এসিএ; এসএস পাওয়ার ১ লিমিটেড এর ম্যানেজার, টেকনিক্যাল সার্ভিস নাগিব মাহফুজ সহ অন্যান্যরা।

;