চট্টগ্রামে গ্যাস সংকট থাকবে একমাস!
‘বিনা নোটিশে গ্যাস চলে যাওয়া কষ্টের বিষয়। নোটিশ দিয়ে জানালে আমরা আগে থেকেই প্রস্তুতি নিয়ে রাখতাম। ভোরেই রান্নাবান্না সারতাম’-চট্টগ্রাম নগরীর চান্দগাঁওয়ের বাস টার্মিনাল এলাকার বাসিন্দা মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম নিজের দুঃখের কথা এভাবেই লিখেছেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে। গ্যাস না থাকায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এই ছাত্রের বাসায় দুপুরের রান্না হয়নি। সেজন্য বাধ্য হয়ে হোটেল থেকেই এনে খেতে হয়েছে খাবার।
শুধু তৌহিদুল ইসলামের বাসায় নয়, গ্যাস না থাকায় চট্টগ্রাম নগরীর বেশিরভাগ এলাকায় শনিবার (২১ অক্টোবর) দুপুরে রান্না হয়নি। এই দিন বেলা ১১টার দিকে হঠাৎ গ্যাস চলে যায়। গ্যাস না থাকায় চকবাজার, বহদ্দারহাট, নাসিরাবাদ, নিউমোরিং, দেওয়ানবাজার, জামালখান, বাকলিয়া, ডিসি রোড, চন্দনপুরা, আসকারদিঘীর পাড়, হালিশহর, রহমতগঞ্জ, আগ্রাবাদ, অলঙ্কার, বন্দর এলাকা, বিবিরহাট, দু নম্বর গেট ,পাাঁচলাইশ, মুরাদপুর, খুলশি, অক্সিজেন, বালুচরাসহ নগরের বিভিন্ন এলাকার বেশিরভাগ বাসাবাড়িতে জ্বলেনি চুলা। তবে যেসব বাসায় তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাস (এলপিজি) আছে-সেখানে রান্নার সমস্যা হয়নি। বেলা ১১টা থেকে বিকেল তিনটা-এই চারঘণ্টা ধরে চলে গ্যাস সংকট। বিকেল তিনটার পর একটু একটু করে আসতে শুরু করে গ্যাস।
গ্যাস না পেয়ে চরম ভোগান্তিতে পড়েন গ্রাহকেরা। কেউ কেউ বৈদ্যুতিক চুলায় রান্নাবান্না করছেন, আবার কেউ নতুন করে সিলিন্ডার কিনে রান্না সেরেছেন। আর বস্তিবাসীরা বেছে নেন মাটির চুলা।
গ্যাস সংকটে দুপুরের রান্না সারতে পারেননি পূর্ব নাসিরাবাদ এলাকার বাসিন্দা সামিয়া রহমান। তিনি বলেন, গ্যাস থাকবে না এটা আগে থেকে জানানো হলে সকালেই দুপুরের রান্না সেরে ফেলতাম। কিন্তু হুট করে বিনা নোটিশে গ্যাস চলে যাওয়ায় বিপদে পড়ি।
আসকার দিঘীর পাড় এলাকার গৃহবধূ উম্মে আইমনও গ্যাস সংকটে রান্না করতে পারেননি। তিনি বলেন, বেলা ১১টার দিকে রান্না করতে গিয়ে দেখি চুলা জ্বলছে না। ভাবছি আমার চুলায় কোনো সমস্যা হয়েছে। পরে আশপাশে খবর নিয়ে দেখি কোথাও গ্যাস নেই। তিনটার দিকে একটু একটু করে গ্যাস আসলে দুপুরের রান্না করি।
চট্টগ্রামে গ্যাস বিতরণের দায়িত্বে থাকা কর্ণফুলী গ্যাস বিতরণ কোম্পানি লিমিটেডের (কেজিডিসিএল) কয়েকজন কর্মকর্তা জানান, শীত এলে গ্যাস-সংকট দেখা দেওয়াটা চট্টগ্রামে নিয়মিত ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। কেননা শীতকালে অন্যান্য সময়ের তুলনায় প্রায় ২০ শতাংশ অতিরিক্ত গ্যাস ব্যবহার হয়। ঠাণ্ডার করণে অনেকেই এই সময়ে গরম পানি ব্যবহার করেন। আবার এখন একটি টার্মিনাল থেকে গ্যাস সরবরাহও বন্ধ রয়েছে। দুই কারণে সংকট মারাত্মক আকার ধারণ করেছে।
কেজিডিসিএল জানিয়েছে, চট্টগ্রামে তাদের মোট গ্রাহক ও সংযোগ আছে ৬ লাখ ১ হাজার ৯১৪টি। এর মধ্যে গৃহস্থালি সংযোগ ৫ লাখ ৯৭ হাজার ৫৬১টি। চট্টগ্রামে দৈনিক গ্যাসের চাহিদা প্রায় ৩২৫ মিলিয়ন ঘনফুট। মহেশখালী এলএনজি টার্মিনাল থেকে পাওয়া যায় ২৭০ থেকে ৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট। বাকি গ্যাস পাওয়া যেত আরেকটি টার্মিনাল থেকে। কিন্তু এখন ওই টার্মিনাল থেকে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। ফলে সংকট তৈরি হয়েছে। যে গ্যাস পাচ্ছে তার অর্ধেক চলে যায় বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি সার এবং বিদ্যুৎকেন্দ্রে। বাকি গ্যাস দিয়েই আবাসিকসহ অন্যান্য জায়গায় চাহিদা মেটাতে হচ্ছে। একমাস ধরে এই সংকট থাকবে বলে জানিয়েছেন সংস্থাটির কর্মকর্তারা।
এ বিষয়ে কেজিডিসিএলের মহাব্যবস্থাপক (অপারেশন) আমিনুর রহমান বার্তা২৪.কমকে বলেন, আমরা দুটি টার্মিনাল থেকে গ্যাস পাই। এর মধ্যে সামিটের গ্যাস সরবরাহ বন্ধ থাকায় প্রায় ২০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস আমরা এখন পাচ্ছি না। একটা লাইন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় মূলত গ্যাস সংকট শুরু হয়েছে। ধারণা করছি একমাস ধরে এই সংকট চলমান থাকবে।
কখন গ্যাস থাকবে না এমন প্রশ্নে আমিনুর রহমান বলেন, আমরা এখনও কোনো সময় নির্ধারণ করিনি। এটা চলমান সমস্যা। দিনের বেলায় যেহেতু শিল্পকারখানা চলে, তাই এই সময়ে গৃহস্থলিতে একটু সমস্যা বেশি থাকবে। তবে রাতে তেমন একটা সংকট থাকবে না।
তবে যথাযথ পর্যবেক্ষণ ও বিতরণের অভাবে গ্যাস-সংকট দেখা যাচ্ছে বলে দাবি করেছেন কনজিউমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) কেন্দ্রীয় সহসভাপতি এস এম নাজের হোসাইন। তিনি বলেন, প্রতিবছর শীত আসলেই শুরু হয় গ্যাস সংকট। কিন্তু এর জন্য আগে থেকেই থাকে না কোনো পরিকল্পনা। আমরা বারবার গ্যাস-সংকট নিরসন করতে কেজিডিসিএলকে অনুরোধ করেছি। কিন্তু তারা সমাধান করতে পারেনি। গ্যাস লাইনের লিকেজ ও অপচয় কমানো গেলে এই সংকট হতো না।